ছবি: প্রতীকী।
পাঞ্চালরাজ্যে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় সমবেত রাজাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হলেন ব্রাহ্মণবেশী অর্জুন। ক্ষত্রিয়রাজাদের ঈর্ষাজনিত প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হলেন জিষ্ণু অর্জুন। সেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমসেন। দুই ভাই মিলে পরাক্রান্ত ক্ষত্রিয় রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধে শৌর্য প্রকাশ করে, রাজাদের পরাজিত করলেন। হতচকিত রাজারা তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলেন। ব্রাহ্মণরা অবধ্য,তা ছাড়াও সেখানে উপস্থিত কৃষ্ণের মধ্যস্থতায়, ক্ষত্রিয় রাজারা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে বিরত হলেন। ভীম ও অর্জুন দ্রৌপদীকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুপদরাজ্যে, তাঁদের আশ্রয় কুম্ভকারগৃহের দ্বারদেশে উপস্থিত হলেন। ঘরের ভেতরে ছিলেন মা কুন্তী। মহানন্দে, পাণ্ডবদ্বয় জননীকে জানালেন, তাঁরা ভিক্ষা এনেছেন। কিছু না দেখেই, কুটীরের অভ্যন্তর থেকে মা বললেন, ভুঙ্ক্তেতি সমেত্য সর্ব্বে। সকলে মিলে ভোগ কর।
পরে কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে দেখে বলে উঠলেন, কষ্টং ময়া ভাষিতমিতি কষ্টে এ কথা বলে ফেলেছি। ধর্মবিরুদ্ধ কথার পরিণাম বার বার চিন্তা করে শঙ্কিত হলেন মা কুন্তী। দ্রৌপদীর হাত ধরে জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠিরের কাছে উপস্থিত হলেন। জানালেন, অনুজ দুই ভাই দ্রুপদ রাজার কন্যাটিকে, জননীকে সমর্পণ করেছেন। তিনিও মায়ের উপযুক্ত কথাই বলেছেন—সকলে মিলে ভোগ কর। সমেত্য ভুঙ্ক্তেতি। আজ যে কথা আমি বলেছি সেটি মিথ্যা না হয়। পাঞ্চালরাজের কন্যার যেন কোন (বহুস্বামীগ্রহণের ফলে) অধর্মাচরণে যুক্ত না হন,তাঁর বার বার নরকদর্শন যেন না হয়।
বুদ্ধিমান যুধিষ্ঠির এ বিষয়ে মা-কে আশ্বস্ত করে অর্জুনকে বললেন, ত্বয়া জিতা ফাল্গুন! যাজ্ঞসেনী ত্বয্যেব শোভিষ্যতি রাজপুত্রী। প্রজ্বাল্যতামগ্নিরমিত্রসাহ! গৃহাণ পাণিং বিধিবত্ত্বমস্যাঃ।। হে ফাল্গুন অর্জুন, তুমি জয়ী। রাজপুত্রী যাজ্ঞসেনী তোমাতেই শোভা পায়। অগ্নি প্রজ্বলিত কর, বিধিমতে এঁর পাণিগ্রহণ কর। অর্জুন জ্যেষ্ঠর প্রস্তাবে অসম্মত হয়ে বললেন, যুধিষ্ঠির অর্জুনকে এই ধর্মবিরুদ্ধ আচরণে প্ররোচিত করবেন না, জ্যেষ্ঠর এই আদেশ ধর্মসঙ্গত নয়। মা মাং নরেন্দ্র! ত্বমধর্ম্মভাজং কৃথা ন ধর্ম্মোঽয়মশিষ্টদৃষ্টঃ। দ্রৌপদীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হবেন, প্রথমে যুধিষ্ঠির,তারপরে যথাক্রমে ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। এই কন্যাও যুধিষ্ঠিরের আদেশ পালন করবেন।
পরে কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে দেখে বলে উঠলেন, কষ্টং ময়া ভাষিতমিতি কষ্টে এ কথা বলে ফেলেছি। ধর্মবিরুদ্ধ কথার পরিণাম বার বার চিন্তা করে শঙ্কিত হলেন মা কুন্তী। দ্রৌপদীর হাত ধরে জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠিরের কাছে উপস্থিত হলেন। জানালেন, অনুজ দুই ভাই দ্রুপদ রাজার কন্যাটিকে, জননীকে সমর্পণ করেছেন। তিনিও মায়ের উপযুক্ত কথাই বলেছেন—সকলে মিলে ভোগ কর। সমেত্য ভুঙ্ক্তেতি। আজ যে কথা আমি বলেছি সেটি মিথ্যা না হয়। পাঞ্চালরাজের কন্যার যেন কোন (বহুস্বামীগ্রহণের ফলে) অধর্মাচরণে যুক্ত না হন,তাঁর বার বার নরকদর্শন যেন না হয়।
