নহ মাতা নহ কন্যা। অলঙ্করণ: প্রচেতা।
নহ মাতা নহ কন্যা
গৌরবের চলে যাওয়ার কথা স্বর্ণময়ীকে কেউ জানাননি। কিন্তু গৌরব চলে যাওয়ার ঠিক তিন-চারদিন বাদেই শান্তিলাতাকে স্বর্ণময়ী জিজ্ঞেস করলেন গৌরবের কথা। কাজে ব্যস্ত থাকে তাই আসতে পারে না, এই সব নানান কথায় প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও মাকে সত্যি কথা না জানাবার কষ্ট শান্তিলতা গোপন করতে পারেননি। স্বর্ণময়ী কি কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলেন? স্বর্ণময়ীর ঘরে সারাক্ষণ ডাক্তার নার্স আয়াদের আনাগোনা। তারই মাঝে বিনয়কান্তি সন্ধেবেলাটা স্বর্ণময়ীর খাওয়ার সময়টায় তার পাশে গিয়ে বসতেন। বেডের মাথার দিকটা একটু উঁচু করে দিয়ে নার্সরাই খাওয়াতেন। বিনয়কান্তি পাশের চেয়ারে শুধু বসে থাকতেন। কখনও স্বর্ণকে দেখতেন, কখনও বা সেই ঘরে বিনয়কান্তি আর স্বর্ণময়ীর যুগল ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। বরানগরের বাড়ির বিশাল ছাদে বিয়ের পর এই ছবি তোলা হয়েছিল।
মাঝে মাঝে বিনয়কান্তির মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা। পিটারসন সাহেবের চায়ের গুদামে কাজ পাওয়া। কাশীর থেকে বাবার খোঁজ পাওয়া তার গুরুতর অসুস্থতার খবর শুনে মাকে নিয়ে ট্রেনে চেপে কাশী যাওয়া। হাওড়া স্টেশনে সেদিন প্রায় ট্রেন ছাড়ার সময় এসে পৌঁছেছিল স্বর্ণময়ী ও তার পরিবার। বিনয় সাহায্য করেছিল ওদের মালপত্র নিয়ে ট্রেনে তুলে দিতে। স্বর্ণময়ীর বাবা আনন্দমোহন বাবু ও মা কনিকাদেবীকে তুলে দেওয়ার পরেই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল, ধীরগতিতে চলতে থাকা ট্রেনের সঙ্গে দৌড়তে দৌড়তে স্বর্ণময়ীকে সাহস দিয়েছিলেন চলন্ত ট্রেনে ওঠার জন্য। স্বর্ণময়ীকে স্পর্শ করেননি কিন্তু বারবার তার মনে বিশ্বাস জুগিয়েছিলেন বিনয়কান্তি ঠিক পিছনেই আছেন, কোনও ভয় নেই। তারপর থেকে স্বর্ণময়ী কখনও ভয় পায়নি। গ্রে স্ট্রিটের সেই ভাড়াবাড়িতে পরম ভালোবাসায় গড়েছিলেন বসুন্ধরার পরিবার।
মাঝে মাঝে বিনয়কান্তির মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা। পিটারসন সাহেবের চায়ের গুদামে কাজ পাওয়া। কাশীর থেকে বাবার খোঁজ পাওয়া তার গুরুতর অসুস্থতার খবর শুনে মাকে নিয়ে ট্রেনে চেপে কাশী যাওয়া। হাওড়া স্টেশনে সেদিন প্রায় ট্রেন ছাড়ার সময় এসে পৌঁছেছিল স্বর্ণময়ী ও তার পরিবার। বিনয় সাহায্য করেছিল ওদের মালপত্র নিয়ে ট্রেনে তুলে দিতে। স্বর্ণময়ীর বাবা আনন্দমোহন বাবু ও মা কনিকাদেবীকে তুলে দেওয়ার পরেই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল, ধীরগতিতে চলতে থাকা ট্রেনের সঙ্গে দৌড়তে দৌড়তে স্বর্ণময়ীকে সাহস দিয়েছিলেন চলন্ত ট্রেনে ওঠার জন্য। স্বর্ণময়ীকে স্পর্শ করেননি কিন্তু বারবার তার মনে বিশ্বাস জুগিয়েছিলেন বিনয়কান্তি ঠিক পিছনেই আছেন, কোনও ভয় নেই। তারপর থেকে স্বর্ণময়ী কখনও ভয় পায়নি। গ্রে স্ট্রিটের সেই ভাড়াবাড়িতে পরম ভালোবাসায় গড়েছিলেন বসুন্ধরার পরিবার।
