পিঙ্ক ডলফিন
এই সবের মধ্যে দিয়ে নৌকা এসে পৌঁছল স্কুইরেল-মাঙ্কিদের আড্ডায়। ছোট্ট ছোট্ট উজ্জ্বল হলুদ রঙের সব বাঁদর। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির বানর। তবে ছোট বলে অন্যান্যদের তুলনায় কোনও অংশেই কম যায় না। বরং এই ছোট শরীরের সুবিধা নিয়ে এদের দস্যিপনার অন্ত নেই। এর আগে হাউলার-মাঙ্কিদের কথা বলেছি। তারা তাও আমাদের একটু সমীহ করে কাছে আসেনি; গাছের অনেক ওপর থেকেই চেঁচাচ্ছিল। অন্যদিকে এই ছোট বানরেরা মানুষজনের কোনও তোয়াক্কাই করে না। নৌকো কাছাকাছি পৌঁছেছে কি পৌঁছুয়নি আমাদের গায়ে মাথায় ঝাঁপ দিয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। সঙ্গে থাকা নিউজিল্যান্ড নিবাসিনীর গলার হারটি টেনে চিরে নিয়ে চলে গেল চোখের নিমেষে কিছু বুঝে ওঠার আগেই। এদের দেখলেই বোঝা যায় বাঁদরের বাঁদরামি আসলে কী জিনিস!
আমরা আর বেশিক্ষণ দাঁড়ালে আরও কী কী নিয়ে নিত কে জানে, সমস্ত যাত্রীর অনুরোধে বনি নৌকা ঘুরিয়ে দিল। কিছুটা যেতেই চারদিকে জলের মধ্যে অদ্ভুত আন্দোলন লক্ষ করলাম। কিছু একটা উঠেই আবার ডুবে যাচ্ছে জলে। পিঙ্ক ডলফিন। এদের দেখাও একমাত্র এই আমাজনেই মেলে। এদের রং গোলাপি। মুখের সামনে ঠোঁটটা ছুঁচালো হয়ে অনেকটা বেরিয়ে আসে। আর তাতে দাঁতগুলি বেশ ধারালো। মজার ব্যাপার হল এরা মানুষের খুব বন্ধু। জলের মধ্যে একমাত্র স্তন্যপায়ী হওয়ায় হয়তো বেশ একা বোধ করে। সে যেকোনও কারণেই হোক, এরা কিন্তু মানুষের কাছাকাছি চলে আসে এবং ঘোরাঘুরি করে। তবে তার চাইতেও মজার ব্যাপার হল এরা কাইমানদের পারলেই তাড়া করে এবং কাইমানরা নাকি এদের বেশ ভয় করে। বনি আমাদের নৌকায় থাকতে বলে নিজে ঝাঁপ দিল জলে। যদি কোনও ডলফিন কাছে আসে। আমি ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষা করছি। গোলাপি পাখনার আগাটুকু দেখে বুঝতে পারছি বটে যে বনির চারপাশে তারা ঘুরছে কিন্তু মোটেই দেখা দিচ্ছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর হঠাৎ একটি ডলফিন বনির একদম সামনে এসে প্রায় পূর্ণ শরীরে দেখা দিয়েই ডুবে গেল। ভাগ্য ভালো যে ক্যামেরা দেগে বসেছিলাম। তাই মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দি করা গেল। আর সে উঠল না।
আমরা আর বেশিক্ষণ দাঁড়ালে আরও কী কী নিয়ে নিত কে জানে, সমস্ত যাত্রীর অনুরোধে বনি নৌকা ঘুরিয়ে দিল। কিছুটা যেতেই চারদিকে জলের মধ্যে অদ্ভুত আন্দোলন লক্ষ করলাম। কিছু একটা উঠেই আবার ডুবে যাচ্ছে জলে। পিঙ্ক ডলফিন। এদের দেখাও একমাত্র এই আমাজনেই মেলে। এদের রং গোলাপি। মুখের সামনে ঠোঁটটা ছুঁচালো হয়ে অনেকটা বেরিয়ে আসে। আর তাতে দাঁতগুলি বেশ ধারালো। মজার ব্যাপার হল এরা মানুষের খুব বন্ধু। জলের মধ্যে একমাত্র স্তন্যপায়ী হওয়ায় হয়তো বেশ একা বোধ করে। সে যেকোনও কারণেই হোক, এরা কিন্তু মানুষের কাছাকাছি চলে আসে এবং ঘোরাঘুরি করে। তবে তার চাইতেও মজার ব্যাপার হল এরা কাইমানদের পারলেই তাড়া করে এবং কাইমানরা নাকি এদের বেশ ভয় করে। বনি আমাদের নৌকায় থাকতে বলে নিজে ঝাঁপ দিল জলে। যদি কোনও ডলফিন কাছে আসে। আমি ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষা করছি। গোলাপি পাখনার আগাটুকু দেখে বুঝতে পারছি বটে যে বনির চারপাশে তারা ঘুরছে কিন্তু মোটেই দেখা দিচ্ছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর হঠাৎ একটি ডলফিন বনির একদম সামনে এসে প্রায় পূর্ণ শরীরে দেখা দিয়েই ডুবে গেল। ভাগ্য ভালো যে ক্যামেরা দেগে বসেছিলাম। তাই মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দি করা গেল। আর সে উঠল না।
