বুধবার ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪


চিত্রনাট্য সংলাপও নির্দেশনা: আদুর গোপালাকৃষ্ণণ।

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: ক্ল্যাসিক নতুন ধারার ছবি (১৯৮৯)
ভাষা: মালয়ালম
প্রযোজনা: আদুর গোপালাকৃষ্ণণ
কাহিনি: ভাইকম মোহাম্মদবশীর
চিত্রনাট্য সংলাপও নির্দেশনা: আদুর গোপালাকৃষ্ণণ
অভিনয়ে: মামুটি
সময়সীমা: ১২০মিনিট
দেখা যাবে: ইউটিউবে


আদুর গোপালাকৃষ্ণণের ‘মাথিলুকাল’ ছবিটি ১৯৮৯ সালে তৈরি। মালায়ালাম ভাষায় নির্মিত এই অন্যধারার ছবি বর্হির্বিশ্বে ‘দ্য ওয়ালস’ নামে খ্যাত। ‘মাথিলুকাল’ একই নামের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে। এই উপন্যাসের রচয়িতা হলেন ভাইকম মোহাম্মদ বশীর। এই উপন্যাস জেলে বশীরের দীর্ঘ-বন্দি জীবনের একাকীত্ব নিয়ে লেখা। জেলের বিশাল প্রাচীরের ওপারে মহিলা বন্দিদের সেল। সেখানেই কোনও একদিন বশীরের সঙ্গে পরিচয় হল এক অদেখা নারীর। শুধু কণ্ঠস্বরে পরিচয়। তার নাম বুঝি নারায়ণী। কেউ কাউকে দেখেনি। বন্দি জীবনের ভয়ংকর একাকিত্বের মধ্যে দু’জন পরস্পরকে না দেখা মানুষের প্লেটনিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে এক অসাধারণ কাহিনিচিত্র ‘মাথিলুকাল’। জেলের এক বিশাল প্রাচীরের দুপারে এক পুরুষ রমণী। লেখক বশীরের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন দক্ষিণের সুপারস্টার মামুটি। নারায়ণী চরিত্রের কণ্ঠস্বর ছিল বিশিষ্ট অভিনেত্রী ললিতার।
১৯৮৯ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি দেখানো হয়েছিল। এখানে ফিপ্রেসি পুরস্কার পেয়েছিলেন পরিচালক আদুর গোপালাকৃষ্ণণ। ওই একই সালে শ্রেষ্ঠ প্রাদেশিক ছবি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় এই ছবি। শ্রেষ্ঠ পরিচালক আদুর গোপালাকৃষ্ণণ। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা মামুটি। এই ছবির অসাধারণ শব্দ গ্রহণের জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলেন শব্দগ্রাহক এন হরিকুমার। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে আজ ৩৪ বছর পরে ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য শব্দগ্রহণে যুগান্তর ঘটে গেছে। ১৯৮৯-এ এই সুযোগ ছিল না।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: চলচ্চিত্র নয়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের চিত্রকাব্য— উড়োজাহাজ

বরসে গা সাওন: স্মরণে উস্তাদ রাশিদ খান

১৯০৮ এর অগ্নিযুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভাইকম মোহাম্মদ বশির। বশীর মালায়ালাম সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক, একজন মানবতাবাদী এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সংগ্রামী। তিনি একইসঙ্গে ছোট গল্প এবং উপন্যাসে সমান সাবলীল ছিলেন। ১৯৯০ সালে এই ছবির গুণগত সাফল্যের পর ১৯৯৪ সালে বশীরের দেহাবসান ঘটে। সাহিত্য রচনায় তাঁর অনবদ্য বৈশিষ্ট্য তাকে সাধারণ পাঠক এবং সাহিত্য সমালোচক দুজনের কাছেই সমান আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। সাহিত্য একাডেমী এবং ১৯৮২ সালে পদ্মশ্রী ছাড়াও কেরালা সাহিত্য একাডেমির পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বশীর।
আরও পড়ুন:

বারো ক্লাস ফেল ছেলের প্রায় জগৎ জয়ের কাহিনি মন ছুঁয়েছে সবার

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৪: রামচন্দ্রকে ঘিরে যুগান্তরেও কেন উন্মাদনা? একজন কথকঠাকুরানির সাধারণ সমীক্ষা

মোহাম্মদ কুট্টি পানাপরমবিল ইসমাইল এই নাম শুনলে অনেকেই চিনতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর স্ক্রিননেম তাঁকে আসমুদ্র হিমাচলের পরিচিত দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের বাইরে বহির্বিশ্বেও তাঁকে মানুষ মামুটি নামে এক ডাকে চেনে। ৭২ বছরের এই অভিনেতা তার ৫ দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে ৪০০র বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৯৮ সালে পদ্মশ্রী ২০২২ এ কেরল রাজ্যের বিশিষ্ট পুরস্কার কেরালা প্রভা, জাতীয় পুরস্কার কেরালার রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার কেরালা চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার এবং দক্ষিণের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ভূষিত এই অভিনেতা। আদুর গোপালাকৃষ্ণণের এই আলোচিত ছবিটির কেন্দ্রবিন্দু। সারা ছবি জুড়ে মামুটির অসামান্য অভিনয় প্রতিভা বিচ্ছুরিত হয়েছে।

মাথিলুকাল ছবিতে দক্ষিণী সুপারস্টার মামুটির অভিনয় অবিস্মরণীয়।

১৯৪০এ স্বাধীনতা আন্দোলনে জেলবন্দী হয়েছিলেন বশীর। তাঁকে তিরুবনন্তপুরমের সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়েছিল। একাকীত্বকে যে কত কাব্যিকভাবে সেলুলয়েডের পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায় সেটা জানতে হলে দেখতে হবে আদুর গোপালাকৃষ্ণণের অনবদ্য সৃষ্টি মাথিলুকাল। এই ছবিতে চিত্রগ্রাহক মানকাডা রবি ভার্মা অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন। জেল জীবনের একাকীত্বে আলো-ছায়ার খেলা বৃষ্টি বা প্রকৃতির টুকরো উপস্থিতি ছবিকে এক অন্য মর্যাদায় উন্নীত করে।

পরিচালকের ছবিতে গোলাপ গাছের পরিচর্যা ও তা থেকে গোলাপ ফুল ফোটার এক প্রতীকী ব্যবহার করেছেন। বিশাল দেওয়ালের ওপারে অদেখা নারী বা প্রেমিকার উপস্থিতি বোঝানোর চিত্রভাবনা অসাধারণ। অন্যধারার চলচ্চিত্রের দর্শকেরা এই ছবিটি ইউটিউবে দেখতে পাবেন।
* মুভি রিভিউ: জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছেন।

Skip to content