বুদ্ধিমান যুধিষ্ঠির এ বিষয়ে মা-কে আশ্বস্ত করে অর্জুনকে বললেন, ত্বয়া জিতা ফাল্গুন! যাজ্ঞসেনী ত্বয্যেব শোভিষ্যতি রাজপুত্রী। প্রজ্বাল্যতামগ্নিরমিত্রসাহ! গৃহাণ পাণিং বিধিবত্ত্বমস্যাঃ।। হে ফাল্গুন অর্জুন, তুমি জয়ী। রাজপুত্রী যাজ্ঞসেনী তোমাতেই শোভা পায়। অগ্নি প্রজ্বলিত কর, বিধিমতে এঁর পাণিগ্রহণ কর। অর্জুন জ্যেষ্ঠর প্রস্তাবে অসম্মত হয়ে বললেন, যুধিষ্ঠির অর্জুনকে এই ধর্মবিরুদ্ধ আচরণে প্ররোচিত করবেন না, জ্যেষ্ঠর এই আদেশ ধর্মসঙ্গত নয়। মা মাং নরেন্দ্র! ত্বমধর্ম্মভাজং কৃথা ন ধর্ম্মোঽয়মশিষ্টদৃষ্টঃ। দ্রৌপদীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হবেন, প্রথমে যুধিষ্ঠির,তারপরে যথাক্রমে ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। এই কন্যাও যুধিষ্ঠিরের আদেশ পালন করবেন।
অর্জুনরা পাঁচভাই এবং এমন কি দ্রৌপদীও মাননীয় জ্যেষ্ঠর আদেশপালনের যোগ্য। ইয়ঞ্চ কন্যা ভবতো নিযোজ্যাঃ। অর্জুনের মতে, সুনামের কারণে, এ বিষয়ে, ধর্মসঙ্গত এবং সুচিন্তিত কর্তব্যই বিধেয়। এর ফলে পাঞ্চালরাজের কল্যাণও সাধিত হবে তাই তেমন উপদেশই কাম্য। ভাইরা সকলেই যুধিষ্ঠিরের অনুগত রয়েছেন। পাণ্ডব ভাইরা সস্নেহে, ভক্তিসহকারে জিষ্ণু অর্জুনের বক্তব্য শুনে, পাঞ্চালীর দিকে চোখ ফেরালেন। তখন তাঁদেরকে একদৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করছেন কৃষ্ণা পাঞ্চালী। একে অপরে দৃষ্টি বিনিময় করে, পঞ্চ পাণ্ডব হৃদয় দিয়ে, পাঞ্চালীকে গ্রহণ করলেন। দ্রৌপদীকে দর্শনমাত্র, ইন্দ্রিয়জয়কারী প্রবল কামনার স্রোতে ভেসে গেলেন পাঁচ ভাই।বিধাতাপুরুষ স্বয়ং যেন সব পুরুষের কাঙ্খিত রূপবতী করে, সৃষ্টি করেছিলেন দ্রৌপদীকে। তাই তিনি ছিলেন অনন্যা,সকলের মনোহারিণী।
ভাইদের ভাবভঙ্গী লক্ষ্য করলেন জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির। মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসের সমস্ত বাণী স্মরণ করলেন তিনি। ভাইদের পরস্পরের ঐক্যে চিড় ধরতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁদেরকে আশ্বস্ত করলেন, সর্ব্বেষাং দ্রৌপদী ভার্য্যা ভবিষ্যতি হি নঃ শুভা।। এই কল্যাণী দ্রৌপদী আমাদের সকলের ভার্য্যা হবেন। তখন জ্যেষ্ঠ পাণ্ডবের প্রস্তাব গভীরভাবে পর্যালোচনা করে, পাণ্ডুপুত্ররা অসীম অধ্যবসায়সহ অবস্থান করতে লাগলেন।ওদিকে বৃষ্ণিবংশীয়, বীর, কৃষ্ণ, প্রখ্যাত কুরুবীরদের উপস্থিতি অনুমান করে, বলরামকে সঙ্গে নিয়ে, হাজির হলেন, কুরুবীরদের সম্ভাব্য আস্তানা,সেই কুম্ভকারের কর্মশালায়। কৃষ্ণ ও বলরাম দেখলেন সেখানে পুষ্ট ও দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট যুধিষ্ঠির বসে আছেন। অজাতশত্রু যুধিষ্ঠিরকে ঘিরে বসে আছেন জাজ্বল্যমান অগ্নিশিখাতুল্য দ্যুতিময় পাণ্ডবরা। ধার্মিকশ্রেষ্ঠ অজমীঢ়বংশোদ্ভূত কুন্তীপুত্রের চরণদুটি স্পর্শ করে, বাসুদেব বললেন, কৃষ্ণোঽহমস্মীতি। আমি কৃষ্ণ।বলরামও যুধিষ্ঠিরের পদবন্দনা করে তাঁর পরিচয় জানালেন। পাণ্ডবরা আনন্দিত হলেন। কৃষ্ণ ও বলরাম উভয়ে, পিসিমাতা দেবী কুন্তীর পদযুগল স্পর্শ করে শ্রদ্ধা জানালেন।
