
সূর্যতোরণ ছবির একটি দৃশ্যে।
আবার সুচিত্রা সেন! আবার অগ্রদূত! অগ্রদূত মানে বিভূতি লাহা, যতীন দত্ত, বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্য বাঘা বাঘা কলা কুশলীদের সমারোহ।
প্রথমে বলে রাখা ভালো ১৯৫৪ সালে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ পরবর্তী প্রতিবছর উত্তম-সুচিত্রা ক্রেজ এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছিল যে, অগ্রদূতের পরিচালনায় প্রতিবছর তাঁদের দু’জনের একটা ছবি থাকতোই। যখন উত্তম-সুচিত্রা জুটি, কোনও এক অজানা কারণে প্রশ্নচিহ্নের মুখে তখনও পরীক্ষামূলকভাবে তৎকালীন হিট দেওয়া নায়িকাদের সঙ্গে নিয়ে অগ্রদূত গোষ্ঠী উত্তম বাবুর সঙ্গে ছবি করে গিয়েছেন। বলাবাহুল্য, ১৯৫৮ সাল উত্তম- সুচিত্রাময়। পরীক্ষামূলকভাবে বা অপরীক্ষামূলকভাবে তাদের দুজনকেই এক ফ্রেমে পাওয়া গেল অগ্রদূতের ব্যানারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী মুক্তি পাবার পর বাংলা ছবির একটা আন্তর্জাতিক মান কোনও এক স্রষ্টার হাতে নির্মিত হয়ে গিয়েছিল। যার ফল পরবর্তী ৩০ বছর আমরা ধীরে ধীরে পাবো বা পেয়েছি। কিন্তু যুদ্ধোত্তর দেশভাগোত্তর যে সাবজেক্ট পরবর্তীতে সত্যজিৎ বাবুও নিজের ছবির বিষয়বস্তু করেছিলেন। তাহলে শ্রেণি সংগ্রামের যদি সালতামামি করা যায় উত্তম-সুচিত্রাও সে অংশ থেকে বাদ ছিলেন না। পরিচালক মন্ডলী বা নির্মাতারা সবার আগে মনে রেখেছিলেন দেশভাগের ফলে উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত মানুষজন যেভাবে আত্মিক তৃপ্তি পেতে অপারগ হয়ে উঠছিল সেখানে স্বপ্ন দেখানোর আজান দেওয়া এ ধরনের ছবিগুলো অনেক অংশে আগামী নির্মাণে সহায়ক হয়েছিল।
প্রথমে বলে রাখা ভালো ১৯৫৪ সালে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ পরবর্তী প্রতিবছর উত্তম-সুচিত্রা ক্রেজ এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছিল যে, অগ্রদূতের পরিচালনায় প্রতিবছর তাঁদের দু’জনের একটা ছবি থাকতোই। যখন উত্তম-সুচিত্রা জুটি, কোনও এক অজানা কারণে প্রশ্নচিহ্নের মুখে তখনও পরীক্ষামূলকভাবে তৎকালীন হিট দেওয়া নায়িকাদের সঙ্গে নিয়ে অগ্রদূত গোষ্ঠী উত্তম বাবুর সঙ্গে ছবি করে গিয়েছেন। বলাবাহুল্য, ১৯৫৮ সাল উত্তম- সুচিত্রাময়। পরীক্ষামূলকভাবে বা অপরীক্ষামূলকভাবে তাদের দুজনকেই এক ফ্রেমে পাওয়া গেল অগ্রদূতের ব্যানারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী মুক্তি পাবার পর বাংলা ছবির একটা আন্তর্জাতিক মান কোনও এক স্রষ্টার হাতে নির্মিত হয়ে গিয়েছিল। যার ফল পরবর্তী ৩০ বছর আমরা ধীরে ধীরে পাবো বা পেয়েছি। কিন্তু যুদ্ধোত্তর দেশভাগোত্তর যে সাবজেক্ট পরবর্তীতে সত্যজিৎ বাবুও নিজের ছবির বিষয়বস্তু করেছিলেন। তাহলে শ্রেণি সংগ্রামের যদি সালতামামি করা যায় উত্তম-সুচিত্রাও সে অংশ থেকে বাদ ছিলেন না। পরিচালক মন্ডলী বা নির্মাতারা সবার আগে মনে রেখেছিলেন দেশভাগের ফলে উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত মানুষজন যেভাবে আত্মিক তৃপ্তি পেতে অপারগ হয়ে উঠছিল সেখানে স্বপ্ন দেখানোর আজান দেওয়া এ ধরনের ছবিগুলো অনেক অংশে আগামী নির্মাণে সহায়ক হয়েছিল।
