বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবির একটি দৃশ্যে।

 

চিদম্বরম

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: অন্যধারার ক্ল্যাসিক ছবি
ভাষা: মালয়ালম
প্রযোজনা: জি অরবিন্দন
কাহিনি: সিভি শ্রীরামন
চিত্রনাট্য সংলাপ ও নির্দেশনা: জি অরবিন্দন
অভিনয়ে: ভরত গোপী, স্মিতা পাতিল, শ্রীনিবাসন, মোহন দাস প্রমুখ
সময়সীমা: ১০০ মিনিট
কোথায় দেখা যাবে: ইউটিউব

১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চিদম্বরম, সিভি শ্রীরামন রচিত একটি ছোট গল্পের চলচ্চিত্র রূপান্তর পরিচালনা এবং প্রযোজনা কেরলের সমান্তরাল চলচ্চিত্রের স্মরণীয় চিত্রপারিচালক জি অরবিন্দন। এই চলচ্চিত্র একটি গবাদি পশু খামারে কর্মরত অনেকের মধ্যে তিনটি বিশেষ চরিত্রের জীবনের মধ্য দিয়ে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের বিভিন্ন দিকের মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান করে। অপরাধবোধের উপলব্ধি থেকে অনুতাপ এবং অনুতপ্ত মনের মুক্তির বিষয়গুলি এ ছবিতে গুরুত্ব পেয়েছে। কেরলের যশস্বী অভিনেতা ভরথ গোপী, ভারতীয় চলচ্চিত্রের নক্ষত্র স্মিতা পাতিল, শ্রীনিবাসন এবং মোহন দাস প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চিদাম্বরম ছবিটি শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে এবং সেরা চলচ্চিত্র এবং সেরা নির্দেশনা-সহ পাঁচটি রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছে।
পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত একটি বিশাল সরকারি খামার ঘিরে এ কাহিনির বিন্যাস। এই খামারের গবাদি পশু এবং প্রকৃতিকে অসাধারণ চিত্রকল্প নির্দেশনার গুণে কাহিনির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নেওয়া হয়েছে। খামারের সুপারিন্টেনডেন্ট শঙ্করন একজন শৌখিন ফটোগ্রাফার। এই খামারে একাই থাকেন। তাঁরই অধস্তন খামারের একজন আধিকারিক জ্যাকবও এই পশুখামারে একাই থাকে। এখানে সন্ধ্যাকালীন বিশ্রাম বলতে মদ্যপান। খামারের একজন কর্মী বিয়ে করে। উচ্চপদাধিকারি হলেও শঙ্করন একটি তামিল গ্রামে অধস্তন কর্মী মুনিয়ান্দির বিয়েতে যোগ দিতে যায়৷ পথে আমরা দেখি গ্রামের সবুজে অবহেলিত সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা মাটির ঘোড়া, যা শঙ্করনের ক্যামেরার নজর এড়ায় না। তিনি বিয়েতে বর ও কনের ছবি তোলেন। বিয়ের পর মুনিয়ান্দি তার স্ত্রী, শিবকামীকে তামিলনাড়ুর ধূসর অনুর্বর ল্যান্ডস্কেপ থেকে পশুখামারের সবুজ, পাহাড়ি তৃণভূমিতে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: তেলেগু ছবি ‘শাকিনী ডাকিনী’ নো-প্রেম অ্যাকশন-কমেডি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০২: দ্বারকানাথের বেলগাছিয়ার বাগানবাড়ি

শঙ্করন তার অফিসের জানালা থেকে তাদের দেখে, তারা যখন তাদের কোয়ার্টারের দিকে হাঁটছে, শিবকামী রঙিন পরিবেশে যেন ভীত হরিণীর মতো বিস্মিত হওয়ায় পথের মাঝে থামছে আবার চলছে। কিন্তু ধীরে ধীরে মুনিয়ান্দির স্ত্রী শিবকামী এই সুন্দর নতুনপৃথিবীতে তার পদক্ষেপ ফেলা শুরু করে। মুনিয়ান্দি যখন কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন শিবকামী উদ্দেশ্যহীনভাবে মাঠে মাঠে ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ায়, পরম বিস্ময়ের সঙ্গে প্রতিটি ফুলকে স্পর্শ করে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৭: রাতচরা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৪: শ্রীমার গৃহী ভক্তদের সন্ন্যাসদীক্ষা