ভাইদের ভাবভঙ্গী লক্ষ্য করলেন জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির। মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসের সমস্ত বাণী স্মরণ করলেন তিনি। ভাইদের পরস্পরের ঐক্যে চিড় ধরতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁদেরকে আশ্বস্ত করলেন, সর্ব্বেষাং দ্রৌপদী ভার্য্যা ভবিষ্যতি হি নঃ শুভা।। এই কল্যাণী দ্রৌপদী আমাদের সকলের ভার্য্যা হবেন। তখন জ্যেষ্ঠ পাণ্ডবের প্রস্তাব গভীরভাবে পর্যালোচনা করে, পাণ্ডুপুত্ররা অসীম অধ্যবসায়সহ অবস্থান করতে লাগলেন।ওদিকে বৃষ্ণিবংশীয়, বীর, কৃষ্ণ, প্রখ্যাত কুরুবীরদের উপস্থিতি অনুমান করে, বলরামকে সঙ্গে নিয়ে, হাজির হলেন, কুরুবীরদের সম্ভাব্য আস্তানা,সেই কুম্ভকারের কর্মশালায়। কৃষ্ণ ও বলরাম দেখলেন সেখানে পুষ্ট ও দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট যুধিষ্ঠির বসে আছেন। অজাতশত্রু যুধিষ্ঠিরকে ঘিরে বসে আছেন জাজ্বল্যমান অগ্নিশিখাতুল্য দ্যুতিময় পাণ্ডবরা। ধার্মিকশ্রেষ্ঠ অজমীঢ়বংশোদ্ভূত কুন্তীপুত্রের চরণদুটি স্পর্শ করে, বাসুদেব বললেন, কৃষ্ণোঽহমস্মীতি। আমি কৃষ্ণ।বলরামও যুধিষ্ঠিরের পদবন্দনা করে তাঁর পরিচয় জানালেন। পাণ্ডবরা আনন্দিত হলেন। কৃষ্ণ ও বলরাম উভয়ে, পিসিমাতা দেবী কুন্তীর পদযুগল স্পর্শ করে শ্রদ্ধা জানালেন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮২: রাজা দশরথের মৃত্যু—প্রশাসকের অভাবজনিত অস্তিত্বের সঙ্কট
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— রামবাণ ও পানি তাঙ্কি
উভয়পক্ষের কুশলবিনিময়ের পরে যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করলেন, কথং বয়ং বাসুদেব! ত্বয়েহ গূঢ়া বসন্তো বিদিতাশ্চ সর্ব্বে। ওহে, বসুদেবতনয় কৃষ্ণ,তুমি কী করে জানলে যে আমরা সকলে এখানে আত্মগোপন করে বসবাস করছি? স্মিত হাসি হেসে কৃষ্ণ বললেন, গূঢ়োঽপ্যগ্নির্জ্ঞায়তে অগ্নি প্রচ্ছন্ন রইলেও জানা যায় যে। তং বিক্রমং পাণ্ডবেয়ানতীত্য কোঽন্যঃ কর্ত্তা বিদ্যতে মানুষেষু। পাণ্ডব ছাড়া মানবকুলে অন্য কে এমন আছেন যিনি ওই প্রকার শৌর্য প্রকাশ করতে পারেন? ভাগ্যক্রমে পাণ্ডবরা ওই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড থেকে বিপদ মুক্ত হতে পেরেছেন। পরম সৌভাগ্যের বিষয় হল, মন্ত্রীসহ, পাপিষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্রপুত্র দুর্যোধনের পরিকল্পনা সফল হয়নি। কৃষ্ণ আন্তরিক অভিনন্দন জানালেন, পাণ্ডবদের কল্যাণ হোক, বর্দ্ধিত অগ্নিশিখার মতো পাণ্ডবদের যশ ছড়িয়ে পড়ুক। রাজারা যেন তাঁদের উপস্থিতি না জানেন। এরপরে কৃষ্ণ ও বলরাম যুধিষ্ঠিরের অনুমতিক্রমে নিজেদের শিবিরের উদ্দেশ্যে বিদায় নিলেন।
স্বয়ংবরসভায় জিতা ভগিনীর ভবিতব্য কোথায় নির্দিষ্ট হয়েছে?অজ্ঞাতপরিচয় ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণপুত্রদ্বয়ের বাসস্থান কোথায়? মনে মনে এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে, পাণ্ডবদের প্রকৃত পরিচয় জানতে আগ্রহী হয়ে, দ্রুপদপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন, গোপনে, ভীম ও অর্জুনের অজ্ঞাতসারে, তাঁদেরকে অনুসরণ করলেন। পাণ্ডবদের বাসগৃহের চারিপাশে নিজের সহচরদের নিযুক্ত করলেন। তিনি নিজে পাণ্ডবদের বাসগৃহের কাছে অন্তরালে প্রচ্ছন্ন রইলেন। হয়তো নজরদারি বজায় রাখবার কারণেই তাঁর এই উদ্যোগ।। সন্ধ্যায় ভিক্ষান্তে ফিরে এলেন শত্রুজয়ী অর্জুন ও ভীম, মহানুভব নকুল ও সহদেব। উদারমনা ভাইরা জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরকে ভিক্ষালব্ধ দ্রব্য সমর্পণ করলেন। যথাকাল জননী কুন্তী বদান্যতাসহকারে দ্রৌপদীকে নির্দেশ দিলেন, সকলের আগে অন্নের অগ্রভাগ দেবতা ও ব্রাহ্মণদের উপহার দাও, এরপরে দাও চারিদিকে সমবেত ভোজনার্থীদের, অবশিষ্টাংশের দুইভাগের অর্দ্ধভাগটির চার ভাগ চার পাণ্ডুপুত্রের জন্যে নির্দিষ্ট, আর মা কুন্তীর এক ভাগ ও দ্রৌপদীর জন্যে থাকবে এক ভাগ। অবশিষ্টাংশের অর্দ্ধভাগ দিতে হবে ভীমসেনকে কারণ তাঁর আকৃতি গজশ্রেষ্ঠতুল্য, গৌরবর্ণ এই যুবকটি বিশালাদেহী। ইনি বলশালী তাই তাঁর ভোজনও অনেক বেশি।
