শনিবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৫


ছবি: লেখক।

ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে দক্ষিণে কোথাও যেতে গেলে আমাদের আছে দুটো রাস্তা, পার্কস হাইওয়ে এবং রিচার্ডসন হাইওয়ে। সেদিন নিলাম রিচার্ডসন হাইওয়ে। সূর্য তখন সবে অস্ত গিয়েছে। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পৌঁছলাম ডেল্টা শহরে। তখন আবার সূর্য উঠতে শুরু করেছে। রিচার্ডসন হাইওয়ে অসাধারণ সুন্দর। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
হাইওয়ের পাশে পাশে পেরোতে থাকে একটার পর একটা অদ্ভুত সুন্দর সুন্দর হ্রদ: হার্ডিং লেক, প্যাক্সন লেক, বার্চ লেক— এমন আরও কত হ্রদ। তাদের কেউ কেউ আবার গ্রীষ্মেও পুরোপুরি গলে যায়নি। পাতলা পাতলা বরফ ভেসে বেড়াচ্ছে সেখানে। দূরে দেখা যাচ্ছে বরফে ঢাকা পর্বতমালা। তারই মধ্যে দিয়ে রাস্তার এপাশে-ওপাশে ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে কিছু হরিণ, মুজ বা ক্যারিবু। গাড়িতে তখন চলছে শ্যামল মিত্রের কণ্ঠে—এ যেন অজানা এক পথ, কে জানে কোথায় হবে শে্‌ স্বপ্ন একি চেয়ে যে দেখি এ যেন অচেনা এক দেশ…
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৩: আলাস্কার দক্ষিণে রয়েছে সেই মনোরম গ্লেন হাইওয়ে

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৩: মা সারদার সঙ্গে সরলাদেবীর কাশীভ্রমণ

একটা কথা এখানে আবার একবার না বললেই নয়, গ্রীষ্মকালে আলাস্কা সত্যিই অচেনা এক দেশ। পুরোপুরি একটা অন্য পৃথিবী, যেটা কিনা এতদিন বরফের আড়ালে ঢেকে ছিল। প্রতি বছরই যেন তুষার যুগ থেকে পৃথিবী আবার নতুন করে বাসযোগ্য হয়ে উঠছে। এই রিচার্ডসন হাইওয়ের কথাই ধরা যাক। পৃথিবীর অন্যান্য হাইওয়ের তুলনায় এই রাস্তা অনেকটাই সরু। তার ওপরে বেশ আঁকাবাঁকা। গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা অর্থাৎ ‘শোল্ডার’ বলে কিছু নেই। রাস্তার দু’ ধারে হয় জঙ্গল আর না হলে খাদ।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৯: আধুনিক যুগে দাবানলের ফলে বনদহনের সঙ্গে খাণ্ডব বনদহনের সাদৃশ্য আছে কী?

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৫: ঝোপ টিকরা

শীতকালে এই রাস্তাটা পুরোপুরি বরফে ঢেকে থাকে। তুষার ঝড়, ঘন কুয়াশা, শক্ত বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া ভূমিরূপ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রাস্তাটা প্রচণ্ড দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে থাকে। তাছাড়া রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করানোরও কোনও জায়গা নেই। প্রায়শই গাড়ি চালাতে গিয়ে লোকজনকে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। প্রাণহানির খবরও আসে।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৫: রবীন্দ্রনাথ, মণিপুরী নৃত্য ও ত্রিপুরা

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭৭: গুগলি/১২

এই তো গেল বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই জীবনবিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যসেবার (বায়োলজি অ্যান্ড হেল্থকেয়ার) অধ্যাপক, ওই রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হল একটা বড় গাড়ির সঙ্গে। প্রায় ছ’-সাত মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেও শেষ রক্ষা হয়নি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার যে, এই ঘটনা খুব একটা অপ্রতুল নয়। এই সমস্ত কারণেই শীতকালে এই সব রাস্তায় লোকজন খুব কমই আসা-যাওয়া করে। নেহাত দরকার না পড়লে কেউ যায় না এই সব রাস্তা দিয়ে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১০: অন্ধকারে, চুপিসারে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

কিন্তু গ্রীষ্ম কালে বরফ গলে গেলেই রাস্তা হয়ে যায় অন্য রকম। তখন আর গাড়ি পিছলে যাওয়ার ভয় থাকে না বা কুয়াশায় চারিদিক ঢেকেও থাকে না। কাজেই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবটুকু আশ মিটিয়ে উপভোগ করা যায়। রিচার্ডসন হাইওয়েটা প্রায় পুরোটাই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে, উত্তরের দিকটা মূলত আলাস্কা পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে আর দক্ষিণের দিকটা চুগাছ পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে। এই রাস্তায় গাড়ি চালানো মানে একবার একটা করে পাহাড়ে উঠছি, তারপরে সেটা থেকে নেমে আবার অন্য একটা পাহাড়ে উঠছি। এরকম ভাবেই চলতে থাকে পুরো রাস্তাটা। পাহাড়ে গা বেয়ে ঘুরে ঘুরে যাওয়ার জন্যই রাস্তাটা এতটা আঁকাবাঁকা। আর এই ওঠা নামার মধ্যেই প্রতিটা বাঁকেবাঁকে পরিবর্তন হতে থাকে আশেপাশের পুরো পৃথিবীটা। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content