মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


নানা রোগ প্রতিরোধে ডাবের জল অনবদ্য। ছবি: সংগৃহীত।

উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ তীব্র দাবদাহ পুড়ছে সর্বত্র। এমন সময় গলা শুকিয়ে গেলে আমরা সাধারণত কোল্ড ড্রিঙ্কস বা ঠান্ডা জল খেয়ে নিই। অনেকই মনে করেন, এতে শরীর ঠান্ডা হয়। কিন্তু আমজনতার এই ধারণা একেবারেই ভুল।

প্রকৃতির শীতল পানীয় ডাবের জল গ্রীষ্মে শুধু তৃষ্ণা মেটায় না, শরীরের জন্যও দারুণ উপকারী। এটি শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা করে এবং গরমের দিনের অস্বস্তি কমায়। একেবারে প্রাকৃতিক ‘রিহাইড্রেটিং’ পানীয়, যেটিতে কোনও রাসায়নিক বা ক্ষতিকারক উপাদান নেই। গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এর জুড়িমেলা ভার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ডাবের জল খুবই জনপ্রিয়। এতে ৯৫ শতাংশ জল এবং প্রচুর ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ থাকে ডাবে। অনেকেই হয়তো জানেন না, ডাব একটি কম ক্যালোরিযুক্ত ‘নন-ফ্যাটেনিং’ পানীয়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
 

কেন ডাবের জল খাবেন?

 

ডিহাইড্রেশন এড়াতে

অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীরে ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জল বেরিয়ে যায়। আবার কখনও অতিরিক্ত গরমে বমির ফলেও অতিরিক্ত জল শরীর থেকে বেরোয়। প্রয়োজনীয় জল শরীর থেকে বেরিয়ে যাবার ফলে ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা হয়। ডাবের জল শরীরে এই জলের ঘাটতি পূরণ করে। শরীরকে ‘রিহাইড্রেট’ করে, ডাবের জল ব্যয়াম-পরবর্তী ‘রিহাইড্রেশন’ পানীয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যায়ামের সময় হারিয়ে যাওয়া জল এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলিকে পুনরায় পূরণ করে ক্লান্তি প্রতিরোধ করে।
 

কিডনিতে টক্সিন জমতে দেয় না

শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এবং কিডনিতে টক্সিন জমতে দেয় না। ডাবের জল কিডনিতে শুধু পাথর গঠনে বাধা দেয় না পাথরের সংখ্যা কমাতে কার্যকর বলে প্রমাণিত।

আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: রাজনীতির পটভূমিকায় ‘মহারানি সিজন ১’ টানটান উত্তেজনায় ভরা

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২৬: রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে বাবু

 

ত্বকের সেরা বন্ধু

প্রদাহ এবং ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট (UV) রশ্মির ক্ষেত্রে ডাবের জল আপনার ত্বকের সেরা বন্ধু হতে পারে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল হওয়ায় ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। বার্ধক্যের প্রথম লক্ষণগুলিকে বিলম্বিত করে।
 

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডাবের জল খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং এইচডিএল (HDL) বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রাকে বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
 

দাঁতের ক্ষয় রোধ করে

ডাবের জলে লরিক অ্যাসিড থাকে। এটি এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড যা শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল। মুখের মধ্যে ক্যারিস-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৯: অনেক যতনে ‘বড়দিদি’-র পর্ব রাখিনু সেথা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৪: সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ

 

ব্লাড প্রেশার

ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের জল বেশ কার্যকরী। কারণ এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন-সি, যা ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণ করে।
 

সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করে

শরীরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রার তারতম্য বা যদি পটাশিয়াম অধিক মাত্রায় কমে যায় সেক্ষেত্রে ডাবের জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

ডাবের জলে অ্যান্টি-ভাইরাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪২: শ্রীমার ভাইপো খুদি

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২০: মানকুমারী বসু—সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল রত্ন!

 

ডায়াবেটিসে নিশ্চিন্তে খান

ডাবের জলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমের দিকে। ফলে ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য এই পানীয় একেবারে আদর্শ। ডাবের জল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও বাড়ায় না।
 

ওজন নিয়ন্ত্রণ

রোগা হবেন বলে অনেকেই সারা দিনে ঘন ঘন চুমুক দেন বাজারচলতি ফলের রসে। ফলের রস হলেও এ ধরনের পানীয়ে বাড়তি চিনি মেশানো থাকে। যার ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। পরিবর্তে ডাবের জল খেতে পারেন। ডাবের জলে ক্যালোরির পরিমাণ অত্যন্ত কম। ফলে তা ওজন ঝরাতে সাহায্য করে।
 

কোল্ড ড্রিঙ্কসের সেরা বিকল্প

যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের কিন্তু ডাবের জল চলবে না। অনেক সময় বাচ্চারা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার বায়না করে। সেক্ষেত্রে কোল্ড ড্রিঙ্কসের পরিবর্তে ওদের ডাবের জল দিলে ভালো। বোতলজাত ডাবের জলের পরিবর্তে ন্যাচারাল ডাবের জল শরীরের জন্য সব সময় ভালো। তবে বিশেষ কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো ডাবের জল খেতে হবে।

যোগাযোগ: ৯৪৩৩৯৯১৭১৫

* সুবর্ণিতা মুখোপাধ্যায়, সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান, পিয়ারলেস হাসপাতাল।

Skip to content