ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-প্লেটভিলের শেষ প্রান্তে প্লেট নদীর ধারে একদিন
এখানে একটা বড় অসুবিধা হল গাড়ি। গাড়ি ছাড়া ওই ঠান্ডায় কোথাও যাওয়ায় যাবে না, আবার থাকলে তার জন্য প্রচুর কাঠখড় পোড়াতেও হবে। মানে বলা যায় এক অপরিহার্য আপদ। গ্যারেজ না থাকলে প্রতিদিন সকালে ওই ঠান্ডার মধ্যে প্রায় আধ ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় হাতে রাখতে হয় গাড়িতে জমা বরফ পরিষ্কার করার জন্য। আমার অবশ্য প্রতিদিনের ওই পরিশ্রমসাধ্য, ক্লান্তিকর এবং একঘেয়ে কাজটি থেকে বাঁচোয়া।
তবে বিপদ হল গাড়ি চালানো। প্রথমত বরফের জায়গায় একটি ‘অল হুইল ড্রাইভ’ গাড়ি দরকার। আমরা সাধারণত যে গাড়ি সমতলে বা গরমের জায়গায় দেখি তাদের বেশিরভাগই ‘রিয়ার হুইল ড্রাইভ’। অর্থাৎ একসেলেরাটরের (Accelerator) যান্ত্রিক চাপে একটি শ্যাফেটর সাহায্যে শুধু পিছনের চাকাগুলো ঘোরে; আর সেই সূত্রে সামনের চাকাগুলিও ঘোরে। সামনের চাকায় আলাদা করে বলপ্রয়োগ করা হয় না। অবশ্যই সাম্যাবস্থা বজায় রাখার জন্য কারিগরি নকশার ব্যাপার থাকে, কিন্তু সে আলোচনায় আর গেলাম না। কিন্তু এতে সমস্যা হল বরফের মধ্যে একবার চাকা ঢুকে গেলে তাকে বের করার জন্য যে ঘর্ষণ শক্তি প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ কিনা বনবন করে চাকা ঘুরে যাবে অথচ গাড়ি নড়বে না এতটুকুও। তখন সামনের এবং পেছনের চাকায় চেইন বেঁধে তুলতে হবে, না হলে গাড়ি তোলার কোম্পানিকে ফোন করা ছাড়া গতি নেই।
দ্বিতীয়ত, তার থেকেও বড় সমস্যা হল রাস্তায় যদি বরফ শক্ত হয়ে জমে থাকে তার ওপরে গাড়ি পিছলে চলে যেতে পারে। এই ব্যাপারটা বেশ সাংঘাতিক। বরফ গুঁড়ো থেকে যত দলা পাকাতে থাকে তত বেশি পিচ্ছিল হতে থাকে। একটা বরফের বড় চাঙড়ের ওপর দিয়ে হাঁটার কথা মনে করলেই ব্যাপারটা ভাবতে সুবিধা হবে। পায়ের চাপে নীচের বরফটা গলে যায় আর তাতেই ওরকম পিচ্ছিল হয়ে যায়। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়েই আইস স্কেটিং বা স্কি করা হয়। সে যা-ই হোক, সমস্যা হল এইরকম যখন সাধারণ চলাচলের রাস্তায় জমে যায় তখন খুব সমস্যা।
তবে বিপদ হল গাড়ি চালানো। প্রথমত বরফের জায়গায় একটি ‘অল হুইল ড্রাইভ’ গাড়ি দরকার। আমরা সাধারণত যে গাড়ি সমতলে বা গরমের জায়গায় দেখি তাদের বেশিরভাগই ‘রিয়ার হুইল ড্রাইভ’। অর্থাৎ একসেলেরাটরের (Accelerator) যান্ত্রিক চাপে একটি শ্যাফেটর সাহায্যে শুধু পিছনের চাকাগুলো ঘোরে; আর সেই সূত্রে সামনের চাকাগুলিও ঘোরে। সামনের চাকায় আলাদা করে বলপ্রয়োগ করা হয় না। অবশ্যই সাম্যাবস্থা বজায় রাখার জন্য কারিগরি নকশার ব্যাপার থাকে, কিন্তু সে আলোচনায় আর গেলাম না। কিন্তু এতে সমস্যা হল বরফের মধ্যে একবার চাকা ঢুকে গেলে তাকে বের করার জন্য যে ঘর্ষণ শক্তি প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ কিনা বনবন করে চাকা ঘুরে যাবে অথচ গাড়ি নড়বে না এতটুকুও। তখন সামনের এবং পেছনের চাকায় চেইন বেঁধে তুলতে হবে, না হলে গাড়ি তোলার কোম্পানিকে ফোন করা ছাড়া গতি নেই।
