বুধবার ৭ মে, ২০২৫


ছোটবোন মণি, মাকে বিয়েবাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে এল, বলল—
—ফেরার সময় কাঊকে বোলো একটু এগিয়ে দিতে আমি নিচের ঘরেই থাকবো, খেয়াল রাখবো!
বাড়িটা আলোটালো দিয়ে ভালোই সাজিয়েছে। স্মিগ্ধার মা ছন্দাও মেয়ের মতো পার্লারে সেজেছেন। পেস্তা রঙের একটা বেনারসি পরেছেন! দেখে দুলাল-মণির বিধবা মা বেশ অবাক হলেন। মণিকে নিয়ে তিন তিনটে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রথম দু’জনের বিয়ের সময় তিনি সধবা ছিলেন। কিন্তু মেয়ের বিয়েতে এত সাজের কথা সধবা অবস্থাতেও ভাবতে পারেননি। মণির বিয়ের সময় তো সাদা থান পরেছিলেন। মেয়ে জামাইরা দামি শাড়ি কিনে দিয়েছিল। পরেননি। মণির মাকে ছন্দা একা দেখে কিছু বলেনি। কিন্তু এক ঘর লোকের সামনে স্নিগ্ধা বলে উঠল—
—কাকিমা তুমি একা কেন? দুলাল দা? সে আসবে না!
—না সে তো ব্যারাকপুরের কি সব পার্টির মিটিং ফিটিং আছে সেখানে গিয়েছে!
—ছোটবেলা থেকে পড়িয়েছে একসঙ্গে আবৃত্তি করেছি, ফাংশন করেছি। আজ আমার বিয়ের থেকে পার্টির মিটিংটা বেশি জরুরি হল? বেশ, আমি দুলাল দার সঙ্গে আর কোনওদিন কথা বলবো না!
স্নিগ্ধার মুখ ভার হয়ে উঠল দেখে তার মা ছন্দা বলল—
—আজকের দিনে ওসব থাক না!
এই কথোপকথনের পিছনের ইতিহাস দুলালের মায়ের জানা নেই। কিন্তু নামের কথার ভিত্তিতে পাড়ার উপস্থিত মেয়ে বৌদিদের মধ্যে একটা চাপা হাসি খেলে গেল। তাই দেখে দুলালের মা একটু বিব্রত হলেন।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে বরকে দেখলেন দুলালের মা। স্নিগ্ধার থেকে বয়সের তফাৎটা বেশ বেশি! মাথায় কালো কুচকুচে করে কলপ মাখলেও সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। শুভদৃষ্টির সময় সকলে জোরাজুরি করলেও স্নিগ্ধা মুখ তুলল না। চোখ নামিয়ে রেখেই মালাবদল করল সে!
বৈধব্যের পর থেকেই দুলালের মা পঙতি-ভোজন করেন না। ঘরের ভিতর বসে একটু সামান্য দইমিষ্টি খেয়ে ফিরে আসেন। স্নিগ্ধার না ছন্দা নাছোড়বান্দা, ক্যাটারিং এ অনেক টাকার প্লেট, না খেলে পয়সা নষ্ট! আর আজকাল তো ওসব আমিষ-নিরামিষ কেউই মানে না।
—আমি মানি ভাই!
—তবে সঙ্গে একটু মাছমাংস দিয়ে দি, ফ্রিজে রেখে দেবেন। দুলাল এসে খাবে। যতই হোক ওদের দুজনের এতকালের চেনাজানা!
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-১৫: আকাশ এখনও মেঘলা

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৮: রান্নার জ্বালানি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

বারবার এই চেনাজানা এতকাল শব্দগুলো যেন কানে বড় অস্বস্তিকর ঠেকছে। বিধবা মানুষ স্বচ্ছন্দে শরীর খারাপ করছে বলে বিয়েবাড়িটা এড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু যেহেতু দুলালের বাবা স্বর্গীয় অমৃতলাল সেন স্নিগ্ধার বাবা স্বর্গীয় যতীন করের বন্ধু ছিলেন। সেই সম্পর্ককে সম্মান জানাতেই আজ দুলালের মা এই বিয়ে বাড়িতে এসেছে। এসব আনন্দ অনুষ্ঠান আজকাল আর একেবারেই ভালো লাগে না। নেহাত এক পাড়ায় থাকে। খানিকটা চক্ষুলজ্জার খাতিরেই এসেছিলেন। কিন্তু এখন কাঠের চামচে করে দই মুখে তুলতে তুলতে মনে হচ্ছে, না এলেই বোধহয় ভালো হতো!
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৫: এ কেমন রঙ্গ জাদু, এ কেমন রঙ্গ…/৩

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৬: মা সারদার প্রথম মন্ত্রশিষ্যা ছিলেন দুর্গাপুরীদেবী

মায়ের কাছে দুলাল কখনও কিছু লুকোয় না। এই প্রথম যেন মনে হচ্ছে সে একটা লুকোছাপা করেছে! সে যে স্নিগ্ধার বিয়েতে তিনদিনের জন্য থাকবে না। মনিকে একা সেই সময়টা বাড়িতে আসতে বলেছে এসব কিছুই দুলাল আগে থেকে জানায়নি। মণি কি কিছু জানে? থাক একটা বয়সে পড়ার পর কিছুই আঁকড়ে ধরতে নেই। হাতের মুঠো আলগা করে দিতে হয়। তাতে শান্তি বজায় থাকে। যতটুকু জানা প্রয়োজন ততটুকু ঈশ্বর নিজেই জানিয়ে দেন। বাকি যেটুকু অজানা, সেটা তিনি চান না বলেই অজানা থাকে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১২: প্রশাসক রামচন্দ্রের সাফল্য কী আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে সফল প্রশাসকদের আলোর দিশা হতে পারে?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ

লাল কাগজে মোড়া কাগজের বাক্সে রাখা রুপোর সিঁদুর কৌটাটা স্নিগ্ধা বা তার মা খুলেও দেখল না। পাশে রাখা একটা বড় বটুয়া ব্যাগের মধ্যে আলগোছে ফেলে দিল। দোকানদারেরাও সোনার জিনিস না কিনলে শক্তপোক্ত বাক্স দেয় না। উপহার হাতে ধরেই আমন্ত্রণকারীরা বুঝে ফেলেন রুপোর জিনিস। মুখে চেহারায় হাতের ভঙ্গিতে চাপা তাচ্ছিল্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি

সন্দেশ দুটো মুখে ফেলে জল খেতেই চারদিকে বিয়ের হুড়োহুড়ি। তখন আর কাকে বলবে এগিয়ে দিতে। আধুনিক নিয়ম মেনে স্নিগ্ধার মা ছন্দা সম্প্রদানে বসেছেন। একা একা বাড়ির বাইরে এসে দুলালের মা অবাক।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content