উড়ান থেকে আমাজনের প্রথম দর্শন।
তো যাই হোক, আমরা গিয়ে নামলাম রারেনবাক বিমানবন্দরে৷ প্রচলিত ধারণার বাইরে, এখানকার বিমানবন্দর পুরোপুরি আলাদা৷ বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে আমাদের পাড়ার মুদির দোকান৷ কোনওরকমে একটা রানওয়ে আছে যেখানে প্রতিদিন দুবার দুটো উড়ান ওঠানামা করে। নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থাও সবই আছে তবে অনেকটাই গয়ংগচ্ছ৷ রানওয়ে থেকে বন্দরের সদর দরজায় আসার রাস্তাটাও জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে৷
এই জঙ্গল মতো জায়গাটাতেই প্রথম দেখা পেলাম ক্যাপিবারার৷ ক্যাপিবারা হল সবচাইতে বড় প্রজাতির ইঁদুর। দৈর্ঘ্য প্রস্থে মোটামুটি একটা কুকুর, কী একটা ছোট শুয়োরের মতো হবে। লেজ নেই। তৃণভোজী, কাজেই শহরের কাছাকাছি ও চলে আসে খাবারের জন্য। আড়-আয়তন দেখে বুঝতে অসুবিধা হল না যে আদি কালে গণেশ ঠাকুর এদের মধ্যে থেকেই নিজের বাহনটি বেছে নিয়েছেন। আমাদের বাঙালি ঘরের কোণার নেংটি ইঁদুরদের থেকে নয়৷
বিমানবন্দর থেকে শহরে যাওয়ার জন্য কিছু গাড়ি ছিল। তারই মধ্যে একটা বসার জায়গা ভাড়া করে উঠে পড়লাম। রারেনবাক শহরে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় সন্ধে। শহর না বলে গ্রাম বলাই ভালো। বুকিং তো কিছু নেই। শেষমেশ প্রায় এক দেড় ঘণ্টা এদিক-ওদিক ঘোরার পরে এক দোকানদারের সুপারিশে একটা হস্টেলে একটা বিছানা পাওয়া গেল। রাতটুকু কোনওরকমে কাটিয়ে পরের দিন জঙ্গলে হাইকিং করতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার মতো যারা সোলো ট্রাভেল বা অ্যাডভেঞ্চার ট্রাভেল করে তাদের কাছে এই হস্টেল ব্যাপারটা খুবই জনপ্রিয়। এখানে একটা ঘরের মধ্যে ৫ থেকে ১০ জন থাকে। বিছানা না থাকলে মাটিতেও অনেকসময় লোকে শুয়ে পড়ে। ভাড়া অবশ্যই বড় হোটেলের তুলনায় অনেক কম। আর সব চাইতে বড় পাওনা হল একসঙ্গে থাকা অচেনা সঙ্গীরা। তাদের একেক জনের একেক রকম গল্প। তাদের থেকে কাছাকাছি জায়গা সম্পর্কে ভালোমন্দ সবকিছু জেনেও নেওয়া যায়। সেখানেই আলাপ হল মার্টিনের সঙ্গে।
এই জঙ্গল মতো জায়গাটাতেই প্রথম দেখা পেলাম ক্যাপিবারার৷ ক্যাপিবারা হল সবচাইতে বড় প্রজাতির ইঁদুর। দৈর্ঘ্য প্রস্থে মোটামুটি একটা কুকুর, কী একটা ছোট শুয়োরের মতো হবে। লেজ নেই। তৃণভোজী, কাজেই শহরের কাছাকাছি ও চলে আসে খাবারের জন্য। আড়-আয়তন দেখে বুঝতে অসুবিধা হল না যে আদি কালে গণেশ ঠাকুর এদের মধ্যে থেকেই নিজের বাহনটি বেছে নিয়েছেন। আমাদের বাঙালি ঘরের কোণার নেংটি ইঁদুরদের থেকে নয়৷
