কামিনী রায়।
মেয়েদের লেখার গল্প করতে করতে উনিশ শতকের আলো আঁধারে ঘুরছি। সাহিত্য তখন বড় প্রিয়। বাঙালি পুরুষের কলম অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো বিশ্বজয় করছে। এরই মধ্যে কয়েকটি মেয়ে নিজেদের জীবনের গল্পগুলো বড় সাধে বড় আদরে নকশিকাঁথার মতো বুনে রাখছে লেখার খাতায়। সেই সময়ের আরও একজন মহিলা লেখক সরলা দেবী চৌধুরাণী স্মৃতির পুরনো পাতা উল্টেপাল্টে ‘কামিনীদি’র কথা বলেছিলেন। সরলাদেবী এবং তাঁর বান্ধবীদের মনের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জেগে ওঠার অন্তরালে ছিলেন তাঁদের স্কুলের উঁচু ক্লাসের কামিনীদি তথা কামিনী রায় এবং অবলা বসু।
কামিনী রায় শুধু লেখক ছিলেন না। তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়া! বাখরগঞ্জ জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ের মধ্যে যে নেতৃত্ব দেওয়ার যে ক্ষমতা ছিল তা একটি পরাধীন জাতির জন্য অগ্নিশিখা হয়ে উঠতে পারত। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা যিনি সংস্কৃত অনার্স সহ বিএ পাস করেন। তারপর যখন ইলবার্ট বিল সংক্রান্ত আন্দোলনের জন্য সুরেন্দ্রনাথ কারাবরণ করেন তখন কামিনী রায়ের নেতৃত্বে গর্জে ওঠে বেথুন স্কুল। বেথুন স্কুল আর কলেজে শিক্ষকতা করতেন তিনি। কামিনী রায় ছিলেন হেমচন্দ্রের লেখার ভক্ত। তিনটি কারণে হেমচন্দ্রের লেখা ভালো লাগত কামিনী রায়ের— স্বদেশপ্রেম, নারীজাতির প্রতি সম্মান এবং লেখায় ইতিবাচকতা। দেশের পরাধীনতা কামিনী রায়কে বড় কষ্ট দিত। তাঁর লেখাতেও ছায়া ফেলবে দেশপ্রেম। তাঁর অকপট মনের প্রতিফলন দেখা যাবে তাঁর লেখায়।
কামিনী রায় শুধু লেখক ছিলেন না। তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়া! বাখরগঞ্জ জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ের মধ্যে যে নেতৃত্ব দেওয়ার যে ক্ষমতা ছিল তা একটি পরাধীন জাতির জন্য অগ্নিশিখা হয়ে উঠতে পারত। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা যিনি সংস্কৃত অনার্স সহ বিএ পাস করেন। তারপর যখন ইলবার্ট বিল সংক্রান্ত আন্দোলনের জন্য সুরেন্দ্রনাথ কারাবরণ করেন তখন কামিনী রায়ের নেতৃত্বে গর্জে ওঠে বেথুন স্কুল। বেথুন স্কুল আর কলেজে শিক্ষকতা করতেন তিনি। কামিনী রায় ছিলেন হেমচন্দ্রের লেখার ভক্ত। তিনটি কারণে হেমচন্দ্রের লেখা ভালো লাগত কামিনী রায়ের— স্বদেশপ্রেম, নারীজাতির প্রতি সম্মান এবং লেখায় ইতিবাচকতা। দেশের পরাধীনতা কামিনী রায়কে বড় কষ্ট দিত। তাঁর লেখাতেও ছায়া ফেলবে দেশপ্রেম। তাঁর অকপট মনের প্রতিফলন দেখা যাবে তাঁর লেখায়।
যেসময় নারী শিক্ষাই প্রায় অপ্রচলিত, সেই সময় কামিনী রায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে — ‘আলো ও ছায়া’! এই বইটিরই ভূমিকা লিখেছিলেন হেমচন্দ্র। বইয়ের হরফগুলি সেই সময়ের প্রতিকূলে মূর্তিমান প্রতিবাদ। কামিনী রায়ের অক্ষরজ্ঞান হয় তাঁর ঠাকুর্দার কাছে। কামিনী রায় মায়ের কাছে গোপনে বর্ণমালা শিখেছেন। যেন কত গর্হিত কাজ। তারপর এই মেয়েটিই ধীরে ধীরে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবেন। ছায়ার থেকে আলোর পথে এই যে উত্তরণ— সেই গল্প অনেকটাই অজানা। আসলে কামিনী রায় ছিলেন দৃপ্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যে মেয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি নিজের সব কঠিন লড়াইকে তুচ্ছ ভাবতেই তো অভ্যস্ত ছিলেন। কাজেই কামিনী রায়ের জীবনে সমস্যা থাকলেও তা প্রকাশ করেননি কোথাও।
