অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
অঞ্জন তেতো মুখে বসে ছিল। তার ইন্টারোগেশন শেষ হয়ে গিয়েছে। উন্মেষা গিয়েছে এখন। তার শেষ হলে দুজনে একসঙ্গে রুমে ফিরবে ভেবেছিল সে। সেই কারণেই লবির এক কোণে বসে সামনের টেবিলে রাখা পুরানো পত্রিকা হাতে তুলে পড়ার অভিনয় করছিল সে।
এখানে এসে এমনভাবে ফাঁসবে সে ভাবেনি। অনিল লোকটার আর কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই। দুম করে এখানে টিম নিয়ে চলে এলি, একবারও ভেবে দেখলি না যে, জায়গাটা কতটা নিরাপদ! যেখানে কালাদেও নামে এক অপদেবতা বা আর কিছু দিনে-রাতে ঘুরে বেড়ায়, রিসর্টে পর্যন্ত হামলা করে, সেখানে কেউ শখ করে মরতে আসে? অনিলের ইচ্ছে হয়েছিল হয়তো করবার, কবে কোন লড়কির সঙ্গে আশিকি ছিল, সে ল্যাং মেরে চলে গিয়েছে, তারপর দেবদাস ইমেজ নিয়ে সকলকে ধোঁকার টাঁটি দিয়ে গিয়েছে। সকলেই তাকে দেখিয়ে বলে, “আশিক হো তো অ্যায়সা!” ফুঃ! তারা যদি জানতো, তালসারিতে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতে গিয়ে পাশের রুমেই অনিলকে দেখেছিল অঞ্জন। তখন কেউ কাউকে চিনত না। অনিল তাকে ভুলে গেলেও সে অনিলকে ভোলেনি। তার কোনও ফিক্সড পার্টনার ছিল না। যে হোটেলে উঠেছিল, সেখানেই ব্যবস্থা ছিল।
চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রায় রোজ নতুন নতুন মেয়ে আনত সে রুমে। এই রকম কত ফুলে ফুলে সে মধু খেয়ে বেড়িয়েছে, কে বলতে পারে? উন্মেষার বন্ধু যদি না হতো, তাহলে এইসব ডি-ক্লাসড লোকদের সে লাইফে অ্যালাউই করে না। সে নিজে সবার সঙ্গে বেড শেয়ার করে না। কলগার্ল হায়ার করলেও তার অনেক নাকউঁচু ব্যাপার আছে। টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করার সামর্থ যখন তার আছে, তাহলে চিপ এনজয়মেন্টের দিকে সে কেন যাবে? উন্মেষা নিজে মিডল ক্লাস সোসাইটিতে বিলং করে বলে, তার বন্ধুবান্ধবেরাও এইরকম পেটি বুর্জোয়া। সাধ্য নেই, শখ আছে, স্বপ্ন আছে। আর উন্মেষার প্রতি মোহে এখন অনুরোধে অঞ্জনকেও ছুঁচো গিলতে হচ্ছে।
এখানে এসে এমনভাবে ফাঁসবে সে ভাবেনি। অনিল লোকটার আর কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই। দুম করে এখানে টিম নিয়ে চলে এলি, একবারও ভেবে দেখলি না যে, জায়গাটা কতটা নিরাপদ! যেখানে কালাদেও নামে এক অপদেবতা বা আর কিছু দিনে-রাতে ঘুরে বেড়ায়, রিসর্টে পর্যন্ত হামলা করে, সেখানে কেউ শখ করে মরতে আসে? অনিলের ইচ্ছে হয়েছিল হয়তো করবার, কবে কোন লড়কির সঙ্গে আশিকি ছিল, সে ল্যাং মেরে চলে গিয়েছে, তারপর দেবদাস ইমেজ নিয়ে সকলকে ধোঁকার টাঁটি দিয়ে গিয়েছে। সকলেই তাকে দেখিয়ে বলে, “আশিক হো তো অ্যায়সা!” ফুঃ! তারা যদি জানতো, তালসারিতে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতে গিয়ে পাশের রুমেই অনিলকে দেখেছিল অঞ্জন। তখন কেউ কাউকে চিনত না। অনিল তাকে ভুলে গেলেও সে অনিলকে ভোলেনি। তার কোনও ফিক্সড পার্টনার ছিল না। যে হোটেলে উঠেছিল, সেখানেই ব্যবস্থা ছিল।
চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রায় রোজ নতুন নতুন মেয়ে আনত সে রুমে। এই রকম কত ফুলে ফুলে সে মধু খেয়ে বেড়িয়েছে, কে বলতে পারে? উন্মেষার বন্ধু যদি না হতো, তাহলে এইসব ডি-ক্লাসড লোকদের সে লাইফে অ্যালাউই করে না। সে নিজে সবার সঙ্গে বেড শেয়ার করে না। কলগার্ল হায়ার করলেও তার অনেক নাকউঁচু ব্যাপার আছে। টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করার সামর্থ যখন তার আছে, তাহলে চিপ এনজয়মেন্টের দিকে সে কেন যাবে? উন্মেষা নিজে মিডল ক্লাস সোসাইটিতে বিলং করে বলে, তার বন্ধুবান্ধবেরাও এইরকম পেটি বুর্জোয়া। সাধ্য নেই, শখ আছে, স্বপ্ন আছে। আর উন্মেষার প্রতি মোহে এখন অনুরোধে অঞ্জনকেও ছুঁচো গিলতে হচ্ছে।
মেজাজটা তেতো হয়ে গিয়েছিল অঞ্জনের কারণ, তদন্তকারী অফিসার আর লোকাল থানার সেকেণ্ড অফিসারের হাবভাব। তারা যেন অঞ্জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে। তারা কেউ জানে না, অঞ্জনের নিজের যা ক্ষমতা এবং পলিটিক্যাল পরিচিতি আছে, তাতে সে চাইলে এক্ষুনি দুজনকেই নাস্তানাবুদ করিয়ে ছাড়তে পারে। তাদের পারিবারিক ব্যবসার চেইন ভারতের অনেকগুলি শহরে ছড়িয়ে আছে। অনেক বড় বড় হাতি তাদের দুয়ারে বাঁধা। কিন্তু উন্মেষা তাকে সিন ক্রিয়েট করতে নিষেধ করেছিল। এর সঙ্গে তার নিজের আত্মসম্মানের প্রশ্ন জড়িয়ে। এই নিয়ে বেশি হইচই হলে সেটা উন্মেষা আর অঞ্জনের নিজেরও সম্মানের পক্ষে ভালো হবে না। অতএব সে তদন্তকারী গোয়েন্দা ও তার পুলিশ অ্যাসিস্টান্টের হম্বিতম্বি সহ্য করছিল কোনও মতে।
সে ঢুকতেই তারা তাকে বসতে বলেছিল। তারপর সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে চলে এসেছিল। লালবাজার থেকে আগত অফিসারটিই প্রশ্ন করছিল বেশি। সেকেন্ড অফিসারকে কাল রাতে দেখেছে অঞ্জন। অতএব তার মুখ সে চেনে। সে রেকর্ডিং করছিল বাতচিত।
“আপনার নাম ?”
“অঞ্জন শ্রীবাস্তব।”
“কী করেন আই মিন পেশা?”
“আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস আছে। শ্রীবাস্তব ফুডমলের চেইন মুম্বই, দিল্লি-সহ সারা দেশে বেশ কয়েকটা বড় বড় সিটিতে রয়েছে। তাছাড়া আমাদের একটা গারমেন্টসের ফ্যাক্টরি রয়েছে আমেদাবাদে। সেটা মূলত বাইরের কান্ট্রি থেকে বরাত পায় এবং তাদের চাহিদামতো মাল সাপ্লাই দেয়। উৎপাদন আমরাই করি, এমন কী যে কাপড়ে ড্রেস তৈরি হয়, তা-ও আমাদেরই কারখানায় প্রোডাকশন করা হয়। বিদেশি ব্র্যান্ড সব কিন্তু তৈরি হয় এখানে, তারপর এক্সপোর্ট হয়।”
“তা আপনি কলকাতায় পড়ে আছেন?”