বিমানবন্দর থেকে শহরে যাওয়ার জন্য কিছু গাড়ি ছিল। তারই মধ্যে একটা বসার জায়গা ভাড়া করে উঠে পড়লাম। রারেনবাক শহরে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় সন্ধে। শহর না বলে গ্রাম বলাই ভালো। বুকিং তো কিছু নেই। শেষমেশ প্রায় এক দেড় ঘণ্টা এদিক-ওদিক ঘোরার পরে এক দোকানদারের সুপারিশে একটা হস্টেলে একটা বিছানা পাওয়া গেল। রাতটুকু কোনওরকমে কাটিয়ে পরের দিন জঙ্গলে হাইকিং করতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার মতো যারা সোলো ট্রাভেল বা অ্যাডভেঞ্চার ট্রাভেল করে তাদের কাছে এই হস্টেল ব্যাপারটা খুবই জনপ্রিয়। এখানে একটা ঘরের মধ্যে ৫ থেকে ১০ জন থাকে। বিছানা না থাকলে মাটিতেও অনেকসময় লোকে শুয়ে পড়ে। ভাড়া অবশ্যই বড় হোটেলের তুলনায় অনেক কম। আর সব চাইতে বড় পাওনা হল একসঙ্গে থাকা অচেনা সঙ্গীরা। তাদের একেক জনের একেক রকম গল্প। তাদের থেকে কাছাকাছি জায়গা সম্পর্কে ভালোমন্দ সবকিছু জেনেও নেওয়া যায়। সেখানেই আলাপ হল মার্টিনের সঙ্গে।
মার্টিন লন্ডনে নিজের বাড়িতে ভাড়া বসিয়ে দিয়ে সব ছেড়েছুড়ে এই হস্টেলে এসে আছে প্রায় মাস চারেক। সে আমাজনের অরণ্য এবং তার আদিবাসীদের ওপর তথ্যচিত্র বানাতে চায়। ধন্য মানুষের ত্যাগ। তাছাড়া ছিল বেলা, পুরো নাম ইসাবেলা, তার নিজের কথায় সে হল ফুল-টাইম-ট্রাভেলার। সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোই তার নেশা। পৃথিবীর এক এক প্রান্ত থেকে সবাই আসে। কেউ পথিক আমার মতো, বেলার মতো, কিছুদিনের অতিথি, আর তারপর চলে যায় অন্য খানে। আবার কেউবা হয়ে যায় সেখানকারই একজন। মার্টিনের মতো, যারা পৃথিবীর সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করেছে কোনও এক বৃহত্তর লক্ষ্যপূরণের স্বার্থে৷ যাই হোক এমন লোকেদের নিয়ে না হয় পরে কখনও লেখা যাবে।
তবে যাদের কথা না বললেই নয়, তারা হল ফাবিয়ানো আর ফ্রানজি, জার্মান দম্পতি। তবে জার্মানির সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষাতেও সমান দক্ষ। তারা চিলিতে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে। সেই সূত্রেই এসেছে বলিভিয়া। আর সেখান থেকে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় এই রারেনবাকে। কথায় কথায় জানা গেল যে ওই জার্মান দম্পতির ইচ্ছা পরেরদিনই জঙ্গলে ঢুকে হাইকিং শুরু করবে। তিন চারদিন থাকবে জঙ্গলের মধ্যেই। আমারও তাই ইচ্ছা। কাজেই সেকথা শুনেই আমারও উৎসাহ বেড়ে উঠল, একসঙ্গে যেতে পারলে ভালোই হয়। এখানে ভাষার সমস্যা। সবাই স্প্যানিশ বলে। আর আমার স্পানিশের গণ্ডি ওই উনো-দোস-ত্রেস (বাংলায় এক-দুই-তিন) পর্যন্তই। কাজেই তাদের সঙ্গে গেলে আমার আর অসুবিধাও হবে না। আর জার্মান দম্পতিও এক কথায় রাজি আমাকে সঙ্গে নিতে। তাই আর কোনও অসুবিধাই রইল না৷
তবে যাদের কথা না বললেই নয়, তারা হল ফাবিয়ানো আর ফ্রানজি, জার্মান দম্পতি। তবে জার্মানির সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষাতেও সমান দক্ষ। তারা চিলিতে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে। সেই সূত্রেই এসেছে বলিভিয়া। আর সেখান থেকে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় এই রারেনবাকে। কথায় কথায় জানা গেল যে ওই জার্মান দম্পতির ইচ্ছা পরেরদিনই জঙ্গলে ঢুকে হাইকিং শুরু করবে। তিন চারদিন থাকবে জঙ্গলের মধ্যেই। আমারও তাই ইচ্ছা। কাজেই সেকথা শুনেই আমারও উৎসাহ বেড়ে উঠল, একসঙ্গে যেতে পারলে ভালোই হয়। এখানে ভাষার সমস্যা। সবাই স্প্যানিশ বলে। আর আমার স্পানিশের গণ্ডি ওই উনো-দোস-ত্রেস (বাংলায় এক-দুই-তিন) পর্যন্তই। কাজেই তাদের সঙ্গে গেলে আমার আর অসুবিধাও হবে না। আর জার্মান দম্পতিও এক কথায় রাজি আমাকে সঙ্গে নিতে। তাই আর কোনও অসুবিধাই রইল না৷