তবে ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ে হিসেবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছিলই। তার সঙ্গে সাহস আর আত্মপ্রত্যয় কামিনী রায়কে কবিজন্ম দিয়েছে। অথচ জীবনের প্রথম কাব্যগ্রন্থে তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু তাঁর প্রতিভা তাঁকে জনৈক বঙ্গমহিলা হয়ে থাকতে দেয়নি। এইখানেই সরস্বতীর লীলাকমল হাতে তাঁর আজীবন যাত্রা।
কামিনী রায়ের বিবাহিত জীবন শুরু হয় কবিতার হাত ধরে। তাঁর লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে যান সিবিলিয়ান কেদারনাথ রায়। শুরু হয় এক কবির সঙ্গে ঘরকন্না। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে কেদারনাথের আকস্মিক মৃত্যু কামিনী রায়ের মনে শোকের এক মস্ত গাছ তৈরি করে। জীবন হয়ে ওঠে কঠিন ও কর্মবহুল। বিধবাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন তিনি। সেই আমলে যখন মেয়েদের ঘর হইতে আঙিনা বিদেশ— তখন এ বড় কঠিন কাজ ছিল।
তবে ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ে হিসেবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছিলই। তার সঙ্গে সাহস আর আত্মপ্রত্যয় কামিনী রায়কে কবিজন্ম দিয়েছে। অথচ জীবনের প্রথম কাব্যগ্রন্থে তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু তাঁর প্রতিভা তাঁকে জনৈক বঙ্গমহিলা হয়ে থাকতে দেয়নি। এইখানেই সরস্বতীর লীলাকমল হাতে তাঁর আজীবন যাত্রা।
কামিনী রায়ের বিবাহিত জীবন শুরু হয় কবিতার হাত ধরে। তাঁর লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে যান সিবিলিয়ান কেদারনাথ রায়। শুরু হয় এক কবির সঙ্গে ঘরকন্না। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে কেদারনাথের আকস্মিক মৃত্যু কামিনী রায়ের মনে শোকের এক মস্ত গাছ তৈরি করে। জীবন হয়ে ওঠে কঠিন ও কর্মবহুল। বিধবাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন তিনি। সেই আমলে যখন মেয়েদের ঘর হইতে আঙিনা বিদেশ— তখন এ বড় কঠিন কাজ ছিল।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৮: মোহিতকুমারী এক মহিলা আত্মজীবনীকার
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৩: সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে ম্যানগ্রোভ
