মঙ্গলবার ৪ মার্চ, ২০২৫


মুক্তির তারিখ : ১২.০২.১৯৫৯
প্রেক্ষাগৃহ : মিনার, বিজলী ও ছবিঘর
পরিচালনা : বিকাশ রায়
অভিনীত চরিত্র: থিরুমল
ছবির নায়িকা: সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়

১৯৫৯ সালে শুরুতে বাঙালি দর্শক এক অন্য উত্তমকে চিনতে শুরু করল। আসলে আমরা যে কালিক বিভাজন করে উত্তম কুমারকে শুধু নায়ক বা চরিত্রাভিনেতা হিসাবে আঙ্গিকবদ্ধ করি উত্তম কুমার নিজে তা কখনোই করতে পারেননি। কারণ তাকে তো শেষ পর্যন্ত চরিত্রকে রূপদান করতে হয়েছে। তাঁর কাছে রোম্যান্টিক নায়ক আর চরিত্রে অভিনয় দুটোই কিন্তু সমান মাপে আদরনীয়।
উত্তমবাবু নায়কের জন্য একরকম চিন্তাভাবনা করবেন, সহনায়ক হলে আরেকরকম চিন্তাভাবনা করবেন তা বোধহয় কখনও করে উঠতে পারেননি এই কারণে যে, প্রতিটা চরিত্রই তাঁর কাছে নতুন, প্রতিটা চরিত্রই তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জিং। একটা চরিত্রের রূপদান ঠিকঠাক না করতে পারলে পরের ছবিতে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে উত্তম কুমার কে বয়ে বেড়াতে পারতেন না প্রযোজক পরিচালকরা যেমন তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৭: উত্তরণ-অবতরণ শেষে স্বপ্নের ‘সূর্যতোরণ’

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯o: ছাতারে

বিকাশ রায় এমন একজন পরিচালক যিনি গতানুগতিক কাহিনির বাইরে গিয়ে ছবি করতে পছন্দ করেছেন। ওনার পরিচালিত ছবিগুলির প্রাসঙ্গিকতা সেখানেই যে অংশগুলো যে চিন্তার ধারা সচরাচর পরিচালকরা করতে সাহস পেতেন না। বিকাশ রায় সেরকমই একটি কাহিনি নির্বাচন করে বসলেন। অবধূত-র লেখা ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’। সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল।

উত্তমকুমার।

উত্তম কুমারের মতো একজন নাগরিক প্রেম-ভালোবাসা অভিনয় কুশল ব্যক্তিত্বকে রুক্ষ-সূক্ষ্ম চরিত্রে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে
নায়িকা হিসেবে অবশ্যই দাপুটে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। কারণ চরিত্র অভিনয়ের এরকম নিখুঁত টাইমিং খুব কম অভিনেত্রীর মধ্যেই সে সময় দেখা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন:

ঈশ্বর কী সাড়া দেন তামিলে, সংস্কৃতে?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১২: দারুণ এক গগনবিহারী খেলনা বানিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ

ধীর স্থির চূড়ান্ত মেধা অবলম্বন করে মানসিক অবস্থানকে শুধুমাত্র দুটি চোখের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলায় সম্ভবত সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের বিকল্প ছিল না। তাই মরু বালিয়াড়ির এরকম নীরস রুক্ষ একটি চরিত্র যেখানে পরতে পরতে অস্তিত্বের সংগ্রাম সেখানে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাস্তব জীবনের লড়াকু একজন মহিলার চরিত্র নির্বাচন খুবই উপযুক্ত হয়েছিল। ছবিটির আঙ্গিক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ পথিকের জীবনে যে যাযাবর বৃত্তি আসে তাকে যত উপযুক্ত চিত্র দিয়ে ফুটিয়ে তোলা চাট্টিখানি কথা ছিল না।
আমরা ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-ছবিটির নির্মাণ পর্বের অনেক গল্পই বিভিন্ন মাধ্যমে শুনে থাকি যেমন স্বপ্নদৃশ্যে যখন উত্তম কুমার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের গলা টিপে ধরছেন তখন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে মেরেই ফেলছিলেন চন্দ্রকূপ-র জলে যখন থিরুমল ঝাঁপ দেবে সে অবস্থায় সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সেই গগনভেদি চিৎকার, আকুলতা হলের মধ্যে যেন বাজ ফেলল-এ ধরনের গল্প আমরা অনেক শুনেছি কিন্তু যে অংশটা আমরা জানি না যে, উত্তমবাবু এই ছবিটির প্রস্তুতিতে যেহেতু একজন সাইকোলজিক্যাল প্যারামিটার এর উপর ভিত্তি করে ছবিটা তৈরি হয়েছিল; ছবি শুরুর আগে নিজেকে অন্য জগতের মানুষ করে নিতেন এবং সেই উত্তমকুমারকে আমরা এখানে খুঁজে পেলাম যে উত্তম কুমারের চোখে দেখা গেল বোহেমিয়ানপনা।
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-৬: আকাশ এখনও মেঘলা

