
যাঁরা এসবে একেবারেই বিশ্বাস করেন না তাঁরা বলেছিলেন আচমকা পেশিতে খিঁচুনি হতে পারে! হার্টের পেইন হতে পারে। এটা কাকতালীয় ঘটনা। তালগাছে উড়ন্ত কাক এসে বসল পায়ের নখের খোঁচার ধাক্কায় বোঁটা থেকে আলগা হয়ে আসা পাকা তাল এসে ছেলের হাতে খসে পড়ল। গণক গুনে বলেছিলেন ফললাভ হবে, হল! গণকের নামে লোকে ধন্য ধন্য করল!
কিন্তু অনেকেই এটাকে অশরীরীর প্রতিশোধ বলে মনে করতেন! যার ফলে তারপরের আর কোনও অনুষ্ঠানে কেউই স্নিগ্ধাদের বাড়িতে রিহার্সাল করতে যেতে রাজি হত না। তাতে অবশ্য দুলালের দিদি-জামাইবাবুরা খুশি হয়েছিলেন! কিছু লোক আছেন স্কুলে-কলেজে পাড়ায় দুজন নারী-পুরুষকে সম্পর্ককে বেঁধে ফেলে একটা নিষিদ্ধ আনন্দ অনুভব করেন! সেটা অবশ্যই প্রাক মিলিয়েনিয়াম… আশি-নব্বইয়ের দশক! ইঁটের টুকরো বা সবুজ পাতার রসে দুটি নাম লিখে মাঝে একটি যোগ চিহ্ন দিয়ে দিলেই ব্যস! তাদের দুশ্চিন্তায় চুল খাড়া! ছি ছি ছি! বাড়িতে যদি জানতে পারে! কী ভয়ানক কুৎসা!
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-১২: আকাশ এখনও মেঘলা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৩: মা সারদার সঙ্গে সরলাদেবীর কাশীভ্রমণ
আজ তিরিশ-চল্লিশ বছর পরের আধুনিক পৃথিবীতে বসে দূরের আকাশে ম্রিয়মাণ তারার মতো মিটমিট করতে থাকা আশি-নব্বইয়ের দশকের দিকে তাকালে মনে হয় কী ভীষণ সরল, কী ভীষণ নির্মল কী ভীষণ নিষ্কলুষ ছিল সেই দিনগুলো! এখন কুৎসায় কুৎসিত হবার প্রতিযোগিতা চলে কারও স্টেডি পার্টনারকে ভাঙ্গিয়ে আনতে পারলে মোহনবাগানের স্ট্রাইকারকে ইস্টবেঙ্গলে সই করানোর মতো পাশবিক উল্লাস হয়! ছেলে বা মেয়েরা নাকি আজকাল গাড়ির স্টেপনি টায়ারের মতো পার্টনারকেও বেঞ্চ করে, মানে আইটি কোম্পানির কর্মীদের মতো রিজার্ভে রাখে!
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৫: ঝোপ টিকরা

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১০: অন্ধকারে, চুপিসারে
এই মাঝে যোগ চিহ্ন থাকলে সকলেই যে সেকালে অস্বস্তিতে পড়তেন তা নয়। অনেকেই মনে মনে যুক্ত হতে চাইতেন, যেমন স্নিগ্ধা ও স্নিগ্ধার মা দু’জনে ভীষণভাবে দুলালকে তাদের বাড়ির অভিভাবকের জায়গা দিতে চেয়েছিল। একটা বয়সে লোকলজ্জা বা কানাঘুষো কুৎসা কলঙ্ক এসব ধর্তব্যের মধ্যে থাকে না। সমাজ বা সংসারের মতামতকে যুবক বয়সের বেপরোয়া মনোভাব কোনও গুরুত্ব দেয় না। মনে হয়, “আমি আমার কাছে পরিষ্কার! আমি জানি কী ঘটেছে, কতটা সত্যি কতটা বানানো মিথ্যে গুজব”। কিন্তু এটা তখনই সম্ভব যখন দুপক্ষই সমানভাবে দুজনের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু তা যদি না হয় স্নিগ্ধা বা স্নিগ্ধার মা ছন্দার মতো একপক্ষ যদি প্রয়োজনে ব্যবহার করার উপযোগী কুৎসা, কলঙ্ক, অপবাদ পেতে চান তখন সমস্যা হয়!
