
কামিনীকুমার চন্দ।
স্বাধীনতা-উত্তর অসমের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কামিনীকুমার চন্দ। বলা যেতে পারে, বর্তমান দক্ষিণ অসমের বরাক ভূমি তথা শহর শিলচরের অগ্রগতির পিছেন যিনি তাঁর সমস্ত জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন তিনি হলেন কামিনীকুমার। তাঁর পরিবার বরাক উপত্যকার উন্নতি সাধনের জন্য একাধিক পদক্ষেপ করেছেন।
কামিনীকুমার যেন ছিলেন এক আলোর উৎস। আর সন্তানরাও ছিলেন তাঁর যোগ্য উত্তরাধিকারী। কামিনী সিলেটের হবিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রামকুমার চন্দ, মা শিবসুন্দরী চন্দ। কামিনীর স্ত্রী হলেন চন্দ্রপ্রভা চন্দ। এঁদের কৃতি সন্তানরা হলেন অপূর্বকুমার চন্দ, হিরণকুমারী দত্ত, কিরণকুমারী দত্ত, অরুণকুমার চন্দ, অশোককুমার চন্দ, অমিতাকুমারী বসু, অনীলকুমার চন্দ।
কামিনীকুমার যেন ছিলেন এক আলোর উৎস। আর সন্তানরাও ছিলেন তাঁর যোগ্য উত্তরাধিকারী। কামিনী সিলেটের হবিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রামকুমার চন্দ, মা শিবসুন্দরী চন্দ। কামিনীর স্ত্রী হলেন চন্দ্রপ্রভা চন্দ। এঁদের কৃতি সন্তানরা হলেন অপূর্বকুমার চন্দ, হিরণকুমারী দত্ত, কিরণকুমারী দত্ত, অরুণকুমার চন্দ, অশোককুমার চন্দ, অমিতাকুমারী বসু, অনীলকুমার চন্দ।
উনবিংশ শতকে সুরমা উপত্যকা (অর্থাৎ বর্তমান অসমের বরাক উপত্যকা-সহ বর্তমান বাংলাদেশ সিলেটের কিছু অংশ) থেকে যে ক’জন কলকাতা গিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কামিনী। তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ১৮৮২ সালের অক্টোবর মাসে নির্বাচনের মাধ্যমে শিলচরে পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান-সহ বিভিন্ন সময়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন তিনি। ১৯১২ সাল পর্যন্ত এ ভাবেই চলে। এরই মধ্যে ১৮৯৪ সালে কামিনীকুমার চন্দ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯১৩ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম পৌরসভার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন কামিনীকুমার চন্দ। শিলচর পৌর বিভাগে তাঁর অবদান অপরিসীম। ১৮৯৩ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নির্দোষ একাধিক মণিপুরিদের হয়ে ইংরেজের বিরুদ্ধে মামলা লড়ে কামিনী জয় লাভ করেন। আজও মণিপুরি সমাজে তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:

অসমের আলো অন্ধকার, পর্ব-৪৩: নাচে-গানে অসম

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৮: এখানে দিন-রাত-শীত-গ্রীষ্ম-আলো-অন্ধকার, সব কিছুরই হিসেব আলাদা
বরাক উপত্যকায় স্বদেশী আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তি ছিলেন কামিনী। তিনি ছাত্রদেরকেও স্বদেশী আন্দোলনের অংশ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৩০ সালে ইংরেজ সরকার আইন চালু করেছিল যে, সরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিবাবকরা ইংরেজ বিরোধী কোনও রকম কাজ করতে পারবেন না। তখন অসমের শিক্ষা অধিকর্তা ছিলেন কানিংহাম। কানিংহামের চোখরাঙানিকে পাত্তা না দিয়ে ছাত্ররা দলে দলে আন্দোলনে যোগদান করতে লাগল। গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুলের ৩৯ জন ছাত্রকে স্কুল থেকে বহিঃস্কার করা হয়। ৩৮ জন ছাত্র ক্ষমাপ্রার্থনা করে আবার স্কুলে ফিরে গেলেও কামিনী কুমারের পুত্র অপূর্ব চন্দ আর সেই স্কুলে ফেরেননি। তিনি শান্তিনিকেতন চলে যান। তিনি কিছু দিন বারাণসীতে অ্যানি বেসান্তের হিন্দু স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯o: ছাতারে

