অলঙ্করণ: সৌমি দাসমণ্ডল।
‘পুলিশ’ শুনে সুবল ছুটে গেল। সাহেব-মেমসাহেবদের একটু পরে ড্রিংকস সার্ভ করলে তাঁরা না হয় বকবেন, কিন্তু পুলিশকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলে তাঁরা যদি রেগে গিয়ে ফাটকে চালান করে দেন, তাহলেই কম্ম সাবাড়।
অরণ্য আর তৃধাও কৌতূহলী হয়ে সেদিকে তাকিয়েছিল। রিসর্টে পুলিশ? কোনও অপরাধীর খোঁজে, না কি মধ্যারাতে ফুর্তিফার্তার উদ্দেশ্যে, সেটাই বুঝতে চেষ্টা করল তারা।
এই রিসর্টের তিনটি রুমে আপাতত তারা উঠেছে। আর একটি রুমে আছেন একজন একজন ব্লগার এবং অকেসানাল ডক্যুফিচার বানানো একজন মানুষ। তাঁকে কাল থেকে মাত্র এক-দুবার দেখেছে তৃধারা। চেহারা মোটেই আকর্ষণীয় নয়। মাথাজোড়া টাক। খুঁড়িয়ে হাঁটেন অল্প। হাতে স্টিক থাকে। হয়তো পায়ের কোনো সমস্যা আছে। এতদূরে এসেও ভদ্রলোকের কোভিডের ভয়, সর্বদাই মাস্ক পরে থাকেন। মাস্কগুলি অবশ্য বেশ কায়দার। কেবল নামটুকুই যা জানা গিয়েছে, অজয় বাসু। নামটা চেনা চেনা লাগছিল, কোথায় যেন শুনেছে, তারপর তার মনে হয়েছে, এত সাধারণ নাম, কতজনের হয়। সেইরকম কোথাও শুনে থাকবে। এই মানুষটিকে যে জীবনে সে এই প্রথম দেখছে তাতে সন্দেহ নেই। ভদ্রলোক এখানে এসেছেন, এই অঞ্চলের উপর একটা স্ক্রিপ্ট রেডি করবেন বলে। সকাল থেকে বেরিয়ে যান, কখন ফেরেন ঠিক নেই। আছেন আজ দু’ সপ্তাহ হয়ে গেল। কলকাতায় থাকেন। তাদের আসার অনেক আগে থেকেই রিসর্টে আছেন। অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে রেখেছেন। মাসখানেক থাকতে পারেন, তার আগেই স্ক্রিপ্ট রেডি হয়ে গেলে চলেও যেতে পারেন। তবে মানুষটিকে রহস্যময় বলে মনে হয় তৃধার। নাহলে সবসময় কালো চশমার আড়ালে চোখ ঢেকে রাখেন কেন ? তাছাড়া এই অঞ্চল এমন কিছু আহামরি নয় যে, এখানে মাসের পর মাস পড়ে থেকে ডক্যুফিচার বানাতে হবে। বড়লোক হয়তো, অনেক টাকা আছে, ওড়ানোর ফিকির খুঁজছেন, সেইজন্যই এখানে পড়ে আছেন। কিংবা অন্য কিছুও তো হতে পারে! এই মুহূর্তে তার মনে হল, পুলিশ ওই লোকটির সন্ধানে আসেনি তো? হয়তো দেখা যাবে, আদতে লোকটি হয়ত কোন ক্রিমিনাল। স্মাগলারও হতে পারে, কিংবা ছদ্মবেশী জঙ্গি!
