শনিবার ৯ নভেম্বর, ২০২৪


উত্তম কুমার।

প্রতিবেদনের শুরুতে এমন একজন কালজয়ী অভিনেতা মায় কালচারাল আইকনকে নিয়ে এহেন বেমানান শব্দের চয়ন, মনকে বেসুরো করে দেয় বৈকি! কিন্তু নির্মম সত্য হল অরুণ চট্টোপাধ্যায়কে একা একাই উত্তমকুমার-এ পৌঁছতে হয়েছিল। যে ২৪ জুলাই নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ভাবে ৪৩ বছর ধরে মাতামাতি চলছে তারও নির্মাতা একলা উত্তমই।

‘এ বঙ্গের সমতলে তৃণলতা গুল্মদলে’ আর একজন শক্তিমান অভিনেতার মৃত্যুদিন ওই ২৪ জুলাই; কিন্তু একমাত্র পেটেন্ট বোধহয় তাঁরই নেওয়া। লেখার মুখড়াটা এ ভাবে সারলেও অন্তরা সঞ্চারীতে আছে তত্ত্বের আলোছায়া।

উত্তম কুমার-র সমগ্ৰ অভিনয় জীবন কয়েকটা পর্বে ভাগ করলে সবার আগে চোখে পড়বে প্রস্তুতি পর্বের উত্তমকে। প্রথম হিট ছবি ‘বসু পরিবার’, আর জীবদ্দশায় শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দুই পৃথিবী’-র যদি প্রেক্ষিত আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাব, প্রায় ৯০ শতাংশ একই ভূমিকায় অভিনয় করা দু’জন উত্তমের নিজেকে প্রকাশ, আকাশ-পাতাল তফাতে।

আলোচনাটা আরও খোলতাই হবে যদি ছবি দুটোর মুক্তির বছর কিছুক্ষণের জন্য বিপরীত করি। অর্থাৎ কেরিয়ারের শুরুতে উনি করলেন ‘দুই পৃথিবী’, আর শেষের দিকে সুযোগ পেলেন ‘বসু পরিবার’-র মতো ছবিতে, কেমন হতো মহানায়কগিরি!

উত্তরে বলা যায়, বিষয়টাই অলীক। কারণ উত্তমের শেষ দশ বছরের ফিল্মোগ্রাফ শুধু উত্তমকে কেন্দ্র করেই। বসু পরিবার-এর সুখেন, যখন একই আদর্শের প্রতিমায় দুই পৃথিবীর মৃণাল সাজছেন তখন গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। যে অভিনয় প্রথম জীবনে বাচিক ছিল তাকেই সারা জীবন ধরে আঙ্গিক করা চাট্টিখানি কথা নয়। একা একা সবার অলক্ষ্যে প্রস্তুতি না থাকলে এ উত্তরণ সম্ভব নয়।
বর্ষীয়ান অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় একবার স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন— ‘উত্তমবাবু যে মানের অভিনয় দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, আমরা তার থেকে অনেক ভালো মানের কাজ দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। অন্যদিকে, উনি শুরুর দিকে পরিণত সত্যজিৎ রায় বা মৃণাল সেনকে পাননি। কিন্তু উনি নিজেকে পরিমার্জিত করতে করতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছিলেন যা, আমাদের সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল।’

দ্বিতীয় ধাপে আমরা দেখব, প্রাথমিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত উত্তমের নিজেকে সংযত রাখার লড়াই। একটানা বছর সাতেকের এসপার-ওসপার লড়াইয়ে ক্লান্ত অরুণ যখন অগ্নিপরীক্ষা-য় বিগ হিট দিয়ে আগামী দিনের পাকাপাকি উত্তম হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছেন, তখন তাঁকে অবলম্বন করে অনেক ঝানু প্রযোজক ঘরে আনাগোনা শুরু করলেন। উপরি হিসাবে বিনিয়োগ করতেন বাড়তি তোষামোদ। এ পর্বটিও বেশ সংগ্রামময়। একদিকে তাঁর জীবনে সত্যজিৎ রায়ের মতো ‘অ্যাকাডেমিক গার্জেন’ কেউ নেই, অন্যদিকে সমগ্ৰ পরিবার, বাড়ির বড় ছেলের দিকে প্রত্যাশার ঝুলি নিয়ে তাকিয়ে।

