বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


অনুষ্ঠানে মগ্ন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ছবি: সংগৃহীত।

ছোটবেলা থেকেই স্মৃতিশক্তি এত প্রখর ছিল যে মাত্র আট বছর বয়সে চণ্ডীপাঠ করে তিনি সকলকে চমকে দিয়েছিলেন। তাঁর চণ্ডীপাঠ, ভাষ্যপাঠ আজও বাঙালি জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তাঁকে ছাড়া আমাদের দুর্গোৎসবের শুভ সূচনা হয় না। তিনি আর কেউ নন, তিনি প্রবাদপ্রতিম ‘বেতারপুরুষ’ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। উত্তর কলকাতার মানুষ তিনি ১৯০৫ সালে ৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। বাড়ির পরিবেশ ছিল ছোটবেলা থেকেই অন্যরকম, পেশাগতভাবে আইন-আদালতের সঙ্গে যুক্ত হলেও তাঁর বাবা রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন আদ্যন্ত সরস্বতীর সাধক। বহুভাষাবিদ বলতে যা বোঝায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাবা ছিলেন তাই। প্রায় ১৪টি ভাষা জানতেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের জগতেও পরিচিত হয়ে ওঠেন এই মানুষটি। তিনি সেই সময়ের বিশিষ্ট আইনজীবী কালীচরণ ঘোষের দ্বিতীয় সন্তান সরলাবালা দেবীকে বিবাহ করেন। তাঁদের কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ।

কেবল বাবা নয়, তাঁর ঠাকুমা যোগমায়া দেবী ছিলেন প্রকৃত অর্থে বিদুষী। একসময় পাঞ্জাবের নাভা স্টেটের মহারানির প্রাইভেট টিউটর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তাঁর ঠাকুমা। সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা সেই মানুষটি ইংরেজি ও সংস্কৃতে সমান পারদর্শী ছিলেন। তাঁর কাছেই খুব ছোট বয়সে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের প্রাথমিক সংস্কৃতশিক্ষা শুরু। ঠাকুমাই গিরিশচন্দ্র ও শেক্সপিয়ারের নাটকগুলো পড়ে পড়ে শোনাতেন ছোট্ট বীরেন্দ্রকে। সেই থেকে শুরু, কিশোর অবস্থায় পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ছিল গান-বাজনা ও অভিনয়। সেই সূত্রে কম্বুলিয়াটোলার ‘চিত্রাসংসদ’ ও সাহিত্যসাধক নলিনীরঞ্জন পণ্ডিত প্রতিষ্ঠিত ‘অর্ধেন্দু নাট্যপাঠাগার’-এ নিয়মিত গান-বাজনা ও অভিনয়চর্চার জন্য যেতেন। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর তিনি ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯২৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হন।
ছোটবেলা থেকেই স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল, খুব ভালো আবৃত্তি করতে পারতেন। একবার বীরেন্দ্রর প্রাথমিকের শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ দে এক আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় তাঁর নাম লিখিয়ে দেন। ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ ছিল আবৃত্তির বিষয়। এইসময় স্যার মাঝে মাঝেই তাগাদা দিতেন, মুখস্থ কতদূর হয়েছে জানার জন্য আর তিনি ‘আজ করছি, কাল করছি’ বলে কাটিয়ে দিতেন। প্রতিযোগিতার তিন চারদিন আগে তাঁর হুঁশ ফেরে।আত্মবিশ্বাস বরাবরই বেশি তাই পুরোটা শিখেও ফেলেন নির্দিষ্ট দিনের আগেই। প্রতিযোগিতায় দু’চার পৃষ্ঠা বলার পরেই থামতে হয় বীরেন্দ্রকে। তাঁর উচ্চারণ ও মুখস্থ বলার পারদর্শিতা দেখে সেই প্রতিযোগিতায় তাঁকে প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয়।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯২৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের সদর দফতরে যোগদানের মধ্য দিয়ে। চাকরি করলেও তার মন পড়ে থাকত এক নম্বর গার্স্টিন প্লেসের বেতার কেন্দ্রে কারণ সেখানে তাঁর বন্ধুরা কাজ করতেন। মাঝে মাঝেই বিকেলে ছুটির পরে চলে যেতেন রেডিওর বন্ধুদের আড্ডায়। এমন বিখ্যাত সম্প্রচারক কিন্তু তাঁর ভাঙা-ভাঙা ‘হাস্কি’ ভয়েসের জন্য প্রথমবার রেডিওর অডিশনে ব্যর্থ হন। ছোটবেলায় একবার ডিপথেরিয়া হয়ে তাঁর কণ্ঠস্বর অদ্ভুত হয়ে যায়। অথচ ভাগ্যক্রমে এই অদ্ভুত গলার জন্য আবার তাঁর খোঁজ পড়ে। কারণ প্রযোজকের সেবার এক বেতার নাটকে রাক্ষসের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অভিনেতা প্রয়োজন। সেই সুযোগে বীরেন্দ্র ভদ্র রাক্ষসের কণ্ঠস্বর হয়ে বেতার কেন্দ্রে ঢুকে গেলেন। বহু পরে সেই বেতারেই দু’বার তিনি ভূতের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৩০: বাংলাতে রাজাদের চিঠিপত্র