ছবির কাহিনি লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর সংযোজন করেছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবিটির সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল প্লেয়ার কাস্টিং। একাধারে উত্তম কুমার,অসিতবরণ, বিকাশ রায়, কালী ব্যানার্জি সমকালীন সমস্ত হিরোকে ডায়নামিক ক্যারেক্টারে কাস্ট করা হয়েছিল।
সিনিয়রদের মধ্যে ছিলেন কমল মিত্র, ভানু বন্দোপাধ্যায় জহর রায়ের জুটি, সলিল দত্ত, তুলসী চক্রবর্তী প্রমুখ। সহনায়কদের মধ্যে ছিলেন মিহির ভট্টাচার্য, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, শিশির বটব্যাল প্রমূখরা, যাকে এক কথায় বলা হয় চাঁদের হাট। মহিলা শিল্পীদের মধ্যে চিত্রার্পিতা সুচিত্রা সেন, তৎসহ শোভা সেন কবিতা রায়, কমলা অধিকারী প্রমুখরা।
ছবির কাহিনি এরকম ‘শহরের বিশিষ্ট ধনী আর্কিটেক বীরেন চ্যাটার্জির মেয়ে অনিতা। অনিতার মন প্রাণ জুড়ে শহরের বস্তিবাসীরা। তাদের জন্য কিছু করতে পারার জন্য তিনি সবসময় সচেষ্ট। কাগজে প্রবন্ধ লেখেন বস্তিতে গড়ে তোলেন বিদ্যালয়। খুব ইচ্ছে বস্তি তুলে দিয়ে গড়ে তুলবেন একটা সুবৃহৎ কমিউনিটি ভবন; নাম দেবেন সূর্যতোরণ। তাঁর স্বপ্নের কথা লিখেছেন সূর্যতোরণ গড়তেই বীরেন চ্যাটার্জির শত্রু রাজশেখর মিত্রকে বিয়েতেও রাজি হলেন। ভারতের সেরা আর্কিটেক তরুণ সোমনাথকেও ভুলে যেতে বাধ্য হলেন। কলকাতা ছেড়ে সোমনাথ চলে গেল অনেক দূরে। কমিউনিটি ভবন গড়ার কাজ দিয়ে গেল বন্ধু সুব্রতকে। কিন্তু সুব্রত একি করল! সূর্যতোরণ না পশুশালা! সোমনাথ ফিরে এল। ভানসর্বস্ব সভ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। ধ্বংস করল সূর্য তোরণকে। গড়ে তুলল নতুন ভবন। সোমনাথ আর অনিতার মিলন চেয়ে আত্মহত্যা করলেন রাজশেখর। একজনের আত্মত্যাগের মধ্যে আর একজন পেল তার আরাধ্য।
সিনিয়রদের মধ্যে ছিলেন কমল মিত্র, ভানু বন্দোপাধ্যায় জহর রায়ের জুটি, সলিল দত্ত, তুলসী চক্রবর্তী প্রমুখ। সহনায়কদের মধ্যে ছিলেন মিহির ভট্টাচার্য, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, শিশির বটব্যাল প্রমূখরা, যাকে এক কথায় বলা হয় চাঁদের হাট। মহিলা শিল্পীদের মধ্যে চিত্রার্পিতা সুচিত্রা সেন, তৎসহ শোভা সেন কবিতা রায়, কমলা অধিকারী প্রমুখরা।
ছবির কাহিনি এরকম ‘শহরের বিশিষ্ট ধনী আর্কিটেক বীরেন চ্যাটার্জির মেয়ে অনিতা। অনিতার মন প্রাণ জুড়ে শহরের বস্তিবাসীরা। তাদের জন্য কিছু করতে পারার জন্য তিনি সবসময় সচেষ্ট। কাগজে প্রবন্ধ লেখেন বস্তিতে গড়ে তোলেন বিদ্যালয়। খুব ইচ্ছে বস্তি তুলে দিয়ে গড়ে তুলবেন একটা সুবৃহৎ কমিউনিটি ভবন; নাম দেবেন সূর্যতোরণ। তাঁর স্বপ্নের কথা লিখেছেন সূর্যতোরণ গড়তেই বীরেন চ্যাটার্জির শত্রু রাজশেখর মিত্রকে বিয়েতেও রাজি হলেন। ভারতের সেরা আর্কিটেক তরুণ সোমনাথকেও ভুলে যেতে বাধ্য হলেন। কলকাতা ছেড়ে সোমনাথ চলে গেল অনেক দূরে। কমিউনিটি ভবন গড়ার কাজ দিয়ে গেল বন্ধু সুব্রতকে। কিন্তু সুব্রত একি করল! সূর্যতোরণ না পশুশালা! সোমনাথ ফিরে এল। ভানসর্বস্ব সভ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। ধ্বংস করল সূর্য তোরণকে। গড়ে তুলল নতুন ভবন। সোমনাথ আর অনিতার মিলন চেয়ে আত্মহত্যা করলেন রাজশেখর। একজনের আত্মত্যাগের মধ্যে আর একজন পেল তার আরাধ্য।