স্বয়ংবরসভায় জিতা ভগিনীর ভবিতব্য কোথায় নির্দিষ্ট হয়েছে?অজ্ঞাতপরিচয় ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণপুত্রদ্বয়ের বাসস্থান কোথায়? মনে মনে এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে, পাণ্ডবদের প্রকৃত পরিচয় জানতে আগ্রহী হয়ে, দ্রুপদপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন, গোপনে, ভীম ও অর্জুনের অজ্ঞাতসারে, তাঁদেরকে অনুসরণ করলেন। পাণ্ডবদের বাসগৃহের চারিপাশে নিজের সহচরদের নিযুক্ত করলেন। তিনি নিজে পাণ্ডবদের বাসগৃহের কাছে অন্তরালে প্রচ্ছন্ন রইলেন। হয়তো নজরদারি বজায় রাখবার কারণেই তাঁর এই উদ্যোগ।। সন্ধ্যায় ভিক্ষান্তে ফিরে এলেন শত্রুজয়ী অর্জুন ও ভীম, মহানুভব নকুল ও সহদেব। উদারমনা ভাইরা জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরকে ভিক্ষালব্ধ দ্রব্য সমর্পণ করলেন। যথাকাল জননী কুন্তী বদান্যতাসহকারে দ্রৌপদীকে নির্দেশ দিলেন, সকলের আগে অন্নের অগ্রভাগ দেবতা ও ব্রাহ্মণদের উপহার দাও, এরপরে দাও চারিদিকে সমবেত ভোজনার্থীদের, অবশিষ্টাংশের দুইভাগের অর্দ্ধভাগটির চার ভাগ চার পাণ্ডুপুত্রের জন্যে নির্দিষ্ট, আর মা কুন্তীর এক ভাগ ও দ্রৌপদীর জন্যে থাকবে এক ভাগ। অবশিষ্টাংশের অর্দ্ধভাগ দিতে হবে ভীমসেনকে কারণ তাঁর আকৃতি গজশ্রেষ্ঠতুল্য, গৌরবর্ণ এই যুবকটি বিশালাদেহী। ইনি বলশালী তাই তাঁর ভোজনও অনেক বেশি।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৫: মা সারদার পুনরায় কাশীযাত্রা
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার
সানন্দে সেই রাজপুত্রী পতিপরিচর্যাবিষয়ক উপদেশগুলিকে ভালো মনে গ্রহণ করলেন। সেই সাধ্বী দ্রৌপদী দেবী কুন্তীর পরামর্শ অনুসারে কাজ করলেন। পঞ্চ পাণ্ডব, সকলে মিলে, সেই অন্ন ভোজন করলেন। বলবান সহদেব, কুশ ঘাস বিছিয়ে মাটিতে শয্যা প্রস্তুত করলেন। পঞ্চ পাণ্ডবের প্রত্যেকে শয্যায় নিজের নিজের মৃগচর্ম বিছিয়ে, সকলে ভূমিতলে শয়ন করলেন। কুরুশ্রেষ্ঠ পাণ্ডবদের শির রইল দক্ষিণ দিকে, দেবী কুন্তী থাকলেন শিরোদেশে, পায়ের উত্তরে অর্থাৎ পদতলে শয্যা গ্রহণ করলেন দ্রৌপদী। কুশশয্যায় পাণ্ডুপুত্রদের সঙ্গে শায়িতা দ্রৌপদী হলেন তাঁদের পাদোপাধান বা পায়ের বালিশ। দ্রৌপদী মনে দুঃখ অনুভব করলেন না এবং কুরুকুলের মধ্যমণিদের প্রতি অবজ্ঞাও প্রকাশ করলেন না। অশেত ভূমৌ সহ পাণ্ডুপুত্রৈঃ পাদোপধানীব কৃতা কুশেষু। ন তত্র দুঃখং মনসাপি তস্যা ন চাবমেনে কুরুপুঙ্গবাংস্তান্।।
শয়নকালে পাণ্ডবভাইদের আলোচনার বিষয় হল সেনাসম্পর্কিত বিবিধ বিষয়। দিব্য অস্ত্র,রথ, গজ, খড়্গ, বাণসমূহ প্রভৃতি বিষয়ে কথোপকথন শুরু হল। সেই সময়ে পাঞ্চালরাজপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন, পাণ্ডবদের আলোচনা শুনতে পেলেন।তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা, দ্রৌপদীকে পাণ্ডবদের পদতলে শায়িতা অবস্থায় দেখলেন।