কামিনী রায়ের মন ছিল অন্যরকম। তথাকথিত রোম্যান্টিক আবেগ তাঁর লেখায় খুঁজে পাওয়া যেত না। তিনি কবিতা সম্পর্কে একটি অমোঘ কথা বলেছিলেন, ‘সুখ দুঃখ ক্ষুধা তৃষ্ণা আশা আকাঙ্ক্ষা গভীর আনন্দ ও তীব্র বেদনা এই সকল দিয়া যে মানবজীবন তাহার একটা জাগ্রত অস্তিত্বও আছে এবং তাহার একটা সবল প্রকাশের উপযোগী কবিতাও আছে ও থাকিবে।’ সেইদিক থেকে চিরাচরিত ফেমিনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে কামিনী রায়ের লেখাকে দেখলে চলবে না। যদিও অনেকেই কামিনী রায়ের লেখা ও কাজকে নারীবাদের ছকে ফেলতে চেয়েছেন। আমরা বলব মানুষ হিসেবে পীড়িত মানুষের জন্য কাজ করেছেন কামিনী রায়। তাঁর লেখা মানুষের কথা বলেছে। তাঁর শব্দে শক্তি ছিল আর বক্তৃতায় ছিল তেজ।
কামিনী রায়ের বক্তৃতা শুনে স্ত্রীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছিল সেই সময়ের অশিক্ষার আঁধারে থাকা মেয়েরা। কামিনী ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র আর্কেটাইপ থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। মেয়েদেরও মুক্ত করতে চেয়েছিলেন সেই ভাবনা থেকে। কামিনী রায়ের একটি লেখা ‘ঠাকুমার চিঠি’! সেখানে ঠাকুমা আর নাতনি যেন দুটি যুগ, দুটি সময়। ঠাকুমা পুরনো সময়— দ্বিধায় থরোথরো। নাতনি নতুন আলোর কথা বলে। মা বা স্ত্রী সত্তার বাইরেও যে মেয়েদের আলাদা অস্তিত্ত্ব! এর জন্য নারীবাদ নয়। মনুষ্যত্ব প্রয়োজন।
কামিনী রায়ের বক্তৃতা শুনে স্ত্রীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছিল সেই সময়ের অশিক্ষার আঁধারে থাকা মেয়েরা। কামিনী ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র আর্কেটাইপ থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। মেয়েদেরও মুক্ত করতে চেয়েছিলেন সেই ভাবনা থেকে। কামিনী রায়ের একটি লেখা ‘ঠাকুমার চিঠি’! সেখানে ঠাকুমা আর নাতনি যেন দুটি যুগ, দুটি সময়। ঠাকুমা পুরনো সময়— দ্বিধায় থরোথরো। নাতনি নতুন আলোর কথা বলে। মা বা স্ত্রী সত্তার বাইরেও যে মেয়েদের আলাদা অস্তিত্ত্ব! এর জন্য নারীবাদ নয়। মনুষ্যত্ব প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬২: ধনময়ী জ্ঞানময়ী-র পাশে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪০: মা সারদার নিজবাটি
আলো ও ছায়া, নির্মাল্য, সাদ্ধিকী, পৌরাণিকী, অম্বা, অশোকসঙ্গীত, সিতীমা, দীপ ও ধূপ, জীবনপথে, গুঞ্জন, ধর্মপুত্র, ঠাকুরমার চিঠি ইত্যাদি লেখা কামিনী রায়ের ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করেছে। যে সময় পুরুষের সাহিত্যের নারীচরিত্রগুলি ললিতলবঙ্গলতা, পুরুষের প্রেমের ভিখারিনী— সেখানে কামিনী রায়ের বলিষ্ঠ কলম অন্য স্বরতরঙ্গ তৈরি করে। কামিনী রায়ের লেখায় জীবন অভিজ্ঞতা কম— এমন অভিযোগ করেছিলেন কবি হেমচন্দ্র। তাঁর লেখায় নারীত্বের অনুসন্ধান করে গিয়েছেন তিনি। কামিনী রায়ের এই সমালোচনা মনো মতো হয়নি। তবে একথা সত্যি হেমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের প্রভাব তাঁর সাহিত্যে স্পষ্ট। সনেট লেখারও চেষ্টা করেছেন। সবসময় ছন্দগত দিক থেকে লেখা সার্থক না হলেও রূপকল্পগুলি তাঁর কবিসত্তায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছে।
