
ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড ও মিডলটন মারে।
বৈপরীত্যে ভরা ক্যাথেরিনের জীবন ও মানসিকতা। হাক্সলি বলেছেন, ক্যাথেরিন এক অসুখী মেয়ে, জীবনে নানা ভূমিকায় তাকে দেখা গিয়েছে কিন্তু কোনটি আসল ক্যাথেরিন সেটি বোধ হয় তিনি নিজে ও জানতেন না। ক্যাথেরিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিখেছেন, তার লেখার চেয়ে ও চমকদার তার জীবন। নিজের সৃষ্টি কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ও জীবনটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তার সমসাময়িক অনেক সাহিত্যিকই নানা বিরূপ মন্তব্য করেছেন মানুষ ক্যাথেরিন সম্মন্ধে…তার রাগ, ঈর্ষা, খর জিহ্বা, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি নিয়ে। Katherine had a tongue like a knife…(Dorothy Brett)
নিউজিল্যান্ডের এক পুঁজিপতির মেয়ে ক্যাথরিন। বাবা শুধু সম্পত্তি বাড়ানোর পিছনে ছুটেছেন সারাজীবন। ক্যাথেরিনের মতে তার বাবা “the richest man in New zealand and the meanest”. বাবার ভালোবাসার অভাব ছোট থেকে তাকে নিঃস্ব করেছে। শুধু ভালোবাসা নয়, আর্থিক কোনও সহায়তাও জোটেনি অতি দুর্দিনে। যক্ষা রোগে ক্যাথেরিনের অকাল মৃত্যুর পরই তার বাবা ৬০০০ পাউন্ড দান করেন এক ছবির সংগ্ৰহশালাকে। অথচ তার পাঁচভাগের একভাগ ও জোটেনি তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য।
স্কুল জীবন থেকেই সমকামী মানসিকতার জন্য তিনি প্রথম আকৃষ্ট হন এক মাওরি কন্যার প্রতি। পরবর্তীতে তার জীবনে এলেন ইডা বেকার। ইডার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার ও করেছেন অনেকবার। ইডার স্বল্প বুদ্ধি এবং ঔদরিকতাতে বিরক্ত বোধ করতেন ক্যাথেরিন। ইডা ধৈর্যের ও সহানুভূতির সঙ্গে তাকে সহ্য করতেন। ভালোবাসতেন ক্যাথেরিনকে। ক্যাথেরিন রাগ করলেও ইডার থেকে আলাদা হতে পারতেন না কারণ শৈশব থেকে তিনি ভালোবাসার কাঙাল।
স্কুল জীবন থেকেই সমকামী মানসিকতার জন্য তিনি প্রথম আকৃষ্ট হন এক মাওরি কন্যার প্রতি। পরবর্তীতে তার জীবনে এলেন ইডা বেকার। ইডার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার ও করেছেন অনেকবার। ইডার স্বল্প বুদ্ধি এবং ঔদরিকতাতে বিরক্ত বোধ করতেন ক্যাথেরিন। ইডা ধৈর্যের ও সহানুভূতির সঙ্গে তাকে সহ্য করতেন। ভালোবাসতেন ক্যাথেরিনকে। ক্যাথেরিন রাগ করলেও ইডার থেকে আলাদা হতে পারতেন না কারণ শৈশব থেকে তিনি ভালোবাসার কাঙাল।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২

অভিজ্ঞান-শকুন্তলের নাট্যকার কালিদাস/১
নিউজিল্যান্ডে থাকাকালীনই তিনি দুরন্ত প্রেমের আবেগে ঘনিষ্ঠ হন গারনেট ট্রাওয়েলের সঙ্গে। কিছুদিন বাদে প্রত্যাখ্যাতও হন। কিন্তু ইতিমধ্যে তিনি অন্তঃসত্বা। দুঃখে আতঙ্কে দিশেহারা ক্যাথেরিন সম্পূর্ণ কালো পোশাকে সাজলেন হঠাৎ। তাপর দুম করে বিয়ে করে বসলেন দশ বছরের বড় জর্জ বাউডেনকে। গল্পের মত এক অদ্ভুত বিয়ে। একদিনের বিয়ে। পরদিন সকালেই বাউডেনকে ছেড়ে চলে গেলেন। লন্ডনে গিয়ে এক ভ্রাম্যমান অপেরা তে যোগ দিলেন। ইতিমধ্যে ক্যাথেরিনের মা এ সব জানতে পেরে এবং মেয়ের চরিত্রের অপবাদের ভয়ে ছুটে এলেন লন্ডন। মেয়েকে দূরে জার্মানির এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে গর্ভের অবাঞ্ছিত শিশুর মৃত্যু হয়। ক্যাথেরিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেন। নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ

দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম
ক্যাথেরিন যে নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন এমনটি নয়। নিজেকে একা মনে করতেন, যাকে পারিপার্শ্বিক এর সাথে নিরন্তর এক লড়াইয়ে সামিল হতে হয়। মিডলটন মারের সঙ্গে প্রথম দেখা ১৯১২ সালে। ক্যাথেরিনের থেকে লেখা চেয়েছিলেন তার পত্রিকার জন্য। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাথেরিন তার প্রেমে পড়লেন, একসঙ্গে থাকতে লাগলেন। পুরোটাই নিজের উদ্যোগে। ক্যাথেরিন জিজ্ঞাসা করলেন, “why don’t you make me your mistress? “he primly replied, ” I feel it would spoil everything.”
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৩৮: পুত্র বীরেন্দ্রর বিয়েতে রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানান মহারাজ রাধাকিশোর

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
মারের তরফে খুব একটা উৎসাহ ছিল না। সর্বোপরি তাদের কারও তেমন আয় ছিল না। মারে ক্যাথেরিনের আবেগের অত্যাচার থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, নিজের ব্যক্তিত্বকে সরিয়ে রাখার এক নিরলস চেষ্টা চালাতেন। ফলে ক্যাথেরিনের শারীরিক অসুস্থতা, প্রয়োজন, কিছুই তাকে বিচলিত করতে পারতো না। বিয়ের পর প্রথম দু’ বছর প্রায় দশ বারো বার ঠিকানা বদল হয়েছে তাদের। সম্পাদনার কাজ করে সামান্য আয় ছিল মারের। আর ক্যাথেরিনের প্রায় কোনও আয় ছিল না। এরপর মারের সম্পাদকের আয়টিও যখন বন্ধ হল, অনেক টাকা ধার হয়ে গেল, সংসার অচল হয়ে উঠল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন
ক্যাথেরিনের প্রতি মারের ঔদাসীন্য চরমে পৌঁছল। সব খরচের চুলচেরা হিসেব ও ভাগ চাইতেন মারে। ক্যাথেরিনের বন্ধুকে লেখা চিঠি থেকে জানা যায়, তার হাসপাতাল যাওয়া আসার গাড়ি ভাড়ার ও দু’ ভাগ এর একভাগ মারে চেয়েছেন তার থেকে। ক্যাথেরিন ভয়ানক অসুস্থ, দশ পাউন্ড চাইলেন মারের কাছে। মারে সে দশ পাউন্ড তাকে ধার হিসেবে দিতে রাজি হলেন। খুব রেগে গিয়ে ক্যাথেরিন লিখলেন, “I would perfectly understand your money is tight had I not consumption, a weak heart, and chronic neuritis in my lower limbs.”
* ড. দুর্গা ঘোষাল (Durga Ghoshal), প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, গভর্নমেন্ট কলেজ।