সেই রাতেই রাজপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত দ্রুপদ রাজাকে অবহিত করবার উদ্দেশ্যে দ্রুত যাত্রা করলেন। পাণ্ডবদের পরিচয় তখনও দ্রুপদরাজের কাছে অজ্ঞাত। তাই তিনি বিষণ্ণ। রাজা ধৃষ্টদ্যুম্নের দর্শনমাত্র প্রশ্ন করলেন, ক্ব সা গতা কেন নীতা চ কৃষ্ণা। কোথায় গেল সে? কে কৃষ্ণাকে নিয়ে গেল? করদাতা কোন হীনজাতের অন্ত্যজ চণ্ডালাদি শূদ্র বা বৈশ্য কী তাকে লাভ করেছে? কাদায় লিপ্ত পা আমার মাথাটিতে রাখেনি তো তারা? কিংবা মালাগাছি কী শেষকালে শ্মশানে গিয়ে পড়ল?কোন সবর্ণজাত ক্ষত্রিয় বা কোনও উত্তম কুলজাত ব্রাহ্মণ তাঁকে গ্রহণ করেছেন কী?যদি হীন কোন বর্ণের পুরুষ দ্রৌকপদীকে স্পর্শ করে থাকে, তাহলে সে আজ তার বাম চরণটি রেখেছে আমার মাথায়। কচিন্ন বামৌ মম মূর্দ্ধ্নি পাদঃ কৃষ্ণাভিমর্ষেণ কৃতোঽদ্য পুত্র!। দ্রুপদরাজ জানালেন, তিনি কী অনুশোচনাবোধে কাতর হবেন?অর্জুনের সঙ্গে দ্রৌপদীর মিলন হলে, তিনি খুবই সন্তুষ্ট হবেন। পাঞ্চালরাজের অসীম আগ্রহ, কে সেই ব্যক্তি? যিনি আজ কন্যাকে জয় করলেন? তিনি যথাযথ বৃত্তান্ত জানতে অত্যন্ত আগ্রহী। বদস্ব তত্ত্বেন মহানুভাব! কোঽসৌ বিজেতা দুহিতুর্মমাদ্য। বিচিত্রবীর্য্যের পুত্র, কুরুপ্রধান, পাণ্ডুর পুত্ররা কী আছেন?পৃথা কুন্তীর কনিষ্ঠ পুত্র পার্থ কী ধনুক ধারণ করে, লক্ষ্যভেদ করেছেন? কচ্চিত্তু পার্থেন যবীয়সাঽদ্য ধনুর্গৃহীতং নিহতঞ্চ লক্ষ্যম্।
শয়নকালে পাণ্ডবভাইদের আলোচনার বিষয় হল সেনাসম্পর্কিত বিবিধ বিষয়। দিব্য অস্ত্র,রথ, গজ, খড়্গ, বাণসমূহ প্রভৃতি বিষয়ে কথোপকথন শুরু হল। সেই সময়ে পাঞ্চালরাজপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন, পাণ্ডবদের আলোচনা শুনতে পেলেন।তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা, দ্রৌপদীকে পাণ্ডবদের পদতলে শায়িতা অবস্থায় দেখলেন।সেই রাতেই রাজপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত দ্রুপদ রাজাকে অবহিত করবার উদ্দেশ্যে দ্রুত যাত্রা করলেন। পাণ্ডবদের পরিচয় তখনও দ্রুপদরাজের কাছে অজ্ঞাত। তাই তিনি বিষণ্ণ। রাজা ধৃষ্টদ্যুম্নের দর্শনমাত্র প্রশ্ন করলেন, ক্ব সা গতা কেন নীতা চ কৃষ্ণা। কোথায় গেল সে? কে কৃষ্ণাকে নিয়ে গেল? করদাতা কোন হীনজাতের অন্ত্যজ চণ্ডালাদি শূদ্র বা বৈশ্য কী তাকে লাভ করেছে? কাদায় লিপ্ত পা আমার মাথাটিতে রাখেনি তো তারা? কিংবা মালাগাছি কী শেষকালে শ্মশানে গিয়ে পড়ল?কোন সবর্ণজাত ক্ষত্রিয় বা কোনও উত্তম কুলজাত ব্রাহ্মণ তাঁকে গ্রহণ করেছেন কী?যদি হীন কোন বর্ণের পুরুষ দ্রৌকপদীকে স্পর্শ করে থাকে, তাহলে সে আজ তার বাম চরণটি রেখেছে আমার মাথায়। কচিন্ন বামৌ মম মূর্দ্ধ্নি পাদঃ কৃষ্ণাভিমর্ষেণ কৃতোঽদ্য পুত্র!। দ্রুপদরাজ জানালেন, তিনি কী অনুশোচনাবোধে কাতর হবেন?অর্জুনের সঙ্গে দ্রৌপদীর মিলন হলে, তিনি খুবই সন্তুষ্ট হবেন। পাঞ্চালরাজের অসীম আগ্রহ, কে সেই ব্যক্তি? যিনি আজ কন্যাকে জয় করলেন? তিনি যথাযথ বৃত্তান্ত জানতে অত্যন্ত আগ্রহী। বদস্ব তত্ত্বেন মহানুভাব! কোঽসৌ বিজেতা দুহিতুর্মমাদ্য। বিচিত্রবীর্য্যের পুত্র, কুরুপ্রধান, পাণ্ডুর পুত্ররা কী আছেন?পৃথা কুন্তীর কনিষ্ঠ পুত্র পার্থ কী ধনুক ধারণ করে, লক্ষ্যভেদ করেছেন? কচ্চিত্তু পার্থেন যবীয়সাঽদ্য ধনুর্গৃহীতং নিহতঞ্চ লক্ষ্যম্।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
মুভি রিভিউ: মামুটির মাল্টিস্টারার ছবি ‘সিবিআই ৫: দ্য ব্রেন’ গতানুগতিক থ্রিলার
