
তৃপ্তির বাবা-মা দুজনেই মারা গিয়েছেন। তৃপ্তি ছোটবেলা থেকে জ্যাঠামশায়ের সংসারে মানুষ। তৃপ্তি আর তার ছোট ভাই তাপস। জ্যাঠামশাই-জেঠিমার তিন মেয়ে-বড় দু’জন রমলা আর মৃদুলা তৃপ্তির চেয়ে বড় আর কমলা তৃপ্তির ছোট। সবার ছোট হল তাপস। কিন্তু মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাপস নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দিল।
প্রথমে বাবা-মা পরে ছোট ভাইকে হারিয়ে তৃপ্তি একেবারে বাকরহিত হয়ে গেল। বড় দুই মেয়ের বিয়ের পর জ্যাঠামশাই তৃপ্তির জন্যে মধ্যম আয়ের সুপাত্র খুঁজছিলেন। দুলালের বড় জামাইবাবুর এক সহকর্মীর সূত্রে যোগাযোগ হল। দুলাল শ্যামনগরের দেখতে গিয়ে তৃপ্তির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার সুযোগ পেয়েই স্পষ্ট জানিয়েছিল তার চটকলের অনিশ্চিত চাকরি। তার সঙ্গে জীবন কাটানোর ব্যাপারে মতামত দেবার আগে একবার ভালো করে ভেবে দেখতে।
— ভেবেই হ্যাঁ বলেছি!
— অভাব আমার চিরসঙ্গী!
— আমিও এমন কিছু রাজার ঘরে জন্মাইনি। মা-বাবা ছোটবেলায় চলে গেছে বড় হয়ে একমাত্র ছোট ভাইকে হারিয়েছি। আর আমার হারাবার কিছু নেই!
— না আসলে চাকরি পাকা হলেও চটকলের ব্যবসায় কিচ্ছু বলা যায় না! যেকোনও সময় ডামাডোল শুরু হয়ে যেতে পারে রোজগার অনিশ্চিত হয়ে পড়লে।
— আমি একটা নিশ্চিত সংসার চাই! ভিখারির সংসার থাকে না? দুলাল এই বয়সের কোনও মেয়ের মুখে এতও স্পষ্ট এতও কঠিন কথা গুনতে পারে স্বপ্নেও ভাবেনি। দুলাল রাজি হয়েছিল।
— ভেবেই হ্যাঁ বলেছি!
— অভাব আমার চিরসঙ্গী!
— আমিও এমন কিছু রাজার ঘরে জন্মাইনি। মা-বাবা ছোটবেলায় চলে গেছে বড় হয়ে একমাত্র ছোট ভাইকে হারিয়েছি। আর আমার হারাবার কিছু নেই!
— না আসলে চাকরি পাকা হলেও চটকলের ব্যবসায় কিচ্ছু বলা যায় না! যেকোনও সময় ডামাডোল শুরু হয়ে যেতে পারে রোজগার অনিশ্চিত হয়ে পড়লে।
— আমি একটা নিশ্চিত সংসার চাই! ভিখারির সংসার থাকে না? দুলাল এই বয়সের কোনও মেয়ের মুখে এতও স্পষ্ট এতও কঠিন কথা গুনতে পারে স্বপ্নেও ভাবেনি। দুলাল রাজি হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-১৭: আকাশ এখনও মেঘলা

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০০: নীল কটকটিয়া
এদিকে স্নিগ্ধার হরিণঘাটা’র সংসারে গভীর ভাটা! স্বামী লোকটিকে স্নিগ্ধা কিছুতেই মুঠোও ভরতে পারছে না। প্রথমত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যামিলি কোয়ার্টার খালি নেই। কারণ তিনি এ বিষয়ে যথাসময়ে অ্যাপ্লিকেশন জমাই করেননি। আবার একবছর পর সুযোগ আসবে। সেখানের মেস জীবনে তিনি মহাখুশি। ছুটিতে বাড়ি এলে জাঠতুতো খুড়তুতো ভাইবোন ভাগনে-ভাগ্নিদের নিয়ে পারিবারিক জীবনে মশগুল থাকেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৫: গেমপ্ল্যান

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৪: জীবনের নশ্বরতা ও আত্মানুসন্ধান বিষয়ে রামের উপলব্ধি যেন এক চিরন্তন সত্যের উন্মোচন
স্নিগ্ধা চাইছে হিন্দিছবির নায়কনায়িকার মতো পাহাড়-নদী-ঝর্ণায়-ফুলের বাগানে উড়ে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু ছুটি থাকলেই তিনি বিরাট দলবল নিয়ে বনভোজনে বের হন। স্নিগ্ধাকে নিয়ে আলাদা করে স্বপ্ন বোনবার বয়েস আর নেই বিয়েবাড়ি হক বা পারিবারিক জন্মদিন কপোত-কপোতীর আলাদা হবার সুযোগ নেই। কাক-টিয়া-ময়না-চড়ুই-শালিক সবসময় সুবিশাল পল্টন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৮: মা সারদার জন্মতিথিতে তাঁর অপূর্ব অমানবীয় রূপ ফুটে উঠল