অরণ্য আর তৃধাও কৌতূহলী হয়ে সেদিকে তাকিয়েছিল। রিসর্টে পুলিশ? কোনও অপরাধীর খোঁজে, না কি মধ্যারাতে ফুর্তিফার্তার উদ্দেশ্যে, সেটাই বুঝতে চেষ্টা করল তারা।
এই রিসর্টের তিনটি রুমে আপাতত তারা উঠেছে। আর একটি রুমে আছেন একজন একজন ব্লগার এবং অকেসানাল ডক্যুফিচার বানানো একজন মানুষ। তাঁকে কাল থেকে মাত্র এক-দুবার দেখেছে তৃধারা। চেহারা মোটেই আকর্ষণীয় নয়। মাথাজোড়া টাক। খুঁড়িয়ে হাঁটেন অল্প। হাতে স্টিক থাকে। হয়তো পায়ের কোনো সমস্যা আছে। এতদূরে এসেও ভদ্রলোকের কোভিডের ভয়, সর্বদাই মাস্ক পরে থাকেন। মাস্কগুলি অবশ্য বেশ কায়দার। কেবল নামটুকুই যা জানা গিয়েছে, অজয় বাসু। নামটা চেনা চেনা লাগছিল, কোথায় যেন শুনেছে, তারপর তার মনে হয়েছে, এত সাধারণ নাম, কতজনের হয়। সেইরকম কোথাও শুনে থাকবে। এই মানুষটিকে যে জীবনে সে এই প্রথম দেখছে তাতে সন্দেহ নেই। ভদ্রলোক এখানে এসেছেন, এই অঞ্চলের উপর একটা স্ক্রিপ্ট রেডি করবেন বলে। সকাল থেকে বেরিয়ে যান, কখন ফেরেন ঠিক নেই। আছেন আজ দু’ সপ্তাহ হয়ে গেল। কলকাতায় থাকেন। তাদের আসার অনেক আগে থেকেই রিসর্টে আছেন। অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে রেখেছেন। মাসখানেক থাকতে পারেন, তার আগেই স্ক্রিপ্ট রেডি হয়ে গেলে চলেও যেতে পারেন। তবে মানুষটিকে রহস্যময় বলে মনে হয় তৃধার। নাহলে সবসময় কালো চশমার আড়ালে চোখ ঢেকে রাখেন কেন ? তাছাড়া এই অঞ্চল এমন কিছু আহামরি নয় যে, এখানে মাসের পর মাস পড়ে থেকে ডক্যুফিচার বানাতে হবে। বড়লোক হয়তো, অনেক টাকা আছে, ওড়ানোর ফিকির খুঁজছেন, সেইজন্যই এখানে পড়ে আছেন। কিংবা অন্য কিছুও তো হতে পারে! এই মুহূর্তে তার মনে হল, পুলিশ ওই লোকটির সন্ধানে আসেনি তো? হয়তো দেখা যাবে, আদতে লোকটি হয়ত কোন ক্রিমিনাল। স্মাগলারও হতে পারে, কিংবা ছদ্মবেশী জঙ্গি!
রিসর্টের আর-একটি ঘর অবশ্য বুক করা আছে, কোনও এক কাপলের জন্য। আজকের মধ্যে তাদের আসার কথা ছিল। কাপাডিয়াই বলছিলেন। তারা এসেছে কি না জানে না তৃধা। আসলে দুপুরে তারা সবাই পিকনিকে চলে গিয়েছিল, তখন যদি আসে, তাহলে না-জানারই কথা। আর তাছাড়া তাদের ব্যাপারে কোনও আগ্রহ নেই তার। তবে শাক্য সিংহের সঙ্গে ভাব জমাতে পারলে বেশ হতো। কলকাতায় ফিরে অন্ত ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডেও যদি এগ্রি করত, তাহলে তৃধা একটা রোম্যান্টিক হট নাইট উপভোগ করতে পারত। কিন্তু সে গুড়ে বালি। ভদ্রলোক তার দিকে একবার মাত্র তাকিয়ে নামটি বলেছিলেন, তারপর গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। লোকটি একটি বাইকে করে এসেছে এখানে। বাইকটা পুরানো মডেলের রয়্যাল এনফিল্ড। তবে লোকটিকে মানিয়ে গিয়েছিল তাতে। ওই বাইকের পিছনে বসে তাকে জাপটে ধরে তৃধা যদি একটা রাইডেও যেতে পারত…! দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল সে।
ইতিমধ্যে কাপাডিয়া নেমে এসেছেন। হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন গেটের দিকে। কর্মচারীদের কেউ হয়তো খবর দিয়েছে তাঁকে, তিনি নিজেও শুনতে পারেন পুলিশের হাঁকডাক। ঠিক তাঁর পিছু পিছু অনিল। তবে তার মুখ থমথমে। সে অরণ্যকে আর তৃধাকে দেখে হাত নেড়ে তাদের দিকেই এগিয়ে এল, গেটের দিকে গেল না।