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৬: জীবন নিয়ে কৌতুক আর ‘যৌতুক’

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭১: ধর্মকার্যের জন্য টাকা জোগাড় করা আর সাদা কাপড়ে ময়লা লাগিয়ে ধোয়া, দুই-ই সমান
এ ধরনের একটা কাহিনিকে মূলধন করে সেলুলয়েডে আবর্তন শুরু করলেন উত্তম সুচিত্রা। তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ দুচোখের চাউনি। ক্যামেরা যে ভাষা বোঝে কোনও এক অদৃশ্য স্বরলিপিতে তাদের দু’জনের চোখ যেন আটকে গিয়েছিল। এক ফ্রেম থেকে আরেক ফ্রেমে ঘটনা যাই থাক সুরতরঙ্গ যাই বাজুক বড্ড বেশি উত্তমময় ছিল। উত্তমবাবু নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন ‘সে সময় একটা অদ্ভুত ‘ইজম’ চালু হয়েছিল ছবির কলা কুশলীদের মধ্যে। সমস্ত ছবিতে কিভাবে আমাকে (মানে উত্তমবাবুকে) ছড়িয়ে দেওয়া যায়। একই ডায়লগ কত ভালো করে ক্যামেরাবন্দি করলে দর্শক পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারবেন না এ ধরনের গবেষণা চালু হয়েছিল।’ বাংলা চলচ্চিত্রে পরিচালক অজয় কর ছাড়া আর কেউ করে উঠতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু অগ্রদূত গোষ্ঠীর কলাকুশলীরা সব সময় চাইতেন প্রতিটা ফ্রেমকে উত্তমোচিত করে তোলা।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৩: গ্রহের ফের

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৭: সুন্দরবনের পাখি — ফিঙে
পরবর্তীকালে উত্তমবাবু যখন অনেক পরিণত তিনি তাঁর সহকর্মীদের বোঝাতে পেরেছিলেন যে, ছবির প্রাণ প্রতিষ্ঠাতে কোন একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর দায়বদ্ধতা রাখা ঠিক নয় প্রতিটা শিল্পীর সমান দায়িত্ব বহন করা উচিত। আর ক্যামেরার পিছন দিকে যাঁরা থাকেন তাদেরও সেটা বোঝা উচিত। কিন্তু যে সময়ের কথা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি সে সময়ের সমস্ত ছবিতে সুচিত্রা সেন থাকুক বা না থাকুক উত্তমবাবু ছবিতে থাকলেই তাকে প্রতিটা ফ্রেমে বাধ্যতামূলকভাবে তার সর্বোচ্চ অংশটাকে বের করে আনার একটা একটা অদম্য প্রয়াস ছবির অংশীদাররা রাখতেন।
সঙ্গে সুচিত্রা সেন থাকলে তো আর কোন কথাই নেই! যেন সকলে চাঁদ পেতেন। এখন উত্তম-সুচিত্রার প্রতিটা ছবি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যে অংশটা বারবার ভাবিয়ে তোলে যে ছবির বাণিজ্যিক অংশটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে উত্তম সুচিত্রার প্রতিটা অধ্যায় বড় বেশি পক্ষপাতি দুষ্ট হয়েছে। যদিও তখনকার পরিচালকরা অত্যন্ত উন্নতমনা ছিলেন। কাহিনিকে প্রাধান্য দেওয়াই ছিল তাদের মূল কাজ কিন্তু উত্তম সুচিত্রাহীন যে ফ্রেমগুলো নির্মাণ হত সেখানকার কলা কুশলীদের অত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না যতক্ষণ না কাহিনীর ঘনঘটা পরবর্তী ফ্রেমটিকে অত্যন্ত জরুরি বলে দাবি করছে।