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— রামবাণ ও পানি তাঙ্কি

তখন তিনি রেডিয়োর হর্তাকর্তা, তাঁর পরিকল্পনায় ‘পঞ্চভূতের আসর’ খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। অভিনব সেই আড্ডায় প্রথম ভূত ছিলেন ‘দাদাঠাকুর’ শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। তিনি হলেন ‘পণ্ডিতভূত’। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রভূত, কৌতুক গানের শিল্পী সারদা গুপ্ত হলেন গুপ্তভূত আর একজন জনপ্রিয় গায়ক হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন বিপ্রভূত এবং নানা বিষয়ে দক্ষ কৃতিমানুষ নলিনীকান্ত সরকার হলেন অদ্ভুত। এই পাঁচজন খোনা খোনা কন্ঠস্বরে হাসির কথা বলে যেতেন, পুরোটাই ছিল তাৎক্ষণিক। ওদিকে রাক্ষসের ভূমিকায় অভিনয়ের পরেই সেই ১৯২৮ সালে যখন আকাশবাণীর ডিরেক্টর ছিলেন নৃপেন মজুমদার, তাঁর অনুরোধে বীরেন্দ্র ভদ্র রেডিওতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। প্রথমবারেই তাঁর পরিচালিত নাটকে অভিনয় করলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য, পঙ্কজকুমার মল্লিক ও পশুপতি চট্টোপাধ্যায়। সেই বছরের ২৬ আগস্ট বেতারে সম্প্রচারিত হল পরশুরাম রচিত ‘চিকিৎসা সংকট’।

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে যোগ দেওয়ার তিন বছরের মধ্যে ১৯৩১ সালে তিনি, বাণীকুমার ভট্টাচার্য, রায়চাঁদ বড়াল, পঙ্কজকুমার মল্লিক এবং আরও অনেক গুণী মানুষের প্রচেষ্টা স্বরূপ কালজয়ী সৃষ্টি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ হয়ে ওঠে বাঙালি জীবনের অঙ্গ। পুরো দলটিকে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন অধ্যাপক অশোকনাথ শাস্ত্রী বেদান্ততীর্থ মহাশয়। এই অনুষ্ঠান প্রথম সম্প্রচারের প্রায় ৯০ বছর অতিক্রান্ত হলেও এর আবেদন আজও অমলিন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

