ফরমানী নাজ
গানের আবার জাত বিচার— অভীলিপ্সা পাণ্ডা পর ফরমানী নাজ, তাঁর তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বরের জাদুতে দেশকে আবার শম্ভু, শম্ভু, শিব মহাদেব শম্ভু, শুনতে বলতে বাধ্য করেছেন। সাধারণ দেহাতী ভারতবাসীর রিংটোন থেকে ইনস্টাগ্রামে দিনযাপনে রত হালফিলের তরুণ তরুণীরা নিজেদের রিলে এই গানের ব্যবহার করে একে ভাইরাল করেছে। আর তার ফলস্বরূপ মুজফফরনগর নিবাসী এই গায়িকাকে তৌবা বা অনুশোচনা বা ঈশ্বরের ক্ষমাপ্রার্থনার বিধান দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি মুসলিম। প্রত্যয়ী নাজ, সাধারণ গ্রামের মেয়ে নিজের কথা বলতে তাঁর গলা কাঁপে না। তাঁর গলায় যে খুদার ইবাদত, তিনি কেন কাউকে ভয় পাবেন? তাই এক সাক্ষাৎকারে তিনি সোচ্চারে বলেছেন যে, তিনি শিল্পী আর শিল্পীর কোনও জাত-ধর্ম হয় না। শিল্পই তাঁর ধর্ম, তাই তিনি শিবের গানও গান, ঈদের গানও গান, কৃষ্ণজন্মাষ্টমীর গানও গান আবার মহরমের গানও গান।
মহম্মদ রফি
তালিম! উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে তিনি, কারও কাছে তালিম নিয়ে গান গাওয়া তাঁর কাছে কষ্টকল্পনা। এইট পাশ ফরমানী কিছুটা ইংরেজি, কিছুটা সংস্কৃত আর কিছুটা আরবি পড়তে বলতে পারার সুবাদে নাজ ভক্তি, নাজ নজম নামে তাঁর চ্যানেল চালান। ইউটিউবে তাঁর গান বার বার ভাইরাল হয়। তাঁর গাওয়া ভজন মেরে দিল কা হাল ওহ জানে মেরে শ্যাম রে, আজ তাই বহু মানুষের মনের আরাম। এমন মনের আরাম তো তাঁর ভজনেও ছিল, যাঁর জনাজায় কাঁধ দিতে মুম্বইয়ের এক বর্ষণমুখর দুর্দিনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। তিনিও তো গাইতেন এমন সুরেলা ভজন। মানবিক সমস্ত ভাবের প্রকাশ যাঁর গানে অনায়াসলভ্য ছিল, সেই মনুষ্যত্বের পূজারী মহম্মদ রফি তো ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে গোপী সিনেমায় সুখ কে সব সাথী গীত গাতা হ্যায়, বৈজু বাবরায় মন তড়পত হরি দরশন কো আজ, ঘরানাতে জয় রঘুনন্দন জয় সিয়া রাম, মধুমতীতে মধুবন মে রাধিকা নাচে রে, সুহাগে ও শেরোবালি, ব্লাফমাষ্টারে গোবিন্দা আলা রে গেয়ে জনপ্রিয়তম হয়েছিলেন।
এর মধ্যে মন তড়পত হরি দরশন কো আজ এর মত আইকনিক গানের মূল তিনজন কাণ্ডারীই ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। মহম্মদ রফি (গায়ক), নৌশাদ ( সুরকার) ও শকীল বদায়ুনীর (গীতিকার) সফল যোজনায় এই কালজয়ী গানের সৃষ্টি হয়। নৌশাদজি পরে এক সাক্ষাৎকারে জানান, এই গানের রেকর্ডিংয়ে সকলকে পাক-সাফ (পুরোপুরি পরিষ্কার) হয়ে আসতে বলা হতো। সেইসব দিনে রফি সাহেবের উপস্থাপনা সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করত। এই শকীল বদায়ুনীর ও দুনিয়াকে রখবালে/ সুন দর্দ ভরে মেরে নালে অথবা মোহে পনঘট পে নন্দলাল ছেড় গয়ো রে, সাহির লুধিয়ানভির হ্যায় রোম রোম মে বসনে বালে রাম, জাভেদ আখতারের পল পল হ্যায় ভারী ওহ বিপদা হ্যায় আয়ি/ মোহে বঁচানে অব আও রঘুরাই অথবা সেই নির্গুণ ন্যারের প্রতি তাঁর ও পালন হারে আজও সমান জনপ্রিয় কারণ প্রথমত তাঁরা কবি তারপর গীতিকার।