কামিনী রায় ‘জনৈক বঙ্গমহিলা’ ছদ্মনামে লিখতেন। তিনি নারী শ্রম তদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন কামিনী রায়। তিনি জগত্তারিণী পদক পেয়েছিলেন। বঙ্গীয় লিটারারি কনফারেন্সের সভাপতিও ছিলেন তিনি। একসময় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ সভাপতি ছিলেন কামিনী রায়। তাঁর সংগঠন মেয়েদের জন্য অনেক লড়াই করে গিয়েছেন। এই সংগঠনের চাপে পড়ে মেয়েদের ভোটাধিকারের দাবীমেনে নেওয়া হয়। জীবনের শেষভাগে হাজারিবাগে কাটিয়েছিলেন তিনি। তাঁর লেখা তাঁকে তাঁর জনৈক ছদ্মনামের আড়াল থেকে কবির স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই সময়ের এক শক্তিশালী কলমছিল তাঁর।
কামিনী রায় ‘জনৈক বঙ্গমহিলা’ ছদ্মনামে লিখতেন। তিনি নারী শ্রম তদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন কামিনী রায়। তিনি জগত্তারিণী পদক পেয়েছিলেন। বঙ্গীয় লিটারারি কনফারেন্সের সভাপতিও ছিলেন তিনি। একসময় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ সভাপতি ছিলেন কামিনী রায়। তাঁর সংগঠন মেয়েদের জন্য অনেক লড়াই করে গিয়েছেন। এই সংগঠনের চাপে পড়ে মেয়েদের ভোটাধিকারের দাবীমেনে নেওয়া হয়। জীবনের শেষভাগে হাজারিবাগে কাটিয়েছিলেন তিনি। তাঁর লেখা তাঁকে তাঁর জনৈক ছদ্মনামের আড়াল থেকে কবির স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই সময়ের এক শক্তিশালী কলমছিল তাঁর।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৭: সাধারণের প্রতি পাণ্ডবদের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ কোন মহাভারতীয় শিক্ষা?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক কবি কামিনী রায়। একবার যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্তকে লেখা একটি চিঠিতে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় আমি কিছু অকালপক্ক ছিলাম। কতগুলো বিষয় আমি রবীন্দ্রনাথের পূর্বেই লিখিয়াছি। কিন্তু তিনি যখন লিখিয়াছেন, অনেক সুন্দর করিয়া লিখিয়াছেন।’ এই কথা বলতে পেরেছিলেন তিনি রবীন্দ্রযুগের সাহিত্যিক হয়ে। কামিনী রায়ের দৃপ্ত চরিত্র তাঁর সাহিত্যেও প্রভাব ফেলেছে। তিনি ‘বাক্য বণিক’ দের পছন্দ করতেন না। বিশ্বাস করতেন লেখনি আর কালি কলম দিয়ে প্রেয়সীকে বাঁচানো যাবে না। মেয়েদের বাঁচাতে গেলে চারিত্রিক তেজ চাই। মেয়েদের শিক্ষার আলো দেখানো চাই। কিছু কবিতায় পুরুষকে তীব্র ব্যঙ্গও করেছেন তিনি—
‘ওগো আমার তিনটে পাশ
ওগো আমার বিএ
ওগো আমার রক্তচক্ষু
হরিত বরণ টিয়ে।
তোমায় ওরা সাধছে হাজার দশেক টাকা দিয়ে,
ওদের কন্যা উদ্ধার করবে খালি হাতে গিয়ে।
ওদের দেওয়া গোরা বাজনা আলোর মিছিল নিয়ে,
ওগো বিশ্ব বিদ্যাজয়ী বীর সিংহ বিএ
থাক বেঁচে জীএ।
ধরায় জন্ম পুরুষ হয়ে, লিখতে পড়তে শিখে
দানের পয়সায় পুষবে কেন নিজের নারীটিকে?
ওগো আমার বিএ
ওগো আমার রক্তচক্ষু
হরিত বরণ টিয়ে।
তোমায় ওরা সাধছে হাজার দশেক টাকা দিয়ে,
ওদের কন্যা উদ্ধার করবে খালি হাতে গিয়ে।
ওদের দেওয়া গোরা বাজনা আলোর মিছিল নিয়ে,
ওগো বিশ্ব বিদ্যাজয়ী বীর সিংহ বিএ
থাক বেঁচে জীএ।
ধরায় জন্ম পুরুষ হয়ে, লিখতে পড়তে শিখে
দানের পয়সায় পুষবে কেন নিজের নারীটিকে?