বিনয়কান্তির মা বসুন্ধরা পরিবার গড়তে পারেননি। তাই তাঁর ইচ্ছে ছিল তাঁর পুত্রবধূ একটা নিটোল পরিবার গড়ে তুলুক। স্বর্ণময়ী কথা রেখেছিলেন। মূলত স্বর্ণময়ীর উৎসাহ আর বসুন্ধরার আশীর্বাদে বালিগঞ্জে গড়ে উঠেছিল প্রাসাদোপম বসুন্ধরা ভিলা। সময়ের নিয়মে বসুন্ধরা চলে গিয়েছেন অনন্তলোকে। কিন্তু বসুন্ধরার ট্র্যাডিশনকে বসুন্ধরা ভিলায় পরিপূর্ণভাবে বজায় রেখেছিলেন স্বর্ণময়ী। শুরুর জীবনটা অনেক বেশি সংগ্রামের ছিল কঠিন ছিল যুদ্ধের ছিল। ব্যর্থতার মাঝে সাফল্য ছিল। ধাক্কা খেতে খেতে উঠে দাঁড়ানো এগিয়ে চলা ছিল। কিন্তু আজকের মতো এত মানসিক দুঃখ যন্ত্রণা শোকের শরীর হতে হয়নি তখন। নারীর সহনশক্তির মতোই যেকোনও পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও অসীম। মা বসুন্ধরা, স্ত্রী স্বর্ণময়ী বা মেয়ে শান্তিলতা। পুত্রবধূ সুরঙ্গমা… প্রত্যেকে নিজের সবটুকু দিয়ে সংসার গড়েছেন। দেওয়ার সময় ত্যাগে কোনও কার্পণ্য ছিল না।
মায়ের তো বৈধব্যই ছিল শুরু থেকে। স্বর্ণ এত সাহিত্য ভালোবাসত, কিন্তু তার থেকে সংসারের জন্য সরে আসতে হয়েছে। তবু তার ছেলে অমলকান্তি যে এত নামী সাহিত্যিক তাতে অন্তত মায়ের আক্ষেপপূরণ হয়েছে। নিজের স্টারডম এককথায় ধুলোয় মিশিয়ে বসুন্ধরা ভিলায় এসেছে সুরঙ্গমা। শান্তিলতা মানুষের জন্যে কাজ করতে চেয়েছিল। পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। পারেনি। তার ছোট ছেলে গৌরব মায়ের সাধ পূর্ণ করেছে।
মায়ের তো বৈধব্যই ছিল শুরু থেকে। স্বর্ণ এত সাহিত্য ভালোবাসত, কিন্তু তার থেকে সংসারের জন্য সরে আসতে হয়েছে। তবু তার ছেলে অমলকান্তি যে এত নামী সাহিত্যিক তাতে অন্তত মায়ের আক্ষেপপূরণ হয়েছে। নিজের স্টারডম এককথায় ধুলোয় মিশিয়ে বসুন্ধরা ভিলায় এসেছে সুরঙ্গমা। শান্তিলতা মানুষের জন্যে কাজ করতে চেয়েছিল। পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। পারেনি। তার ছোট ছেলে গৌরব মায়ের সাধ পূর্ণ করেছে।
আরও পড়ুন:
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-৯: গৌরবের চলে যাওয়ায় ঘরে বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়ল প্রণয়কান্তি
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪১: সুন্দরবনে বাঘে-মানুষে সংঘাত
মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া বিনয়কান্তির ধরে থাকা হাতের মুঠোটা তাঁর অশক্ত দূর্বল হাতে আলতো ভাবে চেপে ধরার চেষ্টা করতেন অসুস্থ স্বর্ণময়ী। সম্বিত ফিরে বিনয়কান্তি তাকালে চোখের বিক্ষেপে জানতে চাইছেন কি হয়েছে? বিনয়কান্তি হেসে মাথা নাড়তেন, কিছু না!