দ্রুপদরাজ্যে রাজপুত্রী দ্রৌপদীর স্বয়ংবরসভায় উপস্থিত ব্রাহ্মণবেশী পঞ্চ পাণ্ডবদের অন্যতম ধনুর্দ্ধারী অর্জুন তাঁর নিজের কৃতিত্বে বিজয়ী হলেন। রাজকন্যা পাঞ্চালী সাগ্রহে বরমাল্য দুলিয়ে দিলেন তৃতীয় পাণ্ডব জিষ্ণুর গলায়। দ্রৌপদীর মুখে অস্ফুট দুর্বোধ্য হাসি। আকাঙ্খাপূরণের এ হাসি, আত্মতৃপ্তির। সেখানে নেই বাসনার কামগন্ধ। নেই মদমত্ততা, তবুও তিনি কোন শৃঙ্গারের অভিব্যক্তি বিনা, বাচিক প্রকাশ ছাড়াই স্খলিতা, বিচলিতা যেন সুপ্ত আবেগতাড়িতা হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। এই প্রশমিত উচ্ছ্বাসকে সংযমে বেঁধে, ওষ্ঠে মৃদু হাসি নিয়ে, শুভ্র বরমাল্য হাতে, কৌন্তেয় অর্জুনের নিকটবর্তী হলেন। মদাদৃতেঽপি স্খলতীব ভাবৈর্বাচা বিনা ব্যাহরতীব দৃষ্ট্যা। আদায় শুক্লং বরমাল্যদাম জগাম কুন্তীসুতমুৎস্ময়ন্তী।। বরণ করলেন ব্রাহ্মণদের দলে উপবিষ্ট মধ্যমণি অর্জুনকে। ক্ষিপ্ত্বা স্রজং পার্থিববীরমধ্যে বরায় বব্রে দ্বিজসংঘমধ্যে। এ বরণের সাক্ষী থাকলেন শ্রেষ্ঠ রাজা ও রাজপুরুষেরা,বিখ্যাত ও অখ্যাত ব্রাহ্মণকুল, আপামর দ্রুপদরাজ্যবাসী। অথচ কোন এক অজ্ঞাত ভবিতব্যের বিধান অপেক্ষা করছিল দ্রুপদকন্যা দ্রৌপদীর জন্যে।
স্বয়ংবরের কোন তাৎপর্যই রইল না। পাণ্ডবমাতা কুন্তী যাচিতদ্রব্যের ভাগবাটোয়ারা করে দিলেন পাঁচ পুত্রের মধ্যে। পরে অনুশোচনা করেছেন। কিন্তু মাতৃভক্ত পুত্ররা, যে, এ আদেশ অন্যথা করবে না, এ বিষয়ে তিনি এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ধার্মিক যুধিষ্ঠিরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। দেবী কুন্তীর অনুরোধ ছিল, যুধিষ্ঠির এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, যার ফলে অধর্মাচরণজনিত অর্থাৎ বহুস্বামীগ্রহণজনিতপাপের ফলহেতু দ্রৌপদীর নরকদর্শন যেন না হয়। পাঞ্চালরাজস্য সুতামধর্মো ন চোপবর্ত্তত ন বিভ্রমেচ্চ।
স্বয়ংবরের কোন তাৎপর্যই রইল না। পাণ্ডবমাতা কুন্তী যাচিতদ্রব্যের ভাগবাটোয়ারা করে দিলেন পাঁচ পুত্রের মধ্যে। পরে অনুশোচনা করেছেন। কিন্তু মাতৃভক্ত পুত্ররা, যে, এ আদেশ অন্যথা করবে না, এ বিষয়ে তিনি এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ধার্মিক যুধিষ্ঠিরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। দেবী কুন্তীর অনুরোধ ছিল, যুধিষ্ঠির এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, যার ফলে অধর্মাচরণজনিত অর্থাৎ বহুস্বামীগ্রহণজনিতপাপের ফলহেতু দ্রৌপদীর নরকদর্শন যেন না হয়। পাঞ্চালরাজস্য সুতামধর্মো ন চোপবর্ত্তত ন বিভ্রমেচ্চ।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
ধার্মিক যুধিষ্ঠির জানতেন, বরমাল্য অর্জনের কৃতিত্ব একান্তভাবে অর্জুনের। তাই নির্দ্বিধায় ঘোষণা করেছিলেন, দ্রৌপদীকে বিবাহের অধিকার শুধুমাত্র বিজয়ী অর্জুনের। অর্জুন এই প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করলেন। তাঁর যুক্তি হল এই সিদ্ধান্ত ধর্মসঙ্গত নয়। কারণ গার্হস্থ্যধর্মানুসারে জ্যেষ্ঠর বিবাহ সর্বাগ্রে। তার পরে ক্রমানুসারে কনিষ্ঠদের। এ যুক্তি ধোপে টেকে না। কারণ ইতিপূর্বে ভীমসেন রাক্ষসী হিড়িম্বার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। ভীমসেন এখন এক সন্তানের পিতা। সে বিবাহের কোনও সাক্ষী ছিল না। ছিল না প্রথাগত সিদ্ধি, শুধু ছিল মায়ের অনুমোদন। প্রখ্যাত অভিজাত বিবাহেই কী শুধুমাত্র গার্হস্থ্যধর্মের নিয়ম পালনীয়? লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটে যাওয়া বিবাহের কোন সামাজিক স্বীকৃতি নেই? নেই মন দেওয়া-নেওয়ার কোন মানবিক অনুমোদন?