বড় গেট খুলে দিতেই পুলিশের জিপ থেকে নেমে এলেন স্থানীয় থানার ওসি অভিষেক মালাকার। বিরাট বড় ভুঁড়িখানার উপর টাকসর্বস্ব একখানা মুণ্ডু উঁকি মারছে। চোখ দুটো কুতকুতে আর অত্যধিক মদ্যপানের জন্য নিচের ঠোঁট ঝুলে পড়েছে। লোকে আড়ালে তাঁকে ডাকে নিষেক মালদার। ভদ্রলোক বাঁ হাতের কারবারে খুব দক্ষ, সীমান্ত এলাকা হওয়ায় ফুলে ফেঁপে এখানে পোস্টিং নিয়ে আসবার কিছুদিনের ভিতরেই ফুলে ফেঁপে লাল হয়ে গেছেন, আর একইসঙ্গে তাঁর স্ত্রী চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন, তাও মালদারের নিষেকের প্রবৃত্তি দমন করা যায়নি।
তার পিছনে সুদীপ্ত। থানার সেকেণ্ড অফিসার। বেশ প্রত্যুৎপন্নমতি করিতকর্মা যুবক। ঘটে বুদ্ধি রাখে এবং তার বুদ্ধির জেরেই এখনও পর্যন্ত দশটা চুরি, তিনটে বড়ো ডাকাতির কেস সলভ করে ফেলেছে। এখনও শরীরে তেমন মেদ জমেনি বলে তাকে দেখতে খুব ছিপছিপে লাগে, যদিও এতটাও ছিপছিপে সে নয়।
ইতিমধ্যে কাপাডিয়া নেমে এসেছেন। হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন গেটের দিকে। কর্মচারীদের কেউ হয়তো খবর দিয়েছে তাঁকে, তিনি নিজেও শুনতে পারেন পুলিশের হাঁকডাক। ঠিক তাঁর পিছু পিছু অনিল। তবে তার মুখ থমথমে। সে অরণ্যকে আর তৃধাকে দেখে হাত নেড়ে তাদের দিকেই এগিয়ে এল, গেটের দিকে গেল না।
বড় গেট খুলে দিতেই পুলিশের জিপ থেকে নেমে এলেন স্থানীয় থানার ওসি অভিষেক মালাকার। বিরাট বড় ভুঁড়িখানার উপর টাকসর্বস্ব একখানা মুণ্ডু উঁকি মারছে। চোখ দুটো কুতকুতে আর অত্যধিক মদ্যপানের জন্য নিচের ঠোঁট ঝুলে পড়েছে। লোকে আড়ালে তাঁকে ডাকে নিষেক মালদার। ভদ্রলোক বাঁ হাতের কারবারে খুব দক্ষ, সীমান্ত এলাকা হওয়ায় ফুলে ফেঁপে এখানে পোস্টিং নিয়ে আসবার কিছুদিনের ভিতরেই ফুলে ফেঁপে লাল হয়ে গেছেন, আর একইসঙ্গে তাঁর স্ত্রী চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন, তাও মালদারের নিষেকের প্রবৃত্তি দমন করা যায়নি।
তার পিছনে সুদীপ্ত। থানার সেকেণ্ড অফিসার। বেশ প্রত্যুৎপন্নমতি করিতকর্মা যুবক। ঘটে বুদ্ধি রাখে এবং তার বুদ্ধির জেরেই এখনও পর্যন্ত দশটা চুরি, তিনটে বড়ো ডাকাতির কেস সলভ করে ফেলেছে। এখনও শরীরে তেমন মেদ জমেনি বলে তাকে দেখতে খুব ছিপছিপে লাগে, যদিও এতটাও ছিপছিপে সে নয়।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৪: ভয়ংকর গর্ভ
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৩: এরকম ভুল হল কী করে? তবে কি আমাকে কিছুতে বশ করেছে?
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-২০: রায়পুর থেকে রাজিম
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৫: যে ছিল আমার ‘ব্রতচারিণী’
তাঁদের পিছন পিছন নামল পূষণ ও রিমিতা। বাসে ছানবিন এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে অকুস্থলে উপস্থিত সকলকেই বেশ নাজেহাল করেছেন মালাকার ও সুদীপ্ত। বিশেষ করে, মালাকারের অনেক জিজ্ঞাসা— আপনারা দুজনে কেন এখানে আসছিলেন? এত জায়গা থাকতে এখানেই কেন? দেখে তো স্বামী-স্ত্রী মনে হচ্ছে না! অপরের বৌ ইলোপ করে নিয়ে এসেছেন না কি? দুজনের বাড়িতে জানে কি না! পূষণের মনে হচ্ছিল, তারা যেন কিন্টারগার্টেনের ছাত্রী, আর স্কুল পালানোর অপরাধে তাদের জেরা করছেন স্বয়ং হেডমাস্টার।
রিমিতার মুখ থমথম করছে। খানিকক্ষণ আগে পর্যন্ত তার সঙ্গে যা-যা ঘটেছে, তা যেন সে বিশ্বাস করতে পারছে না এখনও। কোথায় সে ভেবেছিল একটা রোম্যান্টিক ডেটে যাচ্ছে, আর বাস্তবে যা ঘটেছে তাতে রোম্যান্টিকতা কোথাও নেই, আছে বীভৎসতা আর একরাশ খারাপ লাগা।
মালাকার কাপাডিয়াকে চেনেন। বললেন, “কী কাপাডিয়া, কেমন চলছে বিজনেস?”