সঙ্গে সুচিত্রা সেন থাকলে তো আর কোন কথাই নেই! যেন সকলে চাঁদ পেতেন। এখন উত্তম-সুচিত্রার প্রতিটা ছবি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যে অংশটা বারবার ভাবিয়ে তোলে যে ছবির বাণিজ্যিক অংশটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে উত্তম সুচিত্রার প্রতিটা অধ্যায় বড় বেশি পক্ষপাতি দুষ্ট হয়েছে। যদিও তখনকার পরিচালকরা অত্যন্ত উন্নতমনা ছিলেন। কাহিনিকে প্রাধান্য দেওয়াই ছিল তাদের মূল কাজ কিন্তু উত্তম সুচিত্রাহীন যে ফ্রেমগুলো নির্মাণ হত সেখানকার কলা কুশলীদের অত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না যতক্ষণ না কাহিনীর ঘনঘটা পরবর্তী ফ্রেমটিকে অত্যন্ত জরুরি বলে দাবি করছে।

আসলে বাণিজ্যিক ছবির ইতিহাসে উত্তমকুমার সুচিত্রা সেন দুজনেই এমন একটি মায়ার সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। তাদের নিজস্ব সাধনা দিয়ে যে ছবির প্রতিটা অংশের অবদানকারীদের খুব সহজে নিজেদের পক্ষে করে নিতে পেরেছিলেন। প্রসঙ্গত স্মরণীয়, হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে মহাম্মদ রফি এমন একজন গায়ক ছিলেন সমকালীন সমস্ত পুরুষকণ্ঠকে পিছনে ফেলে তিনি এগোতে পেরেছিলেন। তার মূল কারণ ছিল প্লেব্যাক নামক শিল্পের প্রধান অংশ, যে শিল্পী ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যে ম্যানারিজম-এ তার আঙ্গিক অভিনয়কে প্রাণ দান করতেন রফি সাহেব খুব ভালো করে তাঁর সিনফ্সিস নিয়ে, তাকে আত্মস্থ করে মাইক্রোফোনের সামনে শব্দ দিয়ে ছবি আঁকতেন।
আরও পড়ুন:

ভাসাবে দোঁহারে

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা
উত্তমবাবুর ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা, যে কণ্ঠশিল্পী ওনার হয়ে নেপথ্যে গলা দেবেন উনি তার হাঁটা চলা কথাবার্তা ছবিতে ইম্প্রোভাইজ করতেন। ফলে যখন নেপথ্য সংগীত হতো তখন মনে হতো গানটি উত্তমবাবু নিজেই গাইছেন। বাচিক শিল্পীর এই সীমাবদ্ধতা ও আকর্ষণ-ক্ষমতা, দুটোকে কি মানে ধরে রাখলে ক্যামেরার সামনে ছবির প্রথম থেকে জিনিসটা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে এই অতল ভাবনার অংশীদারি ছিলেন উত্তম কুমার স্বয়ং।
তাঁর কেরিয়ারের তুঙ্গমুহুর্তে যখন “সাগরিকা’ ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পরিবর্তে শ্যামল মিত্রকে নেওয়া হলো শুধু সংগীতের বিশেষ কিছু অবদানকে মর্যাদা দেয়া হবে বলে উত্তমবাবু একটুও না ঘাবড়ে ওই গলার একজন মানুষ প্রতিটা শব্দকে উচ্চারণ করার সময়, কিভাবে চোখ মুখের এক্সপ্রেশন আনেন সেটা খুব সহজে রপ্ত করেই ক্যামেরার সামনে উপহার দিয়েছেন। আবার একই বছরে “নবজন্ম” ছবিতে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কন্ঠে ভক্তিগীতি তথা লোকগীতি এমন সুন্দর উচ্চারণ কৌশল দেখিয়ে আমাদের উপহার দিয়েছেন যে ক্যামেরাও বোধ হয় তাজ্জব বনে গিয়েছে।
