শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


মা সারদা।

শ্রীমা একদিন বেলা প্রায় চারটের সময় অনেক মহিলা ভক্তের সঙ্গে বসেছিলেন। তাদের মধ্যে শ্রীম’র স্ত্রী, ডাক্তার দুর্গাপদবাবুর স্ত্রী, গৌরীমা ও তাঁর পালিতা কন্যা, ‘দুর্গাদিদি’ বলে যাকে সরযূদেবী ডাকে আর বরেনবাবুর পিসি ছিলেন। শ্রীমা হাসিমুখে সকলের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি সরযূদেবীকে দেখে বসতে বললেন। সরযূদেবী গৌরীমাকে দিয়ে নিচে অফিস থেকে ‘নিবেদিতা’ ও ‘ভারতে বিবেকানন্দ’ বইদুটি আনালেন। তাঁর ইচ্ছা শ্রীমা ‘নিবেদিতা’ বই থেকে কিছু শোনেন।
মা সারদাও বই দেখে বলছেন ‘ওখানি কি বই গা?’ সরযূদেবী বললেন, ‘নিবেদিতা’। শ্রীমা বললেন, ‘পড় তো মা, একটু শুনি’। যদিও সরযূদেবীর অত লোকের মাঝে পড়তে লজ্জা করছিল, তবুও নিবেদিতাকে নিয়ে সরলাবালা কেমন সুন্দর লিখেছেন,তা শ্রীমাকে শোনানোর আগ্রহে আর শ্রীমার আদেশে পড়তে লাগলেন। তিনি নিজেও এই বই একখানা পেয়েছিলেন। কিন্তু পড়ে উঠতে পারেননি এখনও। মা সারদা ও তাঁর ভক্তরা আগ্রহের সঙ্গে শুনতে লাগলেন। নিবেদিতার ভক্তির প্রসঙ্গ আসতেই সকলের চোখ সজল হয়ে উঠল। শ্রীমার চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। তিনি বললেন, ‘আহা, নিবেদিতার কি ভক্তিই ছিল, আমার জন্যে কি করবে ভেবে পেত না। রাতে যখন আমায় দেখতে আসত, আমার চোখে আলো লেগে কষ্ট হবে বলে একখানি কাগজ দিয়ে ঘরের আলোটি আড়াল করে দিত। প্রণাম করে নিজের রুমাল দিয়ে কত সন্তর্পণে আমার পায়ের ধুলো নিত। দেখতুম, যেন পায়ে হাত দিয়েও সঙ্কুচিত হচ্ছে’।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৪: মা সারদার বালিগঞ্জের বাসায় আগমন

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭১: ধর্মকার্যের জন্য টাকা জোগাড় করা আর সাদা কাপড়ে ময়লা লাগিয়ে ধোয়া, দুই-ই সমান

এই স্মৃতিচারণ করেই তিনি নিবেদিতার কথা ভেবে স্থির হয়ে গেলেন। তখন সেখানে যারা ছিল সকলেই নিবেদিতার প্রসঙ্গে যা জানত, বলতে লাগল। দুর্গাদিদি বলেন, ‘ভারতের দুর্ভাগ্য যে তিনি এত অল্পদিনে চলে গেলেন’। অন্য একজন বললেন, ‘তিনি যেন ভারতেরই ছিলেন, নিজেও তাই বলতেন। সরস্বতীপুজোর দিন খালি পায়ে হোমের ফোঁটা কপালে দিয়ে বেড়াতেন’। বইপড়া শেষ হল। তখনও মা সারদা মাঝে মাঝে নিবেদিতার জন্য আক্ষেপ করতে লাগলেন। শেষে তিনি বললেন, ‘যে হয় সুপ্রাণী, তার জন্য কাঁদে মহাপ্রাণী অর্থাৎ অন্তরাত্মা, জান মা’।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০২: অন্ধকারে কে?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১১: মৃণালিনীর মৃত্যুর পর বিবাহ-প্রস্তাবের মুখোমুখি রবীন্দ্রনাথ

এ বার শ্রীমা কাপড় কেচে এসে ঠাকুরের জন্য বৈকালী ভোগ দিতে বসলেন। এরমধ্যে কোনও সময়ে নিজের হাতে অনেকগুলো ফুলের মালা গেঁথে বিকেলে ভোগারতির সময় পরাবেন বলে ঠাকুরের সামনে রেখেছিলেন। ব্রহ্মচারি রাসবিহারী ওগুলোর কাছেই ভোগের জন্য রসগোল্লা এনে রেখে গেছেন। তার রস গড়িয়ে ফুলের মালাতে লেগে ডেয়ো পিঁপড়ে ধরেছে। তাই দেখে শ্রীমা হাসতে হাসতে বলছেন, ‘এইবার ঠাকুরকে পিঁপড়েয় কামড়াবে গো, ও রাসবিহারী, এ কি করেছ?’ বলে তিনি যত্নের সঙ্গে পিঁপড়ে ছাড়িয়ে ঠাকুরকে মালা পরিয়ে দিলেন। তিনি এমন সকলের সামনে নিজের স্বামীকে মালা পরিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছেন দেখে রাধুর মা মুখ টিপে হাসতে লাগল। তারপর শ্রীমা সেখানে যারা ছিলেন সকলকে প্রসাদ দিতে গৌরীমাকে বললেন। সকলে প্রসাদ পেল।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৭: সুন্দরবনের পাখি — ফিঙে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৬: জীবন নিয়ে কৌতুক আর ‘যৌতুক’

সরযূদেবী বলেছেন যে, শ্রীমার কাছে বলার জন্য কত লোকের কত গোপন কথা থাকতে পারে তা তিনি প্রথমে ধরতে পারেননি। তাই তাঁর কাছে এসে দেখতে না পেলে সারা বাড়ি খুঁজে তিনি যেখানে আছেন, সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতেন। একদিন বিকেলে বেশ সুন্দর দেখতে দুটি বউ শ্রীমাকে তাঁর ঘরের উত্তরের বারাণ্ডায় নিয়ে গিয়ে গোপনে কিছু বলছে, এমন সময় সরযূদেবী শ্রীমাকে দেখতে সেখানে এসে হাছির হল। সে শুনতে পেল যে শ্রীমা তাদের বলছেন, ‘ঠাকুরের কাছে মনের কথা জানিয়ে প্রার্থনা করবে। প্রাণের ব্যথা কেঁদে বলবে, দেখবে তিনি একেবারে কোলে বসিয়ে দেবেন’।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৪: ‘…জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’, লরেন্স ও ফ্রিডা/২

সরযূদেবী শুনেই বুঝতে পারল যে বৌদুটি শ্রীমার কাছে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তারা সরযূকে হঠাৎ সেখানে দেখে লজ্জা পেল। আর তার থেকেও বেশি সেদিন এভাবে প্রবেশ করায় সরযূ লজ্জাবোধ করল। সে মনে মনে ঠিক করল যে, আর কখনও সাড়া না দিয়ে শ্রীমাকে অমন করে দেখতে যাবে না। সেই বৌদুটির সঙ্গে পরে আবার সরযূদেফীর দেখা হয় এবং তাদের দেখেই সে বোঝে তারা দুজনই সন্তানসম্ভবা হয়েছেন।—চলবে।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content