“আজ্ঞে, আপনাদের দয়ায় চলছে মোটামুটি। এখনও আসছেন কেউ কেউ। নতুন ট্যুরিস্ট স্পট, পুরানো হয়ে গেলে আর কেউ আসবেন না।”
“আপনি তো আমাদের ভুলেই গিয়েছেন, থানার দিকে আর পা বাড়ান না, কাজেই আমাদের আসতে হল!”
“কী যে বলেন স্যার! এই তো গেল মাসেই তো গেলুম। যা দেওয়ার…”
তাঁকে থামিয়ে দিলেন মালাকার। কথাটা শেষ করতে দেওয়া যে আদৌ উচিত হবে না, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। বললেন, “সে কথা যাক। আমি অনডিউটিতে এসেছি। আচ্ছা, ভালো করে ভেবে বলুন, দরকার হলে রেজিস্টার দেখে জানান, এই দুই জন, মিঃ পূষণ মিত্র এবং রিমিতা দত্ত—এঁদের কি আজ বুকিং ছিল?”
রিমিতার মুখ থমথম করছে। খানিকক্ষণ আগে পর্যন্ত তার সঙ্গে যা-যা ঘটেছে, তা যেন সে বিশ্বাস করতে পারছে না এখনও। কোথায় সে ভেবেছিল একটা রোম্যান্টিক ডেটে যাচ্ছে, আর বাস্তবে যা ঘটেছে তাতে রোম্যান্টিকতা কোথাও নেই, আছে বীভৎসতা আর একরাশ খারাপ লাগা।
মালাকার কাপাডিয়াকে চেনেন। বললেন, “কী কাপাডিয়া, কেমন চলছে বিজনেস?”
“আজ্ঞে, আপনাদের দয়ায় চলছে মোটামুটি। এখনও আসছেন কেউ কেউ। নতুন ট্যুরিস্ট স্পট, পুরানো হয়ে গেলে আর কেউ আসবেন না।”
“আপনি তো আমাদের ভুলেই গিয়েছেন, থানার দিকে আর পা বাড়ান না, কাজেই আমাদের আসতে হল!”
“কী যে বলেন স্যার! এই তো গেল মাসেই তো গেলুম। যা দেওয়ার…”
তাঁকে থামিয়ে দিলেন মালাকার। কথাটা শেষ করতে দেওয়া যে আদৌ উচিত হবে না, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। বললেন, “সে কথা যাক। আমি অনডিউটিতে এসেছি। আচ্ছা, ভালো করে ভেবে বলুন, দরকার হলে রেজিস্টার দেখে জানান, এই দুই জন, মিঃ পূষণ মিত্র এবং রিমিতা দত্ত—এঁদের কি আজ বুকিং ছিল?”
