শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: প্রচেতা।

তারকবাবু ঘরে আসতেই বিনয়কান্তি বললেন—
—আচ্ছা কোন জরুরি কাজ ফেলে এলে না তো?
—সবচেয়ে জরুরি কাজেই তো এলাম। আপনি ডেকেছেন তার থেকে কোনও জরুরি কাজ করছিলাম না।
বিনয়কান্তি হাসেন। বলেন—
—আচ্ছা, শোনো সময় একেবারেই নেই, কাল বাদে পরশু নিয়মভঙ্গ।
—আজ্ঞেঁ আপনি এ সব নিয়ে ভাববেন না সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়ে গিয়েছে।
—হ্যাঁ সে তো আমি জানি। কিন্তু এখন আমার মাথায় একটা ব্যাপারে এসেছে যেটা তোমাকে আগে বলা হয়নি।
তারকবাবু জানেন, একটা কোনও সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। তাই তাঁর ডাক পড়েছে। এক অদ্ভুত মানুষ এই বিনয়কান্তি দত্ত তাঁর জীবনের সবচেয়ে কাছের যিনি সেই বসুন্ধরা অনেকদিন আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আজ তাঁর দ্বিতীয় প্রিয় মানুষটিও মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গেলেন। কিন্তু এই মুহূর্তেও সেই মানুষটি এমন কিছু ভাবছেন যেটা নিশ্চয়ই আর পাঁচজনের ভাবনার থেকে আলাদা। বিনয়কান্তি একটা ওষুধ খেয়ে নিয়ে আবার শুরু করলেন।
বিনয়কান্তি বললেন—
—দ্যাখো তারক, মায়ের কাজের সময় বসুন্ধরা ভিলায় তিনদিন তিনরাত অতিথি সেবা হয়েছিল। আমি চাই নিয়মভঙ্গের দিন তৈরি খাবার নিয়ে সারা কলকাতায় গরীব মানুষকে পেট ভরে খাওয়াতে। সব জায়গা থেকে তো মানুষ বসুন্ধরা ভিলায় আসতে পারবেন না। অত জায়গাও নেই এখানে। কিন্তু আমি জানি একদিনের মধ্যে এই ব্যবস্থা করাটা বোধহয় সহজ হবে না।
—হতে পারে, যদি আপনি দুটো অনুমতি দেন?
—বলো।
—এক নম্বর হল, একই মেনু হবে। কিন্তু এক জায়গায় রান্নাটা হবে না।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-২৩: স্বর্ণ মনেপ্রাণে চাইত বিনয়কান্তির গরিমা যেন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৯: মহাভারতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আখ্যান-উপাখ্যান, তেমনই একটি সম্বরণ ও তপতীর কাহিনি

—মানে?
—মানে শ্যামবাজার, গোলপার্ক, খিদিরপুর, বেলেঘাটা, বউবাজার, হাওড়া, চৌরঙ্গীতে একই সঙ্গে একই মেনু রান্না করলে এটা সম্ভব।
—কিন্তু একদিনে এত জায়গায় রান্নার ব্যবস্থা তার বাজারহাট?
—আমরা কিছুই করবো না বিকেডি, শুধু প্রোডাকশন মনিটর করবো, আর ডিস্ট্রিবিউশন দেখব।
—তোমার দ্বিতীয় কন্ডিশন?
—বসে খাওয়ানো যাবে না। খাবার বড় প্যাকেট থাকবে। পেট ভরা খাবার থাকবে তাতে।
—কিন্তু এত রান্নাঘর, রাঁধুনি, প্যাকেট করার লোকলস্কর?
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫২: দেশহিতৈষী মা সারদা

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৮: জ্ঞানদানন্দিনী দেবী—উনিশ শতকের বলিষ্ঠ লেখক এবং সমাজসংস্কারক

—আমাদের অফিসের অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিংয়ে আমরা দোকানে খাবার অর্ডার করি তো। তাতে নানারকম মেনু থাকে। এখানে মেনু একটু কম হবে। আর সারা কলকাতা ছড়িয়ে অনেকগুলো হোটেলে সেরকম অর্ডার যাবে। পরশুদিন উইক ডে, কিছু লোকজন দুপুরের খাবার খাবে। পথচলতি কিছু খুচরো মানুষ এছাড়া হোটেলগুলোতে দুপুরে বিক্রিবাটা সেরকম নেই। দুপুরের তাদের খদ্দেরের হিসাব করলে যত হয় তার থেকে কিছুটা বেশি টাকা দিয়ে পুরো দুপুরটা আমরা তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেব। তার ওপর একটা বাড়তি সংখ্যার অর্ডার। যে ব্যবসা বোঝে সে সহজেই রাজি হয়ে যাবে।
—এই জন্য আজ পর্যন্ত যখনই কোনও অঙ্কগুলিয়ে গিয়েছে তখনই পাশে বসা ভালো ছাত্রটিকে কনুইয়ে হাত রেখে চুপিচুপি ডেকে উত্তরটা জেনে নেওয়ার মতো তোমায় বারবার তলব করেছি।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১: টলস্টয় ও সোফিয়া—প্রেম ও বিবাহ/১

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৫: কী যে করি করি ভেবে মরি মরি

—সাহিত্যিক অমলকান্তি বলেন, সাহিত্যের সবটুকুই তার মায়ের থেকে পাওয়া। কিন্তু আপনার সঙ্গে বহুবার বহু বিষয়ে কথা বলে আমার মনে হয়েছে। আপনার ভিতরকার সাহিত্যরসও কম কিছু নয়।
—আজকের দিনে এ সব বলো না তারক, আর তোমার দিদির স্বর্গারোহণ। ফস করে যমরাজের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়ে ফিরে আসবে। তোমার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে কিছু মনে করবেন না আপনি, কিন্তু এটা ভুল বলছেন। আপনার বিকেডি একমাত্র শরৎচন্দ্র ছাড়া কারও বই কোনওদিন মন দিয়ে পড়েননি।
কথাটা বলে হাসতে গিয়ে গলাটা কি বুঝে এল বিনয়কান্তির?
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৩: মৃণালিনীর মৃত্যু হয়েছিল কীসে?

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৬৯: এক লড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লগা

একটুক্ষণ চুপ করে থাকলেন বিনয়কান্তি দত্ত। একটা ভারি দীর্ঘশ্বাসে মনের বিষাদটা সরিয়ে দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন।
—আর ডিস্ট্রিবিউশন?
— আমাদের বাড়িতে আজ আর নিয়মভঙ্গে বিজলী গ্রিল ক্যাটারিং করছে, ওদেরই বলছি। এছাড়া আনন্দ ক্যাটারার, গুঁই ক্যাটারার বা ভোজ ক্যাটারার আছে, বিয়ে-থা নেই দুপুরে কয়েক ঘণ্টার সার্ভিস ব্যবস্থা করে ফেলব।
—বেশ। আমি নিশ্চিন্ত হলাম। আচ্ছা আমার ব্যবহারে তুমি কি অস্বাভাবিক কিছু পেলে তারক?
—কেন?
—না, আজ আমার স্ত্রীর অন্তিম শ্রাদ্ধাদি চলছে আমার অতিথি অভ্যাগতদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করা উচিত, তা না করে আমি নিয়মভঙ্গের খাওয়াদাওয়ার হিসেব করছি কেন?
— আপনার কথা ধার করেই আপনাকে উত্তর দিতে হবে।
—সে কী? আমিই বলেছি? কী রকম?—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content