বহুমুখী ভাবনা।
“এই মনটাই করে যত গোলমাল”, মনে পড়ে গেল এই লাইনটা। আমাদের কত রকম অসুবিধের শিকড় যে মনের মাঝে সেটা অনেক সময় তেই অধরা থেকে যায়। বর্তমানে মানসিক রোগ ভীষণ ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। কেউ বা সচেতন। কাউন্সেলিংয়ে গিয়ে নিজেকে বিশ্লেষণ করে সারিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ এ বিষয়ে একেবারেই অবহিত নন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করায় ব্রতী আছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ‘অঞ্জলি’।
কথা হচ্ছিল ‘অঞ্জলি’র একনিষ্ঠ এক কর্মীর সঙ্গে। বিভিন্ন বয়েসের মানুষের মনের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। নিজের সন্তান না থাকলেও মায়ের মতো সমাজে অনেক মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। শুধু মেয়েদের জন্য নয়। ছেলেদের জন্যও। সম্প্রতি এক মসজিদ চত্বরে একটি বিভিন্ন বয়সের ছেলেদের জমায়েতে বুঝিয়ে এসেছেন। ছেলেদেরও কান্না পেতে পারে। দুঃখ হতে পারে। কঠোর হওয়াই পৌরুষের লক্ষণ হতে পারে না। আগে মানুষ হতে হবে। মানবিক গুণ কি ইত্যাদি। সুন্দর ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল ভেঙে তার বলা মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।
এছাড়াও উনি কাজ করেন বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য। অটিস্টিক শিশুদের সমস্যা বুঝে সেই মত কাউন্সেলিং। এজন্য তিনি নিজে ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কীভাবে বিভিন্ন রকম খেলনার পছন্দ থেকে তাদের মানসিকতা ধার্য করেন সে গল্প শুনলাম।
এছাড়াও উনি কাজ করেন বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য। অটিস্টিক শিশুদের সমস্যা বুঝে সেই মত কাউন্সেলিং। এজন্য তিনি নিজে ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কীভাবে বিভিন্ন রকম খেলনার পছন্দ থেকে তাদের মানসিকতা ধার্য করেন সে গল্প শুনলাম।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-১১: শিশু হিতায় সংস্থিতা
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২২: সরলাদেবী, এক পণ্ডিত মানুষ
একটি বাচ্চা মেয়ে অকারণ রেগে উঠত। নিজের বয়সীদের সঙ্গে মিশতে পারতো না। উৎকন্ঠিত মা নিয়ে এসেছিলেন। বাচ্চাটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশে জানা গেল বাবা মায়ের নিত্য ঝগড়া ঝাটির জন্য তার সমস্যা। ‘অঞ্জলি’র কর্মী এই মেয়েটি তখন বাবা-মা কে নিয়ে একসঙ্গে বসে তাদের বোঝালেন। বাড়ির সুস্থ পরিবেশ শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য কতখানি প্রয়োজন। আমরা অজান্তে শিশু মনে ক্ষতের সৃষ্টি করে ফেলি। তবে সুখের কথা এরপর বাচ্চাটি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়াতে হয়তো বড় ক্ষতি রোধ করা গিয়েছে। এটাই তার সাফল্য।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৭: কবির জন্মদিনে প্রিয়জনের উপহার
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বাইন ও গর্জন
নিজের মনের সমস্যা বোঝা বা সারানোর চেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ করে না। আবার করলেও মাঝপথে কাউন্সেলিং ছেড়ে দিচ্ছেন, এমনটি ও হয়। তাই এ কাজে সমস্যা আছে অনেক। এক গৃহবধূ তার সমস্যা নিয়ে এলেন। কিন্তু যাদের ব্যবহারে তার মানসিক সমস্যা তাদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করা সম্ভব হয় না। জিজ্ঞেস করলাম, সেক্ষেত্রে তাহলে কিরকম কাউন্সেলিং সম্ভব? সেখানে গৃহবধূটিকেই স্বাবলম্বী হওয়া, অন্যের মুখাপেক্ষী না থাকার পরামর্শ দিয়ে তাকে মানসিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা হয়। এমনি ভাবে সাহায্য করেছেন মা ও স্কুলে পাঠরতা মেয়ের চিড়ধরা সম্পর্ক মেরামত করতে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৫: কথার কথা মা নয়—সত্য জননী
আশি বছরের বৃদ্ধর সঙ্গে তার পরিবারের স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে দিতে। এতটাই ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পেরেছেন যে বৃদ্ধ আকুল হয়ে চলে আসেন যখন তখন। স্টেশনের প্লাটফর্মে সাক্ষাৎ করে আশ্বস্ত করেন তিনি। বর্তমানে মানুষের একাকীত্ব, অসহায়তার মাঝে তিনি এক নতুন দিশা দেখানোর চেষ্টা করেন। জীবন থেকে পালানো নয়, দুঃখে বাঁচা নয়, জীবনকে ভালোবেসে পরিপূর্ণ ভাবে বাঁচার জন্য কাজ করেন ‘অঞ্জলি’র এ কর্মী। নাম মহুয়া মুখোপাধ্যায়।
* ড. দুর্গা ঘোষাল (Durga Ghoshal), প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, গভর্নমেন্ট কলেজ।