“বিকজ, আমার মা বাঙালি। কলকাতায় অনেকদিন আমার কেটেছে মামাবাড়িতে। ভবানীপুরে। আমি বাংলা বলছি, বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই যে, আমাকে অবাঙালি বলে কেউ সহজে ধরতেই পারবে না। নাম জানলে আলাদা কথা। তাছাড়া কলকাতায় আমাদের যে ফুড মলটি আছে, সেটা কাউকে না কাউকে দেখতেই হত, সেটার জন্যও আছি।”
সে ঢুকতেই তারা তাকে বসতে বলেছিল। তারপর সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে চলে এসেছিল। লালবাজার থেকে আগত অফিসারটিই প্রশ্ন করছিল বেশি। সেকেন্ড অফিসারকে কাল রাতে দেখেছে অঞ্জন। অতএব তার মুখ সে চেনে। সে রেকর্ডিং করছিল বাতচিত।
“আপনার নাম ?”
“অঞ্জন শ্রীবাস্তব।”
“কী করেন আই মিন পেশা?”
“আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস আছে। শ্রীবাস্তব ফুডমলের চেইন মুম্বই, দিল্লি-সহ সারা দেশে বেশ কয়েকটা বড় বড় সিটিতে রয়েছে। তাছাড়া আমাদের একটা গারমেন্টসের ফ্যাক্টরি রয়েছে আমেদাবাদে। সেটা মূলত বাইরের কান্ট্রি থেকে বরাত পায় এবং তাদের চাহিদামতো মাল সাপ্লাই দেয়। উৎপাদন আমরাই করি, এমন কী যে কাপড়ে ড্রেস তৈরি হয়, তা-ও আমাদেরই কারখানায় প্রোডাকশন করা হয়। বিদেশি ব্র্যান্ড সব কিন্তু তৈরি হয় এখানে, তারপর এক্সপোর্ট হয়।”
“তা আপনি কলকাতায় পড়ে আছেন?”
“বিকজ, আমার মা বাঙালি। কলকাতায় অনেকদিন আমার কেটেছে মামাবাড়িতে। ভবানীপুরে। আমি বাংলা বলছি, বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই যে, আমাকে অবাঙালি বলে কেউ সহজে ধরতেই পারবে না। নাম জানলে আলাদা কথা। তাছাড়া কলকাতায় আমাদের যে ফুড মলটি আছে, সেটা কাউকে না কাউকে দেখতেই হত, সেটার জন্যও আছি।”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪৪: নুনিয়ার মুখোমুখি
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৯: দোতলার জানলা থেকে সুষমাকে চিনে ফেলেছিল ইস্ত্রিওলা শ্যামলাল
“আপনারা যখন এত রিচ ম্যান, তাহলে এই সামান্য পিশাচ পাহাড়ে এলেন কেন? চাইলেই তো কোন বিদেশে হলিডে এনজয় করতে পারতেন?”
“পারতাম, কিন্তু তা হয়নি মূলত দুটি কারণে। এক, আমার গার্লফ্রেন্ড এখনই বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়, সে চেয়েছিল এখানে আসি। কোনও একটা ব্লগে না কি এই জায়গাটার বিবরণ পেয়েছিল। তার আনন্দই যেহেতু আমার আনন্দ, ফলে তার কথা শুনতেই হবে আমায়। দ্বিতীয়ত, আমি চাইলেই উন্মেষা, আই মিন আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে হাওয়াই, কী মিয়ামি বিচে গিয়ে ছুটি এনজয় করতে পারতাম, কিন্তু তাহলে এই ফ্রেন্ডস-ট্যুর হতো না। কারণ, বাকিরা বিদেশে যাওয়ার মতো এতটা খরচ করতে পারত না। ফলে এই ছোট্ট ছুটিটাও ঘরে বসেই কাটাতে হত তাদের।”
“আচ্ছা, উন্মেষা, যিনি আপনার গার্লফ্রেন্ড, তিনি যে ব্লগ দেখে এই জায়গাটার কথা জানতে পারেন, তার আইডি দেওয়া যাবে?”
“আমি জানি না, উন্মেষা জানে!”
সুদীপ্ত বলল, “ঠিক আছে স্যার, উন্মেষা তো আসবেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেই চলবে।”
শাক্য বলল, “ঠিক আছে। আমরা তাহলে অন্য প্রশ্নে যাই? আচ্ছা, অঞ্জন, আপনি কি ব্যাচেলর?”