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
ইতিহাস কথা কও, পূর্বোত্তরে ইতিহাস ঐতিহ্যে হাতি
পণপ্রথার বিরুদ্ধে সরব এই নারী অন্তরে ছিল অপর্যাপ্ত শক্তি। তাঁর লেখাগুলি জেন্ডার সচেতন। সেই আমলে এত আধুনিক ভাবনার লেখা খুব কম ছিল। এছাড়াও ছিল তাঁর স্বদেশপ্রেম। তাঁর গানে সুর দিয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। জীবনে দুঃখ পেলেও যুদ্ধ করে সুখকে করায়ত্ত করার কথা বলেছিলেন তিনি। তাঁর লেখা অসংখ্য লেখার ভিড়ে হারিয়ে যাইনি। হয়তো এই তাঁর পুরস্কার। তাঁর ১৫৫ তম জন্মদিনে গুগল তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
কামিনী রায় শুধু নিজে লিখতেন না, সমসাময়িক সাহিত্যিকদের উৎসাহ দিতেন লিখতে। যেমন বরিশাল সফরের সময় তিনি কবি সুফিয়া কামালকে লেখালেখি করতে বলেছিলেন। এই যে পারস্পরিক উৎসাহ — এ ভাবে লেখক গোষ্ঠী তৈরি হতে পারে। সমাজের পক্ষে তা অত্যন্ত জরুরি। এই সংগঠনশক্তি একটি সাহিত্যিক সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কামিনী রায় সত্যি এক বিপ্লবের নাম। রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় ইন্দ্রজাল খুঁজে পাননি। কামিনী রায়ও রবীন্দ্রনাথের লেখায় কিছু একটার অভাব খুঁজে পেয়েছিলেন। হতে পারে বাস্তবতার অভাব। সেই দিক থেকে কামিনী রায় এক সাহসী সমালোচকও বটে।
উনিশ বিশ শতক মেয়েদের জন্য বড় সহজ সময় ছিল না। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত কামিনী রায় একটি চর্চিত নাম। গল্প নয়, সত্যি কথা। কলমের জোর যে অসির চেয়েও তীব্র কিছু কিছু লেখক তা প্রমাণ করে গিয়েছুন। কামিনী রায় এমনই একজন লেখক!
কামিনী রায় শুধু নিজে লিখতেন না, সমসাময়িক সাহিত্যিকদের উৎসাহ দিতেন লিখতে। যেমন বরিশাল সফরের সময় তিনি কবি সুফিয়া কামালকে লেখালেখি করতে বলেছিলেন। এই যে পারস্পরিক উৎসাহ — এ ভাবে লেখক গোষ্ঠী তৈরি হতে পারে। সমাজের পক্ষে তা অত্যন্ত জরুরি। এই সংগঠনশক্তি একটি সাহিত্যিক সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কামিনী রায় সত্যি এক বিপ্লবের নাম। রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় ইন্দ্রজাল খুঁজে পাননি। কামিনী রায়ও রবীন্দ্রনাথের লেখায় কিছু একটার অভাব খুঁজে পেয়েছিলেন। হতে পারে বাস্তবতার অভাব। সেই দিক থেকে কামিনী রায় এক সাহসী সমালোচকও বটে।
উনিশ বিশ শতক মেয়েদের জন্য বড় সহজ সময় ছিল না। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত কামিনী রায় একটি চর্চিত নাম। গল্প নয়, সত্যি কথা। কলমের জোর যে অসির চেয়েও তীব্র কিছু কিছু লেখক তা প্রমাণ করে গিয়েছুন। কামিনী রায় এমনই একজন লেখক!
* ড. মহুয়া দাশগুপ্ত, শিক্ষক এবং লেখক। রবীন্দ্রনাথের দেবলোক, জোড়াসাঁকোর জার্নাল, আমি নারী আমি মহীয়সী, কথানদীর কূলে, লেডিজ স্পেশাল, পথে পুরুষ বিবর্জিত, পরীক্ষায় আসবে না এবং ভুবনডাঙার বাউল তাঁর লেখা একক বই। বাংলা কথকতা নিয়ে একক ভাবে কাজ করছেন।