অলঙ্করণ: লেখক।
এপ্রিল মানেই ফুলের প্রসঙ্গ। একে তো দারুণ এ সময়! ফুলে ভরা বসন্ত, ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত একথা বলার উপযুক্ত সময়। আর এপ্রিল শুরুই হচ্ছে বোকাদের ট্রিবিউট জানিয়ে। এপ্রিল ফুল। তো বসন্তের দোসর হল প্রেম। আর প্রেম বোকা কেন, উন্মাদ করে সেকথা সেই ক্ষ্যাপা যক্ষটাকে দেখে জগতবাসী জেনে গিয়েছে। মেঘদূতে তখন ভরা বর্ষার কাল, নবঘনমেঘমণ্ডিত রামগিরি আর চিরবসন্তের অলকা সেদিন একাকার হয়েছিল।
কিন্তু ওই উন্মাদনাটুকুকেই যদি ধরা যায়, তাহলে মনে করতে হবে সদ্য চলে গিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ইন্টারন্যাশনাল ওরাল হেলথ ডে। কথায় আছে পাগলেরা কী না বলে! তাছাড়া, এই ওরাল হেলথ বা মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা আছে বৈকী! তামাকজাত নেশাদ্রব্যের সেবন ও আরও নানা রোগব্যাধি থেকে ওই স্থান আক্রান্ত হতেই পারে এবং তা ক্রমবর্দ্ধমান তো বটেই! সেই সঙ্গে দাঁত না মাজলে কী হতে পারে কিংবা মাড়ির সংক্রমণে নিরাময়ের জন্য কী করা যেতে পারে এই নিয়ে তথ্য, পরিসংখ্যান ইত্যাদির অভাব নেই।
কিন্তু ওই উন্মাদনাটুকুকেই যদি ধরা যায়, তাহলে মনে করতে হবে সদ্য চলে গিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ইন্টারন্যাশনাল ওরাল হেলথ ডে। কথায় আছে পাগলেরা কী না বলে! তাছাড়া, এই ওরাল হেলথ বা মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা আছে বৈকী! তামাকজাত নেশাদ্রব্যের সেবন ও আরও নানা রোগব্যাধি থেকে ওই স্থান আক্রান্ত হতেই পারে এবং তা ক্রমবর্দ্ধমান তো বটেই! সেই সঙ্গে দাঁত না মাজলে কী হতে পারে কিংবা মাড়ির সংক্রমণে নিরাময়ের জন্য কী করা যেতে পারে এই নিয়ে তথ্য, পরিসংখ্যান ইত্যাদির অভাব নেই।
গুপিকে গানে বলতে দেখা গিয়েছিল, মুণ্ডু গেলে খাবটা কি? সত্যিই বটে, যদিও তারা হাততালি দিলেই খাদ্য পেয়ে যেতো ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃথিবীতেই। শরীরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মাথাসহ মুখমণ্ডল। যেমন বনের রাজা কিংবা আফ্রিকার রাজা বললেই সিংহ, আর সিংহ বললেই সিংহবাহিনী দুর্গার কথা মনে পড়েছিল ফেলুদার, তেমনই মাথার কথা এলেই চলে আসে মুখ। যেটা চালানোই মানবজীবনের মূল লক্ষ্য। মুখ চললে পেট চলবে। তার ওপরেই জীবনের অস্তিত্ব। খাদ্য কিংবা অখাদ্য ইত্যাদির সহযোগে মুখের সচলতাই দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। ওরাল পরীক্ষার দিনে যতোই মুখ খুলতে না চান, মুখকে নাচানোই সেদিনের কাজ। অথচ মুখটা নেচে ওঠে সিনেমা হলেই। পরীক্ষার হলেও তাই, হাতের বদলে মুখটাই কি নাচতে চায়?
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৬: সুখের লাগিয়া
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬২: ধনময়ী জ্ঞানময়ী-র পাশে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’
যাই হোক, মুখের এই চলাচল ভালো কী মন্দ সেই নিয়ে কেউ ছেড়ে কথা বলার নয়। এটা যুগের হাওয়া বলে কেউ কেউ রাগ মেটাবে, এমনকী ছোট-বড় নানামুখে নানা কথার প্রসঙ্গ উঠে আসবে, কেউ কেউ ‘মুখেন মারিতং’ তো কেউ মুখচোরা, রা কাড়ে না, তবুও শব্দের মহিমা সর্বব্যাপী, জগতের প্রকাশ তো শব্দের হাত ধরেই! আর সবযুগেই ন্যায্যকথা কইবার লোক গিজগিজ করছে, তাদের দমিয়ে দিচ্ছে কেউ কেউ, সেই ন্যায্যটা কখনও সত্য, কখনও আস্ফালন, কখনও আকথা কুকথা, তবু নচিকেতা, মৈত্রেয়ী, কী সুবর্ণলতারা দমে কই?