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৫: রবীন্দ্রনাথ, মণিপুরী নৃত্য ও ত্রিপুরা

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৩: আলাস্কার দক্ষিণে রয়েছে সেই মনোরম গ্লেন হাইওয়ে
এর মধ্যেই ছন্দা এক ছুটির দিন দুলালকে বাড়িতে ডেকে পাঠাল!
— দুলাল স্নিগ্ধাকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি বাবা!
— কেন কী হয়েছে?
— লোকজন এমন ভাঙচি দিচ্ছে, স্নিগ্ধার পর পর কতগুলো বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে গেল!
— কে ভাঙচি দিয়েছে?
— কে আবার পাড়ার লোকজন! আমরা কেউ তো কারুর ভালো দেখতে পারিনা, না?!
দুলাল এই অবস্থায় ঠিক কি বলা উচিত, বুঝতে না পেরে সামনের চায়ের কাপ তুলে নিয়ে একটা লম্বা চুমুক দিল।
— তুই কী বলিস?
— দুলাল স্নিগ্ধাকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি বাবা!
— কেন কী হয়েছে?
— লোকজন এমন ভাঙচি দিচ্ছে, স্নিগ্ধার পর পর কতগুলো বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে গেল!
— কে ভাঙচি দিয়েছে?
— কে আবার পাড়ার লোকজন! আমরা কেউ তো কারুর ভালো দেখতে পারিনা, না?!
দুলাল এই অবস্থায় ঠিক কি বলা উচিত, বুঝতে না পেরে সামনের চায়ের কাপ তুলে নিয়ে একটা লম্বা চুমুক দিল।
— তুই কী বলিস?
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৯: আধুনিক যুগে দাবানলের ফলে বনদহনের সঙ্গে খাণ্ডব বনদহনের সাদৃশ্য আছে কী?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’
দুলাল অবাক হয়ে তাকায়—
— আমি? আমি কী বলবো!
— না মানে এখন আমাদের কী করা উচিত?
— দেখুন কাকিমা বিশেষ কেউ কিছু বলে থাকলে তার সঙ্গে গিয়ে কথা বলা যায়। কিন্তু পাড়ার লোকে সমস্যা করছে বললে তো কাউকে আলাদা করে কিছু বলা যাবে না!
— মা হয়ে এসব কথা তোকে কি করে বলবো বুঝতে পারছি না! আবার না বলেও কোন উপায় নেই!
চায়ের কাপে পরের চুমুকটা না দিয়েই দুলাল থমকে তাকালো—
— আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কাকিমা!
— সমস্যাটা তো তোকে নিয়েই হচ্ছে?
— মানে?
— তোর সঙ্গে জড়িয়ে লোকে স্নিগ্ধাকে অপবাদ দিচ্ছে! আমি আগেই স্নিগ্ধাকে বলেছিলাম বিয়ের বয়েস হচ্ছে এইসব একসঙ্গে রিহার্সাল-টিহার্সাল দিও না লোকে এসব ভালো চোখে নেয় না!—চলবে।
— আমি? আমি কী বলবো!
— না মানে এখন আমাদের কী করা উচিত?
— দেখুন কাকিমা বিশেষ কেউ কিছু বলে থাকলে তার সঙ্গে গিয়ে কথা বলা যায়। কিন্তু পাড়ার লোকে সমস্যা করছে বললে তো কাউকে আলাদা করে কিছু বলা যাবে না!
— মা হয়ে এসব কথা তোকে কি করে বলবো বুঝতে পারছি না! আবার না বলেও কোন উপায় নেই!
চায়ের কাপে পরের চুমুকটা না দিয়েই দুলাল থমকে তাকালো—
— আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কাকিমা!
— সমস্যাটা তো তোকে নিয়েই হচ্ছে?
— মানে?
— তোর সঙ্গে জড়িয়ে লোকে স্নিগ্ধাকে অপবাদ দিচ্ছে! আমি আগেই স্নিগ্ধাকে বলেছিলাম বিয়ের বয়েস হচ্ছে এইসব একসঙ্গে রিহার্সাল-টিহার্সাল দিও না লোকে এসব ভালো চোখে নেয় না!—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।