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৫: সরজমিনে

উত্তম কুমারের একটি বছরের মুক্তি পাবে ‘বিচারক’-র মতো সাড়া জাগানো ছবি। যে সময় চলছে ‘সপ্তপদী’-র মতো একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্র সেই উত্তম কুমার নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করলেন। বিশেষত ক্যামেরার সঙ্গে তার দৃষ্টি বিনিময়, চেহারার যে লাবণ্য তা খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু একজন সুপুরুষ মানুষের চেহারাতে আঙ্গিক গঠন কতটা মজবুত, পরিচালক খুব কৌশলে ফ্রেমের পর ফ্রেম সে জিনিসটা নির্মাণ করেছেন। পরের বছর আমরা ‘সাথীহারা’ ছবিটা যখন দেখব সেখানেও দেখতে পাবো যে সাঁপুড়ে বেদের চরিত্রে সুঠামদেহের অধিকারী উত্তম কুমারকে।

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।

আবার এই ছবিতে রুক্ষ সূক্ষ্ম মরু বালিয়াড়িতে যখন উত্তম বাবু না খেয়ে না হাঁটছেন, চলছেন প্রতিটা মুহূর্তে একজন সংগ্রামী মানুষের চিত্র ফুটেছে। ছবিটার একটাই দুর্বলতা, বেশিরভাগ সময় উত্তম কুমারকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ছবির-সহ নায়ক অনিল চট্টোপাধ্যায়ের প্রকাশ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ সেসময়ের একটি সাড়া জাগানো কাহিনি। যে কাহিনির সেলুলয়েডি মাস্তানি বিকাশ রায়ের নিখুঁত চোখ না হলে বোধহয় তৈরি হতো না।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৩: নির্বাসিত অর্জুনের দাম্পত্যজীবনে নতুন সম্পর্কের বিচিত্র সংযোজন

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নামক কালজয়ী সংগীত পরিচালক। সংগীত রচনা, বিশেষত ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরিং চলচ্চিত্র জগতের একটি সম্পদ হয়ে আছে। ইতিহাস বলছে মরু বালিয়াড়ির বুকে যখন পথের ক্লান্তি মাগো গানটি স্কোরিং হচ্ছে। তখন হামিং খুব জরুরি ছিল। যেটা করার জন্য হেমন্তবাবু বোম্বেতে লতাকে দিয়ে করিয়েছিলেন। এ ইতিহাস বাংলা চলচ্চিত্রের সম্পদ।
ছবিতে পাহাড়ি সান্যাল, বিকাশ রায় নিজে এবং চন্দ্রাবতী দেবীর অভিনয় খুব মন কাড়ে। কারণ এ ছবি একক নয়, এ ছবি সকলের এবং বিকাশ রায় পরবর্তী ‘রাজাসাজা’ ছবিটিও সেই গতানুগতিক ধারাকে মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছিল যে ছবি একটা যুগ তৈরি করবে এবং সমাজের মানুষকে শিক্ষা দেবে।—চলবে।
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar–Mahanayak–Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content