ছবি: অঙ্কনা চৌধুরী।
শীতের সময় এই সব অঞ্চলে ফ্রস্টবাইটই একমাত্র ভয়ের ব্যাপার নয়। সবচাইতে ভয়ের ব্যাপার হল গাড়ি চালানো। ছোটখাট অঘটন অসুবিধা তো আছেই। তবে সে সব ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে অনেকের অভিজ্ঞতা বেশ প্রাণঘাতী। গাড়ি নিয়ে আমার প্রথম দিনের দুরবস্থার কথা আগেই বলেছি। তবে বিপদ তার থেকে অনেক বড় হতে পারে। এই সম্পর্কে আমাদের এক ভারতীয় ছাত্রের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলি।
ওই পড়ুয়ার বাড়ি রাজস্থানে। আইআইটি ধানবাদে স্নাতক শেষ করার পরে সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খনির-বিভাগে (মাইনিং এঞ্জিনিয়ারিং) স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য এসেছে। তাদের গবেষণার খাতিরে মাঝে মাঝে খনিজ অঞ্চলগুলি পরিদর্শনে যেতে হয়। শহর থেকে তিনঘণ্টা মতো দূরে একটি সোনার খনিতে তারা মাঝে মাঝেই যায় বিভিন্ন রকম নমুনা সংগ্রহের উদ্যেশ্যে। শীতকালে এমনিতেই গাড়ি চালানো কঠিন। তার ওপরে ওই খনিজ অঞ্চলগুলি আরও দুর্গম জায়গায়। সেখানে গাড়ি চালানো আরও কঠিন।
ওই পড়ুয়ার বাড়ি রাজস্থানে। আইআইটি ধানবাদে স্নাতক শেষ করার পরে সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খনির-বিভাগে (মাইনিং এঞ্জিনিয়ারিং) স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য এসেছে। তাদের গবেষণার খাতিরে মাঝে মাঝে খনিজ অঞ্চলগুলি পরিদর্শনে যেতে হয়। শহর থেকে তিনঘণ্টা মতো দূরে একটি সোনার খনিতে তারা মাঝে মাঝেই যায় বিভিন্ন রকম নমুনা সংগ্রহের উদ্যেশ্যে। শীতকালে এমনিতেই গাড়ি চালানো কঠিন। তার ওপরে ওই খনিজ অঞ্চলগুলি আরও দুর্গম জায়গায়। সেখানে গাড়ি চালানো আরও কঠিন।
এ বার এখানকার শীতকালের রাস্তা আর গাড়ি চালানো সম্পর্কে একটু বলে নিই। আগেই বলেছি, রাস্তা পুরো সাদা বরফের তলায় থাকে। হ্যাঁ, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভয়াবহ তুষারঝড়ের সময় যখন আমি এসে পৌঁছেছিলাম, তখন সেই জমে যাওয়া বরফ অনেক বেশি ছিল বটে, কিন্তু অন্যান্য বছরেও বিরাট কিছু ভালো থাকে না। সব সময়েই পিচ্ছিল। এখন একদম শহরের মধ্যে হলে মাঝে মাঝে বরফ পরিস্কারের গাড়ি এসে বরফ একটু সরিয়ে ভেঙে রাস্তা গুলোকে একটু চলাচলের উপযোগী করে দেয়। কিন্তু ওই খনিজ অঞ্চল গুলি প্রচণ্ড দুর্গম জায়গায় হওয়ায় সেখানে পরিষেবা তেমন নেই। খনিজের কোম্পানি থেকে যেটুকু করা হয় সেটুকুই।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১৮: হঠাৎ গলায় হাত দিয়ে দেখি কোনও অনুভূতি নেই!