আমি, ফাবিয়ানো, ফ্রানজি, আবিলো আর বাদিয়া।
কিন্তু এবার একজন গাইড দরকার। তার ব্যবস্থাও হয়ে গেল। মার্টিনের সেখানে বহুদিন থাকার সুবাদে, এবং তার তথ্যচিত্র বানানোর দৌলতে, নিকটবর্তী আদিবাসীদের সঙ্গে তার বিস্তর জানাশোনা। সে-ই কথা বলিয়ে দিল এক চিমানে (বা, সিমানে) আদিবাসীর সঙ্গে যে কিনা জঙ্গলের রাস্তাঘাট সব চেনে। তার নাম আবিলো। সে সঙ্গে নেবে বাদিয়াকে যে কিনা আমাদের জন্য খাবার বানিয়ে দেবে। কিন্তু পরদিন সকালে শহরে তাদের কিছু কাজ আছে, বিকেলের আগে তারা বেরোতে পারবে না। কী আর করা। আর তাছাড়া, আমাদেরও তাড়া নেই। কারওরই ফেরার টিকিট তো আর কাটা নেই। যখন ইচ্ছা হবে তখন ফিরলেই হল। ঠিক হল, সকালবেলা এদিক-ওদিক একটু ঘুরে কাছেপিঠে খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা পাঁচ জন (আমি, ফাবিয়ানো, ফ্রানজি, আবিলো আর বাদিয়া) বেরিয়ে পড়ব আমাজনের উদ্দেশে।
পরদিন সকালে উঠেই শুরু হল জঙ্গলে ঢোকার জন্য তোড়জোড়। প্রত্যেককে একটা বড় ফ্লাশলাইট আর মশা তাড়ানোর মলম (বা স্প্রে) নিতেই হবে। গহন অরণ্যে হিংস্র জাগুয়ারের আক্রমণের থেকে এই ক্ষুদ্র পতঙ্গের ভয় অনেক বেশি। তা বটে, ‘এক মচ্ছড় আদমিকো হিঁজড়া বানা দেতে হেয়’ ছেলেবেলায় শোনা নানা পাটেকারের সেই ফিল্মি বক্তব্য যে এতটা সত্যি সে কী আর আগে জানতাম? আর আজানুলম্বিত, হাঁটু অব্দি একখানি বুট অবশ্যই জরুরি। অন্যান্য কীটপতঙ্গ বিশেষত মার্ডারার অ্যান্ট (বা বুলেট অ্যান্ট), এবং বিভিন্ন সরীসৃপের হাত থেকে বাঁচার জন্য। যাই হোক, সব কেনাকেনি মিটলে দুপুরের খাওয়া সেরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম আবিলো আর বাদিয়ার জন্য। —চলবে
ছবি সৌজন্য: লেখক
পরদিন সকালে উঠেই শুরু হল জঙ্গলে ঢোকার জন্য তোড়জোড়। প্রত্যেককে একটা বড় ফ্লাশলাইট আর মশা তাড়ানোর মলম (বা স্প্রে) নিতেই হবে। গহন অরণ্যে হিংস্র জাগুয়ারের আক্রমণের থেকে এই ক্ষুদ্র পতঙ্গের ভয় অনেক বেশি। তা বটে, ‘এক মচ্ছড় আদমিকো হিঁজড়া বানা দেতে হেয়’ ছেলেবেলায় শোনা নানা পাটেকারের সেই ফিল্মি বক্তব্য যে এতটা সত্যি সে কী আর আগে জানতাম? আর আজানুলম্বিত, হাঁটু অব্দি একখানি বুট অবশ্যই জরুরি। অন্যান্য কীটপতঙ্গ বিশেষত মার্ডারার অ্যান্ট (বা বুলেট অ্যান্ট), এবং বিভিন্ন সরীসৃপের হাত থেকে বাঁচার জন্য। যাই হোক, সব কেনাকেনি মিটলে দুপুরের খাওয়া সেরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম আবিলো আর বাদিয়ার জন্য। —চলবে
ছবি সৌজন্য: লেখক
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম : এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল : samayupdatesin.writeus@gmail.com