অঞ্জন থমকালো। এই জাতীয় প্রশ্ন করার অর্থ কী তা সে বুঝতে পারল না। সে বলল, “আমার ব্যক্তিগত তথ্য জেনে অনিলের মৃত্যুরহস্যের কোনও সুরাহা হবে বলে আপনি বিশ্বাস করেন?”
“আমার বিশ্বাস নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে। যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দিন।” শাক্যর গলার স্বর গম্ভীর।
অনিলও কম যায় না। সে বলল, “দেখুন, আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে কিন্তু আমি বাধ্য নই। আমি এক্ষুনি আমার জন্য কোন ল’-ইয়ার হায়ার করতে পারি, সেই রাইটস আমার আছে আর আপনি তা জানেন!”
“অ্যাজ ইউ উইশ! আমাদেরও কিছু রাইটস আছে, আমরাও কী করতে পারি বা না-পারি সে-ব্যাপারে আমাদের ধারণাও ক্লিয়ার কাট!” বলে শাক্য বলল, “তাহলে আপনি উত্তর দেবেন না এই প্রশ্নের? তবে আমরা জেনে যাব। সে আপনার ল-ইয়ার থাকুন বা না-থাকুন।”
“পারতাম, কিন্তু তা হয়নি মূলত দুটি কারণে। এক, আমার গার্লফ্রেন্ড এখনই বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়, সে চেয়েছিল এখানে আসি। কোনও একটা ব্লগে না কি এই জায়গাটার বিবরণ পেয়েছিল। তার আনন্দই যেহেতু আমার আনন্দ, ফলে তার কথা শুনতেই হবে আমায়। দ্বিতীয়ত, আমি চাইলেই উন্মেষা, আই মিন আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে হাওয়াই, কী মিয়ামি বিচে গিয়ে ছুটি এনজয় করতে পারতাম, কিন্তু তাহলে এই ফ্রেন্ডস-ট্যুর হতো না। কারণ, বাকিরা বিদেশে যাওয়ার মতো এতটা খরচ করতে পারত না। ফলে এই ছোট্ট ছুটিটাও ঘরে বসেই কাটাতে হত তাদের।”
“আচ্ছা, উন্মেষা, যিনি আপনার গার্লফ্রেন্ড, তিনি যে ব্লগ দেখে এই জায়গাটার কথা জানতে পারেন, তার আইডি দেওয়া যাবে?”
“আমি জানি না, উন্মেষা জানে!”
সুদীপ্ত বলল, “ঠিক আছে স্যার, উন্মেষা তো আসবেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেই চলবে।”
শাক্য বলল, “ঠিক আছে। আমরা তাহলে অন্য প্রশ্নে যাই? আচ্ছা, অঞ্জন, আপনি কি ব্যাচেলর?”
অঞ্জন থমকালো। এই জাতীয় প্রশ্ন করার অর্থ কী তা সে বুঝতে পারল না। সে বলল, “আমার ব্যক্তিগত তথ্য জেনে অনিলের মৃত্যুরহস্যের কোনও সুরাহা হবে বলে আপনি বিশ্বাস করেন?”
“আমার বিশ্বাস নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে। যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দিন।” শাক্যর গলার স্বর গম্ভীর।
অনিলও কম যায় না। সে বলল, “দেখুন, আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে কিন্তু আমি বাধ্য নই। আমি এক্ষুনি আমার জন্য কোন ল’-ইয়ার হায়ার করতে পারি, সেই রাইটস আমার আছে আর আপনি তা জানেন!”
