ছবি: প্রতীকী।
ফেয়ারব্যাঙ্কসের দক্ষিণে যদি আমরা অ্যাঙ্করেজের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি সেদিকেও দেখা যায় বেশ কয়েকটা নদী। যেমন চুলিটনা, তালকিটনা, সাসিটনা ইত্যাদি। আমার ধারণা অনুযায়ী এই দিকের মূল স্রোতস্বিনী হল সাসিটনা। সাসিটনা হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে ওই একই নাম নিয়ে এই নদী গিয়ে মিশেছে প্রশান্ত মহাসাগরের কুক-ইনলেট বা খাঁড়িতে।
এই নদীগুলোর ধারে ধারেই গড়ে উঠেছে ছোট ছোট জনবসতি। তার একটা বড় কারণ হল এই সমস্ত নদীতে মাছের প্রাচুর্য। আলাস্কান স্যামন মাছ জগদ্বিখ্যাত। এছাড়াও রয়েছে ট্রাউট, রকফিশ, কড, এবং হ্যালিবাট মাছ। তবে কড এবং হ্যালিবাট মূলত সমুদ্রেই কেবলমাত্র পাওয়া যায়। তবে শুধু মাছ নয়, আলাস্কান কাঁকড়াও এবং আরও কিছু প্রজাতির সেলফিশ ও বেশ সুস্বাদু।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৩: ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরকে ঘিরে রেখেছে ছোট্ট একটি নদী
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৭৬: ঈশ্বর যেমন জীব ছাড়া থাকেন না, তেমনই ভক্তও প্রভুকে ছাড়া থাকতে পারেন না
এই সব কারণেই মাছ ধরা হল, এখানকার অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের মূল উপায়। এই সমস্ত নদীর ওপরেই তারা নির্ভরশীল। তবে প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমাদের চেনা নদীতে তেমন কোনও মাছ পাওয়া যায় না। এটা ওটা সেটা ছোটখাট মাছ হয়তো পাওয়া যেতে পারে মাঝে মধ্যে কিন্তু তার ওপরে নির্ভর করে মনে হয় না কেউ জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে বলে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৬: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ছাগল ক্ষুরি ও ধানি ঘাস
তবে চেনা নদীর ওপরে অনেক রকম বিনোদন মূলক কার্যকলাপ হয়। তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ‘রিভারবোট ডিসকভারি ক্রুজ’। গ্রীষ্মকালে একটা চারতলা বিশাল নৌকায় চাপিয়ে ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হয় চেনা নদীর মোহনায় যেখানে সেটা ট্যানানা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ওই নৌকোটাকে দেখতে কিছুটা আমাদের কলকাতা-হাওড়া অঞ্চলে গঙ্গা বক্ষে যে লঞ্চ গুলো চলে সেগুলোর মতো কিন্তু পরিমাপে তার প্রায় পাঁচ ছয়গুণ বেশি তো বটেই। তার চালানোর পদ্ধতিটাও বেশ অন্য রকম।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৯: ভারতের বিপ্লবী মেয়েরা এবং অন্তরে রবীন্দ্রনাথ
যদিও সবটাই স্বয়ংক্রিয় তবুও একটু পুরোনো আমলের মতো। পর্যটনের স্বার্থেই এমন করা হয়েছে। ওটাকে প্রথমবার দেখেই আমার সেই দেবী চৌধুরাণীর গল্পের ব্রজেশ্বরের বজরার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। ব্রজেশ্বরের বজরা অবশ্যই আমি কোনওদিন চোখেও দেখিনি কিন্তু মাঝে মাঝে এমন মনে হয় যে সেটা যদি থাকতো তাহলে এমনই হতো হয়তো।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮২: খটকা
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার
আবার শীতকালে এখানে পুরো নদীটা জমে গেলে নাকি তার ওপর দিয়েই হয় ডগ-স্লেডিং। সেটাও জানলাম ওই ইন্টারভিউয়ের সময়েই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত অধ্যাপকদের সঙ্গে আমার সেদিন কথা হচ্ছিল তাদেরই একজনের পঞ্চাশটা মতো হাস্কি কুকুর রয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই স্লেজগাড়ি টানতে পারদর্শী। তিনিই বললেন, শীতকালে চেনা ওবং ট্যানানা নদীর সংযোগ স্থল থেকে কুকুরে টানা স্লেজ গাড়ির ওপরে চেপেই চলে যাওয়া যায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। আমি এর আগের বার আলাস্কা এসে স্লেজে চড়েছি। সেটা একটা হিমবাহের ওপর। কাজেই সেই অপার্থিব অনুভূতির কথা আমি বেশ বুঝতে পারি। কাজেই আমি তো তখনই চোখ বন্ধ করে চলে গেলাম কল্পনার জগতে।—চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।