আরও পড়ুন:
স্বাতী মোহন: এক এবং অন্যতমার আখ্যান…
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১৩: অদ্বিতীয় সম্রাট
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫: অল্প ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ভবিষ্যতে বড় লাভের কথা চিন্তা করা দরকার
কাপাডিয়া পূষণ এবং রিমিতা দুজনের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বললেন, “দেখুন, এঁরাই কি না জানি না, বুকিং-এর সময় তো আর ফোটো আইডেন্টিটি লাগে না, তবে ওই নামে দুজনের আজ বিকেলের মধ্যে ইন করার কথা ছিল, তা ঠিক। তার জন্য রেজিস্টার দেখার দরকার নেই। বলতে গেলে, আমি ওঁদের জন্য সন্ধ্যে থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছিলাম।”
“কেন? উদ্বিগ্ন কেন?” মালাকারের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে উঠল।
“আজ্ঞে, ওঁদের বিকেল বিকেল আসার কথা, রাত বাড়ছিল, ওঁরা তখনও আসছিলেন না। জানেন তো, অনেক সময় পার্টি সামান্য টাকা দিয়ে বুক করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাস্ট মিনিটে ক্যানসেল ভি করেন। এদিকে আমাদের এই রিসর্টে বুকিং ছাড়া কাউকে অ্যালাউ করা হয় না। কেউ আসেও না আগে থেকে ঠিক না করে। সেক্ষেত্রে লাস্ট মিনিট ক্যানসেল করলে আমাদের অনেক নুকসান হয়ে যায়, আর কী। আমি দু’বার ফোন পর্যন্ত করেছিলাম, কিন্তু এঁনারা কেউ ফোন তুললেন না। এই জন্যই চিন্তা হচ্ছিল আর কী!”
মালাকার পূষণের দিকে তাকিয়ে বললেন, “দেখলেন তো ঠিক আমি আপনাদের যে প্রশ্নটা করছিলাম, ইনিও সেই সন্দেহটাই জানালেন। আপনাদের ট্রেন এখানে ঢোকে তিনটে পঞ্চাশে। স্টেশন থেকে এখানে আসতে গেলে আপনাদের এত দেরি হওয়ার তো কথা নয় ! আগের বাস তো ছিল। তা না ধরে আপনারা শেষ বাসে কেন এলেন, সেটাই তো আমাদের সন্দেহ জাগিয়ে তুলছে।”
পূষণ আড়চোখে রিমিতার দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর জবাব দিল, ‘আপনাদের আগেই যা বলেছি, এখনও তাই বলছি। ট্রেন আজ পাক্কা এক ঘন্টা ছাব্বিশ মিনিট লেটে রান করছিল। ফলে এই বাসটা, যেটা শেষ বাস কি না আমরা জানি না, তা না ধরে আমাদের উপায় ছিল না। তাছাড়া আমরা রিসর্টের কার সার্ভিস আছে শুনেছিলাম, কিন্তু ম্যানেজার বললেন, ড্রাইভার বিশেষ কারণে বাড়ি চলে যাওয়ায় আপাতত ওই সার্ভিস দিতে পারবেন না। ফলে…! আপনারা স্টেশনে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, ট্রেন লেট ছিল কি না!”
“সে আপনাকে বলতে হবে না। আমাদের কী করতে হবে তা আমরা জানি। প্লিজ অ্যাডভাইস দেবেন না। এই লাইনে কাজ করতে করতে চুল পেকে গেল!”
রিমিতা এতক্ষণে কথা বলল, “আসলে কী জানেন, কারুর চুল পাকলেও মনের বয়স কাঁচাই থাকে, তখনই সমস্যা হয়। আপনি সন্ধ্যে থেকে এমন সব প্রশ্ন করে চলেছেন, মনে হচ্ছে, অন্যদের কথা শুনে আমরা যদি আপনাদের ইনফর্ম না করে ওখান থেকে চলে আসতাম, তাহলেই ভালো ছিল!”
“ম্যাডাম, আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন!” মালাকার গর্জে উঠলেন।
“মোটেই না। আপনাদের লালবাজারে যাতায়াত করতে হয় নিশ্চয়ই। কাজে কর্মে। যেহেতু ওটাই আপনাদের হেড কোয়ার্টার !”
“সে খবরে আপনার কী দরকার?”
“আমার মামা ওখানে সামান্য কাজ করেন, চিনবেন হয়তো!” বাঁকা গলায় বলল রিমিতা।
“আপনার মামা! লালবাজারে কত এলেতেলে কাজ করে, তার মধ্যে কে আপনার মামা তা জেনে আমার লাভ? চমকাচ্ছেন?”
“মোটেই না। আমার মামা গোয়েন্দা বিভাগে আছেন কি না। তাই বলছিলাম চিনলেও চিনতে পারেন। মাঝে মধ্যে ওখান থেকে হুড়োও নিশ্চয়ই খান? আমার মামার নাম অনাদিকুমার ঘোষ। লোকে একেজি বলেই ডাকে। চেনেন?”