তাঁর কেরিয়ারের তুঙ্গমুহুর্তে যখন “সাগরিকা’ ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পরিবর্তে শ্যামল মিত্রকে নেওয়া হলো শুধু সংগীতের বিশেষ কিছু অবদানকে মর্যাদা দেয়া হবে বলে উত্তমবাবু একটুও না ঘাবড়ে ওই গলার একজন মানুষ প্রতিটা শব্দকে উচ্চারণ করার সময়, কিভাবে চোখ মুখের এক্সপ্রেশন আনেন সেটা খুব সহজে রপ্ত করেই ক্যামেরার সামনে উপহার দিয়েছেন। আবার একই বছরে “নবজন্ম” ছবিতে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কন্ঠে ভক্তিগীতি তথা লোকগীতি এমন সুন্দর উচ্চারণ কৌশল দেখিয়ে আমাদের উপহার দিয়েছেন যে ক্যামেরাও বোধ হয় তাজ্জব বনে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১২: দারুণ এক গগনবিহারী খেলনা বানিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ
আমার এত বদহজমের কথা বলার উদ্দেশ্য এই যে, রফি সাহেবের গানটা যখন রেডিওতে শোনা হয় যেহেতু উনি কণ্ঠশিল্পী তখন মনে হয় যেন ছবির সেই হিরোই যেন দাঁড়িয়ে গাইছেন। উল্টোদিকে উত্তমবাবুর কণ্ঠে যখন বিভিন্ন পুরুষ গায়কের কণ্ঠ শোনা যায় তখন মনে হয় ছবির গান কোথাওবা উত্তমবাবু নিজেই গাইছেন।
এই যে ক্যামেরার সাথে বনি বনা, যেহেতু উনি দৃশ্য শিল্পী কাজটা অনেক কঠিন। গল্পে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যে চরিত্র নির্মিত হয়। সেই চরিত্রের অবিকল রূপকে দর্শকের সামনে নিজের অঙ্গভঙ্গি দ্বারা নিজের বাচিক সত্তার দ্বারা উপস্থাপন করে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা কাজটা খুব কঠিন। এই এত কিছুর মেলবন্ধনে সারস্বত যে সম্পদ একটা ছবির ফ্রেমে আমরা দেখতে পাই তার সবকটির মালিক ছিলেন উত্তম কুমার নামক একজন ঘনজন্মা। চলচ্চিত্র শিল্পী ‘সূর্যতোরণ’ ছবির কাহিনি আহামরি এলেমদারির নয়। কিন্তু শ্রেণি০ সংগ্রামের উত্তরণের মোড়কে মানুষের চরিত্রে ঘুমন্ত যে দুটি সত্তার লড়াই সকাল-বিকাল হয়ে থাকে তাদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটিয়েছিল এ ছবির বিমূর্ত রূপ।
এই যে ক্যামেরার সাথে বনি বনা, যেহেতু উনি দৃশ্য শিল্পী কাজটা অনেক কঠিন। গল্পে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যে চরিত্র নির্মিত হয়। সেই চরিত্রের অবিকল রূপকে দর্শকের সামনে নিজের অঙ্গভঙ্গি দ্বারা নিজের বাচিক সত্তার দ্বারা উপস্থাপন করে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা কাজটা খুব কঠিন। এই এত কিছুর মেলবন্ধনে সারস্বত যে সম্পদ একটা ছবির ফ্রেমে আমরা দেখতে পাই তার সবকটির মালিক ছিলেন উত্তম কুমার নামক একজন ঘনজন্মা। চলচ্চিত্র শিল্পী ‘সূর্যতোরণ’ ছবির কাহিনি আহামরি এলেমদারির নয়। কিন্তু শ্রেণি০ সংগ্রামের উত্তরণের মোড়কে মানুষের চরিত্রে ঘুমন্ত যে দুটি সত্তার লড়াই সকাল-বিকাল হয়ে থাকে তাদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটিয়েছিল এ ছবির বিমূর্ত রূপ।