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩০: গিরীশচন্দ্রের মা সারদা
এই বরফ সরানোর গাড়িগুলোর সামনে বিশালকায় বেলচা লাগানো থাকে। আর কিছু কিছু গাড়ির সামনে বড় বড় ঘুরন্ত ঝাঁটার মতো। একটা অক্ষের সঙ্গে লেগে সেই ঝাঁটাগুলো বনবন করে ঘুরতে থাকে। আর যে গাড়ির চালক সে অক্ষটার দিক নিয়ন্ত্রণ করে ঝাঁটা তাকে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে গুঁড়ো বরফ গোটা রাস্তা থেকে সরিয়ে এক জায়গায় জড় করতে থাকে। মানে যেমন আমরা ঝাঁটা দিয়ে ঘর পরিষ্কার করার সময় সব জায়গা থেকে গুঁড়ো গুঁড়ো ধুলো-ময়লা এনে একজায়গায় জড় করি; ঠিক সেরকমই। এক জায়গায় জড় করলে সেগুলো তুলতে সুবিধা হয়। গুঁড়ো বরফের ক্ষেত্রেও তাই। ওই ঝাঁটাওলা গাড়ি গুলো বরফগুলো একজায়গায় করার পর বেলচাওলা গাড়িগুলো বরফ তুলে নেয়। তারপর ফেলে আসে অন্য কোনও জায়গায় বা রাস্তার ধরেই জমা করে দেয় বিশাল বিশাল স্তুপের আকারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেসব স্তুপের উচ্চতা দুই-আড়াই-মানুষ হবে আর রাস্তার ধার বরাবর অমন চলতে থাকে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬০: নতুন পথে রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩২: ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোয় গঙ্গাসাগর মেলা
এরকম অঞ্চল দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় মনে হয় যেন গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওই বরফ এতো বেশি হয় যে স্তুপ গুলোর নিচেটা রাস্তার মধ্যেও অনেকটা দখল করে নেয়। কোনওরকমে রাস্তার দুদিক থেকে দুটো গাড়ি যেতে পারবে। এরকম পিচ্ছিল এবং সরু রাস্তায় গাড়ি চালানো খুব কঠিন। তার ওপরে যদি সেটা ঢালু রাস্তা হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। গাড়ি পিছলে নেমে যেতে থাকে। আর একবার পিছলে গেলে তাকে স্টিয়ারিং দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যায় না। আর পাহাড়ের ঢাল বরাবর রাস্তা হলে তো আশা করি আর বলার দরকার নেই যে সেটা ঠিক কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। শুধু এটাই বলা যায় যে নেহাত দরকার না পড়লে ওসব জায়গায় শীতকালে কেউ যেচে যায় না।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৭: পলায়নপর পঞ্চপাণ্ডব-ভীমসেনের গতিময়তায় কোন মহাভারতীয় দিগদর্শন?
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪৯: সখী, আঁধারে একলা ঘরে
শুধু কি তাই। বিপদ আরও বড় হতে পারে। যেমন, একটু বেশি দুর্গম হলে সেখানে উদ্ধারকারী দল আসতেও প্রচুর সমস্যা হতে পারে। অতএব ওই চরম ঠান্ডার মধ্যে ওই ভাবে থাকতে হবে অনেক্ষন। আর ঠান্ডায় ফ্রস্টবাইটের অভিজ্ঞতা তো আগেই বলেছি। সেখানেই শেষ নয়। আলাস্কায় এমন অঞ্চল প্রচুর আছে যেখানে মুঠোফোনের কোনও সংযোগ নেই। সেইরকম জায়গায় যদি সমস্যা হয় তাহলে বাঁচার আশা প্রায় দুরাশা। নেহাত কপাল ভালো হলে যদি কেউ ওই রাস্তা ধরে সেই সময় যায় তাহলে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। না হলে দেবা ন জানন্তি, কি হতে পারে। তাই কোনও দুর্গম অঞ্চলে যাওয়ার আগে অনেকেই স্যাটেলাইট ফোন নিয়ে যায়। সেগুলোতে চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজের সংবাদ পাঠানো যেতে পারে উদ্ধারকারী দপ্তরে।
ছবি: অঙ্কনা চৌধুরী।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।