অমর কৌর। ছবি: সংগৃহীত।
নিজের সন্তানাদি, নাতি-নাতনিদের যত্ন নেওয়া, তাদের রান্না করে খাওয়ানো, প্রায় সব ঠাকুমা- দিদিমাই করে থাকেন বা করিয়ে থাকেন। কিন্তু যদি সেই নাতি-নাতনি সম বাচ্চারা হয় সম্পূর্ণ অপরিচিত আর দুপুরের খাবারের জন্য তাদের দাদির ওপর নির্ভরশীল। তাহলেও কি একইভাবে, সমান আগ্রহ নিয়ে দিনের পর দিন একশোরও বেশি বাচ্চাদের জন্য নিজে হাতে রোজ এই ৭৩ বছর বয়সে রান্না করা সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। সদিচ্ছা থাকলে সব কিছু সম্ভব। আর তা করে দেখিয়েছেন পঞ্জাবের প্রবীণা মানুষটি, তাঁর নাম অমর কৌর।
পরিণত, মধ্য বয়সে এসে কে না নিজের ঠাকুমা-দিদিমার হাতের রান্নার কথা স্মরণ করে। কে না স্মরণ করে সেই স্বার্থহীন ভালোবাসা, আদর, যত্নের কথা! কিন্তু সবার পারিবারিক, সামাজিক পরিসর সমান হয় না। যেমন এই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হয়নি, তারা একবেলা খাওয়ার জন্য রোজ তাদের দাদির বাড়িতে লাইন দেয়। দাদিও সমান উৎসাহী।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না…
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৮: বাবা, ‘পিতা নোহসি’ বলো — এই কথাটি ঘুরেফিরেই কবির কানে বেজে উঠত
রোজ একঘেয়ে ডাল-চাওল বা রাজমা-চাওল নয়, কোনওদিন বিরিয়ানি তো কোনওদিন মিল্কশেক, ফুচকা, ম্যাগি আরও কত কি বাচ্চাদের পছন্দ সই খাবার, রোজ নিজে হাতে রেঁধে খাওয়ান ছোট ছোট প্রাণেদের। দিনে একবারের বেশি খেতে না পাওয়া বাচ্চাদের পেট ভরে তাদের দাদির জন্য।
আরও পড়ুন:
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৮: ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম এবং ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস
| ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৯: যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস নে কিছু
পারম্পরিক, প্রাদেশিক রান্না যেমন অমরজি রাঁধতে ভালোবাসেন, তেমনই ভালোবাসেন সেইসব রান্না উৎসাহীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। পঞ্জাব প্রদেশের সেইসব পদ যেন লুপ্ত না হয়ে যায় সেইজন্য তিনি তাঁর এক নিকট আত্মীয়ের সহায়তায় ‘ফেমাস ভেজ ভিলেজ ফুড’ নামে একটি চ্যানেল চালান। এই চ্যানেলের ফলোয়ার প্রায় পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি। চ্যানেলটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায় অমরজি তাঁর পরিবারের সহায়তায় মোহালিতে একটি রেস্তোরাঁ খুলেছেন। যদিও সেখানে তিনি নিজে রান্না করেন না।
ছবি: সংগৃহীত।
বাড়িতে বাচ্চাদের খাইয়েও অনেক সময় খাবার বেশি হয়, সেইসব খাবার অমরজি বিক্রি না করে বরং ক্ষুধার্তদের দান করেন। কথায় আছে মা, ঠাকুমাদের কখনও রান্নাঘর থেকে অবসর হয় না। হেঁশেল ঠেলে তাঁদের জীবন অতিবাহিত হয়, কিন্তু এই বৃদ্ধা স্বেচ্ছায় অভুক্ত শিশুদের এবং আর্তদের মুখের দিকে তাকিয়ে কখনও অবসর নেন না, একই কাজ হাসিমুখে করে যান দিনের পর দিন। আর অনুপ্রেরণা দেন অন্যদের। তাই কুর্নিশ এই দশভুজাকে।
* লেখিকা পরিচিতি: ড. বিদিশা মিশ্র বিগত চৌদ্দ বছর ধরে সরকারি কলেজে, বর্তমানে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বিষয়— সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রী বিদিশা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় হন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল —বাঙালি নৈয়ায়িক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের গ্রন্থ ‘কাব্যবিলাস’। তাঁর এই গবেষণা ২০২১ সালে কর্ণাটকের আইএনএসসি পাবলিশিং হাউস থেকে ‘দ্য কাব্যবিলাস অফ চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য — এ ক্রিটিক্যাল স্টাডি’ শিরোণামে প্রকাশিত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের পত্রিকায় তাঁর শোধপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে একাধিক স্কলার গবেষণারত। বিভিন্ন সরকারি কাজকর্ম ও অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি গুরুজি বিপ্লব মুখোপাধ্যায়ের কাছে হিন্দুস্থানি ক্লাসিক্যাল ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী জয়শ্রী দাসের কাছে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষারতা। ভ্রমণপিপাসু বিদিশা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরেছেন, সেইসব অভিজ্ঞতা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে বলে তিনি মনে করেন।