(বাঁদিকে) সুন্দরী গাছের ফল। (ডান দিকে) সুন্দরী গাছের ফুল। ছবি: সংগৃহীত।
‘আঠারো ভাটির দেশ’-এর ‘সুন্দরবন’ নামকরণের পিছনে অন্যতম কারণ বলা হয় সুন্দরী গাছ। এর কাঠের রং লাল, আর পাতায় মোমের পরিমাণ বেশি থাকায় রোদ পড়লে চকচক করে। গোলাপি রঙের ফুল যখন থোকা থোকা ফোটে তখন তার শোভা অপরূপ। তাই সুন্দরী গাছ দেখতে খুব সুন্দর। বেশিরভাগ মানুষ সুন্দরবন নামকরণের এই মত সমর্থন করেন।
তবে অনেকের মতে, সুন্দরবন হল ‘সমুদ্রবন’ শব্দের অপভ্রংশ। সমুদ্রকে সাধারণ মানুষ বলে সমুন্দুর। এই সমুন্দুর শব্দ থেকে ‘সমুন্দরবন’ এবং তা থেকে ‘সুন্দরবন’ নাম এসেছে। আর এক মত হল, চন্দ্রদ্বীপবন বা চন্দ্রবন থেকে সুন্দরবন নাম হয়েছে। সুন্দরবনের বেশিরভাগ অঞ্চল একসময় চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। কেউ কেউ মনে করেন এই অঞ্চলে অতীতে চণ্ডভণ্ড নামে এক উপজাতির মানুষ বসবাস করত। এই চণ্ডভণ্ড-বসবাসকারী বন থেকে সুন্দরবন নাম এসেছে।
তবে অনেকের মতে, সুন্দরবন হল ‘সমুদ্রবন’ শব্দের অপভ্রংশ। সমুদ্রকে সাধারণ মানুষ বলে সমুন্দুর। এই সমুন্দুর শব্দ থেকে ‘সমুন্দরবন’ এবং তা থেকে ‘সুন্দরবন’ নাম এসেছে। আর এক মত হল, চন্দ্রদ্বীপবন বা চন্দ্রবন থেকে সুন্দরবন নাম হয়েছে। সুন্দরবনের বেশিরভাগ অঞ্চল একসময় চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। কেউ কেউ মনে করেন এই অঞ্চলে অতীতে চণ্ডভণ্ড নামে এক উপজাতির মানুষ বসবাস করত। এই চণ্ডভণ্ড-বসবাসকারী বন থেকে সুন্দরবন নাম এসেছে।
সে যাইহোক, সুন্দরবন সুন্দরী হওয়ার অন্যতম কারণ যে সুন্দরী গাছ, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। এক সময় গোটা সুন্দরবন জুড়ে যে সুন্দরী গাছের প্রাধান্য ছিল, সে তো মাটির নিচে পাওয়া সুন্দরী গাছের অবশেষ দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু বর্তমানে সুন্দরী গাছ ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে নেই বললেই চলে। যেটুকু রয়েছে তা পূর্ব সুন্দরবনে অর্থাৎ বাংলাদেশের দিকে। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াই যে সুন্দরী গাছের অবলুপ্তির প্রধান কারণ এ ব্যাপারে সমস্ত বিশেষজ্ঞই একমত।
পশ্চিম ও মধ্য সুন্দরবন অংশে মিষ্টি জলের প্রবাহ অনেক কমে গিয়েছে। মিষ্টি জলের প্রবাহ কমার সঙ্গে সুন্দরী গাছের অবলুপ্তি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। সুন্দরবন যে টেকটোনিক (Tectonic) পাতের ওপর অবস্থান করছে তা ক্রমশ পূর্ব দিকে হেলে যাচ্ছে। ফলে গঙ্গা ও তার শাখানদীগুলি দ্বারা বাহিত মিষ্টি জলের বেশিরভাগ প্রবাহিত হচ্ছে সুন্দরবনের পূর্ব দিকে। তাই সুন্দরী গাছও সেদিকে সরে গিয়েছে।
পশ্চিম ও মধ্য সুন্দরবন অংশে মিষ্টি জলের প্রবাহ অনেক কমে গিয়েছে। মিষ্টি জলের প্রবাহ কমার সঙ্গে সুন্দরী গাছের অবলুপ্তি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। সুন্দরবন যে টেকটোনিক (Tectonic) পাতের ওপর অবস্থান করছে তা ক্রমশ পূর্ব দিকে হেলে যাচ্ছে। ফলে গঙ্গা ও তার শাখানদীগুলি দ্বারা বাহিত মিষ্টি জলের বেশিরভাগ প্রবাহিত হচ্ছে সুন্দরবনের পূর্ব দিকে। তাই সুন্দরী গাছও সেদিকে সরে গিয়েছে।
