![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Panchatantra-EP-47.jpg)
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
মিত্রভেদ
করটক স্বভাবগতভাবেই অত্যন্ত সাবধানী। শুরু থেকেই সে বারে বারে দমনককে তার উদ্দেশ্য আর কর্মপন্থা নিয়ে সতর্ক করছে। স্বামী-পিঙ্গলক আর বৃষ-সঞ্জীবকের মধ্যে যুদ্ধের ফল যে ভয়ানক কিছু হতে পারে সে আন্দাজ করতে পারছিল। তাই আবার সে দমনকের প্রতি সমস্ত বিরক্তি উগরে দিয়ে বলল, এই উপায় চতুষ্টয়ের মধ্যে তোমার যে চিরকারল দণ্ডনীতির উপরেই ভরসা এটা আমরা জানি। কার্যসিদ্ধির জন্য দণ্ডনীতি ছাড়াও অন্য উপায় আছে। শাস্ত্রে বলে স্বয়ং পিতামহ ব্রহ্মা সাম থেকে শুরু করে দণ্ডনীতি পর্যন্ত যে চারটি উপায়ের কথা বলেছেন। তার মধ্যে দণ্ডনীতিটা হল—সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপায়। দণ্ডনীতি সম্পূর্ণরূপে পাপে ভরা। তাই সাম, দান আর ভেদনীতি প্রয়োগ করার পর অসফল হলে তবেই সবশেষে দণ্ডনীতি প্রয়োগ করা উচিত। যে ক্ষেত্রে শুধু “সামনীতি” প্রয়োগ করেই কার্যসিদ্ধি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে রাজনীতি জানা লোকেরা কখনওই “দণ্ডনীতি”র প্রয়োগ করেন না। মানেটা হল, মিষ্টি খেলেই যদি কারো পিত্তদোষ শান্ত হয় তাহলে মিষ্টিই তার ওষুধ; অকারণে পটলের ঝোল খাওয়ানোর কোনও দরকার নেই তাকে। তাই প্রাচীন রাজনীতিবিদেরা মনে করেন—
সামসাধ্যানি কার্যাণি বিক্রিযাং যান্তি ন ক্বচিৎ।। (মিত্রভেদ, ৪১০)
অর্থাৎ রাজনীতিজ্ঞ পুরুষদের উচিত প্রথমে সামনীতিরই প্রয়োগ করা; কারণ সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে কোনও কার্যসিদ্ধি হলে সেটা সাধারণত উল্টোপাল্টা হয় না। পণ্ডিতেরা বলেন, শত্রুতার বশে মানুষ মানুষের প্রতি যে অপকার করে তা হল সম্পর্কের এক অন্ধকার দশা। সামনীতির প্রয়োগে সন্ধিচুক্তি করে সে অন্ধকার যতটা না দূরীভূত হতে পারে আকাশে প্রকাশমান চন্দ্রমা, সূর্য, অগ্নি কিংবা জ্যোতিষ্মতী ঔষধিও ততটা অন্ধকার দূর করতে পারে না।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/05/Panchatantra-EP44.jpg)
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৪: দুষ্টরা সুযোগ পেলেই যোগ্য ব্যক্তিকে সরিয়ে অধিকার কায়েম করে
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Sundarban-EP-53Cover.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—খলসি ও করঞ্জা
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Pisach-pahar-EP-71.jpg)
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭১: সাইকেল ও জীবন
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Love-and-Relationships.jpg)
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১: প্রাক-কথন
সত্যি বলতে এটা তোমারও দোষও নয়; এটা আমাদের স্বামী-পিঙ্গলকেরই দোষ যে তোমার এই সব কুপরামর্শ এতোটা মন দিয়ে শুনেছেন। লোকে ঠিকই বলে—
বুধোপদিষ্টেন পথা ন যান্তি যে।
বিশন্তি দুর্গমমার্গনির্গমং
সমস্তসম্বাধমনর্থপিঞ্জরম্।। (ঐ, ৪১৪)
অর্থাৎ যে রাজা দুষ্ট লোকের পরামর্শে চলে সে কখনওই পণ্ডিত কিংবা যথার্থ রাজনীতিবিদদের কথা শোনেন না। এমনকি তাঁদের কথা মতন কাজও করেন না। তাই তারা একদিন সকল বাধা-বিপত্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে এমন এক কঠোর সঙ্কটরূপ খাঁচায় আটকে পড়ে যে তার থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা তাদের আর সম্ভব হয় না। তাই ওহে দমনক! তোমার মতন লোক যদি আমাদের স্বামী-পিঙ্গলকের মন্ত্রী হয় তাহলে আর কোনও সজ্জনলোকে আরতার ধারে কাছেও আসবেন না।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Sarada-Devi.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫১: জয়রামবাটির যথার্থ রক্ষয়িত্রী
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Mahakavya-EP681.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৮: আনন্দের নির্বাসন থেকে উত্তরণের উপায়?
সূচীমুখং বিজানীহি নাশিষ্যাযোপদিশ্যতে।। (ঐ, ৪১৭)
অর্থাৎ শুকনো কাঠের লাঠিকে যেমন বেঁকানো যায় না, পাথর দিয়ে যেমন ধারালো ছুরির কাজ হতে পারে না তেমনই উপদেশ দেওয়ার অযোগ্য শিষ্যকেও উপদেশ দেওয়া যায় না; কারণ এগুলি অনমনীয়— কথায় এদের কোনও কাজ হয় না। সূচীমুখ এর যথার্থ উদাহরণ।
দমনক জিজ্ঞেস করলো, “কথমেতৎ” ব্যাপারটা ঠিক কেমন?
দমনক তখন বলতে শুরু করল—
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Lakshminath-Hemendra-Pragya.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯২: মহর্ষিদেব নাতজামাইকে দিয়েছিলেন সোনার কলম
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Sharey-Chuattar.jpg)
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৬: প্রথমে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির বিজ্ঞাপনে উত্তম কুমারকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি
১৭: সূচীমুখ আর বানরদলের গল্প
কোনও এক নাম না জানা পর্বতের এক জায়গায় একদল বানর বাস করতো। একবার হেমন্ত ঋতুতে শীতের হিমেল হাওয়া তখন সবে উত্তর দিক থেকে বইতে শুরু করেছে কিন্তু বর্ষার বৃষ্টির প্রকোপ তখনও মেটেনি। সেদিন মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল আর গোটা বানরের দলটা বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে উত্তরের হালকা হিমেল হাওয়ায় ঠক্-ঠক্ করে কাঁপতে শুরু করল। ঠান্ডায় শান্তি পাচ্ছিল না তারা কিছুতেই। মানুষকে ঠাণ্ডায় আগুন পোহাতে তারা দেখেছে কিন্তু আগুন কি করে জ্বালাতে হয় সে বিদ্যে তাদের নেই। কয়েকটা বানর আবার জঙ্গল থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ভেবে আগুনের মতন লাল গুঞ্জাফল তুলে এনে একজায়গায় জড়ো করে তার চারিধারে বসে মানুষের মতন ফুঁ দিয়ে দিয়ে অনেক আগুন জ্বালানোর বৃথা চেষ্টা করছিল। সেখানে সূচীমুখ নামে এক পাখি গাছের উপর নিজের বাসায় বসে বসে এই সব বানরদের কার্যকলাপ দেখছিল।—চলবে।