রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন কার্ড কি নেই? জেনে নিন খুঁটিনাটি

দেশবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেন্দ্রের নতুন প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত। ২০২১ সালের আর্থ সামাজিক জনগণনার ভিত্তিতে করা হয়েছে এই স্বাস্থ্য বিমা। ২০২১ সালের সুমারি অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের ৮.৩ কোটি, শহর অঞ্চলের ২.৩৩ কোটি পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসতে চলেছে। সর্বমোট ধরলে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ পাবেন এই প্রকল্পের সুবিধা।

প্রকল্পের বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত খুলবে বলে আশা করা যায়। এই সরকারি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে কভারেজ পেতে পারেন। ২০১৭ সালের ‘গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি’তে দেখা গেছে ভারতে যে রোগগুলির প্রকোপ সর্বাধিক, যাতে শিকার হয়ে বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়; সেই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পটির ঘোষণা করেন কেন্দ্র।

ভারতের ২৮টি রাজ্য, ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ২০টি রাজ্যে এই প্রকল্প যুক্ত হয়। আয়ুষ্মান ভারত হল বিভাগীয় এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতির স্বাস্থ্য পরিষেবা। আয়ুষ্মান ভারত প্রাথমিক, মধ্যবর্তী ও তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সর্বাধিক সমাধানের লক্ষ্যে গ্রহণ করেছেন। আয়ুষ্মান ভারত দুটি আন্তঃসম্পর্কিত উপাদানের সমন্বয়ে যত্নশীল পদ্ধতির ধারাবাহিকতা গ্রহণ করেছে। সেগুলি হল স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা।

ইউনিক ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড আসলে কী?
ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি অনন্য স্বাস্থ্য পরিচয় যুক্ত করবে এই প্রকল্প। এই হেলথ কার্ডের মাধ্যমে রোগীর সমস্ত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করার কথা। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন লিংকটি সক্রিয় করা হয়েছে; দ্যা মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার, ইন্ডিয়া গভর্নমেন্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তা পাওয়া যাচ্ছে।

ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য
দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে আধার কার্ডের মতো একটি অনন্য হেলথ আইডি কার্ড থাকবে।
ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড অনলাইনের মাধ্যমে করা সম্ভব।
ইউনিক ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড-এ একটি চোদ্দো সংখ্যার নম্বর থাকবে।
এই কার্ডের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্য রেকর্ড রাখা যাবে।
এই ডিজিটাল আইডি স্বাস্থ্য কার্ডের সাহায্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে বলে জানানো হয়েছে।
একটি আধার কার্ড এবং ফোন নম্বরের সাহায্যে ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড তৈরি করা যেতে পারে।
একটি পি-এইচ, ডি-এইচ এম ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড তৈরির মূল উদ্দেশ্যই হল ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার উন্নতি করা।

এবিডিএম ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড আসলে কী?
ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দপ্তরের অধীনে জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশন-এর আওতায় শুরু হয়েছে আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন। কোনও ব্যক্তির আধার কার্ড এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত বা রেজিস্টার্ড মোবাইল নাম্বার থাকলে এই কার্ড করা সম্ভব।

এই ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড-এ কীভাবে রেজিস্টার্ড করবেন?
যে কোনও ব্যক্তি জিডি এবিডিএম-এর অংশ হতে চান তাকে অবশ্যই একটি হেলথ আইডি কার্ড তৈরি করতে হবে। পিএম মোদি ডিজিটাল হেলথ আইডি কার্ড হল একটি ১৪ সংখ্যার নম্বর। এই অনন্য আইডি তৈরি করতে আবেদনকারীকে তাদের প্রাথমিক বিবরণ যেমন মোবাইল নম্বর এবং আধার কার্ডের নম্বর প্রদান করতে হবে। এই প্রদত্ত মোবাইল নম্বরটি যে কোনও সময় দেখা যেতে পারে এমন সমস্ত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রেকর্ড লিংক করতে সাহায্য করবে। মন্ত্রকের অফিসিয়াল পোর্টাল ছাড়া আবেদনকারীরা নিজেদের মোবাইলে এবিএমডি হেলথ রেকর্ডস অ্যাপ ডাউনলোড করে একটি স্বাস্থ্য আইডিও পেতে পারেন।

