বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


মাছ ও চিংড়ি চাষে রোগের প্রাদুর্ভাব এক বড় সমস্যা। বিশেষত চিংড়ি চাষে বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন: হোয়াইট স্পট ডিজিজ। এর প্রকোপে প্রায় সম্পূর্ণ ফলনটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। এক ধরনের ডিএনএ ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে এটি হয়। এই সংক্রমণের চিহ্ন হল— চিংড়ির খোলসের ওপরে সাদা দাগ পড়ে। এর ফলে ক্রমশই খাবারগ্রহণ ক্ষমতা কমে আসে। এ ক্ষেত্রে চিংড়ি অবিলম্বে তুলে ফেলা ছাড়া আর উপায় থাকে না।
এক ধরনের পরজীবিঘটিত রোগ আছে। এর নাম মাইক্রোস্পোরিডিওসিস। চিংড়ির সাদা রঙের মলত্যাগ দেখে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। এও এক মারাত্মক রোগ, যা চাষিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এই সব রোগসংক্রমণ পর্যবেক্ষণে সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়াও কর্মীদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা দরকার। সর্বোপরি প্রাণ রসায়ন বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ করে এই সব জীবাণুর উপস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত হওয়া বিশেষ জরুরি।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১০৫: সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে মাছচাষে রাসায়নিক ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫১: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—পশুর, ধুধুল ও হাবল

হোয়াইট স্পট ডিজিজ নিয়ন্ত্রণে কোনও ওষুধই কার্যকরী নয়। বিভিন্ন জৈব সুরক্ষাবিধি মেনে চলাই একমাত্র উপায়। এ ভাবে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমানো সম্ভব। পুকুরে চাষের শুরুতে পিসিআর পরীক্ষিত চিংড়ির মীন ছাড়তে পারলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়। উপকূলবর্তী জল-কৃষি কর্ত্তৃপক্ষ নির্দেশিত (caa.gov.in) চাষপদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৬: বিগ্রহে রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা, আদিকবির নবীন নায়ক রামের মানবিক মুখ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা

এছাড়াও ফার্মের কর্মীদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুব দরকার। কারণ, রোগপ্রতিরোধের এটাই সোপান। রোগবালাই কম হলে চাষিও সর্বদাই লাভ সুনিশ্চিত করতে পারবেন। জৈব সুরক্ষাবিধি সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং এ নিয়ে সচেতন করা যেমন জরুরি তেমনই প্রয়োজনীয় হল রোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
শস্য শ্যামলা কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র, একটি ভ্রাম্যমান পরীক্ষাগার চালনা করেছে। এতে রোগজীবাণু চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণের পরামর্শ বিনামূল্যে দেওয়া হয়ে থাক। এই সুবিধা সম্পর্কে যাঁরা জ্ঞাত নন, তাঁরা সোনারপুরের আড়াপাঁচে অবস্থিত কৃষিবিজ্ঞানকেন্দ্রে গিয়ে পরামর্শ নিতে পারেন। এটি একটি প্রশংসনীয় পরিষেবা। ওই কেন্দ্রের অধিকর্তা ড. নারায়ণ সাহু এবং বিজ্ঞানী ড. স্বাগত ঘোষের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

ছবি: লেখক।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content