শুক্রবার ৩০ মে, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী।

কুরুক্ষেত্রের সেই সংগ্রাম কি আজও চলছে না? দেশ-দশ যে বিচিত্র কালের প্রবাহে ভেসে চলেছে তাতে মহাসাগরের মহাকল্লোলধ্বনি। বাইরের সেই আক্ষেপ, সংঘাত, সংগ্রাম, ভাঙা-গড়া জীবের অন্তর্লোকেও। আমি কি করব? আমি কী করব? আমি যা করছি তা কি যথার্থ? আমি যা করছি না তাই কি কর্তব্য ছিল? আমি যা পারলাম না তা কি আমাকে বিপন্ন করবে? আমি যা পারি তা কি কেউ গ্রহণ করবে? আমি যা পারি না তাই কি সকলের অভীষ্ট?
আত্মজাগরণে এর উত্তর আসে। গুরু, শিক্ষক কিংবা মার্গদর্শক সেই জাগরণের ক্ষেত্রটিকে প্রস্তুত করেন, তাঁর আনুকূল্য ও বরাভয় উন্মুক্ত করে সেই মহাদ্বার, যে পথে ধীরে ধীরে প্রবিষ্ট হয় সত্যবোধ, চলে যায় অহংবোধ।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সেই আত্মজ্ঞান-নিজেকে জানা ও চেনা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মজাগরণ, আত্মপ্রতিষ্ঠা, আত্ম-উন্মোচনের কথাই বলেছে। ওই পদমূলে উপবিষ্ট বীর অর্জুনের জন্য কেবল নয়, যিনিই জীবনপথে ক্লিষ্ট অথবা ক্লান্ত তাঁর জন্যই এই আত্মসমীক্ষা।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৭: আলাস্কায় এমন অপরূপ দৃশ্যও দেখা যায়, যেখানে পাহাড়-সমুদ্র-হিমবাহ একসঙ্গে বিরাজমান

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৭: একাকিত্বের অন্ধকূপ/২: অন্ধকারের উৎস হতে

লক্ষ্য করতে হবে, কুরুক্ষেত্র সংগ্রামের ভূমি, সভ্যতার আদিকাল থেকেই দ্বন্দ্বজর্জর শোণিত পিচ্ছিল পথেই মানুষের পার্থিব অস্তিত্ব এগিয়ে চলেছে। জীবের জাগতিক অস্তিত্ব, প্রাণের প্রকাশে, বিকাশে, যোগ্যতমের উদ্বর্তনের বাঁকে বাঁকে এক একটি সংগ্রাম দেখা দেয় বিশ্বের রঙ্গলোকে। মানুষের ইতিহাস যে যৌগিক তত্ত্বের অভিমুখে জগত্ ও জীবনকে যেভাবে দেখেছে, সেখানে শুভ-অশুভ, সাদা-কালো, দিন-রাত, কর্ম-অকর্ম, জয়-পরাজয়, এক-বহু-র বিভিন্নতা। জাগতিক সম্পর্কের দ্বিমুখী প্রেক্ষাপট কালে কালে বহুরূপে পরিবর্তিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৮: মা সারদার জন্মতিথিতে তাঁর অপূর্ব অমানবীয় রূপ ফুটে উঠল

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০০: নীল কটকটিয়া

জীবন ও আস্তিক্যবাদী দর্শনের নানা চলাচলে ক্রমে যে যে তাত্ত্বিক পরিসর প্রস্তুত হয়েছে তার মধ্যে আত্মতত্ত্ব ও জন্মান্তর বিশেষ স্থান পেয়েছে। জীবাত্মা ও পরমাত্মার ভেদ ও অভেদতত্ত্বের পাশাপাশি জীবের জাগতিক লক্ষ্য, লক্ষ্যচ্যুতি ও উত্তরণের আকাঙ্ক্ষাকে দর্শন যুগে যুগে যেভাবে দেখতে ও দেখাতে চেয়েছে সেই বিস্তৃত যাত্রাপথের এক ক্রান্তিকালে গীতার অবস্থান।

জীবনের দুঃখ ও দুর্বহ বেদনা সত্য নাকি মৃত্যুঞ্জয়ী আনন্দ সত্য এই প্রতর্কের আবহে গীতা কর্ম তথা নিষ্কাম কর্মের তথা আত্মনিয়ন্ত্রণের পাঠ দিয়েছে। উপলব্ধি করিয়েছে অসঙ্গ এক ও অদ্বিতীয় মানবাত্মার একক যাত্রার পথকে। তার এই চলার পথে সকল অসহায়তার কাঁটা ফুল হয়ে তাকে পূর্ণ করে। একাকী সত্তা তখন একক, বিশিষ্ট ও পূর্ণ হয়।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৬: শান্তিনিকেতনে কবির প্রথম জন্মোৎসব

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৪: জীবনের নশ্বরতা ও আত্মানুসন্ধান বিষয়ে রামের উপলব্ধি যেন এক চিরন্তন সত্যের উন্মোচন

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এখানেই এক বিশিষ্টরূপ পায়। সাহিত্য কিংবা শাস্ত্র শাশ্বত হয় তখনই যখন তা জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। পৃথিবীর এক ভূভাগে কোনও এক খণ্ডিত কালপরিসরের কোনও এক যুদ্ধকে গীতা পার্থিব থেকে আত্মস্থ করেছে, আত্মানুসন্ধানের পথে রহস্যঘন তত্ত্বসমাবেশের পারে জীবনের যে অনির্বাণ শিখা জ্বলে তার উষ্ণতাটুকুর কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েই হয়তো গীতার এই মহা আয়োজন। সেখানে রাজনীতি-কূটনীতির যোগ-কৌশল আছে, সূচ্যগ্র ভূমি বুঝে নেওয়ার স্বার্থের ভিত্তিভূমি আছে, তাকে কেন্দ্র করে প্রাণঘাতী যুদ্ধ আছে।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২২: সন্ন্যাস

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৫: গেমপ্ল্যান

গীতা সেই সমষ্টির দ্বন্দ্বকে ব্যক্তির হৃদয়ের মর্মমূলের বিজনলোকেও পৌঁছে দিয়েছে, সেখান থেকেই আরম্ভ করে সেই সংঘাতকে পৌঁছে দিয়েছে কুরুভূমির আগামী রক্তস্নাত প্রভাতে। তারপর অতিক্রম করেছে জগত্, জীবনকে, সেই ব্যক্তি “অহং”কে ব্যাপ্ত করেছে জীবন ও মৃত্যুর সীমানা মুছে, তাকে অতিক্রম করে এক অখণ্ড চরাচরে, সত্যদর্শনে। যে সত্য অপ্রতিহত, অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। তাকে এড়িয়ে নয়, তাকে গ্রহণ করেই মহামানবের জয়গাথার মহাসঙ্গীত বেজে উঠেছিল সেদিন।—চলবে।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content