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর মধুপুর আসার আগে ছুটন্ত রেলের দুলুনিতে জানালার পাশে ঘুমন্ত স্বর্ণময়ীকে প্রথম নিবিড়ভাবে দেখেছিল বিনয়কান্তি। খোলা জানালার হাওয়ায় এলোমেলো চুলকে শাসনের বাঁধনে বাঁধতে একটা কালো সিল্কের স্কার্ফ মাথায় বেঁধে নিয়েছিল স্বর্ণ। এখনও স্পষ্ট মনে আছে সেই কালো স্কার্ফে লাল সবুজ ছোট ছোট ফুলের কাজ করা ছিল। সেই ঘন কালো রুমালের ঘেরাটোপে স্বর্ণর কাটা কাটা চোখ মুখ সোনার মতো তার উজ্জ্বল ফর্সা রং মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। তারপর কাশীতে রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের হাসপাতালে বাবার সঙ্গে দেখা। কটা দিন গুরুতর অসুস্থতার পর বাবা চলে গেলেন।
অদ্বৈত সেবাশ্রমের স্বামী নিখিলানন্দ বা বাচ্চা মহারাজ বা ব্রহ্মানলচকের কল্পেশ শুক্লা বা শুক্লাজি পরম আত্মীয়ের মতো পাশে দাঁড়ালেন। মনিকর্ণিকার ঘাটে শ্রাদ্ধশান্তি মিটিয়ে বসুন্ধরাকে নিয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন বিনয়কান্তি। তারপর আবার চৈতন্য ঘাটের পাশে গঙ্গার প্রায় পাশেই স্বর্ণময়ীদের বরানগরের বাড়ির পেল্লায় ছাদে স্বর্ণ সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা।
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর মধুপুর আসার আগে ছুটন্ত রেলের দুলুনিতে জানালার পাশে ঘুমন্ত স্বর্ণময়ীকে প্রথম নিবিড়ভাবে দেখেছিল বিনয়কান্তি। খোলা জানালার হাওয়ায় এলোমেলো চুলকে শাসনের বাঁধনে বাঁধতে একটা কালো সিল্কের স্কার্ফ মাথায় বেঁধে নিয়েছিল স্বর্ণ। এখনও স্পষ্ট মনে আছে সেই কালো স্কার্ফে লাল সবুজ ছোট ছোট ফুলের কাজ করা ছিল। সেই ঘন কালো রুমালের ঘেরাটোপে স্বর্ণর কাটা কাটা চোখ মুখ সোনার মতো তার উজ্জ্বল ফর্সা রং মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। তারপর কাশীতে রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের হাসপাতালে বাবার সঙ্গে দেখা। কটা দিন গুরুতর অসুস্থতার পর বাবা চলে গেলেন।
অদ্বৈত সেবাশ্রমের স্বামী নিখিলানন্দ বা বাচ্চা মহারাজ বা ব্রহ্মানলচকের কল্পেশ শুক্লা বা শুক্লাজি পরম আত্মীয়ের মতো পাশে দাঁড়ালেন। মনিকর্ণিকার ঘাটে শ্রাদ্ধশান্তি মিটিয়ে বসুন্ধরাকে নিয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন বিনয়কান্তি। তারপর আবার চৈতন্য ঘাটের পাশে গঙ্গার প্রায় পাশেই স্বর্ণময়ীদের বরানগরের বাড়ির পেল্লায় ছাদে স্বর্ণ সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩১: মরুভূমির উপল পারে বনতলের ‘হ্রদ’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৬: কল্যাণী—অন্দরমহলের সরস্বতী