“অ্যাজ ইউ উইশ! আমাদেরও কিছু রাইটস আছে, আমরাও কী করতে পারি বা না-পারি সে-ব্যাপারে আমাদের ধারণাও ক্লিয়ার কাট!” বলে শাক্য বলল, “তাহলে আপনি উত্তর দেবেন না এই প্রশ্নের? তবে আমরা জেনে যাব। সে আপনার ল-ইয়ার থাকুন বা না-থাকুন।”
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১৪: অন্ধকারের উৎস হতে—শীতকালের প্রতিরাত
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৭: জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য বাড়ি থেকে স্ট্যু বানিয়ে নিয়ে এসেছিলেন কানন দেবী
অঞ্জন বুঝতে পারছিল, সত্যটা গোপন থাকবে না। তাছাড়া তাদের গ্রুপে অরণ্য কিংবা তৃণা আছে, তারা সকলেই জানে। তাদের কাছে পুলিশ সহজেই জেনে যাবে আসল সত্যটা। সে নিজেকে সংযত করল। এই ব্যাপার নিয়ে অযথা জল ঘোলা না-করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে ভেবে সে বলল, “আমি ম্যারেড। কিন্তু আমাদের ডিভোর্সের মামলা চলছে। কেস ফয়সালা হয়ে গেলেই আমি উন্মেষাকে বিবাহ করব, এমনটাই ঠিক আছে।”
“ধন্যবাদ। উত্তরটা দিয়ে দিলেন বলে। অবশ্য আগেই আমরা সত্যটা জেনে গিয়েছিলাম। একটু ক্রশ এগজামিন কলাম আর কী ! যাক, আচ্ছা অঞ্জন কাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত আপনি কী করছিলেন? কোথায় ছিলেন?”
“মানে? কাল পার্টি ছিল একটা। আপনার বোধহয় জানা নেই যে, এই ট্যুরের যাবতীয় খরচ উন্মেষার কথা ভেবেই আমিই বেয়ার করছি। কালকের পার্টিটাও আমারই মানিটারি হেল্পেই হয়েছে। যদিও আর্যর অন্তর্ধান এবং এই অফিসারদের আসার ফলে পার্টির মেজাজ কারও ছিল না। উন্মেষা এই সব পার্টি পছন্দ করে না। সে আসলে ইন্ট্রোভার্ট। সেজন্য বেশিক্ষণ পার্টিতে থাকা হয়নি। আমরা দুজনে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট রুমে চলে গিয়েছিলাম।”
“তারপর? সকাল অবধি রুমেই ছিলেন দুজনে?”
“দেখুন, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আপনি রিসর্টের ম্যানেজার কাপাডিয়ার কাছে খোঁজ নিয়ে দেখবেন, আমরা যে রুমে আছি, সেখানে ডাবল বেড আছে। বিয়ের আগে উন্মেষা শারীরিক সম্পর্ক পছন্দ করে না বলেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। আর তাছাড়া যাকে বিয়ে করতে চলেছি, তার সঙ্গে তো এসব হবেই একদিন, ফলে এত তাড়া ছিল না আমার। সামান্য কথা বলতে বলতে আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। একেবারে সকালে উঠে শুনি এই ইনসিডেন্ট ঘটেছে!”
“কাল ক’ পেগ নিয়েছিলেন ?”
“হিসেব করিনি। হিসেব করে ড্রিংক করি না আমি। তবে আউট হয়ে যাইনি, বেশিও নেইনি ড্রিংক। কারণ ওই একটাই—উন্মেষা পছন্দ করে না।”
“আচ্ছা। কিন্তু ঘুমের মধ্যে কোনও আওয়াজ শোনেননি? কোন চিৎকার কিংবা আর কিছু?”
“নাহ্, বললাম তো মড়ার মতো ঘুমিয়েছি!” বলে অঞ্জন চুপ করতে যাবে, হঠাৎ তার মনে হল, কাল ওইরকম করে ঘুমানোর মধ্যেও পাশের ঘর থেকে কিছু আওয়াজ শুনেছিল সে। কিন্তু কী আওয়াজ, কী যেন একটা—সে মনে করার চেষ্টা করল।
শাক্য তার দিকে খর চোখে তাকিয়ে অপেক্ষা করছিল।
“ধন্যবাদ। উত্তরটা দিয়ে দিলেন বলে। অবশ্য আগেই আমরা সত্যটা জেনে গিয়েছিলাম। একটু ক্রশ এগজামিন কলাম আর কী ! যাক, আচ্ছা অঞ্জন কাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত আপনি কী করছিলেন? কোথায় ছিলেন?”
