রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


গীতিনৃত্যনাট্য লিখতেও গিরিশচন্দ্র ঘোষ অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। দুর্গাপুজো উপলক্ষ করে তিনি লিখেছিলেন ‘আগমনী’ এবং ‘অকালবোধন’ দুটি অসাধারণ গীতি নৃত্যনাট্য। দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে তিনি লিখেছিলেন ‘দোললীলা’। ঠিক তেমনি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে তিনি লিখলেন নতুন গীতিনৃত্যনাট্য ‘নন্দদুলাল’।
এই গীতি নৃত্যনাট্যটি প্রথম অভিনীত হয়েছিল ১৯০০ সালের ১৭ আগস্ট মিনার্ভা থিয়েটারে। প্রথম দিনের অভিনয়ে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—
কিশোরীমোহন কর (কংস)
দানি বাবু সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ (আয়ান)
অঘোরনাথ পাঠক (বসুদেব)
অনুকূলচন্দ্র বটব্যাল (নন্দ)
কুঞ্জলাল চক্রবর্তী (উপানন্দ)
তিনকড়ি দাসী (দেবকী)
সুধিরাবালা (যোগমায়া)
হরিমতি (নিদ্রা)
শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (হিজড়া)
সরোজিনী (যশোদা)
বসন্তকুমারী( রোহিনী)
সুশীলাবালা (রাধিকা)
নগেন্দ্রবালা (জটিলা )
প্রকাশমনি (কুটিলা)
তিনকড়ি দাসী (শ্রীকৃষ্ণ)
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৬৩: পৌরাণিক বিষয় নিয়েই ‘মনিহরণ’ গীতিনাট্যটি লিখেছিলেন গিরিশচন্দ্র

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬০: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— দুধি লতা ও পঞ্চরতি লতা

এই নাটকে সংগীত শিক্ষক ছিলেন দু’জন দেব কণ্ঠ বাগচী এবং নরেন্দ্রনাথ সরকার। আর নৃত্য শিক্ষক ছিলেন রানু বাবু (যাঁর ভালো নাম শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)।

তিনটি অংক বিশিষ্ট এই পৌরাণিক গীতিনাট্যটি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রচিত হয়েছিল। প্রথম অংকে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কাহিনি। দ্বিতীয় অংকে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের অন্নভিক্ষা এবং তৃতীয় অংকে কৃষ্ণকালী। এই তিনটি বিষয় নাট্যাকারে গঠিত হয়েছিল। ‘মনিহরণ’ গীতিনৃত্যনাট্য যেমন চলেছিল, ঠিক তেমন হয়তো জনপ্রিয়তা পায়নি এই ‘নন্দদুলাল’। কিন্তু প্রতিবছর জন্মাষ্টমীতে এর প্রথম অংক জন্মাষ্টমী নামে প্রত্যেক সাধারণ বঙ্গরঙ্গালয়ে অভিনীত হত।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৪: সরলাদেবী—নির্ভীক এক সরস্বতী

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৪: স্বার্থান্বেষীকেও চিনতে শেখায় এই গ্রন্থ

এই নাটকে জমাটি দুটো গানের খানিকটা করে উল্লেখ করা গেল। নন্দলয় হিজড়েরা মিলে গাইছে—
“কোলে গোপাল দোলে কোলে
খেলে ছেলে আলো দিচ্ছে ঢেলে
হিজড়া নেবে ছেলেরা আলাই বালাই
জিও খোকা, কালী মায়ীর দোহাই।।”
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-২৩: রাজসভায় মিথিলার সঙ্গীতজ্ঞ

অপর গানটি নন্দলয়ে গোপগোপিনীরা মিলে গাইছে—
“দই ঢেলে দে হলুদ গুলে,
আমাদের ঢেউ উঠেছে গোকুলে
নন্দঘোষের ঘর করে আলো
দেখ দেখ কে কালো এলো।”
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৭: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—ভালোবাসিবে বলে ভালোবাসিনে/২

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

এই নাটকের সময় থেকে মিনার্ভা থিয়েটারের নরেন্দ্র নাথ সরকারের সঙ্গে গিরিশচন্দ্রের একটু ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীকালে সেই ভুল বোঝাবুঝি এমন পর্যায়ে পৌঁছল, যে মিনার্ভা থিয়েটার ছেড়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষকে চলে যেতে হয়েছিল ক্ল্যাসিক থিয়েটারে। পরবর্তী পর্বে তারই পরিচয় তুলে ধরা হবে।—চলবে।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh–Actor –Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content