(বাঁদিকে) সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল। (ডান দিকে) সুন্দরী গাছের জঙ্গল। ছবি: সংগৃহীত।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১৯৭৭ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে সুন্দরী গাছ কমেছে ৯.৯%। আর ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কমেছে ৬.৯%। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে বহু সুন্দরী গাছ ক্রমশ শুকিয়ে গিয়েছে। এই লক্ষণকে বলে ডাইব্যাক (Die back) রোগ। সুন্দরবনের সবচেয়ে অর্থকরী বৃক্ষ হল সুন্দরী। সুন্দরবনের সমস্ত বাণিজ্যিক বৃক্ষের মধ্যে ৬০% জোগান দেয় এই সুন্দরী গাছ। ১৯৭৭ সালে সুন্দরী গাছ সমগ্র সুন্দরবন অরণ্যের ৩৬.৮% এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে তা কমে হয়েছে ৩৩.৪%।
সুন্দরী হল একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ। সারা বছর সবুজ পাতায় ভরে থাকে। পাতাগুলো ডিম্বাকার। পাতার ওপরের দিক গাঢ় সবুজ আর মোম থাকায় বেশ তৈলাক্ত। কিন্তু পাতার নিচের দিক সামান্য খসখসে আর রূপোলি আভাযুক্ত। বেশি লবণাক্ত অঞ্চলে সুন্দরী গাছের নিচের ও মাঝের পাতার আকার মিষ্টি জলের প্রবাহ সমৃদ্ধ অঞ্চলের সুন্দরী গাছের পাতার তুলনায় ছোট হয়ে গিয়েছে। যদিও উপরের দিকের পাতা তুলনায় লম্বা হয়েছে। বনশ্রী সেনগুপ্ত-এর কণ্ঠে বিখ্যাত গান— “সুন্দরবনে সুন্দরী গাছ / সবচেয়ে সেরা সেই যে গাছ / গাছটি সুন্দরবনে / চারদিকে রোদ্দুর যেন ঝিলমিল ঝিলমিল কাচ / কচি সবুজ পাতার নাচ” আমরা অনেকেই শুনে বড়ো হয়েছি। সুন্দরবন নিয়ে বাংলা আধুনিক গান সম্ভবত এই একটাই।
সুন্দরী হল একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ। সারা বছর সবুজ পাতায় ভরে থাকে। পাতাগুলো ডিম্বাকার। পাতার ওপরের দিক গাঢ় সবুজ আর মোম থাকায় বেশ তৈলাক্ত। কিন্তু পাতার নিচের দিক সামান্য খসখসে আর রূপোলি আভাযুক্ত। বেশি লবণাক্ত অঞ্চলে সুন্দরী গাছের নিচের ও মাঝের পাতার আকার মিষ্টি জলের প্রবাহ সমৃদ্ধ অঞ্চলের সুন্দরী গাছের পাতার তুলনায় ছোট হয়ে গিয়েছে। যদিও উপরের দিকের পাতা তুলনায় লম্বা হয়েছে। বনশ্রী সেনগুপ্ত-এর কণ্ঠে বিখ্যাত গান— “সুন্দরবনে সুন্দরী গাছ / সবচেয়ে সেরা সেই যে গাছ / গাছটি সুন্দরবনে / চারদিকে রোদ্দুর যেন ঝিলমিল ঝিলমিল কাচ / কচি সবুজ পাতার নাচ” আমরা অনেকেই শুনে বড়ো হয়েছি। সুন্দরবন নিয়ে বাংলা আধুনিক গান সম্ভবত এই একটাই।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৩: সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে ম্যানগ্রোভ
এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৬: ত্রিপুরার উন্নয়নে বীরচন্দ্র বহুমুখী কর্মসূচি রূপায়ণ করেছিলেন
রোদের আলো যখন পড়ে তখন সুন্দরীর পাতা ঝিকমিক ঝিকমিক করে। শুধু পাতায় নয়, গাছের কাঠেও রয়েছে সুন্দর রূপ। কাঠের ভেতরের দিকের রং গাঢ় লাল বা বাদামি-লাল আর বাইরের দিকের রং হালকা লাল। সুন্দরীর ফুলও দেখতে সুন্দর। মার্চ-এপ্রিল মাসে থোকা হয়ে ফুল ফোটে। ফুলগুলোর আকার একটু ছোট, প্রায় ৫ মিলিমিটার লম্বা, আর দেখতে ঘণ্টার মতো। এর বাইরের রং হালকা বাদামি বা সোনালি। আর ভেতরের রং গোলাপি। একই গাছে স্ত্রী ফুল আর পুরুষ ফুল আলাদা আলাদা ফোটে। সুন্দরীর ফলও ভারী সুন্দর দেখতে। অনেকটা অর্জুন গাছের ফলের মতো বা কামরাঙার মতো শিরাওয়ালা। ফলগুলো লম্বায় হয় প্রায় ৫ সেন্টিমিটার, আর চওড়ায় ৩.৮ সেন্টিমিটার। জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ফল পাকে। ফল মাটিতে পড়ে অঙ্কুরিত হয়।