দ্বিতীয়ত, তার থেকেও বড় সমস্যা হল রাস্তায় যদি বরফ শক্ত হয়ে জমে থাকে তার ওপরে গাড়ি পিছলে চলে যেতে পারে। এই ব্যাপারটা বেশ সাংঘাতিক। বরফ গুঁড়ো থেকে যত দলা পাকাতে থাকে তত বেশি পিচ্ছিল হতে থাকে। একটা বরফের বড় চাঙড়ের ওপর দিয়ে হাঁটার কথা মনে করলেই ব্যাপারটা ভাবতে সুবিধা হবে। পায়ের চাপে নীচের বরফটা গলে যায় আর তাতেই ওরকম পিচ্ছিল হয়ে যায়। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়েই আইস স্কেটিং বা স্কি করা হয়। সে যা-ই হোক, সমস্যা হল এইরকম যখন সাধারণ চলাচলের রাস্তায় জমে যায় তখন খুব সমস্যা।
শুধু গাড়ি চালানোই নয়, হাঁটতেও হয় খুব ধীরে ধীরে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মানুষজন ধুপধাপ করে পড়ে যাচ্ছে। আমিও গিয়েছি দু’ তিন বার। ওই একই পদ্ধতিতে গাড়িও পিছলে যায়। অত ধীরগতিতে হাঁটতে হাঁটতেই যদি ভারসাম্য হারিয়ে যায়, তাহলেই বেশ আন্দাজ করা যেতে পারে গাড়িতে বিপদ ঠিক কতটা। আমার একবার রকি মাউন্টেন-এর ওপরে তুষারঝড়ের মধ্যে আটকে গিয়ে ওরকমভাবে প্রায় ১৫০ মাইল মতো পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, দু’ পাশে খাদওলা রাস্তায় আসার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সারা রাস্তা ইষ্টনাম জপতে জপতে এসেছি যাতে কোনওরকমে বেঁচে ফিরি। সে গল্প না হয় পরে করা যাবে। আপাতত দৈনন্দিনের ঘটনার কথাই বলি।
লেক জেনেভার ধারে তুষারভাস্কর্যের মেলা
সেবার আমি ফিরছিলাম ম্যাডিসন থেকে। গত দু’তিন দিন ধরে ক্রমাগতই বরফ পড়ে চলেছে; কখনও বেশি কখনও কম। ম্যাডিসন বেশ মাঝারি মাপের খুব সুন্দর শহর। গাড়িতে করে প্লেটভিল থেকে ঘণ্টা দেড়েকের পথ। কাজকর্ম বা ঘোরাঘুরির জন্য প্রায়শই আমি সেখানে যাই। ম্যাডিসনে কাজকর্ম সেরে সেদিন বেরোতে একটু দেরি হয়ে গেল। পরিকল্পনা ছিল রাস্তায় ডিবিউক বলে আরেক জায়গায় দাঁড়িয়ে আরও কিছু কাজ সেরে নেওয়ার। সেটা যদিও পুরো উলটোদিকে কিন্তু ওই একদিন বেরিয়ে সব কাজ সেরে নেওয়া আর কী। সেদিন সন্ধে ৭টা থেকে আবার তুষারঝড়ের সতর্কতা ছিল।
পরিকল্পনামাফিক ডিবিউকে কাজ সেরে বেরোলাম। সবই ঠিক চলছিল। সমস্যা হল তুষারঝড় চলে এল সতর্কীকরণের দু-ঘণ্টা আগে। তার মধ্যেই শহর দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। খুব ধীর গতিতে। শহর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় একটি সরু সেতু পার করতে হবে। সেখানে গিয়ে দেখি গত দু’ তিন দিনে বরফ পরিষ্কার হয়নি এবং সেই সূত্রে জমাট বাঁধা পিচ্ছিল বরফ জমে আছে। এখান দিয়ে বেশি গাড়ি যায় না বলে ওই জায়গাটা অনেক পরে পরিষ্কার করা হবে। এবার দেখি সেই সরু সেতুর উলটোদিক থেকে আরেকজন গাড়ি চালিয়ে আসছেন। বরফের রাস্তায় সাধারণের চাইতে একটু বেশিই গতি ছিল হয়তো। বা হয়তো ‘রিয়ার হুইল ড্রাইভ’ গাড়ি। সে যে কারণেই হোক ওই সেতুর ওপরে উঠেই তাঁর গাড়ি গেল পিছলে। এবং সামনে থেকে দেখছি যে পিছলে আমার লেনে ঢুকে সে আমাকেই ধাক্কা মারতে আসছে। এই পরিস্থিতিগুলো বেশ অসহায়। বেশি জোরে ব্রেক চাপা যায় না বা স্টিয়ারিং বেশি জোরে ঘোরানোও যায় না। তাহলে গাড়ি উলটে যাওয়ার পুরো সম্ভাবনা থাকে। সে আরও বিপদ।