সেই অনুষ্ঠানের এমনই প্রভাব ছিল যে ঘরে ঘরে রেডিওতে যেন প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই সময় জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বিরোধিতা ধেয়ে আসে কায়স্থ বংশের ছেলের চণ্ডীপাঠ নিয়ে। কিন্তু পঙ্কজকুমার মল্লিকের প্রবল প্রতিরোধের সামনে সমস্ত বিরোধিতা ম্লান হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মহিষাসুরমর্দিনী থেকে সরে গেলেও বীরেন থাকবে’। সম্প্রীতির এই মাতৃবন্দনায় সঙ্গত করেছিলেন খুশী মোহাম্মদ, আলী, মুন্সী প্রমুখ। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে মহানায়ক উত্তমকুমারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’ ম্লান হয়েছিল বীরেন্দ্রর সুশিক্ষা ও অধ্যবসায়ের সামনে। সাধারণ মানুষ গ্রহণ না করলেও স্বভাবসিদ্ধ উদারতায় তিনি সেই অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ভালোই তো হয়েছে’।

বেতারের ক্ষেত্রে নিজে যদি কিছু আয়ত্ত করতেন তাহলে সকলকে তা শিখিয়ে দিতে চাইতেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯৩১ সালের ৮ মে বেতারে অভিনীত হয়েছিল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সাজাহান’ নাটকটি, বীরেন্দ্র ছিলেন ঔরঙ্গজেবের ভূমিকায়। এছাড়া রেডিওতে তাঁর হাতেই তৈরি হয়েছিল ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘প্রলয়’, প্রফুল্লর মত নাটক। মাত্র একদিনে ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’ নামে একটি নাটক তিনি লিখেছিলেন। আর যেদিন সন্ধ্যায় নাটকটি অভিনীত হবে সেদিন চার-পাঁচটি গান লিখে, নিজে সুর দিয়ে কুশীলবদের শিখিয়েও দিয়েছিলেন।

উত্তম কুমার। ছবি: সংগৃহীত।

১৯৩৭ সালে পেশাদার রঙ্গমঞ্চে পরিচালক হিসাবে তিনি কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রথম পরিচালিত নাটক ‘অভিষেক’ রঙমহলে মঞ্চস্থ হয়। এরপর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি নাটক ‘ডিটেকটিভ’ এবং ‘বন্ধু’ তিনি পরিচালনা করেন রঙমহলে। এছাড়া বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ এবং ১৯৫২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘সুবর্ণ গোলক’ গল্পটির নাট্যরূপ দেন। তাঁর পরিচালনায় নাটকে অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস, কমল মিত্র, তুলসী চক্রবর্তী, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, নবদ্বীপ হালদার, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বহু বিশিষ্ট শিল্পী। কমবেশি পঁয়তাল্লিশটি গ্রামাফোন রেকর্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।

রেডিওর জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত। বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে আর্টিস্ট উপস্থিত হতে না পারলে তিনি অনেক সময় পিয়ানো বাজিয়ে, রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করতেন। আত্মস্থ হওয়া বিষয়কে শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তাঁর সম্প্রচার ও ধারাভাষ্য বিবরণী বেতার ইতিহাসে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছে। সাতটি ছদ্মনামে তিনি রেডিওতে প্রচুর অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তার মধ্যে ‘মেঘদূত’ এই ছদ্মনামে তিনি মহিলাদের জন্য ‘মহিলা মজলিস’ আরম্ভ করেন। মহিলাদের মধ্যে এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

মুভি রিভিউ: মামুটির মাল্টিস্টারার ছবি ‘সিবিআই ৫: দ্য ব্রেন’ গতানুগতিক থ্রিলার

আবার ‘শ্রী বিষ্ণুশর্মা’ নাম নিয়ে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছদ্মনাম ছিল বিরূপাক্ষ। এই ছদ্মনামে তিনি পঞ্চাশের দশকে রবিবারের দুপুরগুলোতে ‘রূপ ও অঙ্গ’ অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হতেন। এই অনুষ্ঠানটির পর্বগুলোতে দমফাটা হাসানোর পর শ্রোতাদের শেষ পর্যন্ত প্রাত্যহিক জীবনের নানা অসংগতির সম্মুখীন করানো হতো। অনুষ্ঠানটি এতই জনপ্রিয় ছিল যে, বিহার সাহিত্যভবন সহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা বিরূপাক্ষ সিরিজের বই একটার পর একটা প্রকাশ করে। তাঁর এই কৃতি সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে তুমি একটা নতুন স্টাইল সৃষ্টি করে গেলে’।