গঙ্গার দিক থেকে হু হু করে হাওয়া আসছিল সম্ভবত একটা হালকা কমলারঙের রেশমের শাড়ি পরেছিল স্বর্ণ। বেণী করা চুল গলায় শুরু একটা সোনার হার কানে ছোট্ট সোনার দুল। আর কোনও সাজগোজ নেই। বিকেলের কমলা আলোয় মোহময়ী লেগেছিল তাকে। বিনয়কান্তি কিন্তু সেদিন বিয়েটা ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সাহিত্যের প্রবল অনুরাগিনী স্বর্ণময়ীর দীপ্ত আত্মবিশ্বাসে অবাক হয়ে গিয়েছিল। সেদিন হিন্দু বা বৈদিক বিবাহে সপ্তপদীর শপথ ব্যাখ্যা করেছিল স্বর্ণ।
তৃতীয়বার দেখা হল গ্রে স্ট্রিটের বাড়িতে মাকে নিয়ে আসামে নাহারকাটিয়ায় আছাবাম চা বাগানে যাবার আগে। মায়ের জন্য চার চারখানা শাড়ি কিনে নিয়ে এসেছিল স্বর্ণ। বিনয় মৃদু আপত্তি করাতে বলেছিল বিনয় যদি কাজের প্রয়োজনে সাবেকি ধুতি শর্ট ছেড়ে কোট প্যান্ট পরতে পারে তাহলে বিনয়কান্তির দত্তের মা কেন এতকাল পড়ার শাড়ি এবং শাড়ি পরার ধরণে বদল আনবেন না। এরপর বাবার বাৎসরিক কাজের উপলক্ষে স্বর্ণ মাঝে মাঝে এসেছে কিন্তু মনে রাখার মতো দিনটা রোববার।
দোতলার ঘরে তার কাজের ফাইলগুলো খুঁজে পাচ্ছিল না বিনয়কান্তি তার বদলে ঘরে সুন্দর করে সাজানো ছিল তার প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রের উপন্যাস। মাকে ডাকাডাকি করতে পর্দা সরিয়ে অবাক করে ঘরে ঢুকে ছিল স্বর্ণময়ী। লাল পাড় গরদের শাড়ি মাথায় খোলা চুল। কপালের তেল সুদুরের ছোট্ট লাল তিলক ডান হাতে শালপাতার চিংড়িতে প্রসাদ ও ফুল। ভোরবেলা দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে গিয়েছিল। ওখান থেকে সরাসরি গ্রে স্ট্রিটে এসেছিল।
তৃতীয়বার দেখা হল গ্রে স্ট্রিটের বাড়িতে মাকে নিয়ে আসামে নাহারকাটিয়ায় আছাবাম চা বাগানে যাবার আগে। মায়ের জন্য চার চারখানা শাড়ি কিনে নিয়ে এসেছিল স্বর্ণ। বিনয় মৃদু আপত্তি করাতে বলেছিল বিনয় যদি কাজের প্রয়োজনে সাবেকি ধুতি শর্ট ছেড়ে কোট প্যান্ট পরতে পারে তাহলে বিনয়কান্তির দত্তের মা কেন এতকাল পড়ার শাড়ি এবং শাড়ি পরার ধরণে বদল আনবেন না। এরপর বাবার বাৎসরিক কাজের উপলক্ষে স্বর্ণ মাঝে মাঝে এসেছে কিন্তু মনে রাখার মতো দিনটা রোববার।
