বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


(বাঁদিকে) সমুদ্রতটের রাস্তা। নানা হোটেলের মাঝে ভিক্টোরিয়া হোটেল। (ডান দিকে)

সম্প্রতি স্বপরিবার ইংল্যান্ড সফরের বেশ কিছুটা সময় বরাদ্দ ছিল ইয়র্কশায়ারের উত্তরাংশের জন্য। আর তর সইলো না, কাগজকলম হাতে ডাউন মেমরি লেন ধরে সটান আজ মনকেমনের গাঁয়ের সমুদ্রতটে। পুরনো ইউরোপীয় গন্ধ মাখা সে গাঁয়ের নাম রবিনহুড’স বে। তবে জানা নেই ইংরেজি লোককথার সুখ্যাত বা কুখ্যাত বীরনায়ক রবিনহুডের পদচিহ্ন এ গাঁয়ে কখনো পড়েছে কিনা।
রুক্ষ পাথুরে উঁচু উঁচু ক্লিফ আর নীল নর্থ সি ঘিরে রেখেছে উপকূলবর্তী টুকটুকে সুন্দর এই ফিশিং ভিলেজকে। ঝকঝকে সকাল। তীব্র রোদের তেজ। সঙ্গে শীতল হাওয়া। রবিন হুড’স বে-র হিলটপে কাঠের চেয়ারে বসে সুদূরপ্রসারিত নীল শান্ত সমুদ্র। আর সুনীল আকাশ এই দুইয়ের মিলনরেখায় চোখ যেন পলকে ডুবে গেল। বেশ খাড়াই পাহাড়ি পথ সোজা এসে মিলেছে সমুদ্রতটে।
আরও পড়ুন:

চলো যাই ঘুরে আসি: সুইৎজারল্যান্ডে পাহাড়-ঘেরা বাতিজ্বলা সেই স্টেশনের নামটি ছিল সোল্লেরমিউলি

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-৪২: অরুণাভ অন্তর্ধান

আবার এ পথেরই একফালি অংশ পাশাপাশি সিঁড়ি চলেছে।টকটক করে সেই সিঁড়ি দিয়ে চলে এলাম দুধারের ছোটছোট বাহারী নানা দোকান আর বাড়ী-ঘর দেখতে দেখতে। রংরূপে, রঙিন ফুলে ফুলে রাঙানো কপাটগুলিতে চোখ যেন আটকে যায়। তটভাগে ছড়িয়ে কালো বাদামি পিংগল রঙা ছোটবড় নানা পাথর। যেসব আমার এতদিনের দেখা সমুদ্রতট থেকে যেন কিছুটা হলেও ভিন্ন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৮: পালাবার কোনও পথ নেই

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৫৪: আততায়ী এক, নাকি দুই?

জানা গেল এ অঞ্চলই হুইটবি জেট ব্ল্যাক জেমসের উৎস। হুইটবি হল রবিনহুড’স বে-র সবথেকে কাছের শহর।এই হুইটবি জেটের উদ্ভব হয় জুরাসিক যুগের প্রারম্ভে অর্থাৎ লক্ষাধিক বছরেরও আগে। মাঙ্কি পাঝল Monkey Puzzle বা ওই জাতীয় গাছের জীবাশ্ম থেকে। ঘনসবুজ রোমশ পাতার এই গাছ ঘুরতে-ফিরতে লক্ষ্য করেছি বারবার বারবার। বেশ হালকা, কালো, বাদামি এই বহুমূল্য রতন গয়নার উপযোগী। মিলেছে এ অঞ্চলে ডাইনোসরের জীবাশ্মও।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

ভাগ্যদেবী সহায় বলেই নর্থ-সি এর কোনও ক্ষ্যাপামি দেখতে হলো না। এখন লো টাইড মানে ভাটা। তাই সাগরসলিল সরে আছে সি-বীচ থেকে বহুদূরে। আমরা বীচের অনেকটা গভীরে হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর পর্যন্ত। রত্নের খোঁজে। এই রবিনহুড বে একসময়ে ছিল চোরাচালান কারবারিদের স্বর্গরাজ্য। পাচার হতো চা তামাক নানান মাদকদ্রব্য। যার নমুনা রয়ে গেছে আজও এখানে। দেখা গেল ক্লিফের নিচ ধরে তৈরি রহস্যরোমাঞ্চের অন্ধকার গুপ্ত সুড়ঙ্গপথ।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭০: ভানুপিসি ও শ্রীমার ভক্ত

কিশোর মনের খোরাক জোগাতে কত না গল্প ছবি লেখা আঁকা হয়েছে। সেই ১৮০০ সনে স্মাগলিংয়ের রমরমাকে রুখতে তৈরি হয় Old Coast guard Station। বর্তমানে যা caffe , রবিনহুড বে র অতীতকে জানতে তৈরী হয় visitor centre। সামনেই বিশাল দুর্গের চেহারায় দাঁড়িয়ে। অতীতকে হাতছাড়া করতে মন চাইল না। লেন্সে ধরা থাকল।

(বাঁদিকে) নীল সমুদ্র। গ্রামের ঘরবাড়ি। (ডান দিকে)

সি-শোর থেকে ফেরার পথে একই রাস্তায় বাঁহাতে ডায়নোসর অ্যান্ড ফসিল মিউজিয়ামও ঘুরে নিলাম। বহু শিল্পী লেখক চিত্রকরের শিল্পকীর্তিতে পটভূমি হিসেবে সমাদৃত এ গ্রাম। আসার সময় কারপার্কিং থেকে রবিনহুড বে হিলের পথে পরপর সুদৃশ্য নানা হোটেলের মাঝে, আমার ছেলে দেখালো, দ্য ভিক্টোরিয়া হোটেল। হ্যাঁ, ২০১৭ সালে অস্কারে মনোনীত ছবি ‘ফ্যান্টম থ্রেড’ র পটভূমিতে দৃশ্যত এই হোটেল, সমুদ্র। অবশ্যই চিরস্মৃতি হয়ে রয়ে গেল। এ বার ফেরার পালা। সেই সবুজ পাহাড়ি গ্রাম্যপথ বেয়ে পাশের শহরে, অতিথি আলয়ে।

চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
* লেখিকার ভালোবাসা গান, সংসার, বেড়ানো, ভ্রমণকথা লেখা।

Skip to content