এই প্রকল্পের সুবিধাগুলি কী কী?
সারা দেশ জুড়ে প্রায় ১০.৭৪ কোটিরও বেশি দরিদ্র ও দুর্বল পরিবার অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায়।
সরকার প্রতি পরিবারপিছু বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিমা দেবে। কন্যাসন্তান, মহিলা এবং প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
নির্ধারিত মান অনুযায়ী এসইসিসি ডাটাবেসে তালিকাভুক্ত সমস্ত পরিবার এই যোজনার সুবিধা পাবে। পরিবারের আকার এবং সদস্যদের বয়সের কোনও আলাদা নিয়ম নেই।
জেলা হাসপাতাল এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ পাওয়া যাবে। এমন হাসপাতালও এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত।
সব সরকারি এবং তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলি থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে
চিকিৎসা নগদবিহীন এবং কাগজবিহীন হবে।
এই যোজনার আওতাধীন সুবিধাভোগীদের থেকে আলাদা করে চিকিৎসা খরচ চাইতে পারবে না হাসপাতালগুলি।
এই যোজনার ১৩৫০টি মেডিকেল প্যাকেজ নির্দিষ্ট করছে। যার আওতাধীন হবে ওষুধ, রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা এবং যাতায়াত সহ চিকিৎসা এবং ডে কেয়ার চিকিৎসা।
যোগ্য সুবিধা প্রাপকেরা সারা ভারত জুড়ে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন।

গ্রামীণ এলাকায় কারা পাবেন এই কার্ডের সুবিধা?
যে পরিবারগুলিতে ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সি কোনও প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য নেই।
মহিলা প্রধান পরিবার যেখানে ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সি কোনও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নেই।
এসসি ও এসটি পরিবার।
ভূমিহীন পরিবারগুলি যাঁরা নৈমিত্তিক শ্রম করে আয় করেন।
যেসব পরিবারে কমপক্ষে একজন প্রতিবন্ধী সদস্য এবং কোনও বয়স্ক সদস্য নেই।
ম্যানুয়াল স্ক্যানভেঞ্জার পরিবার।
আদিম উপজাতি গোষ্ঠী।
যাঁরা ভিক্ষা করে বেঁচে আছেন।
বন্ডেড লেবার।

শহর এলাকায় কারা পাবেন এই প্রকল্পের সুবিধা?
ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, অ্যাসেমলার, মেরামত কর্মী।
যাঁরা ভিক্ষা করেন।
গৃহভিত্তিক কর্মী, কারিগর, হস্তশিল্প কর্মী, দর্জি।
গৃহকর্মী।
নির্মাণকর্মী, প্লাম্বার, রাজমিস্ত্রি, চিত্রশিল্পী, ওয়েন্ডার, নিরাপত্তা প্রহরী, কুলি এবং অন্যান্য হেড লোড শ্রমিক।
ওয়াসারম্যান, চৌকিদার
রাস্তায় বিক্রেতা, মুচি, ফেরিওয়ালা এবং এই জাতীয় অন্যান্য সেবা প্রদানকারী।
সুইপার, স্যানিটেশন কর্মী, মালি।
দোকানের কর্মী, সহকারী, পিওন, হেল্পার, ডেলিভারি সহকারী, পরিচারক, ওয়াটার।
পরিবহনকর্মী, ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, গাড়িচালক ও রিকশাচালক।

অনলাইনে কীভাবে আবেদন করবেন?
প্রথমত আবেদনকারীকে জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
তারপর ইউনিক ডিজিটাল হেলথ কার্ড অপশনে ক্লিক করতে হবে। স্বাস্থ্য আইডি তৈরি করতে হবে পরের ধাপে।
এবার আপনাকে আধার নম্বর লিখতে হবে।
আধার কার্ডের সঙ্গে রেজিস্টার্ড করা মোবাইল নম্বর ওটিপি এলে সেটি যাচাই করতে হবে।
এবার আপনাকে আপনার প্রোফাইলের জন্য ছবি, জন্মতারিখ এবং ঠিকানা সহ নানা তথ্য প্রদান করতে হবে।
এ বারে একটি ফর্ম আসবে। সেই ফর্মে যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
সমস্ত তথ্য ঠিকমতো ইনপুট করার পরেই একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্য আইডি কার্ড আপনার স্ক্রিনে ভেসে উঠবে।
এই ডিজিটাল হেলথ কার্ডটির মাধ্যমে এবার আপনি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সুবিধা পাবেন৷

তথ্যসূত্র : www.healthid.ndhm.gov.in, www.nha.gov.in, www.ndhm.gov.in


Skip to content