(বাঁদিকে) গিরাশাকের ঝোপ। (ডান দিকে) ফুল-সহ গিরাশাকের মেরিটিমা প্রজাতি। ছবি: সংগৃহীত।
গিরা শাক (Suaeda maritima / Suaeda nudiflora)
শাকের সঙ্গে আলু, বেগুন ও কুচো চিংড়ি দিয়ে চচ্চড়ি রান্না করেছিল। ভালোই লেগেছিল খেতে। তবে তখনই শুনেছিলাম গিরা শাকের তরকারিতে নুন দিতে হয় না। এমনকি শাক প্রথমে সেদ্ধ করে নেওয়ার পর তা নিংড়ে জল ফেলে দিতে হয়। নইলে তরকারি এত নোনতা হয়ে যায় যে খাওয়া যায় না। সত্যি বলতে কি গরিবের বন্ধু হল এই গিরা শাক। শোনা যায় প্রাক স্বাধীনতা পর্বে যখন মন্বন্তর হয়েছিল তখন সুন্দরবনবাসীকে প্রাণে বাঁচিয়েছিল এই গিরা শাক। পরবর্তীকালেও দারিদ্রপীড়িত সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের অন্যতম সহায় ছিল গিরা শাক।
গিরা শাক হল ম্যানগ্রোভ সহবাসী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। কচি অবস্থায় খাড়া থাকলেও যত বড় হতে থাকে নরম কাণ্ড হওয়ার কারণে এরা লতিয়ে যায়। একটি গাছ যত বড় হতে থাকে প্রচুর শাখা প্রশাখা জন্মায়। ফলে মাটির ওপরে একটি গাছ অনেকটা অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এরা বর্ষজীবী উদ্ভিদ অর্থাৎ প্রতিবছর ফুল ফল হওয়ার পর মারা যায়। এক একটা গাছ ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের পাতা অত্যন্ত রসালো। পাতাগুলো সরু ও লম্বাটে, আগার দিক সামান্য সরু তবে সূচালো নয়। পাতার বোঁটা থাকে না, একেবারেই কাণ্ডের গা থেকে জন্মায়। পাতার গা মসৃণ এবং বেশ শক্তপোক্ত।
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— কেরালি ও নোনা হাতিশুঁড়
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৭: যাজ্ঞসেনী স্বয়ংবরা দ্রৌপদী কি শুধুই প্রতিহিংসার বাতাবরণ বিনির্মাণ করেন?
গিরা শাক এককভাবে বা ধানি ঘাসের সঙ্গে যৌথভাবে জোয়ার ভাটা খেলে এমন বৃক্ষহীন অঞ্চলে, নদী বা খাঁড়ির তীর, চড়া ইত্যাদি অঞ্চলে জন্মায়। আগেই বলেছি গিরা শাক সুন্দরবন অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের সহায়। গিরা শাকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্য হল এই শাক সকালে সংগ্রহ করে খেলে সামান্য টক স্বাদ হয় আর বিকেলে সংগ্রহ করে খেলে অসম্ভব নোনতা স্বাদ হয়। কারণটা হল এরা সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে খাদ্য তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস রাত্রিবেলা সংগ্রহ করে পাতার মধ্যে ম্যালিক অ্যাসিড হিসাবে জমা রাখে। তাই সকালে এই পাতা সংগ্রহ করে রান্না করলে তার স্বাদ হয় টক।