শনিবার ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫


 

পদ্মিনী

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: রোমান্টিক কমেডি (২০২৩)
ভাষা: মালয়ালম
প্রযোজনা: লিটল বিগ ফিল্ম, সুভিন কে ভারকে , প্রসভ কৃষ্ণা
কাহিনি চিত্রনাট্য: দীপু প্রদীপ
নির্দেশনা: সেনা হেগড়ে
অভিনয়ে: কুঞ্চাকো বোবান, অপর্ণা বালামুরলি, ম্যাডোনা সেবাস্টিয়ান, ভিন্সি আলোসিয়াস প্রমুখ
সময়সীমা: ১২০ মিনিট
রেটিং: ৫.৫/১০
ওটিটি: নেটফ্লিক্স

মালায়ালাম চিত্র পরিচালক সেনা হেগড়ে-র ২০২১ -এর পারিবারিক কমেডি ছবি ‘থিঙ্কালাইচা নিশ্চয়ম’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, কেরল রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার-সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত। ‘থিঙ্কালাইচা নিশ্চয়ম’ মালয়ালাম ভাষা থেকে তর্জমা হল ‘সোমবার পাকা দেখা’। পরের কমেডি ক্রাইম থ্রিলারের নাম ‘১৭৪৪ হোয়াইট অল্টো’ গাড়ি বদলে গিয়ে কেলেঙ্কারির কাহিনি আর এই ‘পদ্মিনী’ ছবিটির নামকরণের পিছনে মূল কারণ প্রিমিয়ার পদ্মিনী গাড়ি।
পরিচালক খুব সহজ ভাষায় পরিবারের গল্প বলতে ভালোবাসেন। পদ্মিনী ছবিটি একটি কলেজের লেকচারার রমেশনের জীবনকে কেন্দ্র করে। স্মৃতি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে রমেশনের সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল। ফুলশয্যার রাতেই স্মৃতি রমেশনকে ধোঁকা দিয়ে তার পূর্বপ্রেমিকের সঙ্গে একটি প্রিমিয়ার পদ্মিনী গাড়ি করে পালিয়ে যায়। সেই থেকে কলেজে গ্রামে রমেশনকে ‘পদ্মিনী’ বলে সকলে ঠাট্টা করে।
আরও পড়ুন:

আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ

ইদানীং জীবনের জটিলতা বেড়ে গিয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া সত্ত্বেও এখন অনেক বিয়েরই পরিণতি সুখকর হয় না। তাই আজকাল যুবক-যুবতীদের একটা বড় অংশ বিয়ের ওপর আস্থা হারিয়ে একা বা সিঙ্গল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন। এই ছবির প্রধানচরিত্র রমেশনও বিয়ের প্রথমদিনে ধোঁকা দেওয়া পাত্রী স্মৃতির ভয়ঙ্কর স্মৃতিতে মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছিল আর বিয়ে করবে না।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান

দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম

কিন্তু বন্ধু বেনুর পরামর্শে রমেশন এক ম্যারেজ ব্যুরোতে যোগাযোগ করে। সেখানে শ্রীদেবী নামের এক পাত্রীকে দেখতে যায় ভেনু ও রমেশন। কিন্তু পাত্রী দেখা হয় না। কারণ পাত্রীর বাড়ির তলায় গ্যারেজে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি প্রিমিয়ার পদ্মিনী গাড়ি। অন্য রং কিন্তু এই প্রিমিয়ার পদ্মিনী করেই বিয়ের প্রথম রাতে ধোঁকা দেওয়া পাত্রী স্মৃতি পালিয়েছিল। ব্যস! পাত্রী না দেখেই ফিরে আসতে চায় ভেনু পাত্রীও শ্রীদেবী পেশায় উকিল। মনোমালিন্য হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

এরপর কলেজে এলেন পদ্মিনী নামের এক সুন্দরী লেকচারার। তিনি জেনে ফেললেন যে ‘পদ্মিনী’ বললেই কেন রমেশন চটে যান। যাই হোক এই পদ্মিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেন রমেশন। ঠিক করে ফেললেন পদ্মিনীকেই বিয়ে করবেন। কিন্তু খাতাকলমে তো স্মৃতি বিয়েকরা বউ। তার থেকে ডিভোর্স আনার জন্য সাহায্য নিতে হল সেই উকিল শ্রীদেবীর কাছ থেকে। এরপর শুরু হলো রোম্যান্টিক কমেডির দুর্দান্ত কেলেঙ্কারি। যেটা বলে দিলে ছবি দেখার মজাটাই শেষ। মালায়ালাম ছবিতে সহজ ভাবে বলা পারিবারিক গল্প অত্যন্ত জনপ্রিয় ছবি হয়ে ওঠে। পদ্মিনীতেও তার অন্যথা ঘটেনি।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন

ছবিতে লোকেশনকে ছবির বিষয় অনুযায়ী খুব স্বাভাবিক মনে হয়েছে। সারা ছবিতে উচ্চগ্রাম নাটকীয়তার কোন ব্যবহার নেই। ক্রমশ বয়স বেড়ে যাওয়া একজন পুরুষমানুষ বিয়ে করে ঘর বাঁধতে চাইছেন অত্যন্ত স্বাভাবিক চাহিদার সামনে তৈরি হওয়া বাধাগুলো একেবারেই বাস্তবসম্মত এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাই সারা ছবিতে কোথাও কাহিনি বা অভিনয়কে জোর করে তৈরি করা মনে হয় না।
ক্যামেরা সম্পাদনা অভিনয় নির্দেশনা এবং সবার উপরে কাহিনি ও চিত্রনাট্যের গুনে পদ্মিনী ছবিটি কোথাও মসৃণতা বা পেলবতা হারায় না। পদ্মিনী দেখতে বসে মনে হয় জলের মতোও কলকল করে ছবিটি তার গল্প বলে গেল। কিন্তু পদ্মিনী নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে বসে মনে হয় সহজ ভাবে ছবি বানানো বড় সোজা কথা নয়। কেন? এই কেনর উত্তর তো সেই কবেই স্বয়ং রবিঠাকুর দিয়ে গিয়েছেন। সেই যে ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content