শরৎচন্দ্র সিংহ।
অসমের মাটিতে যেমন রয়েছে বহু জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষ, ঠিক তেমনি অসমের একটি সুস্থ সুন্দর রূপ ধরে রাখতে এগিয়ে এসেছেন অনেক ভালো মনের মানুষ। মূলত তাঁদের প্রচেষ্টায় অসমের অনেক জাতি উপজাতির অজানা তথ্য সামনে এসেছে। খাসিয়া-জয়ন্তীয়া সম্প্রদায়ই হোক কিংবা রিয়াং বা রংমাই আজ সকল জাতি উপজাতি নিজেদের ঐতিহ্য বহন করে বসবাস করছে অসমে। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁদের অবদানের কথা স্বীকার করতে হয় যারা নিজেদের সম্প্রদায়কে বহির্বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করাতে করেছেন কঠিন প্রয়াস।
বরাক উপত্যকার বর্মনরা অনেক আগে থেকেই শিক্ষা দীক্ষায় আগ্রহী। ডিমাসা রাজসভাতে যথারীতি সাহিত্যচর্চা হত। অগ্রণী এই সম্প্রদায়ের মনীষীরা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের জাতির উন্নতির স্বার্থে। ডিমাসা ভাষাতত্ব নিয়ে প্রথম গ্রন্থ ‘হৈড়িম্ব ভাষা প্রদেশ’ রচনা করেন মণিচরণ বর্মণ। শিক্ষক নলিনীকুমার বর্মণ আঞ্চলিক ইতিহাসের নিখুদ অধ্যয়ন করে তাঁর বই ‘The queen of cachar or Herombo and the History of cachar’ তে অনেক অজানা তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখেন। বইটি প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে। কাছাড়ের ডিমাসা জাতির উন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করতেই হয়।
বরাক উপত্যকার বর্মনরা অনেক আগে থেকেই শিক্ষা দীক্ষায় আগ্রহী। ডিমাসা রাজসভাতে যথারীতি সাহিত্যচর্চা হত। অগ্রণী এই সম্প্রদায়ের মনীষীরা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের জাতির উন্নতির স্বার্থে। ডিমাসা ভাষাতত্ব নিয়ে প্রথম গ্রন্থ ‘হৈড়িম্ব ভাষা প্রদেশ’ রচনা করেন মণিচরণ বর্মণ। শিক্ষক নলিনীকুমার বর্মণ আঞ্চলিক ইতিহাসের নিখুদ অধ্যয়ন করে তাঁর বই ‘The queen of cachar or Herombo and the History of cachar’ তে অনেক অজানা তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখেন। বইটি প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে। কাছাড়ের ডিমাসা জাতির উন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করতেই হয়।
কার্বি জনজাতির উন্নতির স্বপ্ন যিনি দেখেছিলেন তিনি সেমসনসিং ইংতি। ১৯১০ সালে কার্বি অংলঙ্গের টিকা পাহাড়ে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে সিলেটের মুরারি চান্দ কলেজ থেকে প্রথম কার্বি স্নাতক তিনি। তিনি বেশ কয়েকটি কার্বি ভাষার পাঠ্য পুস্তক রচনা করেন। কার্বি জনজাতিদের মধ্যে শিক্ষার আলো প্রসারিত করেন তিনি। কার্বি সাহিত্যে প্রথম লিখিত রূপ দান করেন বংলং তেরাঙ্গে। তিনি তের বছর বয়স থেকে সাহিত্য রচনায় ব্রতী হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে কার্বি সাহিত্য সভা তাঁকে কার্বি সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তি পুরস্কার প্রদান করে।
কার্বি সাহিত্যে আরও এক অমর নাম হল সামসিং হাঞচে। কারবি সাহিত্যের বিকাশের জন্য তিনি কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৮৩-৮৪ সালে কার্বি সাহিত্য সভার সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে সভাপতি হয়ে কার্বি ভাষার উন্নতি সাধনের চেষ্টা করেন।
কার্বি সাহিত্যে আরও এক অমর নাম হল সামসিং হাঞচে। কারবি সাহিত্যের বিকাশের জন্য তিনি কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৮৩-৮৪ সালে কার্বি সাহিত্য সভার সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে সভাপতি হয়ে কার্বি ভাষার উন্নতি সাধনের চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন:
অসমের আলো অন্ধকার, পর্ব-৩৮: অসমের কয়েকটি জনজাতি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ
অসমে কোচ জনজাতির মানুষও রয়েছেন। অসমে ধুবড়ি, বঙ্গাইগাঁও, গোয়ালপাড়া, কোকরাঝাড়, জেলায় কোচদের জনবসতি দেখা যায়। তাঁদের ভাষা রাজবংশী ভাষা বলে পরিচিত। কোঁচ জনজাতিতে জন্ম গ্রহণ করা জন নেতা শরৎচন্দ্র সিংহ অসমের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৭২-৭৮) ছিলেন। তিনি অসমের সার্বিক উন্নতির জন্য যথেষ্ট স্বচেষ্ট ছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর নিজের জাতির উন্নতির জন্যও তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কোচ রাজবংশীদের মধ্যে অম্বিকাচরণ চৌধুরি এক সাহিত্য প্রেমী এবং সমাজসেবী ব্যক্তি ছিলেন।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান
দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম
অসম সাহিত্যসভা থেকে তাঁকে ‘রত্নপীঠের রত্ন’ উপাধি প্রদান করে। তিনি আজীবন সাহিত্য চর্চা করেছেন। তিনি মোট ৩২টি বই রচনা করেছিলেন।কোচ রাজ বংশীদের মধ্যে শিক্ষার আলো প্রসারিত করেন তিনি। সমাজ কর্মী তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী পনীরাম দাসেরও অবদানের কথা মনে রাখতে হয়। সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। গান্ধীজির মতাদর্শে বিশ্বাসী পানিরাম দেশের এবং জাতির উন্নতির জন্য আজীবন ব্রতী ছিলেন।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
প্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের লোকেরা উত্তর পূর্বাঞ্চলে বসবাস করছে। গারোরা একাধিক উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত রয়েছে। গারো একটা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। অসমের গারো সমাজে সোনারাম রংকগ্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। গারো সমাজের উন্নতির জন্য তিনি সব সময় সজাগ থাকতেন। হাওয়ার্ড ডেনিসন মোমিন গারো সম্প্রদায়ের আরেক পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি আধুনিক গারো সাহিত্যিক জনক। তিনিই প্রথম গারো ভাষায় একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। গুয়াহাটির কটন কলেজে অধ্যাপনার সময় গারো ছাত্রীছাত্রীদের জন্য একটি পত্রিকা চালু করেন।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন
সুতরাং এ কথা মেনে নিতেই হয় যে অসমের স্বার্বিক উন্নতির জন্য উপজাতি গুলিতে জন্ম গ্রহণকরা অনেক মনীষীরা এগিয়ে এসেছিলেন বলেই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলা সম্ভবপর হয়েছে। অসমে অনেক জাতি উপজাতিদের বসবাস, প্রতিটি সম্প্রদায় এবং সেই সেই সম্প্রদায়ের জননেতা বা পথ পদর্শকদের কথা লিখা কিংবা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকের অবদানের কথা মাথায় রেখতেই হয়। সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠনে এগিয়ে তাঁরা প্রত্যেকেই বরনীয়, প্রত্যেকেই স্মরণীয়।—চলবে।
* ড. শ্রাবণী দেবরায় গঙ্গোপাধ্যায় লেখক ও গবেষক, অসম।