ভাবতে অবাক লাগে, যে সময় উত্তম-সুচিত্রা ম্যাজিক, বক্স অফিসে ঝড় তুলছে, সে সময়েই উনি একের পর এক ‘হ্রদ’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘চিরকুমার সভা’- র মতো ছবিতে লিড রোলে অভিনয় করেছেন। পরিমিতিবোধ কতটা গভীর হলে তবে এ ধরণের চরিত্রে নিজেকে ছাপিয়ে পরিচালকের আশা পূর্ণ করা যায়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

মুভি রিভিউ: মহারাজা—নিথিলন, বিজয় ও অনুরাগ একযোগে থাপ্পড় মেরেছেন উগ্র পৌরুষের গালে

মনে রাখতে হবে, অনেক পুরস্কারজয়ী ভাগ্যবান অভিনেতারা অতীত স্মৃতি চারণায় বলেছেন, অমুকবাবু অমুক ছবির অমুক চরিত্রে অভিনয়ের সময় অন্যকোনও ছবিতে কাজ করতে দিতেন না। উত্তমবাবু-র ক্ষেত্রে এ ধরনের সময় বা সুযোগ কোনওটাই হয়নি। নায়ক ছবির সারস্বত সম্পদের প্রতি শতকরা একশো ভাগ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, প্রভাত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বিচারক’ ছবিটিও উত্তম কুমারের জাত চেনানোর জন্য যথেষ্ঠ।

এ পর্বে গোদের ওপর বিষফোঁড়া ছিল, অপ্রীতিকর গৃহবিবাদ। তাকে কেন্দ্র করে ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন সুচিত্রা সেনের মতো একজন মুডি নায়িকার হঠাৎ হঠাৎ খামখেয়ালিপনা ঘটত, তেমনই ঘরে ছিল ধনীর দুলালী গৌরী দেবীর মনগড়া অভিযোগের ফিরিস্তি। মাথাভর্তি এ ধরণের একরাশ চাপান-উতোর ফ্লোরের বাইরে রেখে ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-এ যখন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে গলা টিপে মেরে ফেলার জায়গায় নিয়ে চলে যায়, তখন অবচেতন মনটা কেমন যেন বলে ওঠে, গুরু, তোমার বিকল্প তুমি নিজেই।

একটা কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, উত্তমবাবু সমস্ত ছবির নির্মাণে নিজেকে যে পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন তার চেয়ে অনেকগুন নিজেকে খরচ করেছেন অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে। যে পরিস্থিতিগুলো চারপাশের লোকেরা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য তৈরি করে তাঁকে ঠেলে দিত।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৫: সঙ্গীত অনুরাগিণী মা সারদা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৮: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— বাবুর ও বন জুঁই

তৃতীয় ধাপে আমরা চিনতে চেষ্টা করব, পারিবারিক ভাবে বিধ্বস্ত, পেশার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এক পরিণত উত্তমকে। এ পর্বে মুহূর্তের দুর্বলতা আর একঘেয়েমিতে পরিশ্রান্ত উত্তমকে, একদিকে যেমন পাগলের মতো কাজে নিযুক্ত রাখত, অন্যদিকে কাজের জগতের মানুষগুলোর তেল চিটচিটে চোখ তাঁকে হন্যে হয়ে মানসিক শান্তির খোঁজ করাত।