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪০: মা সারদার নিজবাটি
এই মুখের কথা নিয়েই প্রাজ্ঞজনেরা বলেন, শতং বদ মা লিখ। তাই সকাল হলেই চতুর্দিকে শব্দস্রোত, চারদিকেই মুখ চলছে, বিদ্যাকে করায়ত্ত রাখতে অভ্যাস করতে হয়। যেমন, বাজাড়ু রোজ বাজার করে। কিংবা, ব্যায়ামবিদ ব্যায়াম। তেমনই মুখ চালানোর বিদ্যাতে যারা নিপুণ ও কৃতবিদ্য কিংবা ক্রান্তপ্রজ্ঞ তাঁরা ট্রেনে বাসে বাজারে হাটে মাঠে ন্যায্য কথা বলতে থাকেন। এতে তাঁদের মনের ও মুখের স্বাস্থ্য দিব্যি বজায় থাকে। আর সুস্বাস্থ্য কার না কাম্য?
তাই এঁদের প্রেরণা বা প্ররোচনায় আরেকদল স্বাস্থ্যোদ্ধারে নামেন। বা ওঠেন। একেই নিন্দুকে ঝগড়া বলে। কিন্তু এঁরা উভয়পক্ষেই যা বলেন তা-ই সত্য। টেবিলের ওপার থেকে এপার, সবদিকেই এঁরা আছেন। বাসে ট্রেনে সিট আর হাটের মাঝে সম্মান কিংবা অ্যাটেনশন না পেলে এঁদের মৌখিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয় খুব। তখন দেশ বিশ্ব জাতি কিংবা সামনের খড়কুটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এঁরা বায়ুগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দেখে তখন একে উন্মাদনা মনে হলেও এ আসলে ওই যক্ষের মতোই পরিস্থিতি। নিন্দুকরা বলেন এঁরা অজীর্ণে ভোগেন, কিংবা নিদ্রা অথবা কলহের অভাবে এঁরা এমন অস্থির থাকেন।
তাই এঁদের প্রেরণা বা প্ররোচনায় আরেকদল স্বাস্থ্যোদ্ধারে নামেন। বা ওঠেন। একেই নিন্দুকে ঝগড়া বলে। কিন্তু এঁরা উভয়পক্ষেই যা বলেন তা-ই সত্য। টেবিলের ওপার থেকে এপার, সবদিকেই এঁরা আছেন। বাসে ট্রেনে সিট আর হাটের মাঝে সম্মান কিংবা অ্যাটেনশন না পেলে এঁদের মৌখিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয় খুব। তখন দেশ বিশ্ব জাতি কিংবা সামনের খড়কুটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এঁরা বায়ুগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দেখে তখন একে উন্মাদনা মনে হলেও এ আসলে ওই যক্ষের মতোই পরিস্থিতি। নিন্দুকরা বলেন এঁরা অজীর্ণে ভোগেন, কিংবা নিদ্রা অথবা কলহের অভাবে এঁরা এমন অস্থির থাকেন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৭: সাধারণের প্রতি পাণ্ডবদের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ কোন মহাভারতীয় শিক্ষা?
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৮: মোহিতকুমারী এক মহিলা আত্মজীবনীকার
নিন্দুকে বলে, মৃগীরোগী যেমন পাদুকার গন্ধে শান্তি পায় তেমনই এদের মুখের ব্যায়ামে। এমনও হতে পারে মুখের সঙ্গে হৃদয় বা মস্তিষ্কের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেই এঁরা প্রবৃত্ত হন। মনুষ্যকুলে রত্নস্বরূপ এই জীবকুল সর্বদাই বিপরীতের জীবকে প্রতিদ্বন্দ্বী ও বোকা ভাবেন। কথা শুধু একটাই, নিয়ম করে টুথব্রাশে মুখের স্বাস্থ্য ফেরে নাকি কেবল?
শুধু যে মনুষ্যকুলে এমন স্বাস্থ্যোদ্ধার চলে তা-ই নয়, মনুষ্যেতরগণ-ও তার বাইরে নয়। মধ্যরাত্রিতে সারমেয়কুল যে ‘Talk’ ও ঝালের পরিবেশন করে, মানুষ সে ভাষা বুঝলে হয়তো হীনন্মন্যতায় ভুগতো। ভাগ্যিস বোঝে না, ভাগ্যিস স্বঘোষিত অপ্রতিদ্বন্দ্বী মানুষ জানে কীনা নিজেই বোঝে না যে বাণ আর বাণী একবার নিক্ষিপ্ত হলে… ফেরানো?
শুধু যে মনুষ্যকুলে এমন স্বাস্থ্যোদ্ধার চলে তা-ই নয়, মনুষ্যেতরগণ-ও তার বাইরে নয়। মধ্যরাত্রিতে সারমেয়কুল যে ‘Talk’ ও ঝালের পরিবেশন করে, মানুষ সে ভাষা বুঝলে হয়তো হীনন্মন্যতায় ভুগতো। ভাগ্যিস বোঝে না, ভাগ্যিস স্বঘোষিত অপ্রতিদ্বন্দ্বী মানুষ জানে কীনা নিজেই বোঝে না যে বাণ আর বাণী একবার নিক্ষিপ্ত হলে… ফেরানো?
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।