(বাঁদিকে) উকড়ি বেগুন গাছ। ছবি: লেখক। (মাঝখানে) পাকা মধুফলসহ শাখা। ছবি: সংগৃহীত। (ডান দিকে) নিশিন্দা ফল। ছবি: সংগৃহীত।
উকড়ি বেগুন (Solanum trilobatum)
উকড়ি বেগুন বা বৃহতি গাছের নাকি অনেক ভেষজ গুন আছে, ঠাকুমার মুখে শুনেছিলাম। পরে নানাজনের মুখে এর গুণাগুন শুনেছি। কাউকে কাউকে আমাদের বাঁশবাগান থেকে ওই গাছের মূল তুলে নিয়ে যেতে দেখেছি। যেহেতু আমার ঠাকুরদা প্রাচীন ও প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে কবিরাজি চিকিৎসা করতেন তাই আমাদের বাস্তুজমিতে আরও অনেক ভেষজ উদ্ভিদের সঙ্গে উকড়ি বেগুন গাছ থাকাও খুব স্বাভাবিক।
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—খলসি ও করঞ্জা
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১: প্রাক-কথন
লৌকিক চিকিৎসা
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭১: সাইকেল ও জীবন
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫১: জয়রামবাটির যথার্থ রক্ষয়িত্রী
মধুফল (Salacia chinnensis)
মধুফল গাছটিকে যেমন পুরোপুরি লতাজাতীয় উদ্ভিদ বলা যায় না তেমনই পুরোপুরি গুল্ম বলা যায় না। দু’য়ের মাঝামাঝি উদ্ভিদ। কাণ্ড বেশ কাষ্ঠল হলেও খুব একটা দৃঢ় নয় ফলে আশেপাশে থাকা কোনও অবলম্বনকে ধরে উঠতে হয়। ভালো অবলম্বন পেলে এরা ৩০-৩৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাঢ় সবুজ রঙয়ের ডিম্বাকার পাতাগুলো কাণ্ডের দু’পাশে পেয়ারা বা জাম পাতার মতো বিন্যাসে সজ্জিত থাকে। ছোট ছোট হালকা হলুদ বা হলুদাভ সবুজ রঙের ফুলগুলো পাতার কক্ষে থোকায় থোকায় জন্মায়। ফলে ফলগুলিও জন্মায় থোকায় থোকায়। সাধারণত ডিসেম্বর মাস নাগাদ গাছে ফুল আসে। রসালো ফলগুলি কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে টুকটুকে লাল রঙের হয়।
মধুফল গাছ সুন্দরবন অঞ্চলে জনবসতি এলাকায় কোথাও কোথাও পাওয়া গেলেও অরণ্য অঞ্চলে এখনও যথেষ্ট পাওয়া যায়। নদীর তীরে বা সমুদ্র তীরে অন্যান্য বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদের সাথে থেকে এরা বেড়ে ওঠে। ভারতের পূর্ব উপকূল বরাবর এই গাছটির প্রাধান্য থাকায় এর আরেক বিজ্ঞানসম্মত নাম Johnia coromandeliana.
(বাঁদিকে) উকড়ি বেগুন ফুল। ছবি: সংগৃহীত। (মাঝখানে) মধুফল গাছের ফুল। ছবি: সংগৃহীত। (ডান দিকে) উকড়ি বেগুন ফল। ছবি: সংগৃহীত।
লৌকিক চিকিৎসা
নিশিন্দা (Vitex trifolia)
এতে যতদূর মনে পড়ে সাময়িক নিরাময় হত। যদিও এই সমস্যা দীর্ঘতর হওয়ায় পরে বেশ কিছু দুধে দাঁতকে দন্ত চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে বিসর্জন দিতে হয়েছিল। কখনও কখনও দেখেছি ফোঁড়া হলে ঠাকুরমা ওই গাছেরই পাতা বেটে তা ফোঁড়ার উপর লাগিয়ে দিত। তাই ওই গাছটার সাথে আমার পরিচয় আশৈশব। আমাদের বাস্তুজমি থেকে কিছু দূরে একটা আলের ওপরেও ওই একই গাছের ঝোপ ছিল। এই গাছটিকে সবাই বলত নিশিন্দা গাছ।
তবে এই গাছের পাতা থ্যাঁতলালে বা বাটলে একটা তীব্র গন্ধ পাওয়া যায় যা আমার তো বটেই, অনেকের কাছে খুবই অপছন্দ। এই গন্ধে নাকি মশা-মাছি পালায়। তাই ছোটবেলায় দেখেছি বাড়িতে মশা বা মাছির উপদ্রব বাড়লে নিশিন্দা পাতা বেটে ঘরের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় রেখে দেওয়া হত। এমনকি পোকামাকড় তাড়াতে রান্নাঘরেও নিশিন্দা গাছের পাতাসহ ডাল ঝুলিয়ে রাখা হত।