মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


‘যা আমাকে অমরত্বই দিতে পারে না, সে ঘণ্টার ছাতা টাকাকড়ি নিয়ে আমি করবটা কী? ধুর!’—
দুই গিন্নিকে ধনরত্নের ‘তুক’ দিয়ে পণ্ডিত কত্তার সংসারত্যাগী পিঠটান দেওয়ার সময়টিতে এমনটাই ‘জোর সা ঝটকা’ দিয়েছিলেন তাঁদের একজন। অবধারিত সত্য যে সে ভাষাছাঁদ অবশ্যই এমন জেন-ওয়াই মার্কা ছিল না, কিন্তু বয়ানটির অভিমুখ মোটেই তাতে পাল্টি খায় না বাপু!
এ হেন ভাষ্য প্রথমবার শুনে যে কারুর মনে পড়ে যাবে গত উনিশ শতকে বলা আরেক অমরত্বপ্রার্থীর বয়ান—
‘অমর করিয়া বর দেহ দাসে, সুবরদে!—
ফুটি যেন স্মৃতি-জলে,
মানসে, মা, যথা ফলে
মধুময় তামরস কি বসন্ত, কি শরদে!’

কী আশ্চর্য এই সমাপতন, তাই না?
কোথায় অশ্রুনদীর সুদূর পারে সেই ব্রহ্মবাদিনী মৈত্রেয়ী আর কোথায় উনিশশতকীয় কপোতাক্ষের কোলের ছেলে মধুসূদন!
অমরত্ব প্রাপ্তিই সমানাধিকার নাকি তবে?
তাও আবার এমন নর-নারী-কাল-যুগ নির্বিশেষে?!

এই সঙ্গেই অমন ঈর্ষণীয় অমরত্বের হকদার আরও এক সমানাধিকারিণীকে মনে পড়ছে— সঙ্গমিতা (বা সংঘমিত্রা)।

বাবার উদ্বেগজনিত নিষেধকে নিজের যুক্তি দিয়ে বশ করে সে মেয়ে বৌদ্ধধর্মের অভিজ্ঞান বুকে করে পাড়ি দিয়েছিলেন কালাপানিপারের সুদূর সিংহলে।
এখানে দুটো কথা মাথায় রাখতেই হয়—
১. এই ‘বাবা’ যে-সে বাবা নন, দেশ-দশের শাসক—সম্রাট অশোক।
২. ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সাগরপারের ভিন্নসংস্কৃতি-ভাষা ঠিক ওই মাঝরাস্তার তরঙ্গগুলির মতোই দুরতিক্রম্য ছিল।

কিন্তু, এখানেও সেই সমানাধিকারের লড়াই।
‘ভাই পারলে আমি পারব না কেন?’
অতএব, ভাই মহেন্দ্রের বোন সংঘমিতা, পূজা করে ঊর্ধ্বেও নয়,হেলা করে নীচেও নয়,পার্শ্বেই চিরদিন—সংকটে সম্পদে!

পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধে কেজো মেয়েদের কাজের জায়গাটায় মজুরি-শ্রমদানের সময়— ইত্যাদির যথাযথ সম্মানজনক রফানিষ্পত্তির তাগিদে ১৯০৮-এ শুরু করা (পরে নানা দেশে আরও নানান বেশে!) সমানাধিকারের যে লড়াইটা আজ বিশ্বব্যাপী নারীদিবস নামের এক ‘স্মারকদিন’ এনে দিয়েছে, এই প্রাচীন প্রাচ্য দেশের মেয়েরা তার অনেক অনেক আগে থেকেই মনন-মেধা-জীবনযাপনের স্বকীয়তায় সেই সমানাধিকার আদায় করতে মরিয়া হয়েছেন।

সেই সব ধীময়ী পূর্বজাদের কোনও একটিমাত্র স্মারকদিবসে প্রণাম জানাই, সাধ্য কী!

বরং মানুষদিবস হোক রোজ, “জননী বসুন্ধরা”।

Skip to content