পক্ষান্তরে সুচিত্রা সেন নামক একজন দৃশ্যশিল্পীর নানা রকম ম্যানারিজমে নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে এ ছবিতে উনি যে পরিমিত বোধের পরিচয় দিয়েছেন তা এক কথায় অনন্য। বিশেষত যখন দ্বান্দিক উপস্থাপনা চলছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে কিছু বাজার গরম করা সংলাপের ছোঁড়াছুঁড়ি তাঁরা করতেন না। প্রতিটা দৃশ্যকে বাস্তবানুগ করতে গিয়ে সুচিত্রা সেন যে অংশে নির্বাক নিষ্পন্দন হয়ে শুধু দুটি চোখের এক্সপ্রেশন দেখিয়েছেন। তা যে কোন দেশের মূল্যবান চলচ্চিত্রের অংশ।
বিশেষত বিরহ দশা কে ফুটিয়ে তোলার জন্য উনি যে মানে আন্ডার অ্যাকটিং করেছেন তা কয়েক দশক ভাবিয়ে তুলেছিল। কারণ হিসেবে মনে করতে পারা যায়, আগের বছর সদ্য সমাপ্ত হিন্দি ভার্সনে “দেবদাস” ছবিতে ওনার ওই অনুকরণীয় বাঙালিয়ানার দাপট। যা, ওঁকে অনেক পরিণত করে দিয়েছিল।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিমল রায়ের তত্ত্বাবধানে উনি রূপায়ন করতে পেরেছিলেন। কথা না বলেও ক্যামেরার সঙ্গে কথা বলা যায়, এ অংশের নির্মাণ তাও আবার উত্তম কুমারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, প্রতিটা মুহূর্তকে অনেক বেশি মূল্যবান করে তুলেছিলেন পেরেছিলেন।
সঙ্গে ছিল জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও তুলসী চক্রবর্তীদের মতো দাপুটে অভিনেতাদের সংযোজন। এ যেন আবার ‘সাহেব বিবি গোলাম’-র ফ্রেম। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। প্রতিটা সংলাপের যে রতিতৃপ্তি তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেছিল ‘সূর্যতোরণ’ ছবির ছত্রে ছত্রে। —চলবে।
বিশেষত বিরহ দশা কে ফুটিয়ে তোলার জন্য উনি যে মানে আন্ডার অ্যাকটিং করেছেন তা কয়েক দশক ভাবিয়ে তুলেছিল। কারণ হিসেবে মনে করতে পারা যায়, আগের বছর সদ্য সমাপ্ত হিন্দি ভার্সনে “দেবদাস” ছবিতে ওনার ওই অনুকরণীয় বাঙালিয়ানার দাপট। যা, ওঁকে অনেক পরিণত করে দিয়েছিল।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিমল রায়ের তত্ত্বাবধানে উনি রূপায়ন করতে পেরেছিলেন। কথা না বলেও ক্যামেরার সঙ্গে কথা বলা যায়, এ অংশের নির্মাণ তাও আবার উত্তম কুমারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, প্রতিটা মুহূর্তকে অনেক বেশি মূল্যবান করে তুলেছিলেন পেরেছিলেন।
সঙ্গে ছিল জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও তুলসী চক্রবর্তীদের মতো দাপুটে অভিনেতাদের সংযোজন। এ যেন আবার ‘সাহেব বিবি গোলাম’-র ফ্রেম। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। প্রতিটা সংলাপের যে রতিতৃপ্তি তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেছিল ‘সূর্যতোরণ’ ছবির ছত্রে ছত্রে। —চলবে।
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar–Mahanayak–Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।