মুনিয়ান্দি স্ত্রীকে ভীরু আরাধনা করে, কিন্তু শঙ্করন তার কাছে মৃদু উদ্বেগের সাথে আসে। শিবকামী আর তাকে ভয় পায় না। সে শঙ্করনের কাছে যায় যখন তার বাড়িতে লেখা একটি চিঠিতে ঠিকানা লেখাতে হয়, এবং শঙ্করনের ক্যামেরা থেকেও দূরে সরে যায় না শিবকামী। এই নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো পশুখামারে শিবকামীর অন্যদের কাছেও আলোচ্য হয়ে ওঠাটা শঙ্করনের অপছন্দ। শঙ্করনের কাছে শিবকামী খামারের সবুজ ল্যান্ডস্কেপের মতোই কোমল এবং নরম এক অস্তিত্ব। অথচ শঙ্করন জানেন না শিবকামীর কাছে তিনি ঠিক কী চান?

এরপর আর গল্পের আলোচনা করা যাবে না, তাহলে ছবিটা দেখাত মজাটাই নষ্ট। ১৯৮৫-তে মুক্তি মানে হয়ত-বা ১৯৮৩/৮৪ তে শুটিং হয়েছিল। একমাত্র পুত্রসন্তান প্রতীক বব্বরের জন্ম হয় ২৮শে নভেম্বর ১৯৮৬ আর ঠিক ১৫দিন পর সূতিকাজ্বরে (Puerperal sepsis) আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৬-র ১৩ ডিসেম্বর মাত্র ৩১ বছর বয়েসে ভারতীয় সিনেমার উজ্জ্বলতম অভিনেত্রী স্মিতা শিবাজীরাও পাতিলের জীবনাবসান হয়।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৪: আমি তাইতে কি ভয় মানি!

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’

সিভি শ্রীরামনের কাহিনি অরবিন্দনের খুব পছন্দ হয়েছিল কিন্তু তিন বছর ধরে তিনি চেষ্টা করেও একজন প্রযোজক পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর নিজেই ছবিটি প্রযোজনা করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত কমবাজেটে নির্মিত হয়েছিল এই ছবিটি।১৯৭০-এ স্মিতা পাতিল বম্বে দূরদর্শন কেন্দ্রের সংবাদপাঠিকা ছিলেন। এরপর ১৯৭৬-এ শ্যাম বেনেগলের ‘মন্থন’ ছবিতে ২১ বছর বয়সে প্রথম আত্মপ্রকাশ। ১৯৮৪ নাগাদ স্মিতার ভূমিকা, চক্র, অর্থ, সদ্গতি, বাজার, মান্ডি, মির্চ মশালা, ওয়ারিস এরকম অসংখ্য ছবিতে একাধিক জাতীয় পুরস্কার ফিল্মফেয়ার-সহ একাধি পুরস্কার পাওয়া হয়ে গিয়েছে। ১৯৮৫-তে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন স্মিতা পাতিল।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৬: আলাস্কার আকাশে অহরহ ব্যক্তিগত বিমান ওঠানামা করে

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৫: ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এবং চলচ্চিত্র

অরবিন্দনের মতে, “স্মিতা এর অনেক আগে আমার একটি ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। গোপীও আসতে ইচ্ছুক ছিলেন। যখন তারা জানলেন যে এটি আমার নিজস্ব প্রযোজনা, তখন অনেক শিল্পী সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। আমার কাছ থেকে আর্থিক লাভের আশায় তারা কেউ এ ছবিতে অভিনয় করেননি। আমার জন্য এই ছবিটির জন্য অভিনয় করেছেন।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্মিতার মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত দেবশিশু ছবিটির জন্য অভিনেত্রী কোনও পারিশ্রমিক নেননি।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content