পিঙ্ক ডলফিন
এবার বনির দেখাদেখি আমিও বেশ উত্তেজিত। আমার সামনেও যদি একটি ওরকম ভেসে ওঠে তাহলে বেশ মজার ব্যাপার হবে। অতএব আমিও নামতে চাইলাম। বনি আমাকে আমাদের সই করে আসা বন্ডের কথা তুলে ভয় দেখাল। কাইমানের ভয়ও দেখাল। এদিকে আমি তো লুইসিয়ানার এলিগেটর ভরা সোয়াম্পে এলিগেটরদের কায়াক (এক বিশেষ ধরনের নৌকো) চালিয়েও অভ্যস্ত। কাজেই তার থেকেও ছোট কাইমানে আমার আদৌ ভয় নেই।
ও এদিকে আমি তো লুইসিয়ানার এলিগেটর ভরা সোয়াম্পে এলিগেটরদের কায়াক (এক বিশেষ ধরনের নৌকো) চালিয়েও অভ্যস্ত। কাজেই তার থেকেও ছোট কাইমানে আমার আদৌ ভয় নেই। তাই খানিক পীড়াপীড়ি করার পরে আমিও ঝাঁপ দিলাম জলে। কিন্তু আমার ধারণা ছিল না যে জলের মধ্যে অতটা স্রোত। লাইফ জ্যাকেট পরেও অসুবিধা হচ্ছে। এখানে জলে লোহার ভাগ মনে হল অত্যন্ত বেশি। ডুব দিলে নিজের হাতটাও দেখা যায় না। কাজেই এক ইঞ্চি দূরেও যদি কোনও কাইমান এসে গিয়ে থাকে, বোঝা যাবে না। তাতে করে অবশ্য নিজেকে বেশ খরগোশের মতো নিরাপদ মনে হয়। তাছাড়া নদীর নীচে মুখ একদম না খোলাই উচিত। কারণ তাতে অন্য ছোট কোনও কিছু পোকামাকড় মুখের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে জলের স্রোতের সঙ্গে ভেসে এসে। আমি সমস্ত কিছু থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে টেনেটুনে প্রায় পাঁচ থেকে দশ মিনিট ওই ঘোলা জলে স্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করলাম। কিন্তু মনে হল না পিঙ্ক ডলফিনরা ভারতীয়দের খুব একটা পছন্দ করে বলে। কাজেই আশাহত হয়ে আবার নৌকোয় উঠে এলাম। অন্য যাত্রীদের কাছে অবশ্য বেশ একটা বীরত্বের তকমা পাওয়া গেল, আমাজনের জঙ্গলে নদীতে সাঁতার কাটার জন্য। আর আমি নিজে ছোট্টবেলার সেই ‘অ্যানাকোন্ডা’ ছায়াছবিটার নায়কের সঙ্গে একটু তুলনা করতে পারলাম নিজেকে।
উঠে আসার পর মনে হল এখানে তো পিরানহাও থাকে। সকালবেলাতে যাত্রা শুরুর সময়ই একটি সাধারণ মাছ আমাদের নৌকায় ঝাঁপ দিয়ে উঠে পড়েছিল। তার লেজের দিকটা খাওয়া। বনি হাতে ধরে দেখিয়ে বলল যে ইটা পিরানহার দলের কাজ। এরা পিছন দিক থেকে এই মাছটিকে আক্রমণ করেছে এবং লেজ থেকে খেতে শুরু করেছে। পুরোটা খাওয়ার আগেই মাছটা পিরানহার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে নৌকায় লাফিয়ে উঠেছে। এখন একেই বলে বিধাতার লিখন। মৃত্যুকে কখনও আটকানো যায় না। সে যখন আসার তখন আসবেই। হাজার চেষ্টা করেও তাকে রাখা যাবে না। যেমন এই মাছটা; নৌকায় উঠে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু অবধারিত আর জলের মধ্যে পিরানহার আক্রমণ। কে খণ্ডাবে এর মৃত্যু। বনি আবার তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল নদীতেই পিরানহাদের মুখেই।
আমি উঠে আসতেই বাকিরাও বেশ হাঁ হাঁ করে উঠল। তাদের কথাতেই মাথায় এল ওই পিরানহার কথা। শুনেছিলাম তারা নাকি রক্তের গন্ধ পেয়ে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে রাশি রাশি পিরানহা একসঙ্গে আক্রমণ করে শরীরের সমস্ত মাংস খেয়ে মুহূর্তের মধ্যে কঙ্কাল বানিয়ে দেয়। উত্তরে বনি বলল যে গলগল করে রক্ত না বেরোলেই হল। এরকম নয় যে অল্প একটু কাটা-ছড়া থাকলেও সঙ্গে সঙ্গে পিরানহারা আক্রমণ করবে।