আর পাত্রী দ্রৌপদী? যিনি সপ্রেমে বরণ করেছিলেন, যে যুবা পুরুষটিকে, সেই স্বয়ংবরসভার নায়কের এই ধর্মনিষ্ঠতার প্রতিক্রিয়ায় দ্রৌপদীর মানসিক অবস্থা কেমন হল? মহাভারতকার সে বিষয়ে নীরব। কিংবা এটাই বোধ হয় পিতৃতান্ত্রিকতার নিয়ম, নারীদের নিজস্ব কোন পছন্দ থাকতে নেই, স্বয়ংবর সভার শর্ত স্থির করেন বাবা, দাদা প্রভৃতি অভিভাবকেরা। পরিণাম নির্ধারিত হবে অভিভাবকদের সিদ্ধান্তে।সেখানে পাত্রের নিজস্ব মতপ্রকাশের অধিকার থাকলেও পাত্রীর সম্মতি বা অসম্মতির তোয়াক্কা কেউ করেন না। আজও এই ধারা অধিকাংশ ভারতীয় সমাজেই প্রবহমান।
নিশ্চুপ দ্রৌপদী শুধু দর্শক ও শ্রোতার ভূমিকায় সেখানেই রয়েছেন।
অর্জুনের এই অস্বীকারের ফল হল আরও সুদৃরপ্রসারী। এতক্ষণ পাণ্ডব ভাইদের, বিজিতা দ্রৌপদীর প্রতি, যে দৃষ্টি ছিল সম্ভ্রমের, এখন তা হল লোলুপ সকাম জ্বালাময়ী দৃষ্টি। প্রজ্বলিত অগ্নিশিখার মতো দ্যুতিময়ী দ্রৌপদী কামনার ঝড় তুললেন পাণ্ডব ভাইদের মনে।কারণ দ্রৌপদীর রূপ ছিল, *সর্ব্বভূতমনোহরম্*।সকল প্রাণীর মনোলোভা। প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির,কনিষ্ঠদের বিভঙ্গ, অভিব্যক্তি পড়ে ফেলতে সক্ষম হলেন। ভাইদের ঐক্যসূত্র অটুট রেখে পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে চেয়েছেন যুধিষ্ঠির। তিনি জ্যেষ্ঠর দায়িত্ব পালন করলেন। কামসূত্রের বাঁধন কী এতটাই অচ্ছেদ্য। একটি সুন্দরী নারীর শরীরের ভোগেচ্ছা হয়তো অমোঘ। দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ ভোগচ্ছা চরমে পৌঁছে যায়। তবে দ্রৌপদীর ক্ষেত্রে বিবাহ নামক শিলমোহর ছিল। মেনে নেওয়া সহবাস, শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় অভ্যাসে। এ যুগেও সর্বগুণসম্পন্না হয়েও দ্রৌপদীরা নিজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিনিময়ে, ঐক্যে বেঁধে রাখেন পরিজনদের।
আর পাত্রী দ্রৌপদী? যিনি সপ্রেমে বরণ করেছিলেন, যে যুবা পুরুষটিকে, সেই স্বয়ংবরসভার নায়কের এই ধর্মনিষ্ঠতার প্রতিক্রিয়ায় দ্রৌপদীর মানসিক অবস্থা কেমন হল? মহাভারতকার সে বিষয়ে নীরব। কিংবা এটাই বোধ হয় পিতৃতান্ত্রিকতার নিয়ম, নারীদের নিজস্ব কোন পছন্দ থাকতে নেই, স্বয়ংবর সভার শর্ত স্থির করেন বাবা, দাদা প্রভৃতি অভিভাবকেরা। পরিণাম নির্ধারিত হবে অভিভাবকদের সিদ্ধান্তে।সেখানে পাত্রের নিজস্ব মতপ্রকাশের অধিকার থাকলেও পাত্রীর সম্মতি বা অসম্মতির তোয়াক্কা কেউ করেন না। আজও এই ধারা অধিকাংশ ভারতীয় সমাজেই প্রবহমান।
নিশ্চুপ দ্রৌপদী শুধু দর্শক ও শ্রোতার ভূমিকায় সেখানেই রয়েছেন।
অর্জুনের এই অস্বীকারের ফল হল আরও সুদৃরপ্রসারী। এতক্ষণ পাণ্ডব ভাইদের, বিজিতা দ্রৌপদীর প্রতি, যে দৃষ্টি ছিল সম্ভ্রমের, এখন তা হল লোলুপ সকাম জ্বালাময়ী দৃষ্টি। প্রজ্বলিত অগ্নিশিখার মতো দ্যুতিময়ী দ্রৌপদী কামনার ঝড় তুললেন পাণ্ডব ভাইদের মনে।কারণ দ্রৌপদীর রূপ ছিল, *সর্ব্বভূতমনোহরম্*।সকল প্রাণীর মনোলোভা। প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির,কনিষ্ঠদের বিভঙ্গ, অভিব্যক্তি পড়ে ফেলতে সক্ষম হলেন। ভাইদের ঐক্যসূত্র অটুট রেখে পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে চেয়েছেন যুধিষ্ঠির। তিনি জ্যেষ্ঠর দায়িত্ব পালন করলেন। কামসূত্রের বাঁধন কী এতটাই অচ্ছেদ্য। একটি সুন্দরী নারীর শরীরের ভোগেচ্ছা হয়তো অমোঘ। দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ ভোগচ্ছা চরমে পৌঁছে যায়। তবে দ্রৌপদীর ক্ষেত্রে বিবাহ নামক শিলমোহর ছিল। মেনে নেওয়া সহবাস, শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় অভ্যাসে। এ যুগেও সর্বগুণসম্পন্না হয়েও দ্রৌপদীরা নিজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিনিময়ে, ঐক্যে বেঁধে রাখেন পরিজনদের।
ছবি: প্রতীকী।