মানুষটা বাহ্যিক জীবনে যে যশোভাগ্য-র অধিকারী ছিলেন, ব্যক্তিজীবনে একান্ত আপনার মানুষগুলোর কাছে ততটাই ছিলেন অপযশের ভাগীদার। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে পরিবারের লোকজনদের কাছে ডিম্যান্ড সাপ্লাইয়ের মেশিন ছাড়া তিনি আর কিছুই হতে পারেননি। যাই হোক, কেরিয়ারগ্রাফের দিকে তাকালে আমরা দেখব, এ অংশে উত্তমবাবুকে অস্তিত্বরক্ষার লড়াই করতে হচ্ছে না। সমস্ত ছবিতেই উত্তমবাবুর আত্মবিশ্বাস চোখমুখ দিয়ে ঠিকরে পড়ছে। পিছন ফিরে তাকানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। মাঝে রঙমহলে থিয়েটার করা বিশ্বজিৎকে ‘মায়ামৃগ’-তে নায়কের রোল ছেড়ে দিয়ে দাদার কর্তব্যও করে ফেলেছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে একটা অভিভাবক সুলভ মনোভাব নিয়ে অকালপ্রয়াত ছবি বিশ্বাস-র জায়গা শক্ত হাতে ধরেছেন উত্তম কুমার।

শিল্পী সংসদ প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত উত্তম-সত্তা, অভিনয় ছাড়াও (শুধু একটি বছর) পরিচালনা (কাল তুমি আলেয়া), সংগীত পরিচালনা (উত্তর ফাল্গুনী, জতুগৃহ, গৃহদাহ ও ছোটী সি মূলাকাৎ), প্রযোজনা প্রভৃতি বহুমুখী ভাগে ভাগ হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৩: কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৩: টলস্টয় ও সোফিয়া—সে কি কেবলই যাতনাময়…/৩

সুতরাং কেরিয়ারের শুরুতে শুধু অভিনেতা হওয়ার যে সংগ্রাম তাঁকে করতে হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শিল্পটার ভিন্ন ভিন্ন শাখায় নিজেকে প্রকাশ করার অদম্য বাসনা তাঁকে সবসময় একলা করে রাখত। দেশের আর কোনও প্রথম সারির অভিনেতা কেরিয়ারের মধ্যগগনে এ ভাবে ভার্সেটাইল ওয়েতে নিজেকে প্রকাশ করেছেন বলে মনে হয় না। দিলীপ কুমার, রাজেশ খান্না, অমিতাভকেও দেখেছি বলে হয় না।

এ পর্বের বহু আলোচিত বিষয় হল, নায়ক এবং চিড়িয়াখানা ছবি দুটি। প্রথম ছবির কল্যাণে বিদেশ যাত্রা। শেষেরটার জন্য ‘ভরত’ পুরস্কার লাভ। দুটো ছবিরই নেপথ্য কারিগর সত্যজিৎ রায় নামক গগনচুম্বী ব্যক্তিত্ব। শিল্পী সংসদ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ‘কাউকে না বলতে না পারা’ উত্তমবাবুকে গায়ে মাখন লাগিয়ে গনগনে আঁচে সেঁকে নেওয়া লোকের সংখ্যা বাড়তে লাগল।

ক্রিয়েটিভ লোকজন একটু তারিফের খোঁজে নীরবে মেনে নিতে লাগল বন্ধুরূপী স্তাবকদের আবদার। চতুর্থ তথা শেষ ধাপের এ অংশে ‘ছোটি সি মূলাকাৎ’ ফেরৎ ঋণগ্রস্ত উত্তম। পয়সার জন্য ছবির বাছাই এ মন দিতে পারলেন না, নায়কোত্তর পর্বে যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজন্ম স্টারডম সচেতন উত্তম, পাবলিক ফাংশনেও নাম লেখালেন। যেটা বোধহয় তাঁর অকালপ্রয়াণের মূল কারণ।

‘অমানুষ’-র আত্মঘাতী মধু চরিত্রটা বোধহয় তাঁর নিজের জীবনেরই সালতামামি। প্রেমহীন, স্বার্থপর সমাজের প্রতি এক নীরব প্রতিবাদ। এর মধ্যেই নকশাল আন্দোলনের জেরে দীর্ঘ আড়াই মাস কলকাতা ছাড়া উত্তমকে আবার বহির্মুখী করল। একলা করল আরও বেশি। কারণ কলকাতার আর কোনও চিত্র-অভিনেতার কপালে এ ঘটনা ঘটেনি। সকলের অলক্ষ্যে চোরের মতো সাধের টলিউড ছাড়তে হয়েছিল, যেখানে সে একচ্ছত্র সম্রাট।