“আপনি একেজি স্যার আই মিন ডিসি ডিডি সাহেবের ভাগ্নি?” মালাকারের মুখ হাঁ হয়ে গিয়েছে।
“কেন? উদ্বিগ্ন কেন?” মালাকারের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে উঠল।
“আজ্ঞে, ওঁদের বিকেল বিকেল আসার কথা, রাত বাড়ছিল, ওঁরা তখনও আসছিলেন না। জানেন তো, অনেক সময় পার্টি সামান্য টাকা দিয়ে বুক করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাস্ট মিনিটে ক্যানসেল ভি করেন। এদিকে আমাদের এই রিসর্টে বুকিং ছাড়া কাউকে অ্যালাউ করা হয় না। কেউ আসেও না আগে থেকে ঠিক না করে। সেক্ষেত্রে লাস্ট মিনিট ক্যানসেল করলে আমাদের অনেক নুকসান হয়ে যায়, আর কী। আমি দু’বার ফোন পর্যন্ত করেছিলাম, কিন্তু এঁনারা কেউ ফোন তুললেন না। এই জন্যই চিন্তা হচ্ছিল আর কী!”
মালাকার পূষণের দিকে তাকিয়ে বললেন, “দেখলেন তো ঠিক আমি আপনাদের যে প্রশ্নটা করছিলাম, ইনিও সেই সন্দেহটাই জানালেন। আপনাদের ট্রেন এখানে ঢোকে তিনটে পঞ্চাশে। স্টেশন থেকে এখানে আসতে গেলে আপনাদের এত দেরি হওয়ার তো কথা নয় ! আগের বাস তো ছিল। তা না ধরে আপনারা শেষ বাসে কেন এলেন, সেটাই তো আমাদের সন্দেহ জাগিয়ে তুলছে।”
পূষণ আড়চোখে রিমিতার দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর জবাব দিল, ‘আপনাদের আগেই যা বলেছি, এখনও তাই বলছি। ট্রেন আজ পাক্কা এক ঘন্টা ছাব্বিশ মিনিট লেটে রান করছিল। ফলে এই বাসটা, যেটা শেষ বাস কি না আমরা জানি না, তা না ধরে আমাদের উপায় ছিল না। তাছাড়া আমরা রিসর্টের কার সার্ভিস আছে শুনেছিলাম, কিন্তু ম্যানেজার বললেন, ড্রাইভার বিশেষ কারণে বাড়ি চলে যাওয়ায় আপাতত ওই সার্ভিস দিতে পারবেন না। ফলে…! আপনারা স্টেশনে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, ট্রেন লেট ছিল কি না!”
“সে আপনাকে বলতে হবে না। আমাদের কী করতে হবে তা আমরা জানি। প্লিজ অ্যাডভাইস দেবেন না। এই লাইনে কাজ করতে করতে চুল পেকে গেল!”
রিমিতা এতক্ষণে কথা বলল, “আসলে কী জানেন, কারুর চুল পাকলেও মনের বয়স কাঁচাই থাকে, তখনই সমস্যা হয়। আপনি সন্ধ্যে থেকে এমন সব প্রশ্ন করে চলেছেন, মনে হচ্ছে, অন্যদের কথা শুনে আমরা যদি আপনাদের ইনফর্ম না করে ওখান থেকে চলে আসতাম, তাহলেই ভালো ছিল!”
“ম্যাডাম, আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন!” মালাকার গর্জে উঠলেন।
“মোটেই না। আপনাদের লালবাজারে যাতায়াত করতে হয় নিশ্চয়ই। কাজে কর্মে। যেহেতু ওটাই আপনাদের হেড কোয়ার্টার !”
“সে খবরে আপনার কী দরকার?”
“আমার মামা ওখানে সামান্য কাজ করেন, চিনবেন হয়তো!” বাঁকা গলায় বলল রিমিতা।
“আপনার মামা! লালবাজারে কত এলেতেলে কাজ করে, তার মধ্যে কে আপনার মামা তা জেনে আমার লাভ? চমকাচ্ছেন?”
“মোটেই না। আমার মামা গোয়েন্দা বিভাগে আছেন কি না। তাই বলছিলাম চিনলেও চিনতে পারেন। মাঝে মধ্যে ওখান থেকে হুড়োও নিশ্চয়ই খান? আমার মামার নাম অনাদিকুমার ঘোষ। লোকে একেজি বলেই ডাকে। চেনেন?”
“আপনি একেজি স্যার আই মিন ডিসি ডিডি সাহেবের ভাগ্নি?” মালাকারের মুখ হাঁ হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১: কুরুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য, দ্রোণাচার্য এবং কয়েকটি প্রশ্ন
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২০: শোওয়ার বালিশ বিছানা কেমন হবে? শক্ত না নরম?
