বাজ পড়ে এবং ঝড়ে গাছ উল্টে বন্ধ হয়ে গেছে এগোনোর রাস্তা
তবে জঙ্গলে পায়ে হেঁটে ঘোরার চাইতে প্যাম্পাসে নৌকা করে ঘোরা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি আরামপ্রদ। তাছাড়া নদীর একদম ধারে বলে সেখানে বিবিধ প্রাণীর প্রচুর আনাগোনা। প্রসঙ্গত বলে রাখি যে, এই প্যাম্পাস কিন্তু আমাজন নদী নয়। এই নদীর নাম বেনি, আমাজনের একটি উপনদী বলা যেতে পারে। আমরা সেই বেনি নদীর প্যাম্পাস ধরে চললাম আমাজন-অরণ্যের গভীরে। কিছুদূর যেতে না যেতেই এখানকার বিপুল প্রাণীসম্পদের একটি একটি করে চোখে পড়তে শুরু করল। সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। ছোটবেলায় পড়া জীবন বিজ্ঞানের বই আর বিবিধ চলচ্চিত্র সত্যি হয়ে উঠছে। অনেক সময় যেসব প্রাণীকে মনে করতাম বিলুপ্ত, বা হয়তো কখনও তাদের অস্তিত্ব নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছি তারা সবাই আমার চারপাশে এসে ভিড় জমাতে লাগল। অনেকটা স্বপ্নের মতো, কিছুটা রহস্য, কিছুটা আবার হয়তো পার্থিব জীবনের পিছনে থাকা মৌলিক বিজ্ঞান। এককথায় প্রাগৈতিহাসিক এবং বর্তমান মিলেমিশে এক হয়ে গেছে এখানে। স্থান এবং কালের অসীম বক্রতার সত্যিই যদি কোনও অস্তিত্ব থেকে থাকে তা হয়তো এখানেই।
প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হোয়াটজিন। প্রায় গোটা জঙ্গল জুড়েই এদের কর্কশ ডাকে কান পাতা দায়। আপাতদৃষ্টিতে পাখি মনে হলেও বিজ্ঞানের ভাষায় এরা আর্কিওপ্টেরিক্স প্রজাতির। সহজ কথায় বলা যায় উড়ন্ত ডাইনোসর। ছোটবেলায় জীবন বিজ্ঞানের বইতে পড়া জীবন্ত ফসিলস, যা কিনা সরীসৃপ থেকে পক্ষীকুলে বিবর্তনের পরিচায়ক। এদের ‘মিসিং লিংক’ও বলা হয়; অর্থাৎ বিবর্তনের পথে এক প্রজাতি (যেমন সরীসৃপ) থেকে অন্য আরেক প্রজাতিতে (যেমন পাখি) রূপান্তরিত হওয়ার ঠিক সন্ধিক্ষণে বা লিংকে এদের আগমন হয়েছিল। তবে আমাজনের বর্ষাতুর অরণ্যের দয়ায় এরা এখনও ‘মিসিং’ নয়। এদের সারা শরীর পাখির মতো পালকে ঢাকা, ডানাও আছে ওড়ার জন্য, কিন্তু পাগুলি আসলে কুমির বা ওই প্রজাতির সরীসৃপের থাবার মতো। আর পুরো পা আঁশে ঢাকা। এদের দেখতে দেখতে আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল ছোটবেলায় টারজানের কমিক বইতে পড়া বা জুরাসিক পার্কে দেখা টোরাডাকটাইল বা টেরানোসরাসদের কথা। সব সত্যি! ভাবতে অবাক লাগছিল যে এরা এখনও আছে।
হোয়াটজিনের সঙ্গে প্রায় একসঙ্গেই বসবাস করছে আমাদের বাংলার সারসকুল। এখানে বিভিন্ন রকমের সারস পাখি দেখা যায়। সাদা, কালো, হলুদ কত রকমের যে তাদের রং সে না দেখলে বিশ্বাস করাই ভার৷ এদের সবারই ঠোঁট এবং পালকের রং আলাদা। তাই দেখেই বোঝা যায় কোনটা কোন প্রজাতির সারস। তবে আমার সে জ্ঞান নেই। আমি তাই শুধু তাদের রূপে মুগ্ধ হয়েই বসে বসে দেখছিলাম। তাদের কেউ একমনে বসে আছে নদীর ধারে মাছ ধরার জন্য, আবার কেউ গাছের ডালে পাখা ঝাপটিয়ে নাচতে ব্যস্ত আবার কেউ বা লম্বা ঠোঁট আকাশের দিকে করে ডাকছে।
এ তো গেল পাখিদের কথা, পাখি আর কুমির মাঝামাঝি থাকা আর্কিওপ্টেরিক্সের কথা। যেখানে পাখি আর কুমির মাঝামাঝি থাকা জীবটিরই এত রমরমা, সেখানে যে কুমিরের প্রাচুৰ্য হবেই সে আর এমন কথা কী। এই প্যাম্পাসের পুরোটা জুড়েই আছে হাজারে হাজারে কুমির। এদিকে ওদিকে শুয়ে আছে বা সাঁতার কাটছে। এক জায়গায় তো আমাদের নৌকাতে এসে দিল এক ধাক্কা। যদিও তা আক্রমণের উদ্দেশ্যে নয়; নিছকই ধাক্কা লেগে গেছে তরতরিয়ে জলে নামার সময়। আমাজনের কুমিরকে বলে কাইমান। এদের আকার, আয়তন এবং হিংস্রতা সবই অনেক কম সামুদ্রিক কুমিরদের তুলনায়। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুটের মধ্যে। অর্থাৎ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের আকার শুধু কুমির নয় এলিগেটরদের থেকেও কম। বিপণনি চলচ্চিত্রের খাতিরে বেচারাদের চরিত্রস্খলন হয়ে অমন হিংস্রতার তকমা লেগে গেছে। বনির কাছ থেকেই জানা গেল যে ছোট কাইমানগুলি বেশ লাজুক প্রকৃতির। এরা মানুষকে সাধারণত আক্রমণ করে না। তবে বড় প্রজাতিরগুলি মাঝে মাঝে করে থাকে বটে। তবে তাদের সংখ্যাও এখানে প্রায় নগণ্য৷