এই অবধি হয়ে আমাদের আজকের মতো নৌবিহার শেষ হল। পরের দিন পুরো দিনটাই যাবে অ্যানাকোন্ডার খোঁজে। থাকার জায়গায় পৌঁছে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা চলে গেলাম যে যার ঘরে। আমি শোয়ার আগে আবার একবার মা মনসাকে ডেকে নিলাম, মাগো ভাইপার দেখিয়েছ ঠিক আছে, অ্যানাকোন্ডার দর্শনটুকু যেন পাই। তা না হলে যে আমার এতদূর ছুটে আসা বৃথা যাবে৷
ছবি: লেখক
ও এদিকে আমি তো লুইসিয়ানার এলিগেটর ভরা সোয়াম্পে এলিগেটরদের কায়াক (এক বিশেষ ধরনের নৌকো) চালিয়েও অভ্যস্ত। কাজেই তার থেকেও ছোট কাইমানে আমার আদৌ ভয় নেই। তাই খানিক পীড়াপীড়ি করার পরে আমিও ঝাঁপ দিলাম জলে। কিন্তু আমার ধারণা ছিল না যে জলের মধ্যে অতটা স্রোত। লাইফ জ্যাকেট পরেও অসুবিধা হচ্ছে। এখানে জলে লোহার ভাগ মনে হল অত্যন্ত বেশি। ডুব দিলে নিজের হাতটাও দেখা যায় না। কাজেই এক ইঞ্চি দূরেও যদি কোনও কাইমান এসে গিয়ে থাকে, বোঝা যাবে না। তাতে করে অবশ্য নিজেকে বেশ খরগোশের মতো নিরাপদ মনে হয়। তাছাড়া নদীর নীচে মুখ একদম না খোলাই উচিত। কারণ তাতে অন্য ছোট কোনও কিছু পোকামাকড় মুখের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে জলের স্রোতের সঙ্গে ভেসে এসে। আমি সমস্ত কিছু থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে টেনেটুনে প্রায় পাঁচ থেকে দশ মিনিট ওই ঘোলা জলে স্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করলাম। কিন্তু মনে হল না পিঙ্ক ডলফিনরা ভারতীয়দের খুব একটা পছন্দ করে বলে। কাজেই আশাহত হয়ে আবার নৌকোয় উঠে এলাম। অন্য যাত্রীদের কাছে অবশ্য বেশ একটা বীরত্বের তকমা পাওয়া গেল, আমাজনের জঙ্গলে নদীতে সাঁতার কাটার জন্য। আর আমি নিজে ছোট্টবেলার সেই ‘অ্যানাকোন্ডা’ ছায়াছবিটার নায়কের সঙ্গে একটু তুলনা করতে পারলাম নিজেকে।
উঠে আসার পর মনে হল এখানে তো পিরানহাও থাকে। সকালবেলাতে যাত্রা শুরুর সময়ই একটি সাধারণ মাছ আমাদের নৌকায় ঝাঁপ দিয়ে উঠে পড়েছিল। তার লেজের দিকটা খাওয়া। বনি হাতে ধরে দেখিয়ে বলল যে ইটা পিরানহার দলের কাজ। এরা পিছন দিক থেকে এই মাছটিকে আক্রমণ করেছে এবং লেজ থেকে খেতে শুরু করেছে। পুরোটা খাওয়ার আগেই মাছটা পিরানহার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে নৌকায় লাফিয়ে উঠেছে। এখন একেই বলে বিধাতার লিখন। মৃত্যুকে কখনও আটকানো যায় না। সে যখন আসার তখন আসবেই। হাজার চেষ্টা করেও তাকে রাখা যাবে না। যেমন এই মাছটা; নৌকায় উঠে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু অবধারিত আর জলের মধ্যে পিরানহার আক্রমণ। কে খণ্ডাবে এর মৃত্যু। বনি আবার তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল নদীতেই পিরানহাদের মুখেই।
আমি উঠে আসতেই বাকিরাও বেশ হাঁ হাঁ করে উঠল। তাদের কথাতেই মাথায় এল ওই পিরানহার কথা। শুনেছিলাম তারা নাকি রক্তের গন্ধ পেয়ে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে রাশি রাশি পিরানহা একসঙ্গে আক্রমণ করে শরীরের সমস্ত মাংস খেয়ে মুহূর্তের মধ্যে কঙ্কাল বানিয়ে দেয়। উত্তরে বনি বলল যে গলগল করে রক্ত না বেরোলেই হল। এরকম নয় যে অল্প একটু কাটা-ছড়া থাকলেও সঙ্গে সঙ্গে পিরানহারা আক্রমণ করবে।
এই অবধি হয়ে আমাদের আজকের মতো নৌবিহার শেষ হল। পরের দিন পুরো দিনটাই যাবে অ্যানাকোন্ডার খোঁজে। থাকার জায়গায় পৌঁছে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা চলে গেলাম যে যার ঘরে। আমি শোয়ার আগে আবার একবার মা মনসাকে ডেকে নিলাম, মাগো ভাইপার দেখিয়েছ ঠিক আছে, অ্যানাকোন্ডার দর্শনটুকু যেন পাই। তা না হলে যে আমার এতদূর ছুটে আসা বৃথা যাবে৷
ছবি: লেখক