শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


রাহুল দেব বর্মণ।

আরডি বর্মণ তাঁর রত্ন ভান্ডার থেকে তুলে আনা যে যে সুররত্ন আমাদের একের পর এক উপহার দিয়ে গিয়েছেন, সেগুলি আমাদের আজও সমৃদ্ধ করে চলেছে। তবুও কেন যেন বারবার মনে হয়, আমরা বোধহয় আরও অনেক উপহার থেকে বঞ্চিত হয়ে থেকে গিয়েছি।
এই অতৃপ্তি, এই না পাওয়ার আক্ষেপ কোনও কিছু দিয়েই হয়তো পূর্ণ হওয়ার নয়। সেই অব্যক্ত বেদনা থেকেই হয়তো আমরা পঞ্চমকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই তাঁর থেকে পাওয়া উপহারগুলির মাধ্যমে। জীবৎকালে যে সম্মান, যে স্বীকৃতি তাঁর প্রাপ্য ছিল, তা তিনি পাননি। কিন্তু আজ তাঁকে নিয়ে তাঁর গুণমুগ্ধদের উন্মাদনা, সামাজিক মাধ্যমে এবং ইউটিউবে চর্চা, এফ-এম রেডিয়োতে তাঁর গানগুলি দিবারাত্র শুনতে পাওয়া যায়। চলে চুলচেরা বিশ্লেষণও। রাহুলের সেই সব সুর থেকে নতুন কিছু শেখার তাগিদ, ফ্যানক্লাব, তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র—এসব কিছু একটি সত্যকেই সামনে নিয়ে আসে, তা হল ‘সময় সর্বদা মহান মানুষদের প্রতি সদয় হয়’।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩৩: নতুন গানের ডালি নিয়ে সুরকার, গীতিকার এবং গায়ক-গায়িকারা পুজোর এই সময়েই হাজির হতেন

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১১: কার মন ভোলাতে এলে তুমি আজ…

ক্ষমতাশালী মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠান নাই বা দিল স্বীকৃতি। কিন্তু সময় আশ্চর্যজনক ভাবে সেই কাজটি ঠিক নিজের মতো করে করে দেয়। সময়ই চিনিয়ে দেয় একটি মানুষের গুরুত্ব। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সেই মানুষটির প্রাসঙ্গিকতা। আলাদা করে কোনও বিজ্ঞাপন অথবা প্রচারের প্রয়োজনই হয় না।
পঞ্চম এবং তাঁর রেখে যাওয়া সৃষ্টিগুলি সেই কথারই সাক্ষ্য বহন করে। হ্যাঁ, এই কথা ঠিক যে তাঁর নিজের শহর কলকাতা ছেড়ে বম্বে পাড়ি দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জীবনে অবশ্যই একটি আশীর্বাদ। একটি দিগন্ত খুলে গিয়েছিল তাঁর সামনে। একসঙ্গে কতশত গুণীজনের সংস্পর্শে আসতে পেরেছিলেন তিনি। সর্বোপরি তাঁর বাবা শচীন দেব বর্মণকে কাছে পেয়েছিলেন। সব কিছু নিজের অজান্তেই কাজে লাগিয়ে ফেলেন পঞ্চম। শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন—শুধু সুর এবং সঙ্গীত।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২০: অক্টোবর মাসের ষোলো, কী হল! কী হল?

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮: সুন্দরবনের নিশ্চিহ্ন প্রাণী

নতুন কিছু শেখার অদম্য ইচ্ছে, সেই শিক্ষাগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে সুরসৃষ্টির উন্মাদনা। ভালো ফটোগ্রাফার হতে গেলে যেমন উৎকৃষ্ট মানের ছবি দেখার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি, একই ভাবে একজন ভালো সুরকারের একটি অভ্যেস থাকা খুবই প্রয়োজন। সেটি হল সব ধরনের সুর এবং সঙ্গীতের রসাস্বাদন করার অভ্যেস। যেকোনও ভাষার গান, তা সে পৃথিবীর যে প্রান্তেরই হোক না কেন। গানের ভাষা ভিন্ন বা অজানা হতেই পারে, কিন্তু সুরের ভাষা এক। সারা পৃথিবীর জন্যই এক। পঞ্চম এই কথাটিই মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন।
তাই তিনি সব ধরনের গান শুনতেন। ভাষা দুর্বোধ্য হলেও শুনতেন। কারণ তাঁর মূল লক্ষ্য থাকতো গানগুলির সুর। ফলস্বরূপ, যখনই পৃথিবীর কোনও এক প্রান্তের একটি সুরের অনুপ্রেরণায় তিনি কিছু সৃষ্টি করেছেন, ‘সবজান্তা’ কিছু তথাকথিত সমালোচকের বানে বিদ্ধ হয়েছেন বারবার। কিন্তু আজ সেই সব সমালোচক এবং তাঁদের সমালোচনা কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

চলো যাই ঘুরে আসি, পাহাড়ের উপর ছবির মতো সুন্দর শ্রবণবেলাগোলা— চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের এক অজানা অধ্যায়

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৬: শ্রীমায়ের সাধনা

আজও সমহিমায় থেকে গিয়েছেন পঞ্চম এবং তাঁর সেই সব যুগান্তকারী সৃষ্টিগুলি। যেগুলি আজও বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়ে চলেছে, সমাদর পেয়ে চলেছে। নিজের সৃষ্টিগুলির হয়ে ওকালতি করার ধার কখনো ধারেননি পঞ্চম। সেগুলি জনপ্রিয় হয়ে আজও রয়ে গিয়েছে নিজগুণে। যে কারণে তিনি আজও সমহিমায় রাজত্ব করে চলেছেন আমাদের হৃদয়ে, আজও থেকে গিয়েছেন আমাদের মনের মণিকোঠায়। —চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।

Skip to content