মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল, ২০২৫


ছবি প্রতীকী। সংগৃহীত।

স্নিগ্ধার বিয়ে হয়ে গেল কিছুদিনের মধ্যেই! কল্যাণীর কাছে হরিণঘাটায় শ্বশুরবাড়ি! বর মোহনপুরের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি পড়ান! এতদিন বিয়ে করেননি। স্নিগ্ধার থেকে বয়সের অনেকটা তফাত!
মাঝের এই অকারণ ঝঞ্ঝাটটুকু না হলে দুলাল নিশ্চয়ই যেত। খাটাখাটনি করতো কিন্তু সে গেল না। দিদি-জামাইবাবুদের, মা কিংবা ছোটবোন মণিকে এসব নিয়ে কিছু বলা যায় না! স্নিগ্ধা বা ছন্দা কাকিমা এসব বলে সেদিন যথেষ্ট নোংরা রুচির পরিচয় দিয়েছিলেন! কার সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলবে? পাড়াতে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠভাবে মেশামেশি করে দুলাল। নিজে মনে মনে জানতো কিন্তু তবুও সন্দেহের নিরসন ঘটাতে অনেকের কাছেই স্নিগ্ধার বিয়ের বিষয় নিয়ে আলগাভাবে প্রসঙ্গ তুলে বোঝার চেষ্টা করেছে যে আদৌ পাড়াতে তাকে জড়িয়ে ঘুণাক্ষরে কোনওদিন কোনও চর্চা হয়েছে কিনা! সে বুঝতে পেরেছি তার সন্দেহই সঠিক। এরকম কিছু কেউই বলেননি, বরং অনেকে বলেছে মেয়ের বিয়ে হলে বৌদি একা পড়ে যাবেন, হরিণঘাটা কি এখানে!
আরও পড়ুন:

পর্ব-১৪: আকাশ এখনও মেঘলা

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ

কি ভাগ্যি, স্নিগ্ধার বিয়ের আগেরদিন থেকেই পার্টির জেলা সম্মেলন স্থির হয়েছিল। জুটমিলের নেতা হিসেবে দুলালের কাছে এরকম আমন্ত্রণ প্রায়ই আসে। দুলাল এড়িয়ে যায়! ব্যারাকপুরে সম্মেলন হচ্ছে। এবার দুলাল রাজি হয়ে গেল। লোকাল পার্টি অফিসের সকলেই একটু আশ্চর্য কারণ দুলাল সচরাচর এসব এড়িয়ে চলে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১০: বনবাসী রামের নিরাসক্ত ভাবমূর্তির অন্তরালে, ভাবি রামরাজ্যের স্রষ্টা দক্ষ প্রশাসক রাম

হাসতে হাসতে দুলাল জানায়—
—মাঝেমধ্যে এসব জায়গায় না গেলে পার্টির জেলাস্তরের লোকজন চিনবে কি করে? পরে বিপদে-আপদে সাহায্য চাইতে গেলে তো পাত্তাই দেবে না!
ফেস্টুন লাগিয়ে বাসভাড়া করে যাওয়া হল। স্নিগ্ধার আইবুড়ো ভাতের দিন কাঁধে কিটসব্যাগ নিয়ে দুলাল রওনা দিল। মা বললেন—
—যতীন ঠাকুরপোর মেয়ের বিয়ে, কিছু তো একটা দিতে হয়!
—কিছু মানে কি সোনাদানা।
—না না, সোনার কথা বলেচি নাকি?
—তাহলে?
—ওই একটা রুপোর সিদুঁর কৌটো!
—কত দাম?
—সেতো নানারকম আছে, খুঁজে দেখতে হবে।
—আমি তো থাকবো না। তুমি একা কোথায় গিয়ে খুঁজবে?
—এই দেকো তুই না থাকলে আমি বিয়েবাড়ি যাব কার সঙ্গে?
আরও পড়ুন:

আকাশ এখনও মেঘলা/১৪

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৪: ‘মহেশ্বরের অনন্ত ধৈর্য’

—আশ্চর্য, পাঁচটা বাড়ি পরের গলিতে যাবে এমন কোথায় হিল্লি-দিল্লি!
—তুই যাচ্চিস কোথায়?
—বললাম, না পার্টির জেলা সম্মেলন! ব্যারাকপুর।
—ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিস রাতে ফিরবি না।
—তিনদিনের নেমন্তন্ন।
—তার মানে আমায় একা থাকতে হবে।
—কি মুশকিল, তোমার কি কিছু মনে থাকে না … বললাম না মণি আসছে দু’দিন থাকবে।
—এই দ্যাখো, তার মানে তো জামাই আসবে।
—না! মণি একা আসবে!
—মণি কি যাবে বিয়েবাড়ি?
—কেন যাবে? ও আসছে বলে—‘এই মণি আসিস ভাই’ বললেই সে যাবে কেন? তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তার আলাদা বাড়ি আলাদা সংসার! আর মণি এসেছে কি না তোমার এত আঁটি খুলে শাঁস বলার দরকার কি?
—আমি বলতে যাবো কেন? তোর কথা পাড়লে?
—বলো পার্টির কাজে বাইরে আছে। শোনো আমার দেরি হয়ে যাবে! দেরাজে আলাদা টাকা রাখা আছে! মণির যা খেতে মন চায় আনিয়ে দেবে। কিন্তু সে যেন একটি পয়সা না খরচ করে ও চারটের মধ্যে বাড়ি ঢুকে যাবে। সন্ধেবেলা মণিকে নিয়ে মিত্র জুয়েলার্সে গিয়ে সিঁদুর কৌটা-ফৌটো যা মনে হয় নিয়ে এসো! বিল নিয়ে আসবে আমি ফিরে দাম দিয়ে দেবো! আর ক্লাবের বুবুন বলে একটা ছেলে আছে না? ও আসবে। বাজার-ফাজার যা লাগবে ওকে টাকা দিলে ও এনে দেবে!
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি

সব সামলে বাসের জানলার ধারে বসে। দুলাল একটা মিষ্টি পান মুখে পুরলো। হাতে সিগারেট নিয়েও রেখে দিল, পরে খাবে! হাওয়া আসছে পানের মৌতাতে মনটা বেস ফুরফুরে লাগছে!—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content