ছাগল ক্ষুরির কাণ্ড এবং পাতা রসালো। পত্রফলক যে আংশিক দ্বিখন্ডিত তা আগে বলেছি। প্রতি খণ্ডের আগার দিকটা গোলাকার। পাতাগুলো ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার চওড়া। বেশ মসৃণ ও চকচকে পাতা। ছাগল ক্ষুরির ফুল দেখতে ভারি সুন্দর এবং বেশ বড়। কলমি লতার ফুলের সঙ্গে এই ফুলের খুব মিল দেখা যায়। মাইকের চোঙার মতো দেখতে ফুলগুলোর রং উজ্জ্বল গোলাপি। ফুলগুলি সাধারণত এককভাবে ফোটে। বর্ষাকাল থেকে শীতকাল পর্যন্ত ফুল ফুটতে দেখা যায়। ফল ডিম্বাকার ও মসৃণ। ফলের ভেতর চারটি বীজ থাকে। ছাগল ক্ষুরির বীজ স্রোতে ভেসে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। নোনা জলে দীর্ঘসময় ভেসে থাকলেও বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয় না। ছাগল ক্ষুরি লতার লবণ সহন ক্ষমতাও খুব ভালো। জোয়ারের জল যতদূর পর্যন্ত পৌঁছয় তার উপরের অংশে ছাগল ক্ষুরি লতা জন্মাতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:
ধানি ঘাস হল একবীজপত্রী বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। যদিও এর ভূ-নিম্নস্থ কান্ড মাটির সামান্য নিচে দিয়ে মাটির তলের সাথে সমান্তরাল ভাবে আশেপাশে বিস্তৃত হয়। তারপর ভূনিম্নস্থ কাণ্ডের পর্ব থেকে মাটি ফুঁড়ে পাতা বেরিয়ে আসে। পর্ব থেকে উৎপন্ন অস্থানিক মূল মাটির সাথে উদ্ভিদকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে রাখে। পাতা সরু ও লম্বা এবং পাতার কিনারা বেশ ধারালো। অনেক সময় হাত কেটেও যায়। পাতায় সুক্ষ সুক্ষ রোম থাকে। পাতার বৃন্ত লম্বা ও ঢেউ খেলানো। ধান গাছের মতো ধানি ঘাসেও পুষ্পমঞ্জরী তৈরি হয় কিন্তু তাতে ফুলের সংখ্যা থাকে অনেক কম। ধানি ঘাসের ফল দেখতে অনেকটা ধানের মতো লম্বা ও মাঝামাঝি দাগ যুক্ত। সাধারণত জুলাই থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ধানি ঘাসে ফুল ও ফল দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
যেসব এলাকায় পলি ও কাদা জমে চর জেগে উঠেছে সেখানে এবং যেখানে জোয়ারের জল নিয়মিত পৌঁছায় সেই সব এলাকায় ধানি ঘাস ভালো জন্মায়। ধানি ঘাসের লবণ-সহন ক্ষমতা খুব বেশি হওয়ায় এবং ধানের নিকটাত্মীয় হওয়ায় এই ঘাসের লবণ-সহন জিন ব্যবহার করে অতিরিক্ত লবণ-সহন ধানের প্রজাতি তৈরি করার ব্যাপারে কৃষিবিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।