রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি।

 

প্রত্যুত্তর

ভুল বাংলা হলেও লোকসমক্ষে সপাট জবাব পাওয়াটা নিজের হার নিজের অপমান হিসেবেই নিয়েছিলেন সুজাতা।

তরুণকান্তি স্টুডিয়োতে সেদিন অবাক হয়ে তাঁর আঁকা ছবি দেখছিলেন কীরা কাকিমা আর শ্যানন। শ্যানন বলছিল, তরুণকান্তি তার পেন্টিং নিয়ে ইউকে এলে শ্যানন তাঁর পেইন্টিং এক্সিবিশনের ব্যবস্থা করবে। তরুণকান্তি বলেছিলেন, এই জীবনে আর হবে না, নেক্সট লাইফ থাকলে চেষ্টা করবে। ফুলকাকা বিমলকান্তি মা-বাবাকে নিয়ে দুদিনের জন্যে কাশী বিশ্বনাথ দর্শনে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য আরও একটা ছিল, স্বর্ণময়ীর চিতাবশেষ ফুলকাকা উত্তরভারতীয় নিয়মে একটা ঘটিতে রেখেছিলেন। সেই চিতাভস্ম বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গার জলে বিসর্জন দেওয়ার ইচ্ছে ছিল ফুলকাকার।

অনেক বিখ্যাত ডাক্তারের মতোই ফুলকাকাও ভয়ঙ্কর ঈশ্বরবিশ্বাসী। ব্রিস্টলে জটিল হার্ট অপারেশনের আগে তার গলায় ঝোলানো লোকনাথ বাবার লকেট মাথায় ছুঁইয়ে নিতেন। ঠাকুমা বসুন্ধরার নির্দেশ মেনে আজও এ বাড়ির সমস্ত ছেলে-মেয়ের গলায় লোকনাথ বাবার লকেট ঝোলে।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-২৬: আবেগে প্রৌঢ়ের মোটা চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৩: টলস্টয় ও সোফিয়া—সে কি কেবলই যাতনাময়…/৩

মা কীরা কাকিমা আর শ্যাননকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বাড়িতে ক’দিন একটু রিচ খাওয়াদাওয়ার জন্যই হয়তো শ্যাননের শরীর ঠিক ছিল না তাই শ্যাননকে ছেড়ে কীরা কাকিমা যেতে রাজি হলেন না। মা জানতেন শ্যানন সুস্থ থাকলে হয়তো সে সঙ্গে যেত কিন্তু কীরা কাকিমা কিছুতেই যেতেন না। পারিবারিক নিয়ম-কানুন যা যতোটুকু পালন করা দরকার সেটা তিনি করেছেন, কিন্তু ফুলকাকার সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্বটা বজায় রেখেছেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৫: সঙ্গীত অনুরাগিণী মা সারদা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বন লেবু ও টাগরি বানি

যে স্টুডিয়োতে ন’কাকিমা সুজাতা প্রায় বহুবছর পা রাখেননি। আজ আচমকায় তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তরুণকান্তি বুঝেছেন, সুজাতার আচমকা উপস্থিতির কারণ। তিনি আজ এতবছর এমন একজন ঈর্ষাকাতর মহিলাকে কাছ থেকে দেখছেন। শারীরিকভাবে পঙ্গু হলেও মানসিকভাবে তরুণকান্তি যথেষ্ট কঠিন। অন্তত সুজাতার মুখোমুখি। মানসিক অবসাদে দূর্ভাগ্যে তরুণকান্তি ভেঙে পড়েন বসুন্ধরা ভিলার মাত্র দু’জনের কাছে। তাঁরা আমার বাবা অমলকান্তি আর আমার মা সুরঙ্গমা। তাই একটু তাচ্ছিল্য মিশিয়ে ন’কাকা তরুণকান্তি ন’কাকিমা সুজাতাকে বললেন—
—বলো!
সুবর্ণ থমকে ভাবল, প্রথম যাঁরা এই পর্ব পড়বেন তাঁরা তরুণকান্তিকে ভুল বুঝতে পারেন। আচমকা স্বামীর কেন স্ত্রীর প্রতি এ দূর্ব্যবহার? আমরাও তো বাস্তবজীবনে ভুল বুঝি! মানুষের সম্বন্ধে আগাম ভুলধারণা থেকে ভুলসিদ্ধান্ত নিয়ে বসি! আধুনিক কথায় জাজমেন্টাল হয়ে পড়ি, সেটা না হতে চাইলে মানুষটাকে তাঁর জীবনের পটভূমিকে জানতে হয়। সেই পাঠক যখন বসুন্ধরা এবং… উপন্যাসের প্রথম খণ্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড পড়বেন তখন তাঁরা সবটুকু জানতে পারবেন। ন’কাকিমার উত্তরটাও ঝাঁঝাল—
—বলতে নয় শুনতে এসেছি!
—কি শুনতে চাও?
কীরা’র সামনে ন’ কাকা আজ এতটুকু জমি হারাতে রাজি নয়।
—তোমার কথা শোনার ইচ্ছে বা উৎসাহ কোনকালেই ছিল না
—জানি! সেটা আমার কথা বা চিন্তাভাবনা বুঝতে না পারার জন্যে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৮: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— বাবুর ও বন জুঁই

