ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন প্লেটভিল, আমার অফিসের ঠিক বাইরে।
তবে আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে সুন্দর ফল কালার আমি দেখেছি লেক টমাহকে। লেক টমাহক আমার বাড়ি থেকে উত্তরে প্রায় ২৭০ মাইল। গাড়ি করে প্রায় চার ঘণ্টা। টমাহক পৌঁছানোর রাস্তার প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় রঙের বাহার। সবচাইতে আকর্ষণীয় টিম’স হিলের পর্বত-প্রসর (মাউন্টেন রেঞ্জ)। যদিও টিম’স হিলকে আদৌ পর্বত বলা যায় না তবে সম্ভবত উইসকনসিনের সবচাইতে উঁচু পাহাড়ের চূড়া এই প্রসরেই অবস্থিত। টমাহক ঢোকার রাস্তা থেকেই একটার পর একটা পাহাড় দেখা যায়। আর প্রতিটা পাহাড়ই উজ্জ্বল হলুদ রঙে ঢাকা। মনে হচ্ছিল যেন সোনাঝুরির বনে সত্যিই ঝরে পড়ছে সোনা।
আমি গাড়ির সান রুফের কাচটা খুলে দিয়ে মুঠোফোনের ক্যামেরাটা চালিয়ে এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে আর একটা হাত ওপর দিয়ে বের করে সামনের দিকে ক্যামেরাটা ধরে বসে থাকলাম। তাতে করে যেটুকু দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করা যায় আর কী! টমাহকে পৌঁছে ঘুরতে লাগলাম এদিক-ওদিক। সেদিন সূর্য ছিল প্রচণ্ড উজ্জ্বল, সাধারণ দিনের চাইতে অনেকটা বেশি। আর তার আলোয় মনে হচ্ছিল আগুন লেগেছে চারদিকে।
আরও পড়ুন:
ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৯: নীল আকাশ, রঙিন ফল কালার, হ্রদের জলে তার প্রতিচ্ছবি…ঠিক যেন রূপকথার গল্প
খাই খাইঃ জিভে জল আনা এমন ফুলকপির পরোটাতেই জমে যাক শীতের পাত!
কানে তখন চলছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘বনে কি আগুন লেগেছে’। সারাদিন সেখানে কাটালাম। কখনও হ্রদের ধারে, কখনও এদিক সেদিক রাস্তায়, কখনও হেঁটে, কখনও গাড়ি চালিয়ে। আশ মিটিয়ে দেখে ছিলাম প্রকৃতির সে রূপ। প্রকৃতিও বোধহয় সেদিন বুঝেছিল সেটাই উইসকনসিনে আপাতত আমার শেষ ‘ফল কালার ড্রাইভ’। তাই সে তার সবটুকু মেলে ধরেছিল সেদিন আমার সামনে।
উইসকনসিনের রাস্তায় কোনওখানে।
এরকমই ছিল আমার উইসকনসিনের ফল কালার-এর দৈনন্দিন। এক এক দিন এক এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার পালা। অক্টোবরের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সারা রাজ্য জুড়ে চলতে থাকে রঙের মহোৎসব। সাদা বরফে ঢেকে যাওয়ার আগে নিজেকে মেলে ধরে পরমা প্রকৃতি। আর তার আঁচলের ভাঁজে শুধুই হারিয়ে যাওয়ার হাতছানি। জীবনের চার আনা সাদা কালো একঘেয়েমি, চিন্তা, ভাবনা, দৈনন্দিনের রোজনামচা সব পড়ে থাকে একদিকে আর অন্যদিকে বাকি বারো আনাই রেঙে ওঠে প্রকৃতির রঙে।
আরও পড়ুন:
ডায়াবিটিসে ভুগছেন? সকালের জলখাবারে কী ধরনের খাবার খেতে পারেন? রইল ডক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়িঃ পর্ব-৪৫: রবীন্দ্রনাথ নিজের ডাক্তারি নিজেও করেছেন
ছোটবেলার গল্পকথাগুলো যেন সত্যি হয়ে ভেসে ওঠে চোখের সামনে। আমার সোনার বাংলায় তখন কানে আগমনির সুর আর এই প্রান্তে নয়নাভিরাম ফল কালার। সব মিলিয়ে যেন এক পূর্ণতার আস্বাদ জীবনে। মাতৃসমা প্রকৃতি যেন ছোট সন্তানের মতোই প্রশ্রয় দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে আমার জীবন। তাই সেই মাতৃসমা প্রকৃতিকে বন্দনার মাধ্যমেই শেষ করব কবিগুরুর কথা দিয়ে:
‘কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো!
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো
মরি হায়, হায় রে—’
—শেষ
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো
মরি হায়, হায় রে—’
—শেষ
* ভ্রমণ— চলো যাই ঘুরে আসি: ফল কালারের রূপ-মাধুরী (Wisconsin Fall Color Travel) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.co