ছবি: লেখক
লেখা পাঠানোর নিয়ম : এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com
প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হোয়াটজিন। প্রায় গোটা জঙ্গল জুড়েই এদের কর্কশ ডাকে কান পাতা দায়। আপাতদৃষ্টিতে পাখি মনে হলেও বিজ্ঞানের ভাষায় এরা আর্কিওপ্টেরিক্স প্রজাতির। সহজ কথায় বলা যায় উড়ন্ত ডাইনোসর। ছোটবেলায় জীবন বিজ্ঞানের বইতে পড়া জীবন্ত ফসিলস, যা কিনা সরীসৃপ থেকে পক্ষীকুলে বিবর্তনের পরিচায়ক। এদের ‘মিসিং লিংক’ও বলা হয়; অর্থাৎ বিবর্তনের পথে এক প্রজাতি (যেমন সরীসৃপ) থেকে অন্য আরেক প্রজাতিতে (যেমন পাখি) রূপান্তরিত হওয়ার ঠিক সন্ধিক্ষণে বা লিংকে এদের আগমন হয়েছিল। তবে আমাজনের বর্ষাতুর অরণ্যের দয়ায় এরা এখনও ‘মিসিং’ নয়। এদের সারা শরীর পাখির মতো পালকে ঢাকা, ডানাও আছে ওড়ার জন্য, কিন্তু পাগুলি আসলে কুমির বা ওই প্রজাতির সরীসৃপের থাবার মতো। আর পুরো পা আঁশে ঢাকা। এদের দেখতে দেখতে আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল ছোটবেলায় টারজানের কমিক বইতে পড়া বা জুরাসিক পার্কে দেখা টোরাডাকটাইল বা টেরানোসরাসদের কথা। সব সত্যি! ভাবতে অবাক লাগছিল যে এরা এখনও আছে।
হোয়াটজিনের সঙ্গে প্রায় একসঙ্গেই বসবাস করছে আমাদের বাংলার সারসকুল। এখানে বিভিন্ন রকমের সারস পাখি দেখা যায়। সাদা, কালো, হলুদ কত রকমের যে তাদের রং সে না দেখলে বিশ্বাস করাই ভার৷ এদের সবারই ঠোঁট এবং পালকের রং আলাদা। তাই দেখেই বোঝা যায় কোনটা কোন প্রজাতির সারস। তবে আমার সে জ্ঞান নেই। আমি তাই শুধু তাদের রূপে মুগ্ধ হয়েই বসে বসে দেখছিলাম। তাদের কেউ একমনে বসে আছে নদীর ধারে মাছ ধরার জন্য, আবার কেউ গাছের ডালে পাখা ঝাপটিয়ে নাচতে ব্যস্ত আবার কেউ বা লম্বা ঠোঁট আকাশের দিকে করে ডাকছে।
এ তো গেল পাখিদের কথা, পাখি আর কুমির মাঝামাঝি থাকা আর্কিওপ্টেরিক্সের কথা। যেখানে পাখি আর কুমির মাঝামাঝি থাকা জীবটিরই এত রমরমা, সেখানে যে কুমিরের প্রাচুৰ্য হবেই সে আর এমন কথা কী। এই প্যাম্পাসের পুরোটা জুড়েই আছে হাজারে হাজারে কুমির। এদিকে ওদিকে শুয়ে আছে বা সাঁতার কাটছে। এক জায়গায় তো আমাদের নৌকাতে এসে দিল এক ধাক্কা। যদিও তা আক্রমণের উদ্দেশ্যে নয়; নিছকই ধাক্কা লেগে গেছে তরতরিয়ে জলে নামার সময়। আমাজনের কুমিরকে বলে কাইমান। এদের আকার, আয়তন এবং হিংস্রতা সবই অনেক কম সামুদ্রিক কুমিরদের তুলনায়। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুটের মধ্যে। অর্থাৎ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের আকার শুধু কুমির নয় এলিগেটরদের থেকেও কম। বিপণনি চলচ্চিত্রের খাতিরে বেচারাদের চরিত্রস্খলন হয়ে অমন হিংস্রতার তকমা লেগে গেছে। বনির কাছ থেকেই জানা গেল যে ছোট কাইমানগুলি বেশ লাজুক প্রকৃতির। এরা মানুষকে সাধারণত আক্রমণ করে না। তবে বড় প্রজাতিরগুলি মাঝে মাঝে করে থাকে বটে। তবে তাদের সংখ্যাও এখানে প্রায় নগণ্য৷
ছবি: লেখক
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম : এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com