তাঁর ভাষ্যপাঠ, ধারাবিবরণী, চণ্ডীপাঠ শুনে মনে হতেই পারে যে, না জানি কত গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন! কিন্তু একেবারেই তা নয়, সহকর্মী, পরিচিত মানুষের, সকলের শ্রদ্ধার বীরেন দা, অদ্ভুত সরসতায় রেডিও অফিস ভরিয়ে রাখতেন। তাঁর ‘সবিনয় নিবেদন’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাঁর কাছের মানুষ অভিনেতা বিকাশ রায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘শ্যামবাজারের রকের আড্ডায় বীরেন দা আসর জমিয়ে বসেছেন আর আমরা শ্রোতারা ওঁকে ঘিরে আছি।’ এমনই ছিল সেই বেতারপুরুষের উপস্থাপন ভঙ্গি। শ্রোতারা মগ্ন হতেন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

এত কিছুর পাশাপাশি চলতো তাঁর নিজস্ব পড়াশোনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়াশোনা, লেখালেখি করতে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থগুলোতে তিনি সেই প্রমাণ রেখে গিয়েছেন। ১৯৪৮-এ হিতোপদেশ, ১৯৬৩-তে বিশ্বরূপদর্শন, ১৯৬৫-তে রাণা- বেরাণা, ১৯৮৫ তে ব্রতকথা সমগ্র, ১৯৯০-এ উপেন্দ্র চন্দ্র শাস্ত্রীর সঙ্গে শ্রীমদ্ভাগবত: সম্পূর্ণ দ্বাদশ স্কন্দ সম্পাদনা করেন। ইংরেজি সাহিত্যে দক্ষতা বিভিন্ন বিদ্যাসত্রে প্রকাশ পেত। বিষয়ের পরিবর্তন না করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারতেন। হাসির ছড়া, নাটিকাও অনেক রচনা করেছিলেন।

অল্প বয়সে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। ছবি: সংগৃহীত।

কিন্তু এত কিছুর পরেও স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে অবসর নেওয়ায় তাঁর পেনশন জোটেনি। শেষ জীবনে ‘মহাভারতের কথা’ অনুষ্ঠানটি করে সামান্য কিছু টাকা পেতেন, কিন্তু স্মৃতিভ্রংশ হয়ে আসায় সেই অনুষ্ঠানও বেশিদিন চালানো যায় নি। এমন বিরল প্রতিভা, জীবনসায়াহ্নে এসে নিতান্ত অভিমানে বলেছিলেন, ‘এখন আর আমায় কেউ মনে রাখে না, কিন্তু বছরে একটা দিন তাঁরা আমায় ছাড়া ভাবতে পারে না। সেদিনটা মহালয়া।’ ১৯৯১ সালের ৩ নভেম্বর বেতারপুরুষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ অমৃতলোকে যাত্রা করেন, কিন্তু তাঁর ‘দেবী প্রসন্ন হলেন…’ এই বাচিক, সাত্ত্বিক প্রকাশ হয়তো সত্যিই জগন্ময়ীকে চির প্রসন্ন করেছে।—চলবে।

ঋণ স্বীকার:
আমার ছেলেবেলা: বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
বিরূপাক্ষ রচনাসমগ্র: বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
মনে পড়ে: বিকাশ রায়
* ড. বিদিশা মিশ্র (Bidisha Misra), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। বিদিশা বাঙালি নৈয়ায়িক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য্যের গ্রন্থ কাব্যবিলাসের উপর গবেষণা করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের পত্রিকায় তাঁর শোধপত্রগুলো প্রকাশিত হয়েছে।

Skip to content