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৭: আলাস্কায় এমন অপরূপ দৃশ্যও দেখা যায়, যেখানে পাহাড়-সমুদ্র-হিমবাহ একসঙ্গে বিরাজমান
স্বাধীনচেতা জীবনকাটানো। প্রিয়পুরুষ দুলালের প্রত্যাখ্যান চুঁচড়ার থেকে এতটা দূরে কল্যাণীতে প্রায় নির্বাসিত জীবনযাপনে ক্রমশ হাঁপিয়ে উঠেছে স্নিগ্ধা। বিয়ের মাসছয়েক পরেও স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্যের কোনও টান তৈরি হয়নি। স্নিগ্ধা বলল, সে মায়ের কাছে যাবে। বলামাত্র তাঁর স্বামী এক খুড়তুতো ভাইকে দিয়ে স্নিগ্ধাকে চুঁচুড়া দিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দিল। নিজের জিনিসপত্র নিয়ে বাপের বাড়ি এসে স্নিগ্ধা জেদ ধরল স্বামী নিজে এসে তাকে নিয়ে না গেলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যামিলি কোয়ার্টারে থাকার ব্যবস্থা না হলে সে আর ফিরবে না। ছমাস কেটে গিয়েছে স্বামী বা অন্য কেউ নিতে এলেন না। স্নিগ্ধার মাথায় আবার দুলালের পিছনে লাগার ইচ্ছে হলো। হঠাৎ করে একদিন রেলবাজারে দেখা।
— কি গো দুলালদা! আছো কেমন?
— চলে যাচ্ছে? তুই কেমন আছিস?
— বেঁচে আছি!
— মানে!
— সব কথার মানে জানতে নেই!
— কবে এসেছিস?
— অনেক দিন?
— এখন কি থাকবি এখানে?
স্নিগ্ধা হঠাৎ হেসে গড়িয়ে পড়ে
— সেসব এখনও হয়নি!
— কী সব?
— যে জন্যে মেয়েরা বাপেরা বাড়ি আসে!
স্নিগ্ধার হাসি আর থামছে না, দুলাল আশেপাশে তাকায়।
— কী হল কাউকে খুঁজছো?
— না তো।
— বাড়িতে এসো একদিন! সেই যে পালিয়ে এলে তারপর থেকে তো ওমুখো হও না!
— পালিয়ে এলাম মানে?
— পালিয়েই তো! বিয়ের ভয়ে! এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। লাইসেন্সড
— কি বলছিস এসব?
— না মানে এখন তো তোমার পাঞ্জাবীতে কলঙ্কের দাগ লাগবে না।
— কতদিন থাকবি?
— এখন আছি!
স্নিগ্ধা কথাটা বলে দুলালের গায়ের কাছে সরে এসে একটু ঝুঁকে বলল
— তুমি চাইলে আজীবন থাকবো!
— কি গো দুলালদা! আছো কেমন?
— চলে যাচ্ছে? তুই কেমন আছিস?
— বেঁচে আছি!
— মানে!
— সব কথার মানে জানতে নেই!
— কবে এসেছিস?
— অনেক দিন?
— এখন কি থাকবি এখানে?
স্নিগ্ধা হঠাৎ হেসে গড়িয়ে পড়ে
— সেসব এখনও হয়নি!
— কী সব?
— যে জন্যে মেয়েরা বাপেরা বাড়ি আসে!
স্নিগ্ধার হাসি আর থামছে না, দুলাল আশেপাশে তাকায়।
— কী হল কাউকে খুঁজছো?
— না তো।
— বাড়িতে এসো একদিন! সেই যে পালিয়ে এলে তারপর থেকে তো ওমুখো হও না!
— পালিয়ে এলাম মানে?
— পালিয়েই তো! বিয়ের ভয়ে! এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। লাইসেন্সড
— কি বলছিস এসব?
— না মানে এখন তো তোমার পাঞ্জাবীতে কলঙ্কের দাগ লাগবে না।
— কতদিন থাকবি?
— এখন আছি!
স্নিগ্ধা কথাটা বলে দুলালের গায়ের কাছে সরে এসে একটু ঝুঁকে বলল
— তুমি চাইলে আজীবন থাকবো!
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৮: রক্তে ভেজা মাটিতে গড়ে ওঠে সত্যিকার প্রাপ্তি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৬: শান্তিনিকেতনে কবির প্রথম জন্মোৎসব
তারপরই নিজের রাস্তায় চলে গেল স্নিগ্ধা! স্নিগ্ধার শরীরের ঘাম-মেশানো ঝাঁঝালো পারফিউমের গন্ধে দুলালের গাটা আচমকা গুলিয়ে উঠলো যেন! কী চায় এই মেয়েটা? বিয়ে হয়ে গিয়েছে ঘরসংসার ছেড়ে এখানে পড়ে আছে কেন ?—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।