“মানে? কাল পার্টি ছিল একটা। আপনার বোধহয় জানা নেই যে, এই ট্যুরের যাবতীয় খরচ উন্মেষার কথা ভেবেই আমিই বেয়ার করছি। কালকের পার্টিটাও আমারই মানিটারি হেল্পেই হয়েছে। যদিও আর্যর অন্তর্ধান এবং এই অফিসারদের আসার ফলে পার্টির মেজাজ কারও ছিল না। উন্মেষা এই সব পার্টি পছন্দ করে না। সে আসলে ইন্ট্রোভার্ট। সেজন্য বেশিক্ষণ পার্টিতে থাকা হয়নি। আমরা দুজনে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট রুমে চলে গিয়েছিলাম।”
“তারপর? সকাল অবধি রুমেই ছিলেন দুজনে?”
“দেখুন, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আপনি রিসর্টের ম্যানেজার কাপাডিয়ার কাছে খোঁজ নিয়ে দেখবেন, আমরা যে রুমে আছি, সেখানে ডাবল বেড আছে। বিয়ের আগে উন্মেষা শারীরিক সম্পর্ক পছন্দ করে না বলেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। আর তাছাড়া যাকে বিয়ে করতে চলেছি, তার সঙ্গে তো এসব হবেই একদিন, ফলে এত তাড়া ছিল না আমার। সামান্য কথা বলতে বলতে আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। একেবারে সকালে উঠে শুনি এই ইনসিডেন্ট ঘটেছে!”
“কাল ক’ পেগ নিয়েছিলেন ?”
“হিসেব করিনি। হিসেব করে ড্রিংক করি না আমি। তবে আউট হয়ে যাইনি, বেশিও নেইনি ড্রিংক। কারণ ওই একটাই—উন্মেষা পছন্দ করে না।”
“আচ্ছা। কিন্তু ঘুমের মধ্যে কোনও আওয়াজ শোনেননি? কোন চিৎকার কিংবা আর কিছু?”
“নাহ্, বললাম তো মড়ার মতো ঘুমিয়েছি!” বলে অঞ্জন চুপ করতে যাবে, হঠাৎ তার মনে হল, কাল ওইরকম করে ঘুমানোর মধ্যেও পাশের ঘর থেকে কিছু আওয়াজ শুনেছিল সে। কিন্তু কী আওয়াজ, কী যেন একটা—সে মনে করার চেষ্টা করল।
শাক্য তার দিকে খর চোখে তাকিয়ে অপেক্ষা করছিল।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-৩: ইতিহাসের পাতায় লাচিত বরফুকোন
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৫: উদ্যানবাটিতে সারদা মায়ের ঠাকুরের শুশ্রূষা
হঠাৎ অঞ্জন বলল, “একটা কথা, সত্যি শুনেছি কি না জানি না, কেউ যেন কাকে ‘ব্ল্যাডি বাস্টার্ড’ বলে গালিগালাজ করছিল।
“মেল না ফিমেল ভয়েস?”
“তা বলতে পারবো না, সত্যি শুনেছিলাম কি না তাও না! হতে পারে ঘুমের ঘোরে কোনও স্বপ্ন দেখেছি, সেখানেই হয়তো শুনেছি। এখন মনে হচ্ছে পাশের ঘর থেকে শুনেছি, কিন্তু তা সত্য না-ও হতে পারে!”
শাক্য সুদীপ্তর দিকে তাকিয়ে বলল, “অঞ্জনের পাশের রুমেই কি অনিলের রুম ছিল?”
“না স্যার, আমাদের পাশের রুমটা খালি পড়ে আছে! ভূত-প্রেত কি না বলতে পারব না!”
“আপনি মনে করেন, কালাদেও এই কাণ্ড ঘটিয়েছে?”
“রাবিশ। আমার মনে হয় কোনও উন্মাদ জন্তুজানোয়ারের কাজ!”
“জন্তু-জানোয়ার দোতলায় উঠে রুম নক্ করে মেরে বডি নীচে ছুঁড়ে ফেলে চলে গেল? ভারি ইন্টেলিজেন্ট জানোয়ার তো? একে তো নোবেল দেওয়া উচিত!” শাক্য হাসল।
“আমি অত ভেবে কিছু বলিনি। কেবল বলতে চেয়েছি, আমি কালাদেওকে মানি না। মানতে চাইও না!”