আমি তার একটু চেষ্টা করেই বুঝলাম যে সেটা সম্ভব নয়; আমার গাড়িই নৌকোর মতো ভেসে যাচ্ছে মনে হল। কাজেই এখন সবথেকে কম বিপজ্জনক যেটা সেটাই করণীয়। অর্থাৎ তার গাড়ি আর আমার গাড়ি কারওরই এমন কিছু গতি নয় যাতে প্রাণহানি ঘটতে পারে। হালকা ব্রেক চেপে এবং অল্প একটু স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দুজনেই দুজনের গাড়িতে মারলাম ধাক্কা। বলাই বাহুল্য, যে গাড়ির বাম্পার, হেডলাইট সব কিছু ভেঙে একাকার দুজনেরই। তবু ভালো যে দোষ আমার সামনের গাড়িরই। তাই আমার কোনও সমস্যা নেই। তার গাড়ির বিমাই পুরো খরচ বহন করবে। তবে যথেষ্ট শিক্ষা হল। তার পর থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে দু’তিন দিন ধরে বরফ পড়লে বড় হাইওয়ে ছাড়া অন্য কোনও ছোট রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাব না।
পরিকল্পনামাফিক ডিবিউকে কাজ সেরে বেরোলাম। সবই ঠিক চলছিল। সমস্যা হল তুষারঝড় চলে এল সতর্কীকরণের দু-ঘণ্টা আগে। তার মধ্যেই শহর দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। খুব ধীর গতিতে। শহর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় একটি সরু সেতু পার করতে হবে। সেখানে গিয়ে দেখি গত দু’ তিন দিনে বরফ পরিষ্কার হয়নি এবং সেই সূত্রে জমাট বাঁধা পিচ্ছিল বরফ জমে আছে। এখান দিয়ে বেশি গাড়ি যায় না বলে ওই জায়গাটা অনেক পরে পরিষ্কার করা হবে। এবার দেখি সেই সরু সেতুর উলটোদিক থেকে আরেকজন গাড়ি চালিয়ে আসছেন। বরফের রাস্তায় সাধারণের চাইতে একটু বেশিই গতি ছিল হয়তো। বা হয়তো ‘রিয়ার হুইল ড্রাইভ’ গাড়ি। সে যে কারণেই হোক ওই সেতুর ওপরে উঠেই তাঁর গাড়ি গেল পিছলে। এবং সামনে থেকে দেখছি যে পিছলে আমার লেনে ঢুকে সে আমাকেই ধাক্কা মারতে আসছে। এই পরিস্থিতিগুলো বেশ অসহায়। বেশি জোরে ব্রেক চাপা যায় না বা স্টিয়ারিং বেশি জোরে ঘোরানোও যায় না। তাহলে গাড়ি উলটে যাওয়ার পুরো সম্ভাবনা থাকে। সে আরও বিপদ।
আমি তার একটু চেষ্টা করেই বুঝলাম যে সেটা সম্ভব নয়; আমার গাড়িই নৌকোর মতো ভেসে যাচ্ছে মনে হল। কাজেই এখন সবথেকে কম বিপজ্জনক যেটা সেটাই করণীয়। অর্থাৎ তার গাড়ি আর আমার গাড়ি কারওরই এমন কিছু গতি নয় যাতে প্রাণহানি ঘটতে পারে। হালকা ব্রেক চেপে এবং অল্প একটু স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দুজনেই দুজনের গাড়িতে মারলাম ধাক্কা। বলাই বাহুল্য, যে গাড়ির বাম্পার, হেডলাইট সব কিছু ভেঙে একাকার দুজনেরই। তবু ভালো যে দোষ আমার সামনের গাড়িরই। তাই আমার কোনও সমস্যা নেই। তার গাড়ির বিমাই পুরো খরচ বহন করবে। তবে যথেষ্ট শিক্ষা হল। তার পর থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে দু’তিন দিন ধরে বরফ পড়লে বড় হাইওয়ে ছাড়া অন্য কোনও ছোট রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাব না।
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com