ছবি: অঙ্কনা চৌধুরী।
প্রথম প্রথম যখন আলাস্কা এসেছি তখন তো আমি এমন ঘর দেখে মহা খুশি। যে দেড়-দু’ ঘণ্টা সময় দিনের আলো থাকে, আমি তো ওই জানলার পাশে গিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে থাকতাম। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। কাজকর্ম সব ফেলে রেখে যেন মনে হয় ওভাবেই তাকিয়ে থাকি সারাদিন। মন যেন শরীরের বাঁধন ছাড়িয়ে পাড়ি দিয়ে দেয় দূর থেকে দূরে অজানা অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কাজ না করলে তো আর চলে না।
তো সেদিন ক্লাসে পড়িয়ে ঢুকেছি নিজের ঘরে দুপুর ২টো নাগাদ অর্থাৎ প্রায় সূর্যাস্তের সময়। আমার ঘরের দরজার উল্টো দিকেই জানলাটা। অর্থাৎ দরজা দিয়ে ঢুকলেই সোজাসুজি ওই জানলাটা আর তার বাইরেটা দেখা যায়। ঘরে ঢুকেই বাইরের দিকে চোখ পড়তেই আমি অবাক। দেখি সামনের উপত্যকার মাঝখান থেকে আর ওপাশের পাহাড়টা পর্যন্ত ঝলমলে আলো, পুরো ঝকঝকে সাদা। আর উপত্যকার এদিকটা, অর্থাৎ মাঝখান থেকে ট্রথ-ইয়েদ্ধার দিকটা বেশ অন্ধকার, ধূসর মলিন।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-২৮: আলাস্কার আকাশ জুড়ে রঙের খেলা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
সূর্যের আলো এখানে অনেকটা তির্যক ভাবে পড়ে। কাজেই আলোটা কাছাকাছি পাহাড়ের ঢালে যেখানে সরাসরি পরে সেই খানে বেশ খানিকটা জায়গা হয়ে যায় রোদ ঝলমলে। আর বাকি জায়গাগুলো থাকে অপেক্ষাকৃত অনেকটাই অন্ধকার। ব্যাপারটা ভাবতে তুলনামূলক ভাবে একটু সুবিধা হবে যদি হিমালয়ের কোলে কোনও পাহাড়ি অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩২: কি ‘উপহার’ সাজিয়ে দেব
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৪: সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ
অনেক ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সময় যখন সূর্য একদম দিগন্তে থাকে তখন উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলো কেমন রোদ ঝলমল করে। কিন্তু পাশাপাশি অন্যান্য সব জায়গাই থাকে বেশ অন্ধকার। এখানেও ব্যাপারটা সেরকমই হয়। উচ্চ অক্ষাংশে সূর্যের আলো আরও তির্যক ভাবে পড়ার জন্য ছোট টিলাগুলোতেও একই প্রভাব দেখা যায়। তার ওপরে চারিদিক বরফে ঢাকা থাকার কারণে ঝকঝকে সাদা থেকে ধূসরে পরিবর্তনটা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যেটা কিনা রঙিন পারিপার্শ্বিকে অতটা নজর করা হয়ে ওঠে না।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২০: মানকুমারী বসু—সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল রত্ন!
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪২: শ্রীমার ভাইপো খুদি
আগেই বলেছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি একটা ছোট্ট পাহাড় বরাবর নিচ থেকে ওপরে উঠে গিয়েছে। পাহাড়টির নাম ট্রথ-ইয়েদ্ধা। কম্পিউটার সায়েন্স অর্থাৎ আমার বিভাগটি হল এই ট্রথ-ইয়েদ্ধার মাঝামাঝি পাঁচতলা উঁচু ভবনের একদম ওপরের তলায়। আমার ঘর থেকে জানলা দিয়ে দেখা যায় শহরের আশেপাশের পাহাড়গুলোও। আবার তাদের পিছনে অনেক দূরে আলাস্কা পর্বতমালার কিছুটা অংশও দেখা যায়। ট্রথ-ইয়েদ্ধা আর আশেপাশের পাহাড়গুলোর মধ্যে এক বিস্তীর্ণ উপত্যকা। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। পাহাড়, পর্বতমালা, উপত্যকা—সব মিলিয়ে আমাদের চেনা পৃথিবীরর সে এক অপার্থিব রূপ। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।