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?
স্বদেশী আন্দোলনে অংশ নিয়ে শিলচরের যে সব ছাত্ররা স্কুল ছেড়ে দেয়, তাদের জন্য সেখানেই (বর্তমান জানিগঞ্জ অঞ্চল) ন্যাশনাল স্কুল স্থাপিত হয়। ১৯১২ সালে কামিনীর প্রচেষ্টায় স্বদেশী ভাবনায় দীননাথ নব কিশোর বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে। গান্ধীবাদী নেতা শ্যামাচরণ দেব ছিলেন স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক। জন নায়ক কামিনীর কথা বলতে গেলে, ১৯১৫ সালে শিলচরে অনুষ্ঠিত ‘সুরমা সাহিত্য পরিষদ’ এর দ্বিতীয় অধিবেশনে তাঁর ভূমিকার কথা বলতেই হয়। ওই সভায় শ্রীহট্ট তথা কাছাড়ের অনেক গুণীজনের সমাবেশ ঘটে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’
সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন মহামহোপাধ্যায় পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ। তিনি তৎকালীন অসমের পণ্ডিতদের মধ্যে অন্যতম। সভায় বক্তব্য রাখেন কামিনী কুমার। বলেন, “আজ যদিও পৃথিবীর দিকে দিকে যুদ্ধের ঝনঝনা বজিয়া উঠিয়াছে, তথাপি আমরা বলিতে বাধ্য যে, সভ্যতা ও সাধনার প্রকাশ যুদ্ধ নহে। ইংলন্ডের সর্ববশ্রেষ্ট প্রকাশ শেক্সপিয়ার-মিল্টনে, তাহার বীর সৈনিকবৃন্দে নয়, কাইজার ও জার্মান জাতীর মধ্যে যাহা শ্রেষ্ট তাহার প্রকাশ।”
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৬: নীল রাত্রি, নীল অন্ধকার

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৩: শরৎকুমারী স্নানাগারের সামনে বসে সারাক্ষণই সাজতেন
১৯২১ সালে কামিনী কুমারের উদ্যোগেই শিলচরে গান্ধীজির আগমন ঘটে। এদিকে গান্ধীর আগমনে স্বাধীনতা সংগ্রাম যে বিরাট রূপ ধারণ করবে সেই ভয় পাচ্ছিল ব্রিটিশ সরকার। তখন এক উচ্চপদস্থ ইংরেজ অফিসার কামিনীকে চিঠি লিখে গান্ধীজির শিলচরে আসা রদ করার জন্য অনুরোধ করেন। যদিও উচ্চপদস্থ ইংরেজ অফিসারের সেই অনুরোধ পত্রপাঠ খারিজ করে দেন কামিনী কুমার। সেই চিঠির উল্লেখ রয়েছে ঐতিহাসিক দেবব্রত দত্তের একটি লেখায়। গান্ধীজি শিলচর এসে চন্দ বাড়িতেই থাকলেন। সুভাষচন্দ্রও শিলচরে দু’বার এসেছিলেন। প্রথমবার ১৯৩৮ সালে সিলেট থেকে ফেরার সময় করিমগঞ্জ হয়ে শিলচরে আসেন। থেকে ছিলেন সেই চন্দ বাড়িতেই। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সময় থেকেই কামিনী কুমারের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। কামিনী পুত্র অনিল চন্দ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সচিব ছিলেন। চন্দ বাড়ির অবদানের অনেক, যার পুরোধা কামিনীকুমার চন্দ।—চলবে।
* ড. শ্রাবণী দেবরায় গঙ্গোপাধ্যায় লেখক ও গবেষক, অসম।