(বাঁদিকে) সুন্দরী গাছের অধিমূল। (ডানদিকে) লবনাক্ততার পরিবর্তনের সাথে সুন্দরী গাছের পাতাও ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে । ছবি: সংগৃহীত।
যেহেতু সুন্দরী গাছ নরম মাটিতে জন্মায় তাই যাতে সহজে উপড়ে না যায়। এদের তক্তার মতো এক প্রকার মূল গাছের গোড়া থেকে বিভিন্ন দিকে বেরিয়ে আসে। এই ধরনের মূলকে বলে অধিমূল (Root buttress)। কিছু শাখামূল মাটির উপরে উঠে আসে আর তা থেকে মাঠে গরু-ছাগল বাঁধার খুঁটির মতো বেরিয়ে থাকে শ্বাসমূল। সুন্দরী গাছ বেশ লম্বা হয়, প্রায় ৫০ থেকে ৮০ ফুট। পূর্ণবয়স্ক গাছের গুঁড়িও বেশ মোটা। পরিধি হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুট। সুন্দরী গাছ খাঁড়ির দু’পাশে জোয়ার-ভাটার সীমারেখা বরাবর বেশি জন্মায়। তবে ভেজা-কাদা এলাকাতেও দেখা যায়।
সুন্দরী হল সুন্দরবন অঞ্চলে আগত উদ্ভিদকুলের মধ্যে সর্বশেষ বা চূড়ান্ত প্রজাতির উদ্ভিদ। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ফুল আসে। পাতার বৃন্ত ছোট ও প্রায় এক সেন্টিমিটার লম্বা। সাধারণত শাখার প্রান্তে পাতাগুলো গুচ্ছাকারে জন্মায়। তিন বছর বয়স হলে গাছের শাখামূল থেকে শ্বাসমূল তৈরি হয়। এক একটা শ্বাসমূল প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুন্দরী গাছের যে জাতটি সুন্দরবনে পাওয়া যায়। একমাত্র এদেরই শ্বাসমূল তৈরি হয়। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘হেরিটিয়েরা ফোমিস’ (Heritiera fomes)। এর অন্যান্য যে জাতভাই প্রজাতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রয়েছে তাদের কারও শ্বাসমূল তৈরি হয় না। এদের ফলের মধ্যে একটি মাত্র বীজ থাকে। আর বীজ বেশ শাঁসযুক্ত।
সুন্দরী হল সুন্দরবন অঞ্চলে আগত উদ্ভিদকুলের মধ্যে সর্বশেষ বা চূড়ান্ত প্রজাতির উদ্ভিদ। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ফুল আসে। পাতার বৃন্ত ছোট ও প্রায় এক সেন্টিমিটার লম্বা। সাধারণত শাখার প্রান্তে পাতাগুলো গুচ্ছাকারে জন্মায়। তিন বছর বয়স হলে গাছের শাখামূল থেকে শ্বাসমূল তৈরি হয়। এক একটা শ্বাসমূল প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুন্দরী গাছের যে জাতটি সুন্দরবনে পাওয়া যায়। একমাত্র এদেরই শ্বাসমূল তৈরি হয়। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘হেরিটিয়েরা ফোমিস’ (Heritiera fomes)। এর অন্যান্য যে জাতভাই প্রজাতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রয়েছে তাদের কারও শ্বাসমূল তৈরি হয় না। এদের ফলের মধ্যে একটি মাত্র বীজ থাকে। আর বীজ বেশ শাঁসযুক্ত।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৯: কামিনী রায়, জনৈক বঙ্গমহিলা
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৮: যুগান্তরেও রামচন্দ্র, পুরুষোত্তমরূপে প্রসিদ্ধ কেন?
