রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


 

মুক্তির তারিখ: ০৭/০৫/১৯৫৪

 

প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা, পুরবী ও উজ্জ্বলা

উত্তম কুমারের আরেকটি কম দেখা ছবি।
ছবিটির বিশেষত্ব হল, নায়িকা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় এবং পরিচালক নীরেন লাহিড়ী-র উত্তম কুমারকে নিয়ে এটি দ্বিতীয় ছবি।

আগেই বলেছি, এ সময় উত্তম-সুচিত্রা জুটির যেমন গোড়াপত্তন হচ্ছে তেমনই উত্তম-সাবিত্রী জুটি অন্যভাবে বাজার দখল করছে। প্রথম জুটির মধ্যে পরতে পরতে শহুরে আভিজাত্য, ক্যামেরার সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ের একপেশে চিত্রায়ণ। পাশাপাশি দ্বিতীয় জুটিতে সমস্ত ধরণের অভিনয়ের এক দুস্তর অভিযান। সঙ্গে মঞ্চাভিনয়ের দাপট, অনেকটাই উত্তম কুমারকে অন্যদের থেকে এগিয়ে দিয়েছিল।
আশাপূর্ণা দেবীর কাহিনি, অনুপম ঘটকের সুর সংযোজনায় আগামী দিনের ব্লক ব্লাস্টার।
‘অগ্নিপরীক্ষা’-র নেট প্র্যাকটিস ছিল এ ছবি। পরিচালক নীরেন লাহিড়ী-র শুরু করা এক্সপেরিমেন্ট ম্যাচিওর করেছিল ‘অগ্নিপরীক্ষা’-য়।
হালের ‘চাঁপাডাঙার বৌ’-র রেশ তখনও মেলায়নি। মঞ্চে দাপিয়ে চলছে ‘শ্যামলী’। অভিনেত্রী সাবিত্রীর চাহিদাও তখন তুঙ্গে।

‘কল্যাণী’ রিলিজ করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ হলের সামনে ভিড় জমালেন। প্রথম কয়েক সপ্তাহ চলার পর দর্শক আবার পেয়ে গেলেন সুচিত্রা-উত্তমের ‘মরণের পরে’। ‘কল্যাণী’-র রেশ মিলিয়ে যেতে থাকল। ‘শ্যামলী’-তে দর্শক যা পুষিয়ে নিচ্ছেন, ফিল্মে যেন কোথাও একটা অধরা রয়ে যাচ্ছিল।
এতদিন পর ‘কল্যাণী’-র সমালোচনাস্তম্ভে কয়েকটি বিষয়ে নজর কাড়ে।
প্রথমত, কাহিনির সঙ্গে পর্দার মেল বন্ধন ঘটায় যে চিত্রনাট্য, তা বেশ সময়োপযোগী হয়নি এ ছবিতে। আশাপূর্ণা দেবী-র কাহিনিতে নারীচরিত্রের যে আবেদন থাকে তার সম্পূর্ণ নির্যাস আদায়ে পরিচালক অক্ষম হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৬: সংসার সুখের হয় ‘চাঁপাডাঙার বৌ’-র গুণে

শম্ভু, শম্ভু, শিব মহাদেব শম্ভু, খুদার ইবাদত যাঁর গলায় তাঁর আর কাকে ভয়?

ছোটদের যত্নে: শিশুকে কোন ওষুধ কখন খাওয়াবেন? ওষুধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম কী? জানুন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

দ্বিতীয়ত, উত্তম কুমারের হলিউডি ঘরানার সঙ্গে সাবিত্রীর প্রাণবন্ত সেলুলয়েডিপনা অনেকগুলো অংশে বেমানান লাগছিল। গড়পড়তা দর্শক তফাত করতে না পারলেও বৌদ্ধিক অংশে ছবি মার খাচ্ছিল বোঝা গিয়েছে।
তৃতীয়ত, উত্তম-সাবিত্রীর ব্যক্তিগত রসায়ন, খানিকটা চোরাস্রোত হয়ে ফিল্মে ঢুকে পড়ছিল। চরম পেশাদার উত্তম কুমার এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় দু’জনেই একই ফ্রেমে কেমন যেন ছেলেমানুষী করে ফেলতেন যা, মূল চিত্রনাট্যকে কখনও কখনও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিত। ছবির ব্যর্থতার ক্ষেত্রে আংশিকভাবে এ পর্বটাও দায়ী।

চতুর্থত, সংগীত পরিচালনায় অনুপম ঘটক শাস্ত্রীয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সত্য কিন্তু মনলোভা বা চিত্তজয়ী নির্মাণ যা, একটা ছবির সাফল্যকে অনেক বাড়িয়ে দেয় সেখানে অনেক খামতি ছিল এ ছবিতে।
সবকিছুর মিলিত ফলে ছবিটি সেভাবে দর্শকসমাজে দাগ কাটতে পারেনি।

ব্যক্তিগতভাবে উত্তম কুমার খুব কাছের মানুষগুলোর কাছে অচেনা হতে শুরু করেছিলেন এ ছবির সঙ্গে সঙ্গে। মঞ্চে, মঞ্চের বাইরে, শুটিং জোনে বেশিরভাগ সময়েই সাবিত্রীর সঙ্গ। পরপর ছবির পরিচালকরা সাবিত্রীর মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে উত্তমকে কাস্ট করতে লাগলেন। তখনও সুচিত্রার সঙ্গে অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি জমেনি। উত্তম ও সাবিত্রীর অনেক জায়গায় একসঙ্গে থাকাটা বাড়ল। পূর্ববর্তী নায়িকাদের সঙ্গে লাগাতার ছবি না পাওয়ায় যে শূন্যতা ছিল, সাবিত্রীর মতো অভিনেত্রীর আগমনে উত্তম অন্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। একসঙ্গে কাজের ধারাবাহিকতা থাকলে কর্মসূত্রে অনেক সময়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষরা পরস্পরের কাছাকাছি আসেন। সে নৈকট্য, ঘরবাঁধা পর্যন্ত এগোয় না কিন্তু মানুষ বৌদ্ধিক মর্যাদায় দায়িত্বহীন প্রাপ্তিতে মনে মনে বড় তৃপ্ত হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৫: রবীন্দ্রনাথ নিজের ডাক্তারি নিজেও করেছেন

গল্প: পিছুটানে

সাবিত্রীর বিবেচনা, উত্তমকে ঘর ভাঙায়নি। কিন্তু সবাই তো আর সুযোগের অপব্যবহার করতে ছাড়েন না। পরবর্তীকালে মানুষ উত্তমের এ অপরিনামদর্শিতার অনেক বড় দাম, তাকে জীবন দিয়ে শোধ করতে হয়েছিল। যাইহোক উত্তম কুমার নামক স্টার যাত্রা শুরু করলেন একগুচ্ছ মাঝারি ছবির মাধ্য।মে যেগুলো আজকের বিচারে সিরিয়াস আর্ট ফিল্ম।—চলবে

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

Skip to content