“বেশ। বুঝলাম। তবে কী জানেন, আমি ভাবছি কালাদেও যদি না হয়, তাহলে আর কারও অপঘাতে মরার চান্স নেই। আমরা পুলিশ ফোর্স এত অ্যাক্টিভ হয়ে উঠেছি, কালাদেও না হয়ে সাধারণ অপরাধী হলে সে এবার সতর্ক হয়ে যাবে এবং আর মার্ডার করার ভুল করবে না!”
“ওহ্ !” অঞ্জন শ্রাগ করল।
“ঠিক আছে, আসতে পারেন এখন!” শাক্য অঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল।
“আমাদের আজ রাতে কলকাতা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল…!”
“আপাতত ওই চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিন। আমরা খুব শীঘ্রই এ-ব্যাপারে আপনাদের জানাবো। তার আগে এখান থেকে আপনাদের কোথাও যাওয়া হবে না!”
পাতি গোয়েন্দার স্পর্ধা দেখে অবাক হয়ে গেল অঞ্জন। নাহ্, এখান থেকে বেরিয়েই তার ল-ইয়ারকে ফোন করতে হবে।
এখন সেই চেষ্টাই করছিল অঞ্জন। যদিও টাওয়ার না-থাকায় ফোন করতে পারছিল না সে। নিজের উপর তার জন্য রাগ হচ্ছিল তার। —চলবে।
“মেল না ফিমেল ভয়েস?”
“তা বলতে পারবো না, সত্যি শুনেছিলাম কি না তাও না! হতে পারে ঘুমের ঘোরে কোনও স্বপ্ন দেখেছি, সেখানেই হয়তো শুনেছি। এখন মনে হচ্ছে পাশের ঘর থেকে শুনেছি, কিন্তু তা সত্য না-ও হতে পারে!”
শাক্য সুদীপ্তর দিকে তাকিয়ে বলল, “অঞ্জনের পাশের রুমেই কি অনিলের রুম ছিল?”
“না স্যার, আমাদের পাশের রুমটা খালি পড়ে আছে! ভূত-প্রেত কি না বলতে পারব না!”
“আপনি মনে করেন, কালাদেও এই কাণ্ড ঘটিয়েছে?”
“রাবিশ। আমার মনে হয় কোনও উন্মাদ জন্তুজানোয়ারের কাজ!”
“জন্তু-জানোয়ার দোতলায় উঠে রুম নক্ করে মেরে বডি নীচে ছুঁড়ে ফেলে চলে গেল? ভারি ইন্টেলিজেন্ট জানোয়ার তো? একে তো নোবেল দেওয়া উচিত!” শাক্য হাসল।
“আমি অত ভেবে কিছু বলিনি। কেবল বলতে চেয়েছি, আমি কালাদেওকে মানি না। মানতে চাইও না!”
“বেশ। বুঝলাম। তবে কী জানেন, আমি ভাবছি কালাদেও যদি না হয়, তাহলে আর কারও অপঘাতে মরার চান্স নেই। আমরা পুলিশ ফোর্স এত অ্যাক্টিভ হয়ে উঠেছি, কালাদেও না হয়ে সাধারণ অপরাধী হলে সে এবার সতর্ক হয়ে যাবে এবং আর মার্ডার করার ভুল করবে না!”
“ওহ্ !” অঞ্জন শ্রাগ করল।
“ঠিক আছে, আসতে পারেন এখন!” শাক্য অঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল।
“আমাদের আজ রাতে কলকাতা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল…!”
“আপাতত ওই চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিন। আমরা খুব শীঘ্রই এ-ব্যাপারে আপনাদের জানাবো। তার আগে এখান থেকে আপনাদের কোথাও যাওয়া হবে না!”
পাতি গোয়েন্দার স্পর্ধা দেখে অবাক হয়ে গেল অঞ্জন। নাহ্, এখান থেকে বেরিয়েই তার ল-ইয়ারকে ফোন করতে হবে।
এখন সেই চেষ্টাই করছিল অঞ্জন। যদিও টাওয়ার না-থাকায় ফোন করতে পারছিল না সে। নিজের উপর তার জন্য রাগ হচ্ছিল তার। —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।