আগেও বলেছি, আমার গ্রামের বাড়ির পুকুরে ৮-১০ ফুট নিচে রয়েছে কয়েকশো বছরের পুরোনো গাছের গুঁড়ি যা স্থানীয় ভাষায় মুড়ো। এমন গাছের গুঁড়ি সুন্দরবনের বহু জায়গায় মাটি খুঁড়লে আজও পাওয়া যায়। বলাবাহুল্য এগুলি সবই সুন্দরী গাছের গুঁড়ি। কিন্তু কীভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল? এর কারণ, সুন্দরী গাছের কাঠ অত্যন্ত দৃঢ় ও পচনরোধী হওয়ায় প্রাচীনকাল থেকে নৌকো তৈরি করতে এই গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া বাড়ির কাঠামো, আসবাব, ব্রিজ ইত্যাদি তৈরি করতে সুন্দরী গাছের জুড়ি নেই। আর সেই জন্যই কাঠের চোরাকারবারিদের নজর সুন্দরী গাছের দিকে।
লবনাক্ততার ভিত্তিতে সুন্দরবনের তিনটি অঞ্চল। লাল অঞ্চলটি অতি লবনাক্ত ও ভারতের মধ্যে। বেগুনি অঞ্চলটি আধা-লবনাক্ত ও ভারত-বাংলাদেশের সীমানা অঞ্চল। সবুজ অঞ্চলটি মিষ্টি জল প্রভাবিত ও বাংলাদেশের মধ্যে। । ছবি: সংগৃহীত।
সুন্দরী গাছের নানা অংশ প্রাচীনকাল থেকে সুন্দরবনের মানুষ নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করে থাকে। সুন্দরী গাছের বাকল মধুমেহ ও গলগন্ড রোগের চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা ও বীজের নির্যাস ডায়েরিয়া, আমাশয়, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, পেটে গ্যাস ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সুন্দরী গাছের কাঠের গুঁড়ো ব্যবহৃত হয় অর্শ রোগের চিকিৎসায়। আবার বাকল বেটে দাদ, হাজা, ত্বকের রোগ, ফোঁড়া, ব্রণ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করা হয়। সুন্দরী গাছের সরু কাঠি দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা ও মুখের মধ্যে সংক্রমণ নিরাময় হয়। সুন্দরী গাছের বাকলে প্রচুর পরিমাণে procyanidin নামে একপ্রকার flavonoid পাওয়া যায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা রয়েছে বলে প্রমাণিত।
সুন্দরী গাছের পাতা বা বাকল থেকে বিষাক্ত কোনও উপাদান পাওয়া যায়নি, বরং ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান পাওয়া গিয়েছে। সুন্দরবনের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে এই চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে বংশানুক্রমে পরিচিত ছিল। বাকলের নির্যাস বেশ কিছু জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর। এই কারণেই সুন্দরী গাছের কাঠ মাটির নিচে শত শত বছর ধরে অবিকৃত থাকে।
সুন্দরী গাছের কাঠের গুঁড়ো ব্যবহৃত হয় অর্শ রোগের চিকিৎসায়। আবার বাকল বেটে দাদ, হাজা, ত্বকের রোগ, ফোঁড়া, ব্রণ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করা হয়। সুন্দরী গাছের সরু কাঠি দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা ও মুখের মধ্যে সংক্রমণ নিরাময় হয়। সুন্দরী গাছের বাকলে প্রচুর পরিমাণে procyanidin নামে একপ্রকার flavonoid পাওয়া যায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা রয়েছে বলে প্রমাণিত।
সুন্দরী গাছের পাতা বা বাকল থেকে বিষাক্ত কোনও উপাদান পাওয়া যায়নি, বরং ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান পাওয়া গিয়েছে। সুন্দরবনের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে এই চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে বংশানুক্রমে পরিচিত ছিল। বাকলের নির্যাস বেশ কিছু জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর। এই কারণেই সুন্দরী গাছের কাঠ মাটির নিচে শত শত বছর ধরে অবিকৃত থাকে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৬১: মধ্যদিনের রক্তনয়ন
সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ কিন্তু এখন বিলুপ্তির মুখে দাঁড়িয়ে। সুন্দরবনের লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরী গাছের সংকট বেড়েছে। এ তো গেল প্রাকৃতিক সংকট। তবে সুন্দরী গাছের সংকট ত্বরান্বিত করেছে মানুষ। কাঠের চোরাশিকার এবং জঙ্গল সাফ করে মাছের ভেড়ি, ঘর-বাড়ি ও কৃষি জমি তৈরি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ সুন্দরী গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। এখন সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরী গাছের বনসৃজন করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে সময়ের গ্রাসে কি সুন্দরবন থেকে অদূর ভবিষ্যতে চিরতরে হারিয়ে যাবে সুন্দরী গাছ? সময়ই সে-কথা বলবে।—চলবে।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।