কফিনের শেষ পেরেক কোনটা বলা যায় না। তবে তপন সিংহ-র মতো মানুষের সঙ্গে ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ নিয়ে আকচা-আকচি, তাঁকে নিয়ে আবার বাদ দিয়ে দেওয়া, সর্বোপরি একজন তরুণ অভিনেতাকে দিয়ে কাজ সম্পূর্ণ করানোর ঘটনা, মহানায়ক উত্তম কুমারকে দুমড়ে মুচড়ে স্ট্রাগলার অরুণ-এ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল। এ ঘটনা তৎকালীন নবাগত শমিত ভঞ্জ, সন্তু মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক নিদেনপক্ষে স্বরূপ দত্তের কপালে হয়নি, তা কি না ঘটল স্বয়ং উত্তমকুমার এর সঙ্গে!
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২: অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া দুলিছে যেন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

দুর্ভাগ্য এতটাই জেঁকে বসেছিল যে, সে সময়ের কিছু উর্বর মস্তিষ্কের পরিচালকের, ছবি হিট করানোর জন্যে উত্তমবাবুকে নেওয়া হতো, আর টাইটেল কার্ডে পোস্টারে নাম দেওয়া হতো, সব শেষে ‘এবং উত্তম কুমার’ এ ভাবে। কেরিয়ারের শুরুতে সুচিত্রা-উত্তম এরকম নিদান হজম করতে হতো আগামী-র দিকে তাকিয়ে। তাছাড়া সুচিত্রা সেন অন্য ফিগার। কিন্তু যে উত্তমকুমার একই বছরে (১৯৭৫) ‘সন্ন্যাসীরাজা’, ‘বাঘবন্দী খেলা’, ‘মৌচাক’ করেছেন, আবার ‘অগ্নীশ্বর’-র মতো চরিত্রেও রূপদান করেছেন, তার এই প্রাপ্য!

এ সময় উত্তমবাবু, ‘ছোটি সি মূলাকাৎ’-এর পুরানো ক্ষত আর সমকালীন টলিউডের তথাকথিত উঠতি নায়কদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য বেশি করে ডাবল ভার্সন ছবিতে বা মুম্বইয়ের হিন্দি ছবিতে সই করতে লাগলেন। কিন্তু বলিউড তখন অমিতাভ বচ্চনের মতো একজন ব্যক্তিত্বকে পেয়ে ‘কমপ্লিট এ্যাক্টর’ সুপারস্টার রাজেশ খান্না থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাঙালি উত্তমকুমারের ডেবিউ মুম্বই সে ভাবে মেনে নিতে পারেনি।

যার ফলে সঙ্গীত পরিচালক সলিল চৌধুরির শেষের দিনগুলোর মতো ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ হয়ে গাড়ি থামল সদ্য আরব সাগর ফেরত ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-র নবাগতার কাছে। সেদিনের সর্বজনবিদিত উত্তম-লাঞ্ছনা তাঁকে আরও একলা করে দিয়েছিল। মনের মধ্যে জমে থাকা রেডিও অফিসে মহালয়ার সকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-র সঙ্গে অলিখিত পরাজয়ের কাঁটাটা আরও একবার রক্তক্ষরণ ঘটালো। তারপর, আর কি! দ্রুত এগিয়ে এল ২৪ শে জুলাই। সেই থেকে চলছে তাঁর একলা ছড়ি ঘোরানো। ২৩ বছর পর শমিত ভঞ্জ মাঠে নামলেন। কিন্তু দিল্লির মতো উত্তমকুমার অনেক দূর। দূর থেকে ভেসে আসছে ‘বড় একা লাগে এই আঁধারে…’।
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar–Mahanayak–Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

Skip to content