বুধবার ১৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: অঙ্কনা চৌধুরী

দু’ পাশের সারি সারি বরফ ঢাকা গাছ। তার মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা বরফে ঢাকা নদী। আর ওপর দিয়ে আমি চলে যাচ্ছি স্লেজে চেপে। মাথার ওপরে খেলা করছে মেরুজ্যোতি। যেন আমাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে স্বর্গের কাছাকাছি, যেখানে সান্তাক্লজ এখুনি আমার জন্য স্বর্গের দরজাটা খুলে দেবে। আর আমি বুড়ো সান্তার সঙ্গে মেতে উঠবো আনন্দে। বা হয়তো নদীর ধারে ধারে ওই বরফে ঢাকা বনভূমির মধ্যেই মধ্যেই দেখা পেয়ে যাবো ভূতের রাজার।
গুপী-বাঘার মতো কোনও বর যদি নাও পাই, তার সঙ্গেই কাটিয়ে নেবো কিছুক্ষণ। তাই বা কম কি? বা হয়তো ওই চেনা নদীটার মোহনাতেই স্লেজ গাড়িটা হঠাৎ করে মিলিয়ে যাবে হাওয়ায় আর আমাকে নিয়ে ঢুকে যাবে একটা অচেনা জগতে। ঠিক যেমনটা দেখা যায় ছায়াছবির পর্দায়। কি অদ্ভুত আনন্দ।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৪: আলাস্কার স্যামন মাছ জগদ্বিখ্যাত

মুভি রিভিউ: মামুটির মাল্টিস্টারার ছবি ‘সিবিআই ৫: দ্য ব্রেন’ গতানুগতিক থ্রিলার

অনেক সময় নদীর ওপর দিয়ে স্নো-মোবিলও চালিয়ে নিয়ে চলে যায় অনেকে। স্নো-মোবিল হল বরফে চালানোর মোটর সাইকেল। এর ওপর দিকটা সাধারণ মোটর সাইকেলের মতো দেখতে কিন্তু তলায় চাকার বদলে দুপাশে দুটো লম্বা সরু ধাতব পাত বা প্লেট লাগানো থাকে যাতে বরফের ওপর দিয়ে সেটা স্লেজ গাড়ির মতোই পিছলে চলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— রামবাণ ও পানি তাঙ্কি

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

শুধু স্নো-মোবিল কেন, এই সব জায়গায় শীতকালে নদী বা বড় হ্রদ গুলো জমে গেলে তার ওপর দিয়ে সাধারণ গাড়িও চলে যায়। এখানে রাজ্য সরকার শীতকালে সব সময়েই নদী বা হ্রদগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্যে। সেই সব যন্ত্রপাতির সাহায্যে বোঝা যায়, নদী বা হ্রদের ওপরে বরফ ঠিক কতটা জমেছে।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৪: ঝোপে-ঝাড়ে হায়েনা

নদী বা হ্রদের কত গভীর পর্যন্ত জল জমে বরফ হয়ে আছে কতটা জমাট বেঁধেছে বরফ। তার থেকেই বোঝা যায় যে কোন নদী বা হ্রদের ওপর গাড়ি চালানো কতটা নিরাপদ বা বিপজ্জনক। আর সেটা সারা শীতকাল জুড়ে ঘোষণা করা হতে থাকে বিভিন্ন মাধ্যমে। দূরদর্শন বা বেতারের সংবাদ মাধ্যম তো আছেই, তাছাড়াও বৈদ্যুতিন সমাজমাধ্যম এবং মুঠোফোনের জরুরিকালীন বার্তা বা ইমার্জেন্সি মেসেজ সার্ভিস যাকে এসওএস বলা হয়।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

আর একটা বিষয় যেটা এই শহর সম্পর্কে এই মুহূর্তে না বললেই নয়, সেটা হল এখানকার বিমান এবং হেলিকপ্টারের প্রাচুর্য। এখানে প্রচুর লোকেরই ব্যক্তিগত বিমান বা হেলিকপ্টার বা যেকোনও রকম উড়ানের মাধ্যম রয়েছে। এর মূল কারণ হল এই বিশাল রাজ্যের জনজীবনের তুলনায় রাস্তাঘাটের অপ্রতুলতা। এমন বহু গ্রাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, এমনকি রাজ্যের সর্বত্র গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার কোনও উপায়ই নেই। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

Skip to content