দ্রৌপদী ভিক্ষালব্ধা নন। তিনি পৌরুষবলে বিজিতা। কিন্তু পছন্দের পুরুষের বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে, ভাগাভাগির দ্রব্যে পরিণত হয়েছিলেন। পা-বলিশের আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত নিদ্রায় ঢলে পড়লেন পঞ্চ পাণ্ডব। ভিক্ষালব্ধ অন্ন যে প্রাণশক্তি যোগায়, সেই জীবনদায়িনী অন্নস্বরূপা স্ত্রীর ভূমিকা হল দ্রৌপদীর। অপরিহার্য প্রাণরসায়নের আকর স্ত্রী। পা-বালিশটি বোধ হয় নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের দ্যোতক, যার আশ্রয়ে নিশ্চিন্তে সুখনিদ্রায় আচ্ছন্ন হওয়া যায়, অনায়াসে। পাণ্ডবদের স্ত্রীর নিজের জীবনের যাপনচিত্রে তা প্রতিফলিত হয়েছে বার বার।
একজন নারীর কাঙ্খিত পুরুষ হবেন সর্ব গুণের আধার। সে পুরুষের মধ্যে থাকবে যুধিষ্ঠিরের জ্ঞানগর্ভ প্রাজ্ঞতা, ভীমের মহাবলী ভাবমূর্তি, অর্জুনের শিল্পিত নিপুণতা এবং নকুল সহদেবের শারীরিক কোমল সৌন্দর্য্য। আর পুরুষের মনোরাজ্যে বিচরণ করেন কোন নারী? একাধারে মাতৃত্বের প্রতিমূর্তি, আশ্রয়, গুণের সুগন্ধ ছড়িয়ে যিনি সর্বজনের ঈপ্সিতা, তেজস্বিনী, ব্যক্তিত্বময়ী, আগুনের মতো জ্বালাময়ী কোন নারী,যাঁর প্রতিরোধশক্তির দহনজ্বলায় দগ্ধ হয় অশুভ শক্তি, সখী, সহচরী, স্নেহময়ী, জীবনযুদ্ধের সহযোদ্ধা, এমন এক নারী। কামনার আগুন সেখানে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদার অনুষঙ্গমাত্র। দ্রৌপদী সেই নারীত্বের প্রতীক। এই পুরুষ ও নারীর মেলবন্ধনে অনেক অসম্ভব সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। মহাভারতের কুরুপাণ্ডবদের ইতিকথা সেটাই প্রমাণ করে।
পঞ্চ পাণ্ডব সেই কাঙ্খিত নারীকে লাভ করেছেন। তাঁরা,জ্যেষ্ঠর প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেননি। সাদরে মেনে নিয়েছেন। দ্রৌপদীর নীরবতা কী একযোগে পাঁচটি গুণের একযোগে প্রাপ্তিতে সসম্মান সম্মতি? মনে মনে কিন্তু বিরাজমান, বিজয়ী, উদারমনা, আত্মপ্রত্যয়ী অর্জুন। সংসারে এমনটাই নিয়ম। সহযোদ্ধা হন সর্বদাই কোন মেনে নেওয়া অর্জুন। তাঁর মধ্যে থাকে অন্য পাণ্ডবচতুষ্টয়ের গুণের আনাগোনা। এক ব্যক্তিত্বের মধ্যে সকল গুণের স্থান সঙ্কুলান হয় না যখন, তখনই বাঁধে বিরোধ, বিচ্ছিন্নতা, চিরকালীন বিচ্ছেদ।
বিপরীতভাবে বিজয়ী কোন অর্জুনের প্রার্থিত চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম কোনও নারীর, যাজ্ঞসেনী হয়ে ওঠার আত্মক্ষয়ী প্রচেষ্টা নৈরাশ্যের অন্ধকারে নির্বাসিত হয় শেষ পর্যন্ত।
তবু, দ্রৌপদী ও অর্জুনরা ছিলেন, আছেন, থাকবেন, অন্য কোন নামে ও রূপে।—চলবে।
একজন নারীর কাঙ্খিত পুরুষ হবেন সর্ব গুণের আধার। সে পুরুষের মধ্যে থাকবে যুধিষ্ঠিরের জ্ঞানগর্ভ প্রাজ্ঞতা, ভীমের মহাবলী ভাবমূর্তি, অর্জুনের শিল্পিত নিপুণতা এবং নকুল সহদেবের শারীরিক কোমল সৌন্দর্য্য। আর পুরুষের মনোরাজ্যে বিচরণ করেন কোন নারী? একাধারে মাতৃত্বের প্রতিমূর্তি, আশ্রয়, গুণের সুগন্ধ ছড়িয়ে যিনি সর্বজনের ঈপ্সিতা, তেজস্বিনী, ব্যক্তিত্বময়ী, আগুনের মতো জ্বালাময়ী কোন নারী,যাঁর প্রতিরোধশক্তির দহনজ্বলায় দগ্ধ হয় অশুভ শক্তি, সখী, সহচরী, স্নেহময়ী, জীবনযুদ্ধের সহযোদ্ধা, এমন এক নারী। কামনার আগুন সেখানে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদার অনুষঙ্গমাত্র। দ্রৌপদী সেই নারীত্বের প্রতীক। এই পুরুষ ও নারীর মেলবন্ধনে অনেক অসম্ভব সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। মহাভারতের কুরুপাণ্ডবদের ইতিকথা সেটাই প্রমাণ করে।
পঞ্চ পাণ্ডব সেই কাঙ্খিত নারীকে লাভ করেছেন। তাঁরা,জ্যেষ্ঠর প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেননি। সাদরে মেনে নিয়েছেন। দ্রৌপদীর নীরবতা কী একযোগে পাঁচটি গুণের একযোগে প্রাপ্তিতে সসম্মান সম্মতি? মনে মনে কিন্তু বিরাজমান, বিজয়ী, উদারমনা, আত্মপ্রত্যয়ী অর্জুন। সংসারে এমনটাই নিয়ম। সহযোদ্ধা হন সর্বদাই কোন মেনে নেওয়া অর্জুন। তাঁর মধ্যে থাকে অন্য পাণ্ডবচতুষ্টয়ের গুণের আনাগোনা। এক ব্যক্তিত্বের মধ্যে সকল গুণের স্থান সঙ্কুলান হয় না যখন, তখনই বাঁধে বিরোধ, বিচ্ছিন্নতা, চিরকালীন বিচ্ছেদ।
বিপরীতভাবে বিজয়ী কোন অর্জুনের প্রার্থিত চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম কোনও নারীর, যাজ্ঞসেনী হয়ে ওঠার আত্মক্ষয়ী প্রচেষ্টা নৈরাশ্যের অন্ধকারে নির্বাসিত হয় শেষ পর্যন্ত।
তবু, দ্রৌপদী ও অর্জুনরা ছিলেন, আছেন, থাকবেন, অন্য কোন নামে ও রূপে।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।