দোতলার ঘরে তার কাজের ফাইলগুলো খুঁজে পাচ্ছিল না বিনয়কান্তি তার বদলে ঘরে সুন্দর করে সাজানো ছিল তার প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রের উপন্যাস। মাকে ডাকাডাকি করতে পর্দা সরিয়ে অবাক করে ঘরে ঢুকে ছিল স্বর্ণময়ী। লাল পাড় গরদের শাড়ি মাথায় খোলা চুল। কপালের তেল সুদুরের ছোট্ট লাল তিলক ডান হাতে শালপাতার চিংড়িতে প্রসাদ ও ফুল। ভোরবেলা দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে গিয়েছিল। ওখান থেকে সরাসরি গ্রে স্ট্রিটে এসেছিল।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৮: অভিভাবিকা মা সারদা
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৫: ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা
বিনয়ের হাতটা ধরে স্বর্ণ তার দিকে তাকিয়ে খাবার খাচ্ছিল। বিনয় স্বর্ণর দিকে তাকিয়েছিল বটে কিন্তু তার মন পড়েছিল সুদূর অতীতে।
হঠাৎ আচমকা স্বর্ণর বিষম লেগে গেল শুরু হল কাশি। একনাগাড়ে কাশতে কাশতে কাহিল হয়ে পড়ল স্বর্ণময়ী। নার্স সামলাতে না পেরে বড় ডাক্তারকে খবর পাঠাল। তিনি এসে ওষুধ-বিসুদ দিয়ে কাশিটা সামলালেন কিন্তু স্বর্ণকে শান্ত রাখার জন্য ঘুমের ওষুধ দেওয়া হল। বিনয়কান্তির মনে হল স্বর্ণ আজকাল ক্ষীণস্বরে কখনও সখনও হয়ত কিছু বলবার চেষ্টা করতো। বেশিরভাগ সময়ই আচ্ছন্নের মতো শুয়ে থাকতো। খাবার খেতে খেতে সেদিন হয়তো সে কিছু বলবার চেষ্টা করেছিল। বিনয় কান্তি সামনে না থাকলে বোধহয় এই অঘটনটা ঘটতো না।
কিন্তু বড় ডাক্তারের কাছে জানা গেল স্বর্ণের হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে। রক্তের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গিয়েছে। আসলে বোন ম্যারো বা হাড়ের মজ্জার কোন একটা রোগে রক্তের লোহিত কণিকা আর তৈরি হচ্ছে না। —চলবে।
হঠাৎ আচমকা স্বর্ণর বিষম লেগে গেল শুরু হল কাশি। একনাগাড়ে কাশতে কাশতে কাহিল হয়ে পড়ল স্বর্ণময়ী। নার্স সামলাতে না পেরে বড় ডাক্তারকে খবর পাঠাল। তিনি এসে ওষুধ-বিসুদ দিয়ে কাশিটা সামলালেন কিন্তু স্বর্ণকে শান্ত রাখার জন্য ঘুমের ওষুধ দেওয়া হল। বিনয়কান্তির মনে হল স্বর্ণ আজকাল ক্ষীণস্বরে কখনও সখনও হয়ত কিছু বলবার চেষ্টা করতো। বেশিরভাগ সময়ই আচ্ছন্নের মতো শুয়ে থাকতো। খাবার খেতে খেতে সেদিন হয়তো সে কিছু বলবার চেষ্টা করেছিল। বিনয় কান্তি সামনে না থাকলে বোধহয় এই অঘটনটা ঘটতো না।
কিন্তু বড় ডাক্তারের কাছে জানা গেল স্বর্ণের হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে। রক্তের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গিয়েছে। আসলে বোন ম্যারো বা হাড়ের মজ্জার কোন একটা রোগে রক্তের লোহিত কণিকা আর তৈরি হচ্ছে না। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।