ন’কাকিমা বুঝলেন, তরুণকান্তি আজ উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলছেন। আঘাতের অভিমুখ ঘুরিয়ে আক্রমণ শুরু করলেন। ভালো ইংরিজি বলেন সুজাতা, খানিকটা সেই সুবাদে বিয়ের পর বিলেতে বসবাস একেবারে নিশ্চিৎ ধরে নিয়েছিলেন তাই স্বপ্নভঙ্গ হবার সব রাগের লক্ষ্যবস্তু কীরা কাকীমা। ফুলকাকার বৌ মেমসাহেব না হলে তাকে নিয়ে সুজাতার এতটা ঈর্ষা হয়ত হোত না! আসলে গায়ের রং স্মার্টনেস, ডাক্তার তার ওপর এতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরতা।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২: অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া দুলিছে যেন?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৯: ফেরেন্তস পুসকাস: দুটি দেশের হয়েই বিশ্বকাপ খেলেছেন

—তোমার কথা নয় আমি তোমার স্টুডিওতে নতুন নতুন আর্ট এনথুসিয়াস্ট দেখে ঢুকে পড়লাম—
এরপর ইংরিজিতে কীরা কাকীমাকে সুজাতা তির্যক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন—
—হিন্দু আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে পেন্টিংও শিখে ফেলেছো?
কীরা কাকীমা বডিলাইন বল অক্লেশে লেগষ্ট্যাম্পে হুক করে বাউণ্ডারি করলেন। ইংরিজি প্রশ্নের উত্তর ভাঙ্গা বাংলায় দিলেন
—ছবি অঙ্কন এতো সোজা, মানে সোহজ নয়! ইচ্ছে করিলে শিখা যাবে না —তুমি শিখিছো কি?
চমকিত তরুণকান্তি তাঁর নতুনআঁকা ক্যানভাসের দিকে মুখটা ফিরিয়ে নিলেন হাসি চাপার জন্য সুজাতা রাগে ফুঁসছে! তাই এবার সরাসরি বাংলাতে বলে উঠলেন—
—না, আমি ছবি আঁকা শিখিনি তবে ছবি পড়তে পারি। আমি বেশ কয়েকটা আর্ট গ্যালারির জন্য পেইন্টিং কালেক্ট করি আর্টিস্ট প্রমোট করি!
এবার বাংলার উত্তর কীরা কাকিমা ইংরেজিতে দিলেন—
— ও দ্যাটস গ্রেট! ইউ মাস্ট নো এ লট আবউট ফেমাস পয়েন্টিং অ্যারাউণ্ড দ্য ওয়রল্ড! ইসইন্ট ইট? হোয়াট ইস ইয়র পার্সোনাল চয়েস অফ টপ ফাইভ ওয়রল্ড পেন্টিং?
সুজাতা টিটকিরি করতে এসেছিল ঝগড়াটে মহিলাদের মত গায়ের ঝাল মেটাতে এসেছিল ব্যাপারটা বুমেরাং হয়ে যাবে আন্দাজ করতে পারেননি।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com।


Skip to content