জাভেদ আখতার
জাভেদজি নিজের সৃষ্টির সমর্থনে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, রামের গান লেখা তাঁর সহজাত, এর জন্য তাঁকে বিশেষ কিছু ভাবতে হয়নি। সাধারণ ভারতবাসীকেও তো ভাবতে হয় না এই নিয়ে, তাদের কাছে ওপরওয়ালার হিসাবনিকাশ সব সমান, জাত-ধর্মের হিসেব তো এই নীচে। আর তাই আজও উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খানের অবিস্মরণীয় ভজন হরি ওম তৎসৎ, আব্দুল করিম খানের যমুনাকে তীর, উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খানের রাম রাম রাম সীতা রাম রাম রাম, উস্তাদ রাশিদ খানের বৃজ কে নন্দলালা, শ্যাম নাম পাবন জস গঙ্গা, দুখ মে সুমিরন সব করে জাতীয় দোহা, ভজন রসজ্ঞ, গুণী শ্রোতাদের মনের মণিকোঠায় তোলা আছে।
এই সময়ের ভজনগায়ক পদ্মশ্রী রমজান খান ওরফে মুন্না মাষ্টারের গৌ মাতা করে পুকার, গোপাল মেরি লাজ বাঁচালো উল্লেখযোগ্য। তাঁর দিন শুরু হয় অভেদে ভজন, নমাজ আর গোয়ালঘরের কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে। সুর, স্বর, তাল, লয়, ছন্দ, ভাষা, সাহিত্য, শাস্ত্রীয়-দেশীয় গান কবে ধর্মাধর্মের আবর্তে পড়েছে? আর পড়েনি বলেই ২০২১ সালের অক্টোবরে জুনাগড়ের তীর্থস্থানের মৃত প্রধান পূজারীর হারমোনিয়াম ফরাজ খানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনিই তো এইসময় দেশের অন্যতম সাই ভজন বোলো সুবহ বোলো শ্যাম/ সাই রাম সাই শ্যামের উপস্থাপক। অন্য ধর্মের গীতিকারদের সুফিয়ানা বরাবর তাঁদের কলমকে ছুঁয়ে গেছে, যো কুছ হ্যায় তেরে দিল মে ওহ সব মুঝকো খবর হ্যায় / বন্দে তেরে হর হাল পে মালিক কি নজর হ্যায়, আজ তাই ছোট বাচ্চার মা, একা ফরমানীর জীবনে সার্থক হয়ে উঠেছে। তিনি এগিয়ে চলেছেন তাঁর নিজস্ব ছন্দে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: গুরুজী বিপ্লব মুখোপাধ্যায়, সবিতা ভট্টাচার্য, অনুপ আচার্য
এই সময়ের ভজনগায়ক পদ্মশ্রী রমজান খান ওরফে মুন্না মাষ্টারের গৌ মাতা করে পুকার, গোপাল মেরি লাজ বাঁচালো উল্লেখযোগ্য। তাঁর দিন শুরু হয় অভেদে ভজন, নমাজ আর গোয়ালঘরের কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে। সুর, স্বর, তাল, লয়, ছন্দ, ভাষা, সাহিত্য, শাস্ত্রীয়-দেশীয় গান কবে ধর্মাধর্মের আবর্তে পড়েছে? আর পড়েনি বলেই ২০২১ সালের অক্টোবরে জুনাগড়ের তীর্থস্থানের মৃত প্রধান পূজারীর হারমোনিয়াম ফরাজ খানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনিই তো এইসময় দেশের অন্যতম সাই ভজন বোলো সুবহ বোলো শ্যাম/ সাই রাম সাই শ্যামের উপস্থাপক। অন্য ধর্মের গীতিকারদের সুফিয়ানা বরাবর তাঁদের কলমকে ছুঁয়ে গেছে, যো কুছ হ্যায় তেরে দিল মে ওহ সব মুঝকো খবর হ্যায় / বন্দে তেরে হর হাল পে মালিক কি নজর হ্যায়, আজ তাই ছোট বাচ্চার মা, একা ফরমানীর জীবনে সার্থক হয়ে উঠেছে। তিনি এগিয়ে চলেছেন তাঁর নিজস্ব ছন্দে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: গুরুজী বিপ্লব মুখোপাধ্যায়, সবিতা ভট্টাচার্য, অনুপ আচার্য