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১১: ‘কটি পতঙ্গ’ ছবিতে পঞ্চমের সুরে কিশোর নিজেকে উজাড় করে দেন
“বিশ্বাস না হলে ফোন করে জেনে নিতে পারেন। নাম্বার আছে? না কি দেবো?” রিমিতার গলায় ক্ষুরধার শ্লেষ, “আপনি তদন্তের নামে তখন থেকে যারা পুলিশকে সহযোগিতা করবার জন্য খবর দিল, তাদের হ্যারাস করছেন শুনে মামা নিশ্চয়ই খুব খুশি হবেন। নিন, আমিই না হয় কল করছি, কথা বলে নিন।”
মালাকর যেন পালাতে পারলে বাঁচে। কোনরকমে বললেন, “ম্যাডাম, আপনি ভুল বুঝছেন। আমরা জাস্ট রুটিন তদন্ত করছি মাত্র। আমার কাছে ওনার নাম্বার আছে। সব থানাতেই আছে। আমি প্রয়োজনে ওঁর সঙ্গে কথা বলে নেবো। এখন রাত্রি হিওয়েছে। আপনারা রেস্ট নিন। আর হ্যাঁ, দরকার পড়লে আবার একটু বিরক্ত করতে পারি। কাপাডিয়া, এনাদের নিয়ে যাও। আর হ্যাঁ, রিসর্টে যারা যারা আছে, তাদের নাম-ধাম ইত্যাদির একটা লিস্ট কাল থানায় জমা করে আসবেন। আর কাউকে এখনই রিসর্ট ছেড়ে যেতে নিষেধ করবেন। এখন আসি ! আসি ম্যাডাম, আসি স্যার!” শেষের কথাগুলি রিমিতা ও পূষণকে উদ্দেশ্য করে বলা।
কাপাডিয়া একটু অবাক। বিভ্রান্তও। অনিল আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আমাদের যে কাল পর্যন্ত বুকিং! ফিরতেই হবে। পরশু সোমবার অফিস আছে যে! কী ব্যাপারে আমাদের এখানে আটক করলেন জানতে পারি?”
“আপনি?”
কাপাডিয়া তাড়াতাড়ি বললেন, “আজ্ঞে, ওঁরা ছয় জনের একটা পার্টি, কাল সে আছেন এখানে। আগামীকাল সানডে বিকেলে চেক আউট করবেন, ঠিক ছিল।”
“অফিসে জানিয়ে দিন, সোমবার জয়েন করতে পারবেন না। আর কাল সকালে ছয় জন থানায় দেখা করবেন।”
“আভি তো পাঁচ হ্যায়। এক সাহাব তো লউট কে নেহি আয়া আভি তক!”
মালাকারের ভ্রু কুঁচকে উঠল, “মানে?”
অনিল বলল, “আমি বলছি স্যার। আমাদের বন্ধু আর্য ফ্রিল্যান্স করে। আমরা আজ পিকনিকের জন্য গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই আর্য আমাদের একজনের বাইক নিয়ে কোথাও গিয়েছিল কিছু স্কুপ নিউজ করার জন্য। কাল সে ফিরবে আমরা এখান থেকে চেক আউট করার আগেই, এটুকুই ঠিক ছিল। তবে পৌঁছে সে জানাবে বললেও এখনো জানিয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।”
“আর্য বাবু? বাইকে করে গিয়েছিলেন? এখনও ফোন করেননি? তা আপনারা কেউ করেছিলেন?”
“করেছিলাম স্যার। আমার বাইক নিয়েই সে গিয়েছিল। জানাবে বলেছিল। কিন্তু এখনও কেন জানায় নি বুঝতে পারছি না। আমি বার-তিনেক করেছিলাম। উন্মেষা, আই মিন তার কলেজের বন্ধু, আমার উড বি ওয়াইফ, সে-ও করেছিল, কিন্তু বারবারই বলছে, ফোন স্যুইচড্ অফ্। বুঝতে পারছি না!” অঞ্জন বলে উঠল।
সকলেই অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে। অনিলেরাও। অঞ্জন যে কখন এসে উপস্থিত হয়েছে তারা কেউ খেয়াল করেনি। তবে উন্মেষা আসেনি। তাকে কোথাও দেখা গেল না।
“আপনি ?”
“আমি অঞ্জন সাকসেনা। ছ’জনের যে গ্রুপটা এসেছে কাল, আমি তাদের মধ্যে একজন।”
মালাকার বললেন, “ও, আচ্ছা।”
“স্ট্রেঞ্জ!” সুদীপ্ত আপনমনে এতক্ষণে বলে উঠল, “তবে কী…!” —চলবে
মালাকর যেন পালাতে পারলে বাঁচে। কোনরকমে বললেন, “ম্যাডাম, আপনি ভুল বুঝছেন। আমরা জাস্ট রুটিন তদন্ত করছি মাত্র। আমার কাছে ওনার নাম্বার আছে। সব থানাতেই আছে। আমি প্রয়োজনে ওঁর সঙ্গে কথা বলে নেবো। এখন রাত্রি হিওয়েছে। আপনারা রেস্ট নিন। আর হ্যাঁ, দরকার পড়লে আবার একটু বিরক্ত করতে পারি। কাপাডিয়া, এনাদের নিয়ে যাও। আর হ্যাঁ, রিসর্টে যারা যারা আছে, তাদের নাম-ধাম ইত্যাদির একটা লিস্ট কাল থানায় জমা করে আসবেন। আর কাউকে এখনই রিসর্ট ছেড়ে যেতে নিষেধ করবেন। এখন আসি ! আসি ম্যাডাম, আসি স্যার!” শেষের কথাগুলি রিমিতা ও পূষণকে উদ্দেশ্য করে বলা।
কাপাডিয়া একটু অবাক। বিভ্রান্তও। অনিল আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আমাদের যে কাল পর্যন্ত বুকিং! ফিরতেই হবে। পরশু সোমবার অফিস আছে যে! কী ব্যাপারে আমাদের এখানে আটক করলেন জানতে পারি?”
“আপনি?”
কাপাডিয়া তাড়াতাড়ি বললেন, “আজ্ঞে, ওঁরা ছয় জনের একটা পার্টি, কাল সে আছেন এখানে। আগামীকাল সানডে বিকেলে চেক আউট করবেন, ঠিক ছিল।”
“অফিসে জানিয়ে দিন, সোমবার জয়েন করতে পারবেন না। আর কাল সকালে ছয় জন থানায় দেখা করবেন।”
“আভি তো পাঁচ হ্যায়। এক সাহাব তো লউট কে নেহি আয়া আভি তক!”
মালাকারের ভ্রু কুঁচকে উঠল, “মানে?”
অনিল বলল, “আমি বলছি স্যার। আমাদের বন্ধু আর্য ফ্রিল্যান্স করে। আমরা আজ পিকনিকের জন্য গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই আর্য আমাদের একজনের বাইক নিয়ে কোথাও গিয়েছিল কিছু স্কুপ নিউজ করার জন্য। কাল সে ফিরবে আমরা এখান থেকে চেক আউট করার আগেই, এটুকুই ঠিক ছিল। তবে পৌঁছে সে জানাবে বললেও এখনো জানিয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।”
“আর্য বাবু? বাইকে করে গিয়েছিলেন? এখনও ফোন করেননি? তা আপনারা কেউ করেছিলেন?”
“করেছিলাম স্যার। আমার বাইক নিয়েই সে গিয়েছিল। জানাবে বলেছিল। কিন্তু এখনও কেন জানায় নি বুঝতে পারছি না। আমি বার-তিনেক করেছিলাম। উন্মেষা, আই মিন তার কলেজের বন্ধু, আমার উড বি ওয়াইফ, সে-ও করেছিল, কিন্তু বারবারই বলছে, ফোন স্যুইচড্ অফ্। বুঝতে পারছি না!” অঞ্জন বলে উঠল।
সকলেই অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে। অনিলেরাও। অঞ্জন যে কখন এসে উপস্থিত হয়েছে তারা কেউ খেয়াল করেনি। তবে উন্মেষা আসেনি। তাকে কোথাও দেখা গেল না।
“আপনি ?”
“আমি অঞ্জন সাকসেনা। ছ’জনের যে গ্রুপটা এসেছে কাল, আমি তাদের মধ্যে একজন।”
মালাকার বললেন, “ও, আচ্ছা।”
“স্ট্রেঞ্জ!” সুদীপ্ত আপনমনে এতক্ষণে